Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দেব এ বার হেভিওয়েট বক্সার

রাজনীতির রিং-য়ে ঢুকে পড়তে হয়েছিল আচমকা। বক্সিং রিং কিন্তু স্বইচ্ছাতে। দক্ষিণ কলকাতার সকালে দু’হাতে গ্লাভস আর খালি গায়ের দেব-কে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। দূরে বান্ধবী রুক্মিণী। কেন? বললেন গৌতম ভট্টাচার্য-কেরাজনীতির রিং-য়ে ঢুকে পড়তে হয়েছিল আচমকা। বক্সিং রিং কিন্তু স্বইচ্ছাতে। দক্ষিণ কলকাতার সকালে দু’হাতে গ্লাভস আর খালি গায়ের দেব-কে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। দূরে বান্ধবী রুক্মিণী। কেন? বললেন গৌতম ভট্টাচার্য-কে

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

ঝুঁকিটা নেব অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম! রিও অলিম্পিক্সের হিউজ রিঅ্যাকশন দেখে মনে হল এটা আইডিয়াল টাইম। নেমেই পড়া যাক।

এত বছর ধরে ক্রিকেট ভারতীয় খেলাধুলো জগতে মনোপলি চালিয়ে এসেছে। স্পোর্টস মানেই যেন ক্রিকেট। খেলাকেন্দ্রিক ভাবনাও শুধু ক্রিকেট। স্পোর্টস কেন্দ্র করে আমাদের দেশে যে সব ছবি হয়েছে তাতেও ক্রিকেটারের রমরমা বেশি। রিও প্রথম দেখাল যে, দেশের মানুষ এখন অন্য খেলার ওয়ার্ল্ড লেভেল সাকসেসকেও মাথায় তুলে রাখতে রাজি। দিন দশ আগে দীপা কর্মকার যখন কলকাতায় এল, ওকে নিয়ে যা মাতামাতি দেখলাম, স্টার ক্রিকেটারদের জন্য হয় কি না সন্দেহ। ব্যাডমিন্টন আর একটা খেলা — পি ভি সিন্ধুর জন্য যা এখন সবার নেক নজরে। আমি যেখানে থাকি, সেই সাউথ সিটি-তে ব্যাডমিন্টন কোর্ট রয়েছে। ইদানীং সেখানে দেখছি এত ভিড় যে কোর্টে নামতে গেলে প্রায় লাইনে দাঁড়াতে হয়।

ইন্ডাস্ট্রিতে এ বার আমার দশ বছর পূর্ণ হল। বারবার মনে হচ্ছে এখনও যদি ঝুঁকি না নিই, আর কবে নেব? ক্রিকেটের ওপর আরও একটা ফিল্ম তো করাই যেত। আমি নিজেই ক্রিকেটার হওয়ার জন্য মুম্বইতে রমাকান্ত আচরেকরের ক্যাম্পে নাম লিখিয়েছিলাম। কিন্তু ক্রিকেট খুব প্রেডিক্টেবল বিষয়। আমি নিজেকে যখন ভাঙতে চাইছি নতুন করে, তখন ক্রিকেট বাহন হতে পারে না।

তাই ঠিক করি অন্য কোনও খেলার ক্যারেক্টার সাজব। সেই ভাবনা থেকে আমার পরের ফিল্ম। এখন অবধি যার নাম ঠিক আছে ‘চ্যাম্প’। যেখানে আমি অভাবের সঙ্গে — চূড়়ান্ত দারিদ্রের সঙ্গে — পরিবেশগত সীমাবদ্ধতার সঙ্গে — সমালোচকদের সঙ্গে যুদ্ধে রক্তাক্ত এক বক্সার। ইয়েস, বক্সিং রিং আমার নতুন পৃথিবী।

প্রথম কথা হয়েছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মতি নন্দীর ‘শিবার ফিরে আসা’ করতে চেয়েছিলাম আমরা। যে কোনও কারণে হোক, কপিরাইটটা কেনা যায়নি। আমার বক্সার শিবা সাজার পরিকল্পনা তাই নিখোঁজ হয়ে যায়।

আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই। যারা আমাকে চেনে, তারা মাঝেমধ্যে অভিযোগ করে, তোমার বড় বেশি জেদ। সেই জেদ কখনও হয়তো কাছের লোকেদের বিরক্ত করে। কখনও আবার ইম্পর্ট্যান্ট কাজও করে দেয়। এখানে যেমন। না দমে গিয়ে ঠিক করি, আমি নিজেই একটা গল্প ভাবব। আর তার পর লেখার চেষ্টা করব, এমন বক্সারের লাইফ, যা দেখে লোকে খুব ইন্সপায়ার্ড ফিল করবে।

আপাতত গল্পটা যা দাঁড়িয়েছে, আমি শিওর, অনেক স্পোর্টস ব্যক্তিত্বকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। আর আমি একেবারে রিয়্যাল সেটিংয়ের মধ্যে ফিল্মটা করতে চাই। এমন নয় যে, বাড়ি বসে একটা সখী সখী এনভায়েরনমেন্টে ফিল্মটা বানিয়ে ফেললাম। বরং আমি একেবারে রিয়্যাল হার্ডকোর অ্যাকশন চাই। তার জন্য যা যা ফিজিক্যাল কন্ডিশনিং দরকার, আমি সেই রগড়ানির ভেতর দিয়ে এখন যাচ্ছি। বক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত নানা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বলছি। তারা কেউ কেউ বক্সিংয়ের অফিশিয়াল। কেউ কেউ নামী বক্সার। আগামী সপ্তাহেই তো দিল্লিতে বিজেন্দ্র সিংহের সঙ্গে আমার মিটিং রয়েছে।

হেভিওয়েট বক্সারের রোল করার জন্য সলিড একটা চেহারা চাই। শুধু ট্রাইসেপস আর বাইসেপস দিয়ে হবে না। গত তিন মাস ধরে আমি তাই নতুন ডায়াটে। গ্রিলড খাবার ছাড়া পারতপক্ষে কিছু ছুঁচ্ছি না। সিক্স প্যাকস তৈরি করছি খুব যত্ন করে। বিশেষ ট্রেনার আমাকে এখন নিয়মিত সকালে প্র্যাকটিস করান। ফিল্মে অবশ্য আমার ট্রেনার। চিরঞ্জিতদা। আমার মনে হয় চিরঞ্জিতদা এই রোলে আইডিয়াল। স্ক্রিপ্টটা শোনা মাত্র ও খুব এক্সাইটেড হয়ে পড়ে। আমরা বলি তোমাকেও কিন্তু এক্সারসাইজ করে চেহারাটা টোনড করতে হবে। ফিটনেস বাড়াতে হবে। ও বলে, নিশ্চয়ই। চিরঞ্জিতদার মধ্যে একটা সুপ্ত আগুন আছে। এই রোলে সেটা খুব লাগবে। একটা শিক্ষকসুলভ মনোভাব আছে। সেটাও লাগবে।

দেব-রুক্মিণী।

ডিরেকশনে আমার প্রিয় বন্ধু রাজ চক্রবর্তী। রাজের সঙ্গে অনেকগুলো ছবি করেছি বলে জানি এই ধরনের স্ক্রিপ্টে ও আইডিয়াল। জান লড়িয়ে দেবে। স্পোর্টস মানে তার মধ্যে ওঠা-পড়া, হার-জিত, রাজনীতি-দ্বন্দ্ব — সব কিছু থাকবে। প্রচুর ‘র’ ইমোশন থাকবে। রাজের তো এটা স্পেশালিটি। ও প্রচুর রিসার্চও করছে বক্সিং নিয়ে। আমিও পড়াশোনা করছি। কতগুলো ফ্যাক্ট জেনে তো নিজেরই অবাক লাগছে। ইন্ডিয়াতে বক্সিং চালু হয় নাকি কলকাতা থেকে। ১৮৮৪-তে। প্রথম বক্সিং রিং — সেও নাকি এখানে।

‘চ্যাম্প’ এই মুহূর্তে হার্টের এত কাছাকাছি যে ঠিক করেছি ফাইনান্সার না পেলে নিজেই ছবিটা প্রোডিউস করব। জীবনে আমি প্রথম বক্সার চরিত্র করছি, এর মতোই বড় চমক রয়েছে কাস্টিংয়ে। ডেব্যু করছে আমার বান্ধবী রুক্মিণী! যাকে শত অনুরোধ উপরোধেও আগে কেউ হ্যাঁ করাতে পারেনি।

অথচ এই ফিল্মে ওর চরিত্র এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দাবি করে যা রুক্মিণী ছাড়া সম্ভব নয়। রাজ গল্পটা শোনা মাত্র বলেছিল, এটা রুক্মিণী। আমি বলি, তুই ফোন কর। আমি বললে ঘুরিয়ে দিতে পারে। রাজকে অবশ্য ও এক কথায় হ্যাঁ বলেনি। দেখছি-দেখছি স্টেজে রেখেছিল। তারপর আমি চাপ দিই। এর আগে আমার এগেনস্টে নানান ফিল্ম অফার পেয়েও রুক্মিণী না বলেছে। যেমন ‘যোদ্ধা’। যেমন ‘চ্যালেঞ্জ’। আসলে রুক্মিণী মডেলিংয়ের জগতেই বেশি কমফর্টেবল। আমাদের পৃথিবীতে আসতে খুব ইচ্ছুক নয়। এ বারও বলল, এটাই কিন্তু শেষ। রাজ এমনিতে ইয়ংদের নিয়ে দারুণ কাজ করে। ও জানে নতুনদের বেস্টটা কী করে বার করতে হবে। আমি শিওর, রাজের ডিরেকশনে রুক্মিণী ফাটিয়ে কাজ করবে।

শ্রীকান্ত মোহতাকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমি খুব নির্ভরযোগ্য একজন মানুষ বলে মানি। শ্রীকান্তকেও সে দিন স্ক্রিপ্ট শুনিয়েছি। ছবিটা আমি নিজে করছি — ভেঙ্কটেশ নয়। তবু শ্রীকান্তের ওপিনিয়ন আমার নেওয়া দরকার ছিল। শ্যুটিং করব কলকাতার মধ্যে আর বাইরে বেশ কিছু জায়গায়। চেতলার বক্সিং রিং ঘুরে দেখে এসেছি। কিন্তু শুধু তো সেখানেই নয়। আমার চরিত্রটা ফাইট করার জন্য ঘুরবে দিল্লি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর। প্রোফেশনাল হেভিওয়েট বক্সারের রোল যে কি না এশিয়ান প্যাসিফিক চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতল। তারপর নামল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।

কোথাও গিয়ে মনে হয়, হেভিওয়েট বক্সারের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তো নায়কেরও জীবনের কাহিনি! তাকেও তো রিংয়ের মধ্যে ‘খুলে আম’ লড়াই করতে হয়। কখনও সে জেতে। কখনও তার গা বেয়ে অঝোরে রক্ত ঝরে। সে হেরে বার হয়।

নায়ক হিসেবে কমফর্ট জোন-য়ে না থেকে যে বরাবর ঝুঁকি নিয়ে এসেছি তার প্রমাণ ‘বুনো হাঁস’। ‘চাঁদের পাহাড়’। ‘ধূমকেতু’। এ বারের চ্যালেঞ্জটা বোধহয় সবচেয়ে কঠিন। তাও ঘাবড়াচ্ছি না। কারণ বিশ্বাস করি, নতুন নতুন ছবি সামনে আনা শুধু ডিরেক্টর বা প্রোডিউসরের দায়িত্ব নয়। হিরোরও দায়িত্ব!

তাকেও প্রতিনিয়ত নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়। তবে তো ভাল কাজ সম্ভব। বক্সিং রিংয়ের জীবন আমার নিজের কাছে নিজের নবতম চ্যালেঞ্জ। সবার কাছে শুভেচ্ছা চাইছি...

ছবি: পিক্সেল এমালগাম জুয়েলারি: সাক্ষী ঝুনঝুনওয়ালা স্টাইলিস্ট: নেহা গাঁধী
মেকআপ: প্রসেনজিৎ বিশ্বাস দেবের পোশাক: নাইন রুক্মিণীর পোশাক: ঈশানী জয়সওয়াল লোকেশন: পার্ক প্রিভিলেজ ক্লাব

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE