Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচমূর্তির প্যাঁচ পয়জার

প্রেক্ষাপট যখন দিল্লি, গল্পে যখন জুটেছে মন্ত্রীমশাই, তা হলে কি আর রাজনীতি খুব দূরে থাকে? ফলে রাজনৈতিক কেচ্ছা, ক্ষমতার লড়াই, লটারির খেলও যোগ হয়েছে। তারই সঙ্গে সাপ, বাঘ, তার নরম তুলতুলে বেড়ালের মতো ছানা, গুপ্তধনের খাস গপ্পো জুড়ে দিয়েছেন পরিচালক মৃগদীপ সিংহ লাম্বা।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৭:০০
Share: Save:

ফুকরে রিটার্নস

পরিচালনা: মৃগদীপ সিংহ লাম্বা

অভিনয়: রিচা, পুলকিত, বরুণ, আলি, মনজোত, পঙ্কজ

৪.৫/১০

গল্পের সিংহভাগ চরিত্রই দর্শকদের চেনা। সে স্বপ্নে বিভোর থাকা চুচা (বরুণ শর্মা) হোক, সেই স্বপ্নকে মাথা খাটিয়ে লটারি পাওয়া হানি (পুলকিত সম্রাট) হোক, বাবার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা লালি (মনজোত সিংহ) হোক কিংবা জালে জড়িয়ে পড়া ন্যায়নীতিপরায়ণ জাফর (আলি জাফর)। সঙ্গে তো আছেই চিরচেনা ট্রাম্প ভোলি পঞ্জাবন (রিচা চড্ডা)। আর বাকি থাকল একটা-দুটো চরিত্র, সে নাহয় ছবি দেখার খাতিরে চিনে নেওয়া যাবে। তা হলে এই ‘ফুকরে রিটার্নস’-এ নতুন কী? বলা ভাল, কিছুই নেই।

এবং বলা ভাল, আর যা যা কিছু জগাখিচুড়ি করে গল্পে মেশানো যেত, সবই আছে। মানে, হানি হবু শ্বশুরকে গাড়ির ভিতর থেকেই পেন্নাম ঠুকে বিয়ের প্রস্তাবটা সেরে ফেলেছে। জাফরও পিছু না হঠে প্রেমিকার সঙ্গে সংসার পাততে চাইছে। বেচারা লালি এখনও বাবাকে ভয় পায়। চুচা আছে চুচাতেই— ‘নিষ্পাপ’, অসীম সাহস জুগিয়ে এখনও ডন ভোলির সঙ্গে প্রেমের স্বপ্ন দেখে। ভোলি সদ্য জেল খেটে বেরিয়ে এসেছে এবং প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার দরুন ট্র্যাকে ফিরে আসার ফিকির খুঁজছে। পথ হিসেবে সিঁড়ি করেছে এক মন্ত্রীকে।

প্রেক্ষাপট যখন দিল্লি, গল্পে যখন জুটেছে মন্ত্রীমশাই, তা হলে কি আর রাজনীতি খুব দূরে থাকে? ফলে রাজনৈতিক কেচ্ছা, ক্ষমতার লড়াই, লটারির খেলও যোগ হয়েছে। তারই সঙ্গে সাপ, বাঘ, তার নরম তুলতুলে বেড়ালের মতো ছানা, গুপ্তধনের খাস গপ্পো জুড়ে দিয়েছেন পরিচালক মৃগদীপ সিংহ লাম্বা।

‘ফুকরে’তে চরিত্রগুলোর অন্যায়, ভুলভাল কাজ দেখার পরও দর্শক ভালবেসেই তাদের মাফ করে দিয়েছিলেন। এ বার বোধহয় সেটা করা গেল না। সময় বদলেছে। চরিত্রগুলোর ইনোসেন্স বেশ তলানিতে। বেশির ভাগ চরিত্রকেই অক্সিজেন নেওয়ার পরিসর দেননি নির্দেশক। জাফরের তো কিছু করারই ছিল না। লালিকেও বাদ দিয়ে দিতে পারতেন! কেন? কারণ ভোলি! ‘ফুকরে’তে ভোলির চরিত্রে রিচার অভিনয় মাত করে দিয়েছিল দর্শকদের। তাই পরিচালক পুরো ছবির দায়িত্বই দিয়েছেন ভোলিকে। যা বাকি চারমূর্তির সঙ্গে অন্যায় তো বটেই!

ভোলিকে অনেক শান্ত, রংচঙে দেখানো হয়েছে। যে ডনের মুখে দিল্লির খেউড়ের ছর্‌রা শুনেও দর্শক ভালবেসেছিলেন, এ বার সেই ভোলি পলিশ্‌ড হয়ে একটু নিরাশ করেছেই। পুলকিতের নিষ্পাপ মুখও নেই, চরিত্রেও ফুটে ওঠেনি। তবে যিনি কেল্লা ফতে করেছেন, তিনি হলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। পণ্ডিতজির ভূমিকায় তিনি যতটাই সাবলীল, ততটাই অসাধারণ তাঁর কমিক সেন্স ও টাইমিং। পশ্চাদ্দেশে সাপের কামড়, তা কামড়ে বিষ বের করে আনা, বাঘের ছানাকে দিয়ে চুচার ঘামাচিময় পিঠ চুলকানো, ‘দে জা চু’ জাতীয় কিছু দৃশ্য তো আছেই। সেই সঙ্গে প্রত্যঙ্গ বিক্রি, পশুচালান, লিভ-ইন সম্পর্ক ইত্যাদি সামাজিক বিষয়ও আলতো করে ঢুকিয়ে দিয়েছেন লাম্বা।

ছবিতে হানি বলেছিল, ‘ইয়ে অওকাত কা জমানা হ্যায়’। তাই ছবিশেষে পশুর পাশাপাশি দুই আফ্রিকান চরিত্র চুঙ্গা-মুঙ্গাকেও কোনও আঘাত করা হয়নি বলে যে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে নির্মাতা ও পরিচালকের ‘অওকাত’ দেখে অবাক হতে হয়েছে বইকী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE