Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শুরু করো বিবেকানন্দ পার্কের দই-ফুচকা দিয়ে

জেন ওয়াইকে মজাতে ১০টা বিশেষ টিপস দিচ্ছে উজান গঙ্গোপাধ্যায়। যার বয়স মাত্র সতেরোজেন ওয়াইকে মজাতে ১০টা বিশেষ টিপস দিচ্ছে উজান গঙ্গোপাধ্যায়। যার বয়স মাত্র সতেরো

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

বাবা-মা’র কাছ থেকে কাকুতিমিনতি করে এক্সট্রা টাকা চেয়ে তোমার বান্ধবীকে কেন খাওয়াবে? প্রেস্টিজ নেই! নিজের টাকায় যা পোষায়, তাই খাওয়াও। শুরু করো স্টার্টার্স— বিবেকানন্দ পার্কের দই-ফুচকা, ঘুগনি আর মশলা কোক দিয়ে। মেনকোর্সের জন্য ফুটপাথের লাল কাপড়ে মোড়া হান্ডিতে বিরিয়ানি-সত্তর টাকার ফুল প্লেট। ‘বেবি’র জন্য হাফ প্লেট, আলু ছাড়া। ধরেই নিচ্ছি সে ডায়েট করছে। তাই বাকি হাফ তোমার। পেট ঢোল করে মিষ্টি সিরাপে ভরপুর বরফের গোলা দিয়ে ব্রাঞ্চ শেষ করা যেতে পারে। সব কিছুর শেষে দেখবে নিজের শহর কলকাতার এবং নিজের বান্ধবীর সুপ্ত বাঙালিয়ানার আশ্বাস পেয়ে বেটার লাগছে।

টিউশন কামাই করে আর্চিস থেকে বান্ধবীর জন্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে কার্ড কিনতে যাওয়ার বিভিন্ন গল্প আমরা সবাই শুনেছি। ভাবনাটা মিষ্টি ঠিকই। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছ যে-কার্ডটা তুমি তোমার ‘ডার্লিং’য়ের হাতে ধরালে, তার মধ্যে আছে অন্য কারও লেখা এক গোদা কবিতা বা গদগদ ক্যাচলাইন। বা একটা হাই ডেফিনেশন ছবি, যেখানে এক গদগদ বিলিতি দম্পতি বাগানে বসে প্রেম করছে? এর মধ্যে নতুনত্ব কোথায়? ভুলে যাও। এ যুগে গরুর গাড়ির জায়গায় এসেছে ফোক্সভাগেন, পায়রার জায়গায় এসেছে হোয়াটসঅ্যাপ। তাই এখনই গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করো পিকস আর্ট বা অ্যাভিয়ারি। আর বানাও ‘তার’ জন্য এক পারসোনালাইজড ভ্যালেন্টাইন্স ডে কার্ড। সময় নিয়ে বানাও তোমাদের একসঙ্গে কাটানো বিশেষ মুহূর্তের পিকচার কোলাজ।

সারপ্রাইজ ভিজিটের হিস্টোরিকাল এনিগমা এনজয় করো। ট্রেডমার্ক রোমিও-জুলিয়েট স্টাইলেই হোক। বা তার বাড়ি ফুলের তোড়া হাতে যাও, আর ছোট্ট একটা পাথর তুলে টিপ করে ছুড়ে মারো তার জানালায়। ভাগ্যক্রমে যদি সে জানালা খোলে, হাঁটু গেড়ে বসে গাও সেরেনেড! কিন্তু এত কিছু ড্রামা করার আগে বাড়ির একটা সার্ভে করে নেওয়াটা বা়ঞ্ছনীয়। তার বাবা-মায়ের বেডরুমে পাথর পড়লে, জানালার কাচ ছাড়া অনেক কিছুই চুরমার হয়ে যাবে।

অতীতের প্রসঙ্গেই আছি যখন, তোমরা কাটাতেই পারো ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ‘লাইক ইন দ্য মুভিজ’ অর ‘লাইক গুড ওল’ টাইমস’। অ্যাকাডেমিতে একসঙ্গে ফিশ ফ্রাই খেতে খেতে নাটক দেখতে যাওয়া বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঘোড়ার গাড়ি করে বায়ুসেবন করা— রেট্রো কালচারকে নতুন জীবন দিলে কেমন হয়? ওল্ড ইজ গোল্ড বলে কথা।

এই পয়েন্টটা তোমার গান-ধবীর জন্য। তোমরা গান গাইতে পারো বা না পারো একসঙ্গে একটা গান রেকর্ড করো ফোনে, ল্যাপটপে আর প্রো হতে হলে গ্যারাজব্যান্ড বা নুয়েনডোতে। সে গাইল কণ্ঠ ভরে আর তুমি পুরোদমে বাজালে গিটার। ভাল হলে সাউন্ডক্লাউডে আপলোড, আর না হলে দু’জনে আইপড প্লে লিস্টে লাইফ মেম্বার হয়ে থেকে যাবে সেই ট্র্যাক। গান ভালবেসে গান গাও, নিজেদেরকে নতুন ভাবে খুঁজে পাও, পিয়ানোর সুরে গিটারের স্ট্রিংয়ে।

হোয়াটসঅ্যাপে এখনই স্টেটাস ম্যাচ করাও। একই গানের লিরিক্স দিয়ে স্টেটাস কো-অর্ডিনেট করো। তুমি দিলে ‘আমি যে তোমার’ আর সে দিল ‘তুমি যে আমার’ (এটা কিন্তু বাজে উদাহরণ)। একসঙ্গে ডিপি দাও। ফেসবুকে শুরু করো সিভিলাইজড পিডিএ (পাবলিক ডিসপ্লে অব অ্যাফেকশন) বন্ধুরা ভুরু নাচাবে তো বটেই, কিন্তু বাড়াবাড়ি করে ফেললেই চমকাবে কৌতূহলী মাসিপিসিরা। #গো টেকনো

আজকাল দেখছি এই পরামর্শটা দেওয়াই ভালো। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে নিজের বান্ধবীকে নিয়েই বেরিয়ো। অন্য কারও নয়। রেস্তোরাঁ বা সিনেমা হলে ক্রস কানেকশন হওয়াটা খুব একটা ভাল নয়।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র ‘এস’টা কিন্তু বহুবচনে নয়। একজন ভ্যালেন্টাইনেরই জন্য। তাই দয়া করে দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়েকে একই কথা বলে ঘুরে বেড়িয়ো না। প্রেমের ক্ষেত্রে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হওয়াটাই সেফ। নিতান্ত যদি হতেই হয় ক্যাসানোভা, ভাল করে সারা দিনের ছক বানিয়ে বাড়ি থেকে বেরোবে। ব্যাগে ডিওডোরেন্ট, বিভিন্ন মেয়েদের পারফিউম চাপা দেওয়ার জন্য, আর মাউথ ফ্রেশনার তো বটেই। তবে সব কেঁচিয়ে দিতে পারে বান্ধবীদের ফোনে তোলা সেলফি বা তার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং স্পৃহা। শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং আসলে খুব চাপের।

তার বাড়িতে যদি থাকে পোষা বিড়াল (কুট্টুস, মিন্টু, বিল্টু) বা পোষা কুকুর (লালু, কালু, জিমি, জনি) কিনে আনো তাদের জন্য টুকটুকে লাল কলার। হাঁটু গেড়ে বসে নিজেই পরিয়ে দাও তাদের গলায় সেই কলার। তাতে হয়তো জিমি কিছু বুঝবে না, কিন্তু ‘তার’ মন গরমকালের আইস-ললির মতো গলে পড়বে। কামড়ের ভয় থাকলে ইঞ্জেকশন তো আছেই। নিশ্চিন্ত থাকো যে তোমার ভালবাসা ‘ট্রু কলার’ হিসেবে সারাদিন ঘুরে বেড়াবে ‘তার’ চোখের সামনে। ল্যাজ নাড়াতে নাড়াতে।

বছরের এই সময়টা বড়ই বিশ্রী। আমরা ছাত্রছাত্রীরা এখন বড়ই অসহায়। তৈরি হচ্ছি ২০১৬র মার্কস-ইস্ট রেভলিউশনের জন্য। আইএসসি, ‘এ’ লেভেল আর উচ্চ মাধ্যমিক, জয়েন্ট, স্যাট আর ক্ল্যাট— নিজের পথ নিজেকেই বাছতে হবে। নিজেকেই গড়ে তুলতে হবে। তাই আজ আমার ভ্যালেন্টাইন খাতা, বই, পেন, পেন্সিল। তাই বড় পরীক্ষার আগে একসঙ্গে যেতে পারো স্টেশনারি শপিংয়ে। নিজের পকেট মানি দিয়ে একে অপরের জন্য কেনো সেই খাতা কলম, যা দিয়ে গড়ে উঠবে দু’জনেরই ফিউচার। পরীক্ষার হলের নিশ্চয়তায়, শূন্যতায়, সেই সামান্য পাঁচ টাকার জেলপেনেই খুঁজে পাবে তাকে, সেই বন্ধুকে, সেই ভালবাসাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE