Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘আমার হাতের চড় খুব পয়া!’

ছবি, ধারাবাহিক, সংসার নিয়ে খোলাখুলি কথা বললেন মৌসুমী সাহা ছবি, ধারাবাহিক, সংসার নিয়ে খোলাখুলি কথা বললেন মৌসুমী সাহা

মৌসুমী

মৌসুমী

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১০
Share: Save:

শোনা যায়, আপনার হাতের চড়ের নাকি বিরাট মাহাত্ম্য? যে খেয়েছে সে-ই নাকি ‘স্টার’ হয়েছে? প্রশ্ন শুনে একপ্রস্ত হেসে নিলেন মৌসুমী সাহা। ‘‘একদম সত্যি। তবে চড় খাদককে কিন্তু নবাগত হতে হবে। দেবের প্রথম দিকের ছবি ‘প্রেমের কাহিনি’তে আমি ওর মা হয়েছিলাম। ওকে চড় মারার দৃশ্য ছিল। নকল চড়ে চার বারেও দেব এক্সপ্রেশন দিতে পারল না। তখন পরিচালক আমাকে ইশারা করে বললেন, সত্যি সত্যি চড় মারতে। তাই করলাম। এক চড়েতেই পারফেক্ট সিন। গ্লিসারিন লাগল না, দেবের চোখ দিয়ে এমনিই জল বেরিয়ে এল। সে দিন ওকে বলেছিলাম, ‘নতুনরা আমার হাতে চড় খেলে স্টার হয়। তুইও হবি।’ আপনারাই বলুন, কথাটা কি ভুল বলেছিলাম? অঙ্কুশের দ্বিতীয় ছবি ‘ইডিয়ট’-এ আমি ওর মা হয়েছিলাম। ওখানে চড় মারার দৃশ্য টেক করার আগে অঙ্কুশ বলেছিল, ‘দিদি, আমাকে কিন্তু সত্যি চড় মারবেন।’ সিরিয়াল ‘খোকাবাবু’র খোকা (প্রতীক সেন) এখন বেশ জনপ্রিয়। ও আমার হাতে কম চড় খেয়েছে!’’ গলায় কৌতুক মৌসুমীর।

‘খোকাবাবু’র লাঞ্চব্রেকে কথা বলতে বলতে প্রায় ২৮ বছর পিছিয়ে গেলেন মৌসুমী। তিনি চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী হতে। কিন্তু হয়ে গেলেন অভিনেত্রী। ১৯৯০ সালে তরুণ মজুমদারের ছবি ‘আপন আমার আপন’-এ ডেবিউ। ‘‘এই ছবির পর সাত বছরের বিরতি। সেই সময় আমি চুটিয়ে থিয়েটার করছি।’’ প্রথম ধারাবাহিক তো ‘জন্মভূমি’? ‘‘হ্যাঁ। ‘দায়বদ্ধ’ নাটকে আমাকে প্রথম দেখেন ‘জন্মভূমি’র পরিচালক ইন্দর সেন। তার পরেই ওই সিরিয়ালে জমিদারের ছোটগিন্নির চরিত্রটা পাই। ‘দায়বদ্ধ’র জন্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারও পেয়েছিলাম। ‘জন্মভূমি’তে আমি সবচেয়ে বেশি দিন শুটিং করেছি। প্রায় ১৪০০টা এপিসোড-এ আমি ছিলাম!’’

প্রসঙ্গের টানে আবার ফেরা গেল। আপনি তো ঘরে বাইরে সমান তালে! আবার হাসিতে ভরে গেল মৌসুমীর মুখ, ‘‘শাশুড়িমা আর স্বামী, এই দু’জনকে নিয়ে আমার সংসার। ওঁরা আমার রান্না ছাড়া খেতে চান না। তাই রান্না আমিই করি। দু’বেলা দু’জনের জন্য দু’রকম রান্না! এ সবের জন্য ভোর সাড়ে চারটেয় উঠি। পরিচারিকা এলে ভাল, না হলে বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর মোছা... সব আমিই করি। তার পর রান্না করে, স্নান খাওয়া করে শুটিংয়ে যাই। রাতে ফিরে রুটি-তরকারি করি। সকালে তাড়া থাকলে রাতেই পরের দিনের আনাজটা কেটে রাখি।’’

কিন্তু গাড়ি থাকতে মেট্রো করে স্টুডিয়োয় যাওয়ার কারণ? ‘‘স্রেফ সময় বাঁচাতে। থাকি উত্তর কলকাতায়। স্টুডিয়ো দক্ষিণে। মেট্রোয় গেলে ৪০-৫০ মিনিট বেঁচে যায়। স্টেশন থেকে প্রোডাকশনের গাড়ি থাকে।’’ কিন্তু এতে আপনার স্টারডম কোথাও নাড়া খায় না? ‘‘এখন তো আর উত্তমকুমারের জমানা নেই। তা ছাড়া মানুষের যত কাছাকাছি যাওয়া যাবে, ততই ভাল। কত ফিডব্যাক পাই সহযাত্রীদের কাছ থেকে। এতে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারি,’’ বললেন মৌসুমী।

সব রকম পরিবেশে মাথা ঠান্ডা করে মানিয়ে নেওয়াই মৌসুমীর মূলমন্ত্র। এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পর তাঁর মন চায় অভিনয় শেখানোর একটা স্কুল খুলতে। পরিচালনা করারও ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। কিন্তু টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি নিয়ে এখনও তিনি সড়গড় হতে পারেননি। তাই অভিনয়ের পাশাপাশি সেটে বসে বসেই সে সব শেখার চেষ্টা করেন। অবসর সময়ে বারবার নিজের অভিনয় দেখেন, ত্রুটি মেরামত করার জন্য।

‘খোকাবাবু’র পাশাপাশি ইতিমধ্যে তিনি করেছেন বেশ কিছু ছবিও। ‘‘সব ক’টার নাম এখনও ঠিক হয়নি। এগুলোর মধ্যে আছে ‘আবার বসন্ত বিলাপ’। খরাজ, পরানদা আছেন সেখানে।’’ এখানেও কি মায়ের চরিত্র? ‘‘হ্যাঁ। ছবিতে যে আমার ছেলে সেজেছে, তারও এটা প্রথম ছবি।’’ চড়ের দৃশ্য আছে নাকি? ‘‘না নেই। এই যা! ছেলেটার আর তারকা হওয়া হল না গো!’’ হাসির ফোয়ারায় শেষ হল আমাদের আড্ডা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE