Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

'সেন্সরশিপ সিনেমাকে আটকে রাখতে পারে না'

দু’দিনের কলকাতা সফরে ইরানের পরিচালক মাজিদ মাজিদি দু’দিনের কলকাতা সফরে ইরানের পরিচালক মাজিদ মাজিদি

মাজিদি। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

মাজিদি। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

প্র: হঠাৎ ভারতকে প্রেক্ষাপট করে ছবি করতে চাইলেন?

উ: ইরানের বাইরে ছবি করার কথা মনে হলে ভারতের নামই মাথায় আসত। দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত মিল রয়েছে। সিনেমা, সংস্কৃতির মাধ্যমেই ভারতের সঙ্গে আমার পরিচয়। সত্যজিৎ রায়ের ছবি দিয়ে আমি আপনাদের দেশকে চিনেছি। উনি আমার অন্যতম অনুপ্রেরণা।

প্র: অন্য ভাষায় ছবি করতে সমস্যা হয়নি? অভিনেতাদের বোঝাতেন কী করে?

উ: কথোপকথনের জন্য ভাষা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সিনেমার নিজস্ব একটা ভাষা আছে। যেটা বাকি সব ব্যবধান মুছে দেয়। এক জন সহকারী পরিচালক ছাড়া আমার সব কলাকুশলী ভারতীয় ছিলেন। আর এই ছবিটার জন্য অনেক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ইরানে বসে আমি যে ভাবে ছবি তৈরি করি, এখানেও ঠিক সে ভাবেই করেছি। তবে একটু বেশি সময় লেগেছে, এই যা।

প্র: আপনার ছবিতে অভিনয় সকলেই আগ্রহী। জনপ্রিয় মুখ তো নিতেই পারতেন।

উ: আমি জনপ্রিয় মুখ খুঁজি না। চরিত্রের সঙ্গে মানানসই হবে, এমন মুখ খুঁজি। এই অভ্যেসটা আসলে আমার থিয়েটার করার সময় থেকেই তৈরি হয়েছে বলা যায়।

প্র: ইরানের পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই অস্থির। সেই পরিস্থিতিতেও কিয়েরোস্তামি থেকে শুরু করে জাফর পনাহি, আপনি পরপর আন্তর্জাতিক মানের ছবি করেছেন। এতটা সমস্যার মধ্যে কাজ করেন কী করে?

উ: ইরানে প্রতি বছর প্রায় শ’খানেক ছবি তৈরি হয়। যদি সত্যিই খুব সমস্যা হতো, তা হলে নিশ্চয়ই এত ছবি তৈরি হতো না। পনাহির সমস্যা হয়তো স্বতন্ত্র। বাকি সকলেরই যে সমস্যা হচ্ছে, এমন কোনও মানে নেই। সেন্সরশিপ সর্বত্র আছে। আপনাদের দেশেও আছে।

প্র: অনেক পরিচালকের উপরই সরকারি নজরদারি রয়েছে। অনেককে গোপনীয়তা বজায় থেকে কাজ করতে হয়...

উ: আমার কোনও দিন ছবি করতে সমস্যা হয়নি, এটুকু বলতে পারি।

প্র: আপনি কি সেন্সরশিপে বিশ্বাস করেন? বিশেষত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার।

উ: আমার কাছে রাজনীতি আর শিল্প দুটো আলাদা জিনিস। সেন্সরশিপে সমস্যা হয় ঠিকই। কিন্তু গোটা দেশে যদি একটা নিয়ম বা বিধিনিষেধ চালু থাকে, তা হলে সেটা সকলকে মানতে হয়। তবে আমার মতে সেন্সরশিপ কখনও সিনেমাকে আটকে রাখতে পারে না। শিল্প যে ভাবেই হোক নিজের রাস্তা, নিজের বক্তব্য খুঁজে নেবে।

প্র: পশ্চিম এশিয়া জুড়ে যে টালমাটাল পরিস্থিতি, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আপনার ছবির মাধ্যমে বিশেষ বার্তা দিতে চান?

উ: ছবির মাধ্যমে মনুষ্যত্বের গল্প বলতে চাই। ‘চিলড্রেন অব হেভেন’ বোঝার জন্য যেমন আলাদা কোনও জ্ঞান লাগে না। যে গল্পের শিকড় যত গভীর, তার আবেদন দর্শকের কাছে তত বেশি। সিনেমার নিজস্ব পরিভাষাই মানুষকে সবটা বুঝিয়ে দেয়। আর পরিস্থিতি যেমনই হোক, তার মধ্যেই কাজ করে যেতে হবে। চরমপন্থীদের কাছে যেমন সিনেমা মানেই খারাপ জিনিস। তারা একটা সিনেমা না দেখেই বিধিনিষেধ আরোপ করে দিত। কিছু লোকজন ইসলামের নামে অনর্থ করছে। আমার ছবির মাধ্যমে এটুকু বলতে চাই যে, ইসলাম শান্তি, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্বের কথা বলে।

প্র: সিরিয়া, তুরস্কের সীমান্তে ঘুরেছেন। কোনও ছবি করতে চান?

উ: এই মুহূর্তে ওখানে যা পরিস্থিতি, তাতে ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হবে না। ক্রমাগত যুদ্ধের মধ্যে ইউনিট নিয়ে নিরাপদে ছবি করা সম্ভব নয়।

প্র: ছবির প্রচারের ফাঁকে কলকাতা ঘোরার সুযোগ পেলেন?

উ: কিছু জায়গা ঘুরেছি। সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ওঁর ছেলে অসুস্থ বলে সেটা সম্ভব হল না। মাত্র দু’দিনে একটা শহরের মেজাজ-মর্জি বোঝা সম্ভব নয়। এর পর এলে ভাল করে ঘুরে দেখার চেষ্টা করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE