প্র: ‘ভিআইপি টু’ করার পিছনে কোনও বিশেষ কারণ ছিল?
উ: গল্প আর চরিত্র দুটোই আমার খুব ভাল় লেগেছিল। রঘুবরণ (ধনুষ) আর বসুন্ধরা অর্থাৎ আমি দু’জনে একদম আলাদা জগতের। আর এদের মধ্যে সারাক্ষণ একটা দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। কিন্তু কী ভাবে এরা সেই দ্বন্দ্বকে পিছনে ফেলে নিজেদের সম্পর্ককে আগে নিয়ে যায়, সেটা খুব সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে। আমাকে কোনও ছবির জন্য রাজি করানো কিন্তু খুব মুশকিলের কাজ। সুতরাং বাকিটা আপনারা বুঝতেই পারছেন।
প্র: ২০ বছর আগে আপনি দক্ষিণে প্রভুদেবার সঙ্গে ছবি করেছেন। এ বারের অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: প্রথম দিন সেটে গিয়ে মনে হচ্ছিল, আমি লেবার রুমে আছি। কখনও মনে হচ্ছিল, ক্লাস টেনের ফাইনালে বসেছি। ভীষণ নার্ভাস ছিলাম। পরের দিন কী হবে ভেবে রাতে ঘুমও আসত না। প্রথম দু’দিন এই রকম চলার পর তৃতীয় দিন থেকে একটু ধাতস্থ হলাম। সৌন্দর্য (পরিচালক) আর ধনুষ আমাকে মনোবল জোগাত।
প্র: বলা হয়, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি পেশাদার...
উ: দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি বরাবরই এ রকম ছিল। আমাদের হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক পরে পেশাদারিত্ব শিখেছে। এখন অবশ্য পার্থক্যটা চোখে পড়ে না। মুম্বইয়ে এখন সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য শুরুতেই দিয়ে দেওয়া হয়। আর অভিনেতারাও ঠিক সময়েই সেটে আসেন। হ্যাঁ, কিছু অভিনেতা হয়তো এখনও বেশ দেরি করেই আসেন।
প্র: ‘বাহুবলী’র সাফল্য কি দক্ষিণী ছবিকে গোটা ভারতের আমজনতার কাছাকাছি এনে দিয়েছে?
আরও পড়ুন: মহাজোট’ ছেড়ে বিজেপির ঘরে ফের নীতীশ
উ: নিঃসন্দেহে। এখন শুধুমাত্র দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলে ওদের আলাদা করে ভাবা যায় না। টেলিভিশনের প্রায় সব চ্যানেলেই অনুবাদ করে ছবি দেখানো হয়। নেটফ্লিক্স আসার পর সব ভাষার ছবি হাতের মুঠোয়। হিন্দিভাষীরা শুধুমাত্র হিন্দি ছবিই দেখেন না। মনে আছে, ক’বছর আগে একটি চ্যানেলে গুজরাতি ভাষায় ‘স্পাইডার-ম্যান’ দেখেছিলাম। সে দিনই বুঝেছিলাম, একজন শিল্পীর কাছে ভাষা আর বাধা নয়।
প্র: আপনি এত কম ছবি করেন যে, ভক্তেরা মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে যায়।
উ: ‘না’ বলা আমার কাছে খুব সহজ। জীবনের এমন একটা পর্যায়ে আছি, যেখানে জোর করে কোনও কাজ করি না। অভিনয় করি স্রেফ শখের জন্য। তাই কোনও ছবি বা চরিত্র সম্পর্কে যতক্ষণ না ৩০০% নিশ্চিত হচ্ছি, ততক্ষণ সেই ছবিতে কাজ করি না। ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও খুব ব্যস্ত থাকি। আর নিজের কাজ নিজেই করতে ভালবাসি।
প্র: এখন তো নিসা আর যুগ দু’জনেই বড় হয়ে গিয়েছে। হাতে তো সময় থাকার কথা!
উ: একজন মায়ের ব্যস্ততা কখনও কমে না। নিসা যতই বড় হয়ে যাক না কেন, আমাকে ওর সব সময়েই প্রয়োজন পড়বে। সেই প্রয়োজনের ধরনগুলো বদলে যেতে পারে। একবার মা হয়ে গেলে একটা চক্র চলতে থাকে। কখনও মাসি, কখনও ঠাকুমা। আর এটা শেষ হওয়ার নয়। একটা সিক্রেট বলি: বাচ্চারা চায়, আমরা সব সময়ে ওদের ফাইফরমাশ খাটি। ছেলেমেয়েরা যতই বড় হয়ে যাক না কেন, আমাদের কাছে তারা সব সময় ছোটই থাকে।
প্র: নিসার কি অভিনয়ে আসার
পরিকল্পনা রয়েছে?
উ: ওর বয়স এখন মোটে ১৪ বছর। আমরা বা মিডিয়া কি ইন্ডাস্ট্রি কারও থেকে যেন ওর উপর কোনও রকম চাপ না দেওয়া হয়, সেটা আমি সব সময় খেয়াল রাখি। সময় এলে ও নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে। ও যে রাস্তাটা বাছবে, আমি আর অজয় তাতে সব সময় সাহায্য করব।
প্র: পাপারাৎজি যে ভাবে স্টার কিড্সদের অনুসরণ করে, তাতে নিশ্চয়ই আপনার আপত্তি রয়েছে?
উ: নিসা তো পারলে চিৎকার করে বলে, ‘লিভ মি অ্যালোন’।
এই পরিস্থিতিতে ছোটদের মনের অবস্থা কী হয় ভাবুন তো। আমার বাচ্চাদের সে ভাবেই মানুষ করার চেষ্টা করেছি, যাতে তারা সেই প্রেশারটা নিতে পারে। তাও আমার মনে হয়, মিডিয়ার কোথাও না কোথাও একটা সীমারেখা টানা উচিত।
প্র: ২৫ বছরের কেরিয়ারে একটাও বাংলা ছবি নেই কেন?
উ: যে প্রস্তাবগুলো পেয়েছিলাম, তেমন পছন্দ হয়নি। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করব। আমার কাছে তামিল, তেলুগু বলার চেয়ে বাংলা বলা অনেক সহজ (হাসি)!
প্র: অনেক নামী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। পরিচালক হিসেবে অজয় দেবগণকে কী ভাবে
ব্যাখ্যা করবেন?
উ: আমি তো রোজ অজয়ের কানের কাছে বলতে থাকি, আমাকে ছবিতে নেওয়ার জন্য। অজয় শুধু পরিচালক নয়, একজন ভাল অভিনেতাও বটে। তাই অভিনেতাদের সঙ্গে ওর বোঝাপড়াটা ভীষণ ভাল। বাজেট আর ফিল্ম মেকিংটাও কিন্তু দারুণ বুঝতে পারে অজয়।
প্র: আপনাদের সুখী দাম্পত্যের রহস্যটা কী?
উ: এক হাতে তালি বাজে না। অজয় আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থেকেছে। এই সম্পর্কে আমাদের দু’জনেরই ৫০% পার্টনারশিপ আছে। আর সম্পর্কে উপর-নীচ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্র: নেপোটিজম নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি উত্তাল। আপনার কী মত?
উ: আমার কাছে নেপোটিজম শব্দটাই ভীষণ অদ্ভুত। বাবা-মায়ের পথ অনুসরণ করতে চায় ছেলেমেয়েরা। তাই আমাদের সমাজে ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার আর উকিলের ছেলে উকিল হয় সাধারণত। এটা তো মানুষের প্রকৃতি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে নজর দিলে বুঝতে পারবেন, কে কত প্রভাবশালী তার উপর পুরো সমীকরণটা নির্ভর করছে। ইন্ডাস্ট্রিতে তারাই সাফল্য পেয়েছে, যারা পরিশ্রমী আর দক্ষ। সুপারস্টারের ছেলে বা মেয়ের তকমা আখেরে কোনও কাজে আসে না। এই বিবাদ ভিত্তিহীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy