রানি মুখোপাধ্যায়।
সামনের সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে ‘হিচকী’। তার প্রচারে ব্যস্ত রানি মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার এসেছিলেন আনন্দ প্লাসের দফতরে। গ্রিন ফুল স্লিভ টপ, রিপ্ড জিনস, খোলা চুলে রানিকে দেখলে মনে হতে পারে, সময় যেন থমকে গিয়েছে! বাঁ হাতের অনামিকায় হিরের আংটির দ্যুতি, ঘড়ির সঙ্গে হিরের রিস্টলেট... মিনিমালিস্ট লুকেও রানি অনন্যা।
প্র: নয়না মাথুরের চরিত্রটির জন্য কেমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
উ: ভারতে ট্যুরেট সিন্ড্রোম নিয়ে সে ভাবে সচেতনতা নেই। মুম্বইয়ের কয়েক জন শিশু, যাদের এই সিন্ড্রোম আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে স্বাভাবিক ভাবেই তারা ও তাদের বাবা-মা এই বিষয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। আমি ইউটিউবে কিছু ভিডিও দেখেছিলাম। তবে আমাকে এমন কিছু করতে হতো যা ন্যাচারাল মনে হবে। ব্র্যাড কোহেন, যিনি নয়না চরিত্রটির অনুপ্রেরণা, তাঁর সঙ্গে স্কাইপে কথা হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যতটা পেরেছি জানার চেষ্টা করেছি। সেটাই আমার চরিত্রটাকে বুঝতে সাহায্য করেছে।
(কথাবার্তার মাঝেই এল রানির জন্য বানানো স্পেশ্যাল কেক। রানি অভিনীত বিভিন্ন চরিত্র দিয়ে সাজানো কেকটি। যা দেখে ভীষণ খুশি হলেন অভিনেত্রী। এল আরও পেস্ট্রি, স্ন্যাকস... আমরা অনুরোধ করেছিলাম তাঁকে কেক খাওয়ার জন্য। উত্তরে হেসে বললেন, ‘‘স্ত্রী সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও স্বামী যখন অন্য মহিলার দিকে তাকান, স্ত্রী বলেন, ‘কী দেখছ?’ স্বামী কী বলে জানেন তো? ‘ওটা শুধুই দেখার। ছোঁয়ার জন্য নয়।’ এই খাবারগুলো দেখে আমিও সেই কথা বলব (হাসি)।’’
প্র: নয়না নিজের দুর্বলতাকেই শক্তি বানিয়েছে। রানির জীবনেও কি এমন কোনও ঘটনা আছে?
উ: আমি তোতলাতাম। অভিনেতা হওয়ার পথে সেটা বড় বাধা ছিল। আমি সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি।
প্র: এই সময়ের নিরিখে কোন কোন সামাজিক বাধার (হিচকী) বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করা উচিত?
উ: ‘হিচকী’র প্রচারে একটি বই বের করেছি। যেখানে ইংরেজি অক্ষর ‘এ’র মানে অউরত কো মর্দ সে কম সমঝনে কী হিচকী। ‘বি’ মানে বেটিও কো বেটে সে কম সমঝনে কী হিচকী। আর ‘সি’র মানে ক্যারেক্টার জাজমেন্ট। যেমন বাঙালিদের মধ্যে ভীষণ ভাবেই আছে পরনিন্দা পরচর্চা... এই অভ্যেসগুলো আমাদের এ বার বদলে ফেলা উচিত।
প্র: আজ আমাদের সংবাদপত্রেরও জন্মদিন...
রানি: ওহ! তাই নাকি? হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। তা হলে তো খুব ভাল দিনে এসেছি।
প্র: সামনে আপনারও জন্মদিন। কিছু বিশেষ প্ল্যান আছে?
উ: না, সে ভাবে নয়। আদিত্য ও আদিরার সঙ্গেই কাটাব। এই প্রথম বাবা আমার সঙ্গে নেই। তাই এ বার একটু লো প্রোফাইল থাকব।
প্র: কলকাতায় এসেছেন। মাসির (দেবশ্রী রায়) সঙ্গে দেখা করেছেন?
উ: না গো। আমরা সকলেই এত ব্যস্ত, সময়ই হয়ে ওঠে না। দিদার সঙ্গে সকালেই দেখা করলাম। দিদা তো বাড়িতেই থাকেন। সেটা একটা বড় সুবিধে। আদিরার সঙ্গে অবশ্য দিদার স্কাইপে কথা হয়। তবে দিদা শিগগিরই মুম্বই যাবে।
প্র: দিদা কী খাওয়ালেন?
উ: এক থালা রসগোল্লা! খাওয়া নিয়ে আপনাদের যে লাইনটা বললাম, দিদাকেও তা-ই বলেছি (হাসি)। তার পর সেটা আমার টিমকে খাইয়ে দিয়েছি।
প্র: এই যে এখন আপনি কলকাতায়, আপনার অনুপস্থিতি আদিরা কী ভাবে নেয়?
উ: ঠিক সে ভাবেই, যে ভাবে ও ওর বাবার অনুপস্থিতি মানিয়ে নেয়!
(আলোকচিত্রীর ক্যামেরার খচাখচ শব্দে প্রশ্ন শুনতে পাচ্ছিলেন না রানি। বললেন, ‘‘ও খচাখচ দাদা! ছবি তো নিতেই হবে। এত সুন্দর মুখ কোথায় পাবেন? আর পেলে তো ছবি তোলা বন্ধ করবেনই না। কিন্তু প্রশ্নগুলোও তো শুনতে হবে!’’)
প্র: মা-ই তো সন্তানের প্রথম শিক্ষিকা। সেই হিসেবে আদিরাকে কী শেখাচ্ছেন?
রানি: এখন ওর যা বয়স, তাতে বারবার বলছি, চকলেট বেশি খেয়ো না। আর খেলেই ব্রাশ করে নাও। ওর মিষ্টি খাওয়ার দিকে খুব ঝোঁক। পঞ্জাবি বাবা ও বাঙালি মায়ের কম্বিনেশন! বুঝতেই পারছেন।
প্র: এই প্রজন্মের বেশির ভাগ তারকা তাঁদের ছেলে-মেয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। আপনি ব্যতিক্রম...
উ: আদিরার ছবি তো আমার মনেই আছে, লোককে দেখাতে আর কত ছবি তুলব? আমি চাই আদিরা আর পাঁচ জন সাধারণ ছেলে-মেয়ের মতোই বড় হোক। সেলেব্রিটির সন্তান হলে এমনিই অনেক চাপ। তার উপর আমরাও যদি চাপ দিই, সেটা ওর সুস্থ বিকাশের জন্য ঠিক নয়। সমুদ্রসৈকতে বা পার্কে, ও যেন চাপমুক্ত হয়ে চলাফেরা করতে পারে, সেটাই আমাদের চেষ্টা।
প্র: এই ছবি দিয়ে কোন সামাজিক বার্তা দিতে চাইছেন?
উ: জীবনে চলার পথে অনেক বাধা আসে। সেই বাধা অতিক্রম করার অনুপ্রেরণা জোগাবে ‘হিচকী’।
ফুড পার্টনার: ফ্লুরিজ, পার্ক স্ট্রিট
ছবি: বিশ্বনাথ বণি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy