Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আমরা হলাম ‘অ্যান্টি’সোশ্যাল

নিজেদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি তারকা দম্পতি ঋত্বিক- অপরাজিতার নিজেদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি তারকা দম্পতি ঋত্বিক- অপরাজিতার

পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০০:০৬
Share: Save:

ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং অপরাজিতা ঘোষ। এই মুহূর্তে টলিউডের ব্যস্ততম দম্পতি বললে একবিন্দু অত্যুক্তি হবে না। প্রায় দু’মাস লাগল তাঁদের দু’জনকে একসঙ্গে একটি ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য পাকড়াও করতে! কখনও ঋত্বিক শ্যুটিং করতে ফ্রান্সে আর অপরাজিতা উত্তরবঙ্গে, আবার কখনও শুনলাম তাঁরা ভেকেশনে গিয়েছেন কেরল! অগত্যা অপেক্ষা... শেষমেশ মুশকিল আসান করলেন অপরাজিতা। গাঙ্গুলিবাগানে তাঁদের ফ্ল্যাটে হল কর্তা-গিন্নির সঙ্গে জমাটি আড্ডা...

প্র: পাক্কা দু’মাস লাগল টলিউডের বিজিয়েস্ট কাপলকে একসঙ্গে বসাতে...

ঋত্বিক (প্রশ্ন শেষ করার আগে ঋত্বিক স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হাড়াহুড়ো করে বলে উঠলেন) এই না-না, একেবারেই এই সব বিজিয়েস্ট-ঠিজিয়েস্ট কিছু নয়। গত ক’টা মাস একটু ব্যস্ত ছিলাম, এই যা। অপরাজিতারও রোজ শ্যুটিং থাকে। পান্ত আছে। আর ফোনের প্রতিও আমার অনীহা আছে।

অপরাজিতা: ওর কথার সূত্র ধরেই বলছি, যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে আমরা দু’জনেই সমান খারাপ। আমাদের আনসোশ্যাল নয়, ‘অ্যান্টি’সোশ্যাল বললে ঠিক হয়।

প্র: অপরাজিতা ডেলিসোপ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। আর ঋত্বিক বেশ কয়েকটা ছবির শ্যুটিং করছেন। এর মাঝে বেড়ানোর প্ল্যানটা তো দিব্যি করে নিচ্ছেন!

ঋত্বিক: এই ব্যাপারটা কী জানেন, আপনি চাইলে কাজটা ঠিক করে নিতে পারবেন। আপনার এই ইন্টারভিউ নেওয়ার মতো (বলেই হাসতে লাগলেন)।

অপরাজিতা: এই জন্যেই আমি বলেছিলাম যে, আমরা অ্যান্টিসোশ্যাল। ট্রাস্ট মি ইউ টুক দ্য কেক!

প্র: এত ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে ছেলের জন্য সময় বের করেন কী ভাবে?

অপরাজিতা: পান্তকে আমরাই দেখি। দু’জনেই যদি না থাকি, তখন আমার মা-বাবা দ্যাখেন। আর এমনিতে আমার শ্যুটিং থাকলে ঋত্বিক দ্যাখে। বাড়িয়ে বলছি না, ঋত্বিক এই ব্যাপারটা অসম্ভব ভাল পারে। আমার মা তো ঋত্বিক সম্পর্কে মাঝে মাঝে এত প্রশংসা করতে থাকে যে, বাবা চাপে পড়ে যায়। ঋত্বিককে বলেও তুমি এমন কী করো যে, তোমার শাশুড়ি জামাইয়ের প্রতি এত ইমপ্রেসড!

প্র: দারুণ তো! ঋত্বিকের পেরেন্টিং সিক্রেটটা কী?

ঋত্বিক: (হাসতে হাসতে) আসলে আমি অনেক বাচ্চার সঙ্গে বড় হয়েছি। দাদা, বোনের ছেলেমেয়েদের দেখেছি। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারি। আমার সঙ্গে পান্তর খেলাটা খুব জমে।

প্র: ‘পান্ত’ নামটা কার দেওয়া?

অপরাজিতা: আমার দেওয়া। ঋত্বিক ডাকে ভুতলু। আর ভাল নাম উপমন্যু। তবে ওর আরও নাম আছে। আসলে আমরা মেয়ের নাম ঠিক করে রেখেছিলাম। ছেলে হওয়ার পর মনে হল, আগে ওর নাম দিই।

ঋত্বিক (হেসে পাশ থেকে যোগ করলেন) তা না হলে অন্য কেউ নাম দিয়ে দেবে।

আরও পড়ুন: ‘মেয়েকে মিস করছি’, কেঁদে ভাসালেন শ্রীদেবী

প্র: ছেলে কার বেশি ন্যাওটা, মা নাকি বাবা?

অপরাজিতা: ঋত্বিক তুই বল, এটা আমার বলতে... ও প্রচণ্ড বাবা-বাবা করে ঠিকই, তবে এটা ব্যালান্সড। ঋত্বিক এত রকমের খেলা খেলে ওর সঙ্গে! একদিন ফিরে এসে দেখলাম একজন আলিবাবা অন্য জন ডাকাত, চার দিন পর অন্য কিছু। সারাক্ষণ বাবা আর ছেলে মিলে কিছু একটা চলছে। তবে এটা শুনে যা মনে হচ্ছে, তা নয়। ও আমারও ন্যাওটা।

প্র: এখনও তুই তোকারি চলছে...

অপরাজিতা: আমরা চেষ্টা করেছিলাম ‘তুই’ বলাটা ছাড়তে। তার পর ডাকতে গিয়ে মনে হল, ‘তুমি’টা আবার কে! অচেনা মানুষকে ডাকছি মনে হচ্ছে। বাচ্চার ক্ষেত্রে কী হবে জানি না, আমাদের মধ্যে ইটস নট ওয়র্কিং।

প্র: কাজের চাপ, দায়িত্ব.. এ সবের কারণে সময়ের অভাব। এটা কিন্তু বর্তমান দাম্পত্য জীবনের একটা সমস্যা। কী ভাবে সামলান এ দিকটা?

ঋত্বিক: দেখুন, আপনার জীবনে প্রায়োরিটিটা কী, সেটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি সুস্থ, শান্তিপূর্ণ একটা জীবন চান, তা হলে সে ভাবেই নিজেকে সাজিয়ে নেবেন। যে মানুষটার সংসারের প্রতি সময় নেই, তার প্রায়োরিটি সংসার নয়। আমি অন্তত চেষ্টা করে দুটো দিক ব্যালান্স করি না। কাজ থেকে এসে আমি সব ভুলে যাই। কতটা ভুলি, বলে বোঝাতে পারব না। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমরা আলোচনা করি, কিন্তু নিজেদের কাজ নিয়ে অলমোস্ট কথা বলি না।

প্র: ঋত্বিক কি বাজার করা, কল খারাপ হলে প্লাম্বার ডাকার মতো কাজগুলো কখনও করেন?

ঋত্বিক: সব নাম্বারগুলো অপরাজিতার ফোনে সেভ করা রয়েছে (হাসতে হাসতে), তাই ও করে। আমার ফোনে নাম্বার নেই।

অপরাজিতা: এই ব্যাপারটা বুঝে একমাত্র গ্যাস বুকিংয়ের নাম্বারটা আমি সেভ করিনি।

প্র: আপনাদের ইমেজটা বেশ বোহেমিয়ান গোছের। কিন্তু আপনারা আসলে কী রকম?

অপরাজিতা: এটা একটা অদ্ভুত কনট্রাস্ট। হয় আমরা সংসার করি, নয়তো কোথাও চলে যাই। ছানাও সে ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত। তবে আমরা ওয়র্কোহলিক নই। যখন কাজ করি, মন দিয়ে করি। কিন্তু যখন বাড়ি ফিরি, বাড়িতেই আসতে চাই।

ঋত্বিক: আমার তো নিজেকে সংসারী বলেই মনে হয়। কাজ শেষ করে ৯৯ শতাংশ দিন বাড়িতেই ফিরতে চাই, এ জন্য তাড়াহুড়ো করি। ২০-২৫ দিনের আউটডোর থাকলে মনে হতে থাকে, এর পর এমন ছবি করব, যাতে আউটডোর থাকবে না।

অপরাজিতা: ঋত্বিক আসলে ফ্যামিলি-সিক। আমাদের জীবনে পার্টি বা সোশ্যাল গ্যাদারিং খুব কম। তবে মা হওয়ার আগে-পরের মধ্যে বিরাট তফাত রয়েছে। আগের মতো হুটহাট বেরিয়ে পড়া এগুলো কমে গিয়েছে। রাত তিনটেয় প্যাকআপ হলেও আমি জানি সকাল সাতটায় আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে। ছেলের স্কুল আছে। তখন চাপ মনে হয়। কিন্তু তার পর ভাবি, দিস ইজ হোয়াট আই ওয়ান্টেড। আর যখন ভাল লাগে না, সবাই মিলে সংসার ছেড়ে ঘুরতে চলে যাই।

প্র: এহেন সংসারী ঋত্বিক-অপরাজিতা সঞ্চয়ী?

(পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসি) ঋত্বিক: সঞ্চয়ী নই, তা নয়। তবে টাকার পিছনে ছোটা হয়নি, তাই সঞ্চয়টা বেশি হয়নি।

অপরাজিতা: আমি দেখেছি, চাওয়ার ক্ষেত্রে এমন জিনিস আসে না, যেগুলো কেনা যায়। আমার সন্তান যেন তাকে দুধে ভাতে। তার জন্য যেটুকু চাই, সেটুকু হলেই হল। আমরা বেড়াতে যেতে চাই, কিন্তু তার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ট্রিপে যেতে হবে তা নয়। কলকাতার বাইরে কাছাকাছি কোনও জায়গায় গেলেই হবে।

এখানেই শেষ হল আমাদের আড্ডা। অপরাজিতাকে শ্যুটিংয়ে বেরোতে হবে। আর ঋত্বিক যাবেন শ্বশুরবাড়ি থেকে ছেলেকে আনতে। এই অভিনেতা দম্পতির অভিনয় যতটা সাবলীল, বাস্তবেও ঋত্বিক-অপরাজিতা কিন্তু ততটাই ভনিতাহীন। স্বাভাবিক। তাই কি পরদায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন যে কোনও চরিত্র অবলীলায়? উত্তর জানা নেই, তবে আন্দাজ এই ‘স্বাভাবিকত্বে’ই তার রহস্য লুকিয়ে ...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE