সুমন
প্র: প্রায় তিন বছর হতে চলল কলকাতা ছেড়েছেন। কী মনে হচ্ছে, ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল?
উ: আমি কিন্তু কেরিয়ারের ঝুঁকি নিয়েই মুম্বই এসেছিলাম। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না। আমার বাবাও জানতে চান, কেন কলকাতায় কাজ করছি না। আমারও যে দংশন হয় না, তা নয়। কিন্তু আমি তো ঠিক কলকাতা থেকে পালিয়ে আসিনি বা ইস্তফা দিইনি। ওখানে আমার জায়গাটা তৈরি হয়েই আছে। তাই শহর ছাড়া নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই।
প্র: তার মানে কলকাতাকে মিস করছেন না...
উ: কাজের দিক দিয়ে তো নয়। কলকাতায় থিয়েটার বা চলচ্চিত্রের যা হাল! আমি খুব অল্প ছবিই করেছি। কিন্তু কোনও দিন ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত নিয়মগুলো মানিনি। গিল্ডের একটা ভয়ানক দাদাগিরি চলে। এক নির্দিষ্ট প্রযোজনা সংস্থা মনোপলি চালাচ্ছে। থিয়েটারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। হলের ডেট পাওয়া নিয়ে, বিভিন্ন উৎসবে কিছু নির্দিষ্ট নাট্যগোষ্ঠীই সুবিধে করে নিচ্ছিল। এ সবও মেনে নেওয়া যেত, যদি তাতে আদৌ থিয়েটারের উন্নতি হতো। কিন্তু হাতে গোনা কয়েক জনের ক্ষমতার আস্ফালন ছাড়া তো আর কিছুই দেখি না। স্রেফ ক্ষমতার জোরেই এক নাট্যকার (প্রেমাংশু রায়) সরকারি ওয়র্কশপে গিয়ে মহিলাদের অশালীন প্রস্তাব দেয়। এমন ঘটনাও ঘটছে।
প্র: লোকে তো বলবে শহর ছেড়ে গিয়ে আপনি শুধু নিন্দেই করছেন...
উ: কলকাতা ছাড়লেও সব খবর আমি রাখি। আর এমনি এমনি তো ছাড়িনি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বেরিয়ে এসে স্বস্তি পেয়েছি। তবে যদি মনে করি কলকাতায় এসে থিয়েটার করব, সেখানে কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। কিন্তু আমার আঁক়ড়ে ধরাটা বড় বেশি হয়ে যেত। একটা অকারণ লড়াই আমার কাজের ক্ষতি করত। ছ্যাঁচড়ামি, অসভ্যতা করতে পারব না। আর বাংলায় থিয়েটার করলেও নতুন কিছু করব। ওই ফ্যাক্টরি চালানোর মতো নয়।
প্র: তা হলে মুম্বই এখন আপনার কাছে সব পেয়েছির দেশ?
উ: তা নয়। মুম্বই স্বর্গরাজ্য এমনটা একবারও বলছি না। যে ধরনের কাজ করতে চাই, তার মূল্যায়ন এখানেই হবে, তাও নয়। এখানের থিয়েটারেও ফিল্মস্টারদের কদর বেশি। সাধারণ থিয়েটার স্ট্রাগল করছে। প্রোডাকশন খরচ খুব বেশি। কলকাতার অবস্থা সে তুলনায় অনেক ভাল।
প্র: তা হলে সুমন মুখোপাধ্যায় কি মুম্বইয়ে এখনও স্ট্রাগল করছেন?
উ: এখানে কদর পাওয়া মুশকিল। কলকাতায় আমি যত বড় কাজই করে আসি না কেন, মুম্বইয়ে এসে কিছু না করতে পারলে কেউ পাত্তা দেবে না। তবে এখানে অনেক রাস্তা খোলা পাচ্ছি। কাজের অভাব নেই। থিয়েটার-ফিল্ম খুব জনপ্রিয়। যেটা করতেই প্রাথমিক ভাবে আমার মুম্বই আসা। জি-এর থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলাম পুরনো বা ভাল থিয়েটারগুলোকে শ্যুট করার। যা মুম্বইয়ে থাকতে আর্থিক ভাবে সাহায্যও করেছে। ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রুদালি’ মঞ্চে শ্যুট করলাম প্রথমে। তার পর ‘ডলস হাউ়জ’, ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘চোখের বালি’ করেছি। এই তিন বছরে ১০টা মতো নাটক করেছি।
প্র: নিজস্ব প্রযোজনার কথা ভাবছেন না?
উ: ওই অডিটোরিয়াম ভাড়া নিয়ে মাসে দু’দিন শো রেখে ব্যাপারটা করতে চাই না। থিয়েটার কেন শুধু মঞ্চেই করতে হবে? নয়তো বা রাস্তায়? একটা আর্ট গ্যালারিতেও করতে পারি। কিংবা কোনও বাড়িতে। কলকাতায় থাকতে একবার সেটা করেওছিলাম। আসলে একটা অন্য ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইছি।
প্র: ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় গিয়ে যে কাজটা করলেন, সেটাও কি এই পরীক্ষারই ফসল?
উ: বলতে পারেন। এনএসডি থেকে ওদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের নিয়ে একটা প্রোডাকশন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি চেখভের ‘চেরি অর্চার্ড’ করেছিলাম। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে করিনি আর ফিউচারিস্টিক রেখেছিলাম। ভাল লেগেছিল কাজ করতে। এখনকার ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতের থিয়েটার নিয়ে কী ভাবছে, বুঝতে চাইছিলাম। নাকি তারা সিনেমার দিকেই যাবে।
প্র: কী বুঝলেন?
উ: সিনেমার পাল্লাই ভারী মনে হয়!
প্র: মুম্বইয়ে তা হলে কি শুধুই থিয়েটার-ফিল্ম করবেন?
উ: না। ওয়েব ফিল্ম, ফিচার ফিল্ম করার ইচ্ছে আছে। কিছু দিনের মধ্যেই ভাল খবর দিতে পারব।
প্র: কলকাতায় আপনার সমসাময়িক নাট্যকারদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে?
উ: শুধু ব্রাত্য (বসু) আর কৌশিকের (সেন) সঙ্গে রয়েছে।
প্র: কলকাতা ছেড়ে স্বস্তি পেয়েছেন বলছেন। আর স্বস্তিকাকে নিয়ে কী বলবেন?
উ: রোজই তো শুনতে পাই আমাদের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে।
প্র: সেটা কি সত্যি?
উ: আমরা মুম্বই-কলকাতা যাতায়াত করছি। দু’জনেই কাজের মানুষ। এখন ওর কলকাতায় পরপর কাজ। মুশকিল কী জানেন তো, কিছু দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একসঙ্গে ছবি না দিলেই লোকে ভাবে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে আমরা ব্লার্ব কালচার বলে একটা কথা বলতাম। পুরো বইটা না প়়ড়ে শুধু বইয়ের ব্লার্ব পড়েই অনেকে সবজান্তা সাজত। এখনও সেটা দেখতে পাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy