Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গুটি থেকে প্রজাপতি

সবে পাখনা মেলেছে দুটো প্রজাপতি। আদিত্য আর ইশা। তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করাল আনন্দ প্লাসসবে পাখনা মেলেছে দুটো প্রজাপতি। আদিত্য আর ইশা। তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করাল আনন্দ প্লাস

আদিত্য-ইশা। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

আদিত্য-ইশা। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

পুজোয় ময়দানে তাঁদের সামনে প্রসেনজিৎ, দেব, যিশু...সম্মুখ সমরে ভয় লাগছে না? মোতিলাল নেহরু রোডে প্রযোজকের অফিসে বসে বেশ আত্মবিশ্বাসী গলায় আদিত্য বললেন, ‘‘ছবি তৈরির পিছনে অনিন্দ্যদা, শিবুদা, নন্দিতাদির মতো মাথা রয়েছে। ওঁদের ক্রিয়েটিভিটি, ব্যবসায়িক বুদ্ধি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। নার্ভাস হয়েও কোনও লাভ নেই। তাই আমরা অনেকটা নিশ্চিন্তে।’’ পাশে বসা ইশা অবশ্য বলে উঠলেন, ‘‘আমরা নয়, আমি বল। কারণ আমি বেশ নার্ভাস। যতই হোক প্রথম ছবি বলে কথা!’’

আদিত্য যতটাই শান্ত। ইশা ততটাই ছটফটে। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর নায়ক-নায়িকা আদিত্য আর ইশা। গান আর ট্রেলারের দৌলতে ধীরে ধীরে বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। ইশার পরদায় মুখ দেখানো এই প্রথম নয়। ‘ঝাঁঝ লবঙ্গ ফুল’ ধারাবাহিকে ছিলেন। অনিন্দ্যর সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলেন ইশা। তার পরই ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর প্রস্তাব আসে তাঁর কাছে।

যদিও অভিনয়কে পেশা করার ভাবনা একেবারেই ছিল না ইশার। ‘‘ধারাবাহিকের প্রস্তাব, কি সিনেমা দুটোই হঠাৎ করে এসেছে। ধারাবাহিকের জন্য অডিশন দিয়ে যে সুযোগ পেয়ে যাব, ভাবিনি।’’ তাঁর পরিবারের সঙ্গে অভিনয়ের দূর-দূরান্তে কোনও সম্পর্ক নেই। এই জগৎ সম্পর্কেও ঠিক মতো ধারণা ছিল না। তাই প্রাথমিক ভাবে একটু দোনামনা ছিলই ইশার বাবা-মায়ের।

আদিত্যের ক্ষেত্রে বিষয়টা আবার উল্টো। জোছন দস্তিদারের নাতি, খেয়ালি দস্তিদারের ছেলের সিনেমা করাই স্বাভাবিক মনে হতে পারে। আদিত্য চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে থিয়েটার করছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় সকলেই তাঁকে চেনেন। যে কারণে ইশার মন্তব্য, ‘‘যেখানেই যাই দেখি, সকলে ওকে চেনে। ‘আরে বুশকা, তোকে তো ছোট্ট থেকে দেখেছি’। বুঝুন আমার অবস্থাটা!’’ তবে সকলেই তাঁকে চেনে বলে ‘কলার তোলার’ কোনও ব্যাপার নেই আদিত্যর মধ্যে। লাজুক হেসে বললেন, ‘‘অভিনয় করার কথা আমিও ভাবিনি। অনিন্দ্যদাই দুম করে ঠেলে দিলেন। টুকটাক লেখা, নির্দেশনা বা ভিডিয়ো এডিট— এগুলোই ভাল লাগে।’’ চিত্রনাট্য লিখছেন, নিজের মতো করে পরিচালনায় আসারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন আদিত্য।

আরও পড়ুন:গৌতমদার কাছে চিরকৃতজ্ঞ

ইশার কথা থেকে আদিত্যের ডাকনামটা জানা গেল। যদিও তিনি নিজে তাঁর ভাল নামটা গোপন করে গেলেন। ইশা আসলে তাঁর ডাকনাম। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ভাল নামটা ভীষণ কমন। ওটা বলতে চাই না। ছবির কনট্র্যাক্ট পেপারে শুধু নামটা রয়েছে,’’ বললেন ছবির শাওন। নাম বলতে না চাইলেও জানা গেল, ইশা এলএলবি করেছেন। হাইকোর্ট পাড়া তো তা হলে একজন সুন্দরী আইনজীবী মিস করল! এ বার জোরে হেসে ফেললেন ইশা। ‘‘কে জানে, দশ বছর পরে হয়তো আবার আমাকে ওখানেই দেখা যাবে।’’ তা হলে অভিনয় কেরিয়ার নিয়ে এখনও নিশ্চিন্ত নন? বেশ কিছু কাজের প্রস্তাব এলেও হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিতে চান না ইশা বা আদিত্য।

ছবির ট্রেলার দেখে বোঝা যায়, অন্তর মানে আদিত্য বেশ মুখচোরা, ধীর-স্থির। সত্যিই কি তাই? জবাব আদিত্য নিজেই দিলেন, ‘‘বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলায় ধীরে ধীরে সড়গড় হচ্ছি। ছবি দেখে দর্শক কী বলবেন, তা নিয়েও কৌতূহল আছে। তবে আমি সত্যিই চুপচাপ।’’ পাশ থেকে সায় দিলেন ইশাও।

আদিত্য আর ইশা।

সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে স্নাতক করার পর কেমব্রিজ স্কুল অব আর্টস থেকে মাস্টার্স করেছেন আদিত্য। সেটে থাকাকালীন অভিনয় না করলে মনিটরের সামনে গিয়ে বসতেন। আর্ট ডিরেকশন, কস্টিউম, লাইট সব কিছুর খুঁটিনাটি নজর করতেন। এটা এক রকম শিক্ষানবিশী পর্বও ছিল তাঁর কাছে। তার আগে অবশ্য সৃজিত মুখোপাধ্যায়, রিঙ্গোর সঙ্গেও সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

আদিত্য কম কথা বললেও পছন্দের বিষয় পেলে তিনি অনর্গল। কোন ধরনের সিনেমা পছন্দ করেন জিজ্ঞেস করতে উৎসাহ পেয়ে গেলেন। ‘‘বাড়িতে প্রজেক্টর আছে, সেখানেই ছবি দেখি। অজস্র ডিভিডি আছে। মা-বাবার বাংলা ছবির কালেকশন বিশাল। আমার আবার হিন্দি-ইংরেজির প্রচুর ডিভিডি। বছরে ৫০০টা ছবি দেখার একটা টার্গেট আমার থাকে। সায়েন্স ফিকশন, ফ্যান্টাসি থ্রিলার, ডার্ক কমেডি বেশি ভাল লাগে। ট্যারান্টিনো, নোলান, স্করসেসি— এঁদের ছবি ভাল লাগে। মানে যাঁরা ইংরেজি ছবির ধারা বদলে দিয়েছিলেন।’’ ইশা অবশ্য ততটা সিনেমা পাগল নন। সঙ্গ দোষে বা গুণে এখন বরং উৎসাহী হয়েছেন। আদিত্যকে বলছিলেন, ভাল কিছু সিনেমার হদিস দিতে।

আরও পড়ুন:দুর্গার আগেই কার্তিক চলে আসছেন ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ নিয়ে

অন্তর আর শাওনের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছবিতে। প্রশ্নটা কোন দিকে ঘুরবে বুঝতে পেরে ইশা আগে ভাগেই বলে দিলেন, ‘‘আমি এই ব্যাপারে কিছু বলব না। আপাতত অভিনয়ে ফোকাস করতে চাই।’’ যদিও তাঁর হাসি বলে দিচ্ছিল, পিছনে গল্প আছে। আদিত্য অবশ্য স্বীকার করে নিলেন, বছর তিনেক ধরে তিনি একটি সম্পর্কে রয়েছেন।

তাঁদের দু’জনের পুজোই এ বার অন্য রকমের। ছবি রিলিজ করে গেলেও তার হ্যাংওভার থাকবেই। সাক্ষাৎকার, ফোটোশ্যুটে অভ্যস্ত হচ্ছেন দু’জনে। ইশার কথায়, ‘‘আমাদের দিনগুলো বদলে গিয়েছে। শ্যুটিং চলাকালীন অন্য রকম ছিল। এখন আমরা ফাস্ট ফরওয়ার্ড মোডে চলছি। আজ এখানে, তো কাল ওখানে। তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছি।’’

বোঝা গেল প্রজাপতি কিন্তু সত্যিই উড়ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE