Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ধাঁধার প্যাঁচে ছবির গল্প

একগুচ্ছ হেঁয়ালির উত্তরের পরতে পরতে জুড়ে আছে মহানগরের ইতিহাস। কলকাতার গোড়ার ইতিহাস থেকে শুরু করে পলাশীর যুদ্ধ, সিরাজদ্দৌলা, মরাঠা ডিচ, ব্ল্যাক প্যাগোডা, লর্ড ক্লাইভের আত্মহত্যা, লেডি ক্যানিংয়ের মৃত্যু, বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র কলকাতার নাম বদল...

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৭
Share: Save:

অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে সোহম (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। মেধাবী ছাত্র সোহম বাংলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে চায়। সোহমের বান্ধবী বৃষ্টি (পার্নো মিত্র) তাকে না জানিয়ে তার স্কলারশিপ পাওয়াটা পাকা করতে সুপারিশ করে তার বাবা, নামী ইতিহাসবিদ এবং লেখক আশুতোষ সিংহের কাছে (কৌশিক সেন)। কলকাতার বনেদি সিংহ বাড়ির উত্তরসূরি আশুতোষ। এখনও বাড়ির ঐতিহ্য সে একার জোরেই টিকিয়ে রেখেছে। সোহমের ইতিহাসজ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে আশুতোষ তাকে একটা হেঁয়ালির উত্তর খোঁজার দায়িত্ব দেয়। সেই হেঁয়ালির উত্তর জন্ম দেয় আরও অনেক ধাঁধার। উত্তরে কিসের সন্ধান পাবে সোহম? কোনও গুপ্তধনের সন্ধান না কি পুরনো কোনও সত্যের মুখোমুখি হবে সে? সেই উত্তর মিলবে ছবিতে।

একগুচ্ছ হেঁয়ালির উত্তরের পরতে পরতে জুড়ে আছে মহানগরের ইতিহাস। কলকাতার গোড়ার ইতিহাস থেকে শুরু করে পলাশীর যুদ্ধ, সিরাজদ্দৌলা, মরাঠা ডিচ, ব্ল্যাক প্যাগোডা, লর্ড ক্লাইভের আত্মহত্যা, লেডি ক্যানিংয়ের মৃত্যু, বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র কলকাতার নাম বদল...

বাংলার ইতিহাসের এমন অনেক তথ্য পরিচালক বলিয়ে নিয়েছেন সোহমের চরিত্রের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সংলাপের সঙ্গে তথ্যগুলিকে মিশিয়ে দিতে পারেননি চিত্রনাট্যকার। ফলে মনে হয়েছে বইয়ের পাতা গড়গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছেন অনির্বাণ। এই ক্ষেত্রে সংলাপ বলা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন ছিল তাঁর।

এই অংশটি বাদ দিলে, সোহমের চরিত্রে অনির্বাণ যথাযথ। বৃষ্টির চরিত্রে পার্নোকে ভাল লেগেছে। পর্দায় দু’জনের ন্যাচারাল অ্যাকটিং ছবিটি ভাল লাগার অন্যতম কারণ। ছোট চরিত্রে মন কেড়েছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, মনু মুখোপাধ্যায়। তথ্যচিত্র নির্মাতার চরিত্রে জাহ্নবী (পূজারিণী ঘোষ) এবং গোপালের (পরান) চরিত্র উন্মোচন করার কায়দাটা বেশ প্রশংসনীয়। কিন্তু খলনায়ক আমিরচাঁদের চরিত্রে গৌতম হালদারের অতিনাটকীয়তায় ক্লান্ত হতে পারেন দর্শক।

আলিনগরের গোলকধাঁধা

পরিচালনা: সায়ন্তন ঘোষাল

অভিনয়: অনির্বাণ, পার্নো, কৌশিক, পরান, গৌতম

৫.৫/১০

এ সবের পরেও ধাঁধা, রহস্য, খুন, ইতিহাস, চুরি— সব নিয়ে জমজমাট ছবিটি কিশোরদের মন কাড়বে। ছবিতে সেট, স্টাইলিং, আবহসঙ্গীত, সিনেমাটোগ্রাফি, ড্রোনের ব্যবহার প্রশংসনীয়। তবে টাইটেল সং ছাড়া গানের ব্যবহার তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ, খোশবাগকে বেশ সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে। টানটান রহস্যের মাঝে কমিক রিলিফ দিতে গিয়ে গোপালের মাতাল ছেলের অতিরিক্ত ভাঁড়ামি ছন্দপতন ঘটিয়েছে।

‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’ ছবিটি দেখতে দেখতে হয়তো বইপ্রিয় বাঙালির মনে হতে পারে এই জবরদস্ত গল্পটি পর্দার চেয়ে বইয়ের পাতায় রহস্য উপন্যাস হিসেবে প্রকাশ পেলে, আরও বেশি মনোগ্রাহী হতে পারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parno Mittra Anirban Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE