Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘উড়বি যখন প্রজাপতি, হুল ফোটাবি বোলতা’

ছবির গল্প পুরুলিয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা বক্সিং অন্তপ্রাণ শিবাজি সান্যালকে (দেব) নিয়ে। যে খ্যাতির শীর্ষ থেকে পড়ে গিয়েও ফের উঠে আসবে। ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘জুলফিকর’-এর পর এটি দেবের তৃতীয় ছবি যেখানে তাঁকে বক্সিং করতে দেখা যাচ্ছে।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

চ্যাম্প

পরিচালনা: রাজ চক্রবর্তী

অভিনয়: দেব, রুক্মিণী, চিরঞ্জিত, প্রিয়ঙ্কা

৫/১০

ঈদের বাজারে দেব এ বার প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন তাঁর ‘চ্যাম্প’-কে নিয়ে। রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত যে ছবিতে নায়ক দেবের বিপরীতে তাঁর নায়িকা বান্ধবী রুক্মিণী মৈত্র। অভিনেত্রী হিসেবে এটিই প্রথম ছবি রুক্মিনীর।

এক বক্সারের লড়াকু জীবন নিয়ে তৈরি হলেও ‘চ্যাম্প’ বায়োপিক নয়। ছবির শুরুতেই মহম্মদ আলি ও জর্জ ফোরম্যানের লড়াই দেখায় টিভিতে। আলি সম্পর্কে সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘ফ্লোট লাইক আ বাটারফ্লাই, স্টিং লাইক আ বি’-র আক্ষরিক বঙ্গানুবাদ করা সংলাপ ‘উড়বি যখন প্রজাপতি, হুল ফোটাবি বোলতা’ একাধিক বার শোনা যাবে এই ছবিতে। কিন্তু আলিই সব নয়। ছবিতে রোপ বাছাই, রিংয়ে আলোর ব্যবহার, চোখ ঢাকা হুডির ব্যবহারে হলিউডের ‘রকি’ সিরিজেরও অনুকরণ রয়েছে। শেষে ‘ফিফটি সেন্ট’ ঘরানার র‌্যাপও আছে।

ছবির গল্প পুরুলিয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা বক্সিং অন্তপ্রাণ শিবাজি সান্যালকে (দেব) নিয়ে। যে খ্যাতির শীর্ষ থেকে পড়ে গিয়েও ফের উঠে আসবে। ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘জুলফিকর’-এর পর এটি দেবের তৃতীয় ছবি যেখানে তাঁকে বক্সিং করতে দেখা যাচ্ছে।

মহম্মদ আলি যেমন এক বাইসাইকেল চোরকে ধাওয়া করতে গিয়ে বক্সিং কোচ জো ই মার্টিনের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন তেমনই শিবাজিও চোখে পড়ে যায় বাঙালি বক্সিং কোচ বুড়ো বাগচির (চিরঞ্জিত)। সেই কলকাতায় শিবাজিকে নিয়ে এসে নিজের বাড়িতে রেখে তালিম দিতে থাকে। একজন কোচ ও খেলোয়াড়ের জীবন যে রক্ত ও ঘামের সমবায়, অস্ফুট আত্মপ্রেরণা ও চোয়াল চাপা জেদের ধানঘর তা এত অবধি ঠিকঠাকই বুঝতে পারা গিয়েছে।

কিন্তু ছবি যত এগোয় ততই দুর্বল চিত্রনাট্যের দৌলতে এত মন্থর হয়ে আসে, যে অতীতে খেলা নিয়ে তৈরি হওয়া বাংলা ছবি, ‘সাহেব’, ‘কোনি’-র পর্যায়ে তা যেতে ব্যর্থ।

আরও পড়ুন:বক্স অফিসের বস হবে তো

ছবির তাল প্রথম কাটে বুড়ো বাগচির বোন সাথীর (প্রিয়ঙ্কা সরকার) মেলোড্রামায়। শিবাজির প্রেমিকা জয়ার ভূমিকায় নবাগতা রুক্মিণী মৈত্রর অভিনয়েও গভীরতার অভাব স্পষ্ট। সংলাপ বলতে গিয়ে তিনি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন বেশির ভাগ সময়েই।

পরিচালক শিবাজি চরিত্রটিকে সুপারহিউম্যান বানাতে গিয়ে আরও ছন্দ হারিয়েছেন। ফলে ছবির জন্য দেব মেদ ঝরিয়ে পেশীবহুল ইমেজে হাজির হলেও চিত্রনাট্যের মেদ ছবির সাফল্যকে মুখ থুবড়ে ফেলেছে। এ ক্ষেত্রেও পেশাদার বক্সার শিবাজি রিংয়ে বাউটের মাঝে প্রেমিকা জয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হাসে। গঙ্গাবক্ষে ইয়টে চেপে প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দু’মাস কোমায় থাকার পরেও রিংয়ে ফিরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। ডাক্তার বলে দেয় মাথার চোট গুরুতর। কিন্তু পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়াকেই বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখানো হয়। যা কিনা তিন মাসেই সেরে যায়। পাশাপাশি দেউলিয়া অবস্থা হলেও ঘরবাড়ি সব ছবির মতো সাজানো। কোন মন্ত্রে কে জানে!

সাংবাদিক ‘শান্তনুদা’ চরিত্রটিও বাস্তব থেকে দূরে। অডিও ভিস্যুয়াল মিডিয়ার যুগে কাপড়ের ব্যাগ কাঁধে বঙ্গসন্তান ক্রীড়াবিদকে কোন ক্রীড়াসাংবাদিক মানসিক ভাবে হতোদ্যম করতে চেষ্টা করেন তা জানা নেই। তাঁর সংবাদপত্রের মাস্টহেড ‘দিনক্ষণ পত্রিকা’ কিন্তু ছেপে বেরোয় ‘প্রত্রিকা’ হয়ে! দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা দেখিয়ে দেশের নাম লেখা হয় আফ্রিকা! যত্নের অভাব স্পষ্ট। এই তথ্যগত ভুল সম্পর্কে পরিচালকের চোখ রাখা উচিত ছিল। ছবির প্রাপ্তি বলতে দেবের মায়ের ভূমিকায় লাবণী সরকারের অভিনয়। আর অনুপম রায় ও অরিজিৎ সিংহের গান।

আড়াই ঘণ্টার ‘চ্যাম্প’ তাই প্রজাপ্রতির মতো ওড়ার চেষ্টা করলেও হুল ফুটিয়েছে কেবল দর্শকের ধৈর্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE