Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কেমন হল জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ‘বিসর্জন’

ইছামতী বয়ে যায় আপন মনে। জানেও না দু’দেশের সীমানা তাকে কলঙ্কিত করেছে বিচ্ছেদের যন্ত্রণায়। দুর্গাপুজোর ভাসানে যখন মিলে যায় দুই বাংলা, তখনই ভাসানের উচ্ছ্বাসে উত্তাপে মিলে যায় ধর্ম, বিভেদ।

বিসর্জন

বিসর্জন

বিপ্লবকুমার ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪০
Share: Save:

ইছামতী বয়ে যায় আপন মনে। জানেও না দু’দেশের সীমানা তাকে কলঙ্কিত করেছে বিচ্ছেদের যন্ত্রণায়। দুর্গাপুজোর ভাসানে যখন মিলে যায় দুই বাংলা, তখনই ভাসানের উচ্ছ্বাসে উত্তাপে মিলে যায় ধর্ম, বিভেদ। শাসনের বেড়াজাল টপকেও একে-অপরের মিলনের ‘সন্ধিক্ষণে’ একাত্ম হয়ে ওঠে নতুন করে কিছু ফিরে পাওয়াতে।

সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কার পেল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন বাংলা ছবি ‘বিসর্জন’। দুই বাংলায় নস্টালজিয়াকে কী ভাবে নতুন মোড়কে মানুষের মনে তুলে ধরা যায়— সেই পরীক্ষায় কৌশিক উত্তীর্ণ। শুধু পরিচালনা ও অভিনয়ে নয়, গল্পও তাঁর লেখা। ধর্ম মানুষের ভালবাসাকে রুখতে পারে না— এই চিরাচরিত সত্যকে তুলে ধরতে গিয়ে কিছুটা বাড়তি আবেগ গল্পকে দীর্ঘায়িত করেছে। সেই ক্রটি হারিয়ে গিয়েছে অভিনয়ের সাবলীলতায়।

গল্পের শুরু ইছামতীতে দুই বাংলার ভাসান দিয়ে। ওপার বাংলার এক বিধবা নারীর সঙ্গে এপার বাংলার ব্যবসায়ী যুবকের ভালবাসা। নানা ঘটনা। শেষে প্রেমিক যুবকের ফিরে আসা, প্রত্যয়ী প্রেমের শেষ পরিণতি যেন সেই বিসর্জনেই। ভোরের অন্ধকারে চুপিসাড়ে বিদায়। এই সব মুহূর্তগুলিতে শৌভিক বসুর চিত্রগ্রহণ অসাধারণ।

গল্পের ডালপালা ছড়াতে শুরু করে যখন পদ্মা (জয়া আহসান) নদীর ধারে মৃতপ্রায় মুসলিম যুবক নাসের আলি (আবির চট্টোপাধ্যায়)-কে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। গ্রাম্য সংস্কার ও সমাজের লাল চোখকে এড়িয়েও পদ্মা অসুস্থ যুবককে তিলে-তিলে সুস্থ করে তোলে। এবং তারই ফাঁকে ফাঁকে অনবদ্য গ্রাম্যভাষা (বাঙাল ভাষা)-য় দু’জনের সংলাপ এই ছবির বড় আকর্ষণ। জয়া আহসানকে আবারও চেনা গেল, তিনি যে-কোনও চরিত্রে কতটা সহজে মিশে যেতে পারেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনি’তে দেখা সেই জয়া এখনও কত সহজ ও সাবলীল। ‘বাস্তু-শাপ’-এ দেখা আবির এমন গ্রাম্য চরিত্রে আরও কত পরিণত।

পদ্মার অতৃপ্ত প্রেমের শেষ পরিণতিতে বিচ্ছেদের সুর ত্বরান্বিত হয়, যখন ভোররাতে প্রেমিকের চলে যাওয়ার সেই মুহূর্তটি এগিয়ে আসে। ‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব’ বাঁধ মানে না দুই ধর্মের দুটি হৃদয়ের। আবির ও জয়ার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের সেই চুম্বন বা ঘরের আলো নিভিয়ে শেষ প্রেমের আবাহন— একে শৈল্পিক চিত্র-ভাবনার দারুণ প্রতিফলনও বলা যায়। এক দিকে অতৃপ্ত কামনার শেষ ইচ্ছা, অন্য দিকে দুই ধর্মের ছুঁৎমার্গ ছেড়ে একে অপরকে সমর্পণ করা। অভাবনীয় ‘মিলনসেতু’ যা এই মুহূর্তে খুবই জরুরি।

সত্যি বলতে কী, শুধু প্রেম-প্রেম খেলায় এখন আর গল্প জমে না। তাই গণেশ (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছেন এই গল্পের মূল অংশে। শেষমেশ তিনি বিধবা পদ্মাকে ছলে-বলে-কৌশলে নিজের আয়ত্তে এনেছেন। সিঁদুরও পরিয়েছেন। ‘কলা-বৌ’ ছাড়া আর ওই বেঢপ গণেশের জীবনে কোনও নারী জুটবে না, এই অপবাদ ঘুচিয়ে দর্শকদের বাহবাও কুড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। কৌশিকের এই অভিনয়ের দৃঢ়তা এক বিরল অভিজ্ঞতা।

এ ছবির অন্যতম সম্পদ হল গান। যে লোকগানে মিশে আছে মাটির টান। কালিকাপ্রসাদ না থাকলেও রেখে গেলেন কৌশিকের ছবিতে তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ।

শেষ গান ‘বন্ধু তোর লাইগ্যা রে’ শুনে অনেকের চোখেই জল টলমল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bisarjan Movie Reviews Bengali Movie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE