Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতায় রাগসঙ্গীত চর্চা উঠেই গিয়েছে

তাঁর গলার মতো বক্তব্যেও তিনি দরাজ। উস্তাদ রাশিদ খানের মুখোমুখি স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।সাক্ষাৎকার দিতে তাঁর একটুও ভাল লাগে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন। ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ তাঁর না-পসন্দ। বাগান ঘেরা সবুজ লনের প্রাসাদোপম বাড়ির একটি বিশেষ ঘরে ঢুকতেই শুরু হল নানা খাতিরদারি।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

সাক্ষাৎকার দিতে তাঁর একটুও ভাল লাগে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন। ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ তাঁর না-পসন্দ। বাগান ঘেরা সবুজ লনের প্রাসাদোপম বাড়ির একটি বিশেষ ঘরে ঢুকতেই শুরু হল নানা খাতিরদারি। কাচ ঘেরা ঝলমলে এই ঘরটা খুব যত্ন করে সাজিয়েছেন উস্তাদ রাশিদ খানের স্ত্রী সোমা। চায়ের কাপ থেকে লাইটের শেড সবের মধ্যেই সাদা-কালো আলোর থিম। কিছুক্ষণের মধ্যেই জিনস আর শার্টের ফুরফুরে মেজাজে হাজির উস্তাদজি।

শীত তো শহরে ঢুকে পড়ল। বিরিয়ানি পার্টিটা কবে?

(খুব হেসে) হবে। কাজ থেকে ছুটি পেলেই। বাড়িঘর তো আবার নতুন করে সাজানোও হচ্ছে। শেষ হলেই আপনাদের ডাকব।

পার্টির এ বারের মেনুটা কী? শেফ নিশ্চয়ই আপনি?

গানের মতোই রান্নাটাও খুব ভালবেসে করি আমি। রান্না করে লোক খাওয়ানোর মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে। বিরিয়ানি আর শাম্মি কাবাব...আমিই রাঁধব।

অসহিষ্ণুতার ইস্যুতে বহু লেখক ফিরিয়ে দিচ্ছেন জাতীয় পুরস্কার। অন্য দিকে শাহরুখ খান, আমির খানদের মতো অভিনেতা দেশে থাকা নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সেখানে উস্তাদ রাশিদ খান আজও কলকাতায় বিরিয়ানি পার্টির প্ল্যান করছেন।

একদমই তাই। দেখুন, আমি কাউকে ভয় পাই না। ভারত আমারই দেশ। আজও বিদেশে অনুষ্ঠান করতে গেলে মনে হয় কখন দেশে ফিরব, বাড়ি ফিরব। এটাই সবচেয়ে‌ বড় সত্যি। আজ অবধি কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।

কিন্তু আমিরের স্ত্রী যে দেশ ছাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন...

আরে! ঈশ্বরের কৃপায় আমিরের সব আছে। এই মাটিতেই ওর এত কাজ, সাফল্য। তবে হতে পারে ও কিছু অস্বস্তি অনুভব করেছে। এই সব নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে নেই। আর মিডিয়া তো লেগেই আছে। আমির, শাহরুখ কী বলল তা নিয়ে স্টোরি করে যাচ্ছে।

আমির বা শাহরুখের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন?

দেখুন, আমি কোনও স্টারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না। আমি ভাই গানবাজনার মানুষ। অনুষ্ঠান করছি, গান শেখাচ্ছি, গান শুনছি। ব্যস।

কিন্তু গুলাম আলির মতো শিল্পী ভারতবর্ষে অনুষ্ঠান করতে পারলেন না। এটা তো খুব দুর্ভাগ্যজনক!

এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। একজন শিল্পী হিসেবে আমি মর্মাহত। আমাকে মমতাদিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তো বলেছিলেন গুলাম আলিকে পশ্চিম বাংলায় নিয়ে আসতে। আমি গুলাম আলিকে অনুরোধও করেছিলাম। বলেছিলাম যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে সরকারি সম্মানে ওঁকে এখানে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু গুলাম আলি রাজি হলেন না। হয়তো বিতৃষ্ণা হয়েছিল। খুব অভিমান করে বলেছিলেন সেদিন, ‘‘আমি আর কোনও দিন ভারতবর্ষে যাবও না, গানও গাইব না।’’ কোনও শিল্পীর পাবলিক অনুষ্ঠান করা নিয়ে যে এত রাজনীতি হতে পারে....কী বলি বলুন তো?

ইদানীং কলকাতায় উস্তাদ রাশিদ খানের কনসার্ট হচ্ছে না। ডোভার লেনেও...

(থামিয়ে দিয়ে) ডোভার লেনে গাইছি না। শুনুন আজ একটা কথা বলি....বলতে আমারও খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই সত্যি। কোথায় না কোথায় শো করতে যাচ্ছি। মহারাষ্ট্র, পুণে, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, জয়পুর , মুম্বই—অথচ কলকাতায় আমার কোনও শো নেই! ভারতের সব জায়গায় ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের চর্চা হচ্ছে। কলকাতায় রাগসঙ্গীত চর্চা উঠেই গিয়েছে। কলকাতাকে না এক সময় আমরা ‘কালচারাল হাব’ বলতাম! শীত এসেছে, আপনি বলছেন বিরিয়ানি পার্টির কথা। আগে কলকাতায় শীত মানে একের পর এক ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের অনুষ্ঠান। কে না এসেছেন? লোকে মুখিয়ে থাকত। দুনিয়ার তাবড় তাবড় আট ন’ জন উস্তাদকে এক অনুষ্ঠানে শোনা যেত। ওদিকে পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় তো এ দিকে উস্তাদ বিলায়েত খান। আজও ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।

কলকাতার মানুষ কি তা হলে রাগসঙ্গীত শুনছেন না?

না না। (জোরে মাথা নেড়ে) শ্রোতাদের দোষ দিলে তো হবে না। আমি বলছি, শ্রোতারা আছে। আসল কথা শো হচ্ছে না। আর কোথা থেকেই বা হবে? কলকাতায় এখন কত বড় বড় ইভেন্ট। দুর্গাপুজোর কথাই ধরুন। মেলা, ফ্যাশন শো, আরও কত কী! ওখানেই স্পনসরদের সব টাকা শেষ। ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের কনসার্টের জন্য যে ধরনের স্পনসরশিপের প্রয়োজন, কলকাতায় সেটা এখন নেই। অবাকও লাগে, দুঃখও হয়।

সেই কারণেই কলকাতার চেয়ে এখন বুঝি মুম্বই আপনার প্রিয় শহর?

মুম্বই শহরের একটা লাইফ আছে। মানুষ ওখানে কাজ করতে জানেন। ৭৯-৮০তে যত দূর মনে পড়ছে, মুম্বইতে বিজয় কিচলুর উদ্যোগে একটাই ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের অনুষ্ঠান হত। আর আজ দেখুন কত কত শো। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের গান শোনার কী উৎসাহ! তবে বাড়ি বলতে আজও আমি কলকাতাকেই বুঝি।
দশ বছর বয়সে এখানে চলে এসেছিলাম। আমার ছেলেমেয়েরা তো এখানেই বড় হল।

মেয়েরা তো কলকাতাতেই প্রথম পাবলিক শো করলেন।

হ্যাঁ, ওরা দু’জনেই গাইছে। গান ওদের রক্তে। ছেলেও শিখছে। ইচ্ছে হলে ওরা গানটাকে প্রফেশন করবে। আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে সঙ্গীত হল সাধনার। যে যাই গান গাক না কেন, অনেক ধৈর্যের দরকার। গান শেখাতে গিয়ে দেখেছি ধৈর্য শব্দটা এই প্রজন্মের ডিকশনারিতে নেই।

এই প্রজন্মের কি সবই খারাপ?

না, আমি তা বলতে চাইনি। দেখুন রাগসঙ্গীতের শিক্ষাটা আগে অন্য রকম ছিল। গুরুর বাড়িতে দিনের পর দিন থাকতে হত। আমি তো আমার প্রথম গুরু উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে মারও খেয়েছি। এখন ভাবুন তো? আমি আমার কোনও ছাত্রকে যদি বেসুরো গাওয়ার জন্য মারি, তা হলে তার বাবা-মা চলে আসবেন। বাবা-মায়েদেরও ধৈর্য নেই।

বলতে চাইছেন সব কিছু ছেড়ে দশ-বারো ঘণ্টার রেওয়াজ?

না। আমি আবার ওই চল্লিশ দিনের ‘চিল্লা’, বারো ঘণ্টার রেওয়াজে বিশ্বাস করি না। ঈশ্বরের ইঙ্গিত থাকে। তার জোরেই আমরা গানবাজনা করি। সব ঘরানার সব গুরুদের ভালটা নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি। আমার গুরু উস্তাদ নিসার হুসেন সব সময় বলতেন, আর যাই করো ভুলেও কাউকে কোনও দিন হিংসে কোরো না। হিংসে করলে সঙ্গীতের মৃত্যু অনিবার্য। সাধনা করতে করতেই নিজস্ব গায়কি তৈরি হয়। সঙ্গীত ‘দিল আর দিমাক’য়ের কাজ। ওখান থেকেই একটা ‘সোচ’য়ের জন্ম হয়। ওই সোচই আমাকে দিয়ে নানা রকম কাজ করিয়ে নেয়।

এই ভাবনাই কি রাশিদ খানকে নচিকেতার সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম করায়? বা কোক স্টুডিয়োতে পঞ্জাবি গায়িকা রিচা শর্মার সঙ্গে গান গাওয়ায়? রাশিদ খানের মতো উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পীর এই সবের কি প্রয়োজন ছিল?

হ্যাঁ, ছিল। যে গান আমার ভাল লাগবে আমি গাইব। ‘আনন্দ পুরস্কার’য়ে আমি প্রথম রবীন্দ্রনাথের গান গাই। খুব ভাল লেগেছিল। উচ্চারণের ত্রুটি হতে পারে। কারণ আমি তো অত ভাল বাংলা জানি না। কিন্তু তাও গাইলাম। এটাই চ্যালেঞ্জ।

রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করার সময় অন্য কারও গান শুনেছিলেন?

না। অসিত ঘটক এসে আমায় গান শিখিয়েছিলেন। তবে বেশির ভাগ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীই দাঁত চিপে, ঢিমে লয়ে গাইতে গিয়ে গলা টিপে গানটাকে মেরে ফেলে। এটা মারাত্মক!

‘জব উই মেট’য়ে ‘আও গে জব তুম ও সাজনা’....আবার ‘মাই নেম ইজ খান’য়েও ‘ আল্লাহ্ হি রহেম’ তো গাইলেন!

‘মৌসম’-এও গাইলাম। তবে ‘আও গে সজনা’ কিন্তু প্রীতমের গান নয়।

আপনি তো প্রথমে বলিউডে প্লেব্যাক করতে চাননি...

সন্দেশ শাণ্ডিল্য একদিন দেখি আমার কলকাতার বাড়িতে হারমোনিয়াম নিয়ে হাজির। আমি তো বলেছি হিন্দি ছবিতে গাইব না। উনিও নাছোড়বান্দা। কী করব? এত বার বললেন, গানটাও ভাল লাগল। মুম্বইয়ে রেকর্ড করলাম। কিন্তু রেকর্ডিং শুনে আমার একটুও পছন্দ হয়নি। আবার সন্দেশ কলকাতায় এলেন। আমরির কাছে ঢাকুরিয়ায় ‘আও গে যব তুম’ রেকর্ড হল। মোদ্দা কথা, আমি যদি সব রকম গান গাইতে পারি, গাইব না কেন? নতুন প্রজন্মের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে আমাকে তো তাল মিলিয়ে চলতে হবে, নাকি?

এত যে শো করেন, সেখানে কি শুধুই ঠুংরি, দাদরা, খেয়াল গান?

একেবারেই না। আমাকেও ‘মাই নেম ইজ খান’-এর গান গাইতে হয়, ‘জব উই মেট’-এর গান গাইতে হয়। এটা যদি না করতে পারি, তো আমার ঘরে চুপ করে বসে থাকাই ভাল। দেখুন আমি যাই করি, ক্ল্যাসিকাল মিউজিককে নষ্ট করে তো কিছু করছি না। ‘আও গে যব তুম ও সাজনা’ যদি গাই, তো আমার গায়কিতে, ঠুংরির মেজাজেই গাইব। আমার নিজস্বতা থেকে তো বেরিয়ে যাচ্ছি না। লোকে বলবে রাশিদের এটা করা ঠিক হয়নি। ধুর! লোকে কী বলবে সে জন্য আমার মন যা চাইবে, আমি করব না?

আমার পছন্দ

আগের প্রজন্ম

উস্তাদ আমির খান, উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খান, পণ্ডিত ভীমসেন জোশী,
পণ্ডিত যশরাজ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ বিলায়েত খান,
উস্তাদ আলি আকবর খান, উস্তাদ আমজাদ আলি খান

এ প্রজন্ম

অজয় চক্রবর্তী
(আর কারও নামই মনে প়ড়ল না)

নতুন প্রজন্ম

অরিজিৎ সিংহ,
কৌশিকী চক্রবর্তী

মন চায় বলেই, রাশিদের তান- বিস্তার হঠাৎই গ্বালিয়র ঘরানার ভীমসেন জোশীর আদলে চলে আসে?

একবার ডোভার লেন-য়ে ভীমসেন জোশীর শুদ্ধ কল্যাণ শুনেছিলাম... কী দাপট! ও রকম গলা খুলে গাওয়ার আদলটা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। দেখুন আবারও বলছি আগেকার দিনে ঘরানায় নিজেদের আটকে রাখা হত। আমার রামপুর-সাসোয়ান ঘরানায় সব আছে। যেমন মেজাজ, তেমনই চলন। কিন্তু যার যা ভাল, আমি সেটাই নিয়েছি।

ভীমসেন-এর গানে দক্ষিণের প্রভাব বেশি। অথচ কিশোরী আমনকার বা আব্দুল করিম খান দক্ষিণের মানুষ হলেও তাঁদের গানে কর্নাটকী ক্ল্যাসিকালের প্রভাব নেই। আপনার গানেও কোনও এক বিশেষ অঞ্চলের প্রভাব নেই...

হ্যাঁ, ভীমসেন জোশীর গানে দক্ষিণের ধাঁচ, চলন বেশি। তবে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি গ্বালিয়রের দ্রুত বিলম্বিতের চলন নিতে। আমার গানে প্রভাব আছে কি নেই, দর্শক বলবেন।

কথার মাঝে হঠাৎ ব্যাগ থেকে একগুচ্ছ পানের পাতা বেরিয়ে এল। নিজেই খুব যত্ন করে পান সাজলেন আর বললেন, ‘‘দেখবেন আবার পান খাওয়ার ছবি তুলে বসবেন না। আপনাদের কিছু বিশ্বাস নেই!’’

পানটাও একটা নেশা, না?

হ্যাঁ, আমি পান ছা়ড়া থাকতে পারি না।

আপনি নাকি গান না গাইলে ক্রিকেট প্লেয়ার হতেন...

(চোখ বড় বড় করে) ওরে বাবা! আমি ক্রিকেটের জন্য পাগল। ক্রিকেটের পুরনো রেকর্ডিং আজও সময় পেলেই চালিয়ে দেখি।

বিরাট কোহলিকে কেমন লাগছে?

ভাল। খুব এনার্জেটিক। তবে সচিন ফাটাফাটি। একবারই দেখা হয়েছিল। যুবরাজকেও খুব ভাল লাগত আমার। স্পোর্টসম্যানদের স্পিরিটটাই আলাদা।

এত যে বারবার সব ধরনের গান গাওয়ার কথা বলছেন, কখনও বাংলায় প্রাইভেট অ্যালবাম করার কথা মনে হয়নি? লতাজি, আশাজি সকলেই তো বাংলা গানের অ্যালবাম করেছেন।

না, মনে হয়নি।

বাংলা গান শোনেন?

ওমা, শুনব না কেন? আশাজি, লতাজি, কিশোরকুমার, মান্নাকাকা, সন্ধ্যাদি— ভাল গান তো শুনবই। গান শেখার ক্ষেত্রে গান শোনা খুব দরকার।

আপনার ছাত্র দীপন রিয়েলিটি শো-তে পারফর্ম করছে। গুরু হিসেবে আপনার কী মনে হয়?

আমি চাইব ও গানবাজনার মধ্যেই থাকুক। বলিউড বা টলিউডে প্লেব্যাক করুক। কিন্তু কখনও যেন ফালতু গান না গেয়ে বসে।

ফালতু গান বলতে?

এখন সিনেমায় যে সব গান হয়, তার বেশির ভাগেই গান কম, বাজনা বেশি, যাতে নাচা যায়। শুনুন, রিয়েলিটি শো-এর ফায়দা নিয়ে যে দু’জন গানের জগতে নাম করেছেন, তাঁরা হলেন শ্রেয়া ঘোষাল আর সোনু নিগম। তাঁরা কিন্তু কিছু করে দেখিয়েছেন। এখন যারা রিয়েলিটি শো থেকে উঠছে, তারা আগে কিছু করুক, তার পর আলোচনা করব।

কিন্তু সোনু নিগম এখন আর কোথায় গাইছেন? উল্টে পাবলিক শো-তে অনেক বেশি পারিশ্রমিক নেন আতিফ আসলাম।

(আবার উত্তেজিত) দাঁড়ান, দাঁড়ান। সোনু নিগম যা করার করে নিয়েছে। এখন হয়তো ওর থেকে ইন্ডাস্ট্রির পাওয়ার কিছু নেই। আরে সব আর্টিস্টেরই একটা ভাল সময় থাকে। ওর-ও ছিল। ও তখন নিজেকে ঢেলে দিয়েছে। এ বার তো নতুন ছেলেমেয়ে আসবে। তারাও তো প্লেব্যাক করবে। একই গলা চলতে থাকলে মানুষ বোর হয়ে যেতে বাধ্য। আমাদের সকলের থামতে জানতে হবে।

আপনি পারবেন থামতে?

নিশ্চয়ই, যেদিন দেখব গলা চলছে না, গাইতে পারছি না, সেই মুহূর্তে গান ছেড়ে দেব। ওপরওয়ালা এই বোধ দিয়ে তো পাঠিয়েছে আমায়। আর শুনুন, সব সময় শো করে যাব, আজ গলা খারাপ, ওই গানটা কতটা চড়া... রোজের এই টেনশন নেওয়া যায় না। ধুর, একটু শান্তি তো চাইব, নাকি?

শান্তির জন্য কী করবেন?

বাড়িতে থাকব, আরাম করব। খাব। চ্যানেল ঘোরাব, খবর দেখব। আমার সিআইডি বা ক্রাইম বেসড শো দেখতে দারুণ লাগে। খুশি থাকব।

তখনও যদি আপনার স্ত্রী শো করতে যেতে বলেন? কী করবেন?

দেখুন, আমি সারা জীবন গান গেয়েছি। কিন্তু আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, গানের সঙ্গে যে চারপাশটা চলে, তার দায়িত্ব নিয়েছিল সোমা। হ্যাঁ ঝগড়াও হয় আমাদের। তবে দু’জনে পরস্পরকে স্পেস-ও দিই।

নোরা জোনস থেকে অনুষ্কা শঙ্কর— সকলের পেড ইউটিউব চ্যানেল আছে। উস্তাদ রাশিদ খান কিছু ভাবছেন?

ভাবছি। ইচ্ছে আছে ইউটিউব চ্যানেল করার।

আর বাংলায় গজলের অ্যালবাম?

শ্রীজাতর সঙ্গে কথা তো হয়ে আছে। দেখি, সময় করে উঠতে পারছি না।

আজীবন সঙ্গীতের মধ্যে নিজেকে ঢেলে দিয়েছেন। আপনি তো ঈশ্বর-বিশ্বাসী। কথায় আছে যাঁরা সঙ্গীতের মধ্যে ডুবে থাকেন, তাঁরা নাকি ঈশ্বরের দেখাও পান...

গানের মধ্যে থাকি যখন, মুডের একটা ব্যাপার থাকে। একদিন মুড খারাপ। গান গাইছি। কিন্তু যতটা ভাল চাইছি, মনে হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না। আমিও নাছোড়বান্দা। গেয়েই চলেছি। হঠাৎ মনে হল কে যেন ছুঁয়ে বলল, ‘ব্যস কর, বহুত হুয়া...’। তখন দু’চোখ ভরে জল...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ustad rashid khan interview srobonti bandopadhay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE