ছবি: কৌশিক সরকার।
ঠিকানা বদলে গিয়েছে পার্নোর। সল্টলেক থেকে গড়িয়াহাট। এক বন্ধুর ভাড়া বাড়ির খোঁজ পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন পছন্দের বাড়ি। ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার আগেই বলে বসলেন ‘‘আচ্ছা ভাল দালালের নম্বর আছে? প্লিজ একটু দেখুন না। উফ্ বাড়ি খোঁজা নিয়ে খুব চাপে আছি! কথায় কথায় মুড বদল, সময় ধরে না-চলা, খামখেয়ালি পার্নো এখন সংসারী। বাবা চলে যাওয়ার পর মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সংসার সামলাচ্ছেন…
কেন, ইন্ডাস্ট্রির কেউ বাড়ি খোঁজা নিয়ে সাহায্য করছেন না?
পরম (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) তো দারুণ বাড়ি কিনেছে। ওর কাছে দালালের নম্বর পেয়েছি। কিন্তু এখনও কিছু এগোয়নি। আর আমার প্রোডিউসর রানাদাও (রানা সরকার) বলেছে হেল্প করবে। তবে যতক্ষণ না ফাইনাল কিছু হয়, খুব চিন্তায় আছি। তবে কী জানেন, সিনেমা করা আর চাকরি করা কিন্তু একই। সব কলিগই ভীষণ হেল্পফুল হবে, আশা করা উচিত নয়।
মৈনাক ভৌমিক হেল্প করছেন না?
(একটু চোখ বড় বড় করে) শুনুন, আমি আর মৈনাক খুব ভাল বন্ধু।
আমি তো আপনাদের বন্ধুদের কথা জানতে চাইনি। মৈনাকের নাম বলতেই আপনি এত আড়ষ্ট হয়ে গেলেন কেন?
আরে আড়ষ্টের কী আছে?
শোনা যায় আপনি নাকি মৈনাককেই বিয়ে করবেন?
তাই নাকি? বিয়ে তো করব। তবে কাকে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। আমি মৈনাকের ডাই-হার্ড ফ্যান। যখন ‘বেডরুম’ করেছিলাম, তখন কেউ ওকে চিনত না। কিন্তু চিত্রনাট্য এবং পরিচালক ভাল ছিল বলেই কাজটা করেছিলাম। তবে আমার আগে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকে আছে। আগে তাদের বিয়ে হোক।
তাঁরা কারা?
রাইমা আগে বিয়ে করুক। আমি জানি ওর দারুণ একটা বিয়ে হবে। আর আমি কাকে বিয়ে করব সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য।
মানে মৈনাক ছাড়াও অন্য অনেক বয়ফ্রেন্ড?
লোকের ধারণা অভিনেত্রী মানেই অনেক প্রেম! কাগজের সম্পাদকের সঙ্গে প্রেম, প্রোডিউসরের সঙ্গে গাড়ি করে ঘোরা— কোনওটাই তো করলাম না। তা-ও তো আছি ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে প্রেম একটা চলছে। নামটা আপাতত মিডিয়াকে বলছি না। একটু সময় দিন।
নাম না-হয় নাই বললেন। কিন্তু তিনি কি গ্রিন কার্ড হোল্ডার?
এটা কী ধরনের প্রশ্ন!
উত্তরটা এড়িয়ে যাবেন না…
উফ, হ্যাঁ!
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন আপনি। ইন্ডাস্ট্রিতে এত এক্সপোজার পাওয়ার পরেও ২০১৬য় আপনার হাতে কোনও ছবি নেই। কেন বলুন তো?
বছর সবে শুরু হল। মৈনাকের একটা ছবিতে কাজ করার কথা। ফাইনাল হলে খবর পাবেন। কিন্তু ২০১৫-তে আমি কিন্তু ‘গ্ল্যামার’, ‘ভিতু’, ‘শেষ অঙ্ক’, ‘এক্স’, ‘রাজকাহিনী’র মতো ছবিতে কাজ করেছি। ২০১১ থেকে আমি ফিল্মে অভিনয় করেছি। এবং খেয়াল করে দেখবেন প্রতি বছর কোনও না কোনও গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে অভিনয় করেছি।
‘রাজকাহিনী’র ক্ষেত্রে কিন্তু ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর অভিনয়ের ইমপ্যাক্ট অনেক বেশি হয়েছে!
হতে বাধ্য। উনি গল্পের মধ্যমণি ছিলেন। তবে ‘রাজকাহিনী’-তে প্রত্যেকেই, এমনকী এণাও খুব ভাল কাজ করেছে। আমরা ইউনিটে খুব মজাও করেছি। সবাই ইউনিটে রান্না করে আনত। কোনও পুরুষদের কাছে ঘেঁষতে দিতাম না।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়কেও না? সৃজিতের সঙ্গে প্রেম বা ফ্লার্ট?
আর ইউ ম্যাড? সৃজিত খুব ভাল বন্ধু। ও আর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় দু’জনে ছবির ব্যাপারে, কাজের ব্যাপারে অসম্ভব প্যাশনেট। তবে সৃজিত ফ্লোরে যদি একটু কম চিৎকার করে ভাল হয়। (মুচকি হেসে)। সৃজিতকে খুব খ্যাপাই আমি। বলি, ইশশ! তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছ। তোমার মধ্যে ভারী ভারী একটা লুক তৈরি হচ্ছে।
সৃজিত কি তাতে রেগে যায়?
এই রে! সেটা জানি না।
(সাক্ষাৎকার চলতে চলতে ‘‘ খুব খিদে পেয়েছে’’ বলে চিলি টোস্ট আর ফ্রেশ লাইম অর্ডার দিলেন।)
‘রাজকাহিনী’তে নিজেকে অনেকটাই এক্সপোজ করেছেন, আপনার সংলাপে বেশ কিছু অশ্লীল শব্দ ছিল। কিসিং সিন থেকে ফ্রন্টাল ন্যুডিটি— সিনেমার জন্য আপনি কতটা স্বচ্ছন্দ?
(ভেবে) সিনেমার জন্য স্ক্রিপ্ট পড়ে যদি দেখি সে রকম কিছু ডিম্যান্ড করছে, তা হলে যেমন পাকা চুল-চশমা পরতে পারি, তেমনই চুমু খেতে বা সে রকম কোনও দৃশ্য এস্থেটিক্যালি সাউন্ড হলে, করতে আমার আপত্তি নেই। পাওলি স্ক্রিপ্ট বিশ্বাস করেছিল বলেই ‘ছত্রাক’ করেছিল। ইউ হ্যাভ টু বি সিকিওর্ড অ্যাবাউট ইয়োরসেল্ফ।
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার কিন্তু একটা ফাঙ্কি বাচ্চা মেয়ে ইমেজ আছে। মনে হয় না এটা ভাঙতে পারলে চরিত্র পেতে সুবিধে হত।
(মুষড়ে পড়ে) সিরিয়াসলি। দেখুন আমি কমার্শিয়াল বাংলা ছবি করতে পারব না। এখন যে সব বাংলা ছবি হচ্ছে, সেখানে ম্যাচিওর্ড লুকের দরকার। সেটা কিন্তু আমার নেই। ধরুন কোনও ডিরেক্টর এমন একজন চরিত্রের কথা ভাবছেন যার বয়স বত্রিশ, যে খুব ডিপ্রেসড, তার বর তাকে চিট করে, এই রকম চরিত্রে আমাকে মানাবে না। আমার ওই ডিপ্রেসড লুকটাই আসবে না। যতই পাকা চুল লাগাই আর চশমা পরি।
কেন ‘অপুর পাঁচালী’ আর ‘ভিতু’তেও তো আপনার একটা ডিপ্রেশনের লুক ছিল।
ছিল, কিন্তু সেগুলো সবই কম বয়সের। ‘অপুর পাঁচালী’তে আমার চরিত্রটার বয়স ছিল আঠারো। আর ‘ভিতু’ ওয়াজ মাই ফিল্ম। লোকের খুব ভাল লেগেছিল।
কিন্তু ২০১৫-র ‘গ্ল্যামার’ বা ‘শেষ অঙ্ক’ কোনওটাই চলেনি…
দেখুন লোকে যদি ভাবে ‘গ্ল্যামার’ করে ‘পাগলু’র মতো টার্ন ওভার হবে সেটা তাদের সমস্যা। তবে ছবিটা দর্শকদের ভাল লেগেছে।
আপনারও একটু পিআর করা উচিত।
মানে?
এই যে প্রিমিয়ারে গিয়ে আপনি ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার সময় সহযোগিতা করেন না, সেখানে আজও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতো অভিনেত্রী প্রিমিয়ারে গিয়ে ফোটোগ্রাফারদের সব অনুরোধ রাখেন...
আজকাল আর প্রিমিয়ারে যাই না।
জিম-ও তো করেন না! এত ল্যাদ হলে চলবে কী করে?
দেখুন, আমার খুব তাড়া নেই। অল্পে সন্তুষ্ট। এই বেশ ভাল আছি।
বন্ধুবান্ধবদের ছবি দেখেন? অরিন্দম শীল আপনার এত ভাল বন্ধু, ‘হর হর ব্যোমকেশ’য়ের প্রিমিয়ারে তো আপনাকে দেখা গেল না।
কে বলল আমি বন্ধুবান্ধবদের ছবি দেখি না? সব দেখি।
‘হর হর ব্যোমকেশ’ দেখেছেন?
নাহ্, যাব, যাব। এই উইকএন্ডে ‘বাস্তু-শাপ’ যাব। প্রিমিয়ারে গেলে, পেজ থ্রি-তে ছবি বেরোলেই কিন্তু ছবিতে কাজ পাওয়া যায় না। তাই সেজেগুজে প্রিমিয়ারে যেতে ইচ্ছে করে না। প্রচণ্ড ল্যাদ... যাই-ও না।
আপনাকে একটু মনে করিয়ে দিই, ‘মাছ মিষ্টি & মোর’য়ের পোস্ট পার্টিতে কিন্তু কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আপনাকে ‘অপুর পাঁচালী’ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা হলে? পার্টিতেই তো এই কনট্যাক্ট বাড়ে...
কৌশিকদা আমার অভিনয় নিয়ে মৈনাককে আগেই জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমার বিশ্বাস ওই পার্টিতে না গেলেও কৌশিকদা নিশ্চয়ই আমাকে ফোন করতেন। প্রিমিয়ারে যাওয়াটা কিন্তু সত্যি ইম্পর্ট্যান্ট নয়। কাজটা ভাল করা নিয়ে কথা। সত্যি বলতে কী আমাকে কাজ পেতে প্রোডিউসরদের দরজায় দরজায় কিন্তু ঘুরতে হয়নি।
কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নায়িকাকেই ঘুরতে হয়...
(উত্তেজিত হয়ে) পাওলি, কোয়েল, রাইমা, স্বস্তিকা এদের হয়নি। তা হলে প্রত্যেক সপ্তাহে এদের ছবি আসত।
আবীর-পরম-যিশু— কাকে বেশি হট লাগে?
উফ্, কী সব প্রশ্ন! আবীর আর পরম আজ নায়কদের মধ্যে আমার প্রিয়। আরও একজন আছে, ঋত্বিক। উফ্, হি ইজ আ ম্যাজিশিয়ান! তবে হট আমার কাউকেই লাগে না। আমি বোধহয় এই প্রশ্নের উপযোগী নই (খুব হাসি)।
হট নয় তো অভিনয় করেন কী করে? আপনি নিজের ব্যাপারে একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী, না?
আরে, তা কেন! আমি তো বলছি, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা তো আমার নেই।
এই যে হুটহাট একলা বেরিয়ে পড়েন। সেখানে আপনি সিকিওর্ড?
আমার স্বপ্ন কিন্তু বেড়ানো ঘিরেই। চোখ বুজলেই দেখি আকাশ, সমুদ্র আর বিচ— সেখানেই হারিয়ে গিয়েছি। আমি লোনার। নিজেকে খুব ভালবাসি, সারাক্ষণ ছবি করে যাব, কাজ করে যাব— এ রকমটা ভাবি না। সারাক্ষণ কাজ করে যাব কেন? নিজেকে কিছু ফিরিয়েও দিতে হবে, নিজের কাছে, বন্ধুর কাছে...
কোন বন্ধু, সেটা কিন্তু বললেন না...
বাড়িতে যেদিন কফি খেতে ডাকব, সেদিন বলব নামটা। আপাতত প্রেমটাই ঠিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy