Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হট অ্যান্ড সেক্সি থাকার ঝকমারি অনেক

তিনি কলকাতার কন্যে। সদ্য বিয়ে হয়েছে। আর রাতের টিভি-তে এখন প্রতিদিন ঝকমক করছেন। নিজের আইপিএল গ্রিন রুম অভিজ্ঞতা বর্ণনায় অর্চনা বিজয়া। সাক্ষাৎকার: নাসরিন খান।মাত্র দু’মাস হল বিয়ে করেছি। কিন্তু তাই বলে যে বিয়ে নিয়েই পুরোটা সময় মজে আছি তা নয়। বিয়ের উৎসব কাটতে না কাটতেই মেতে উঠেছি ‘ইন্ডিয়া কা তেওহার’ আইপিএল উৎসব নিয়ে। কেউ কেউ ভেবেছিল এই বুঝি আমার কেরিয়ারটা ফুরিয়ে গেল। কিন্তু তারাই এখন অনেক প্রশংসা নিয়ে হাজির হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০১:৫৩
Share: Save:

মাত্র দু’মাস হল বিয়ে করেছি। কিন্তু তাই বলে যে বিয়ে নিয়েই পুরোটা সময় মজে আছি তা নয়। বিয়ের উৎসব কাটতে না কাটতেই মেতে উঠেছি ‘ইন্ডিয়া কা তেওহার’ আইপিএল উৎসব নিয়ে। কেউ কেউ ভেবেছিল এই বুঝি আমার কেরিয়ারটা ফুরিয়ে গেল। কিন্তু তারাই এখন অনেক প্রশংসা নিয়ে হাজির হচ্ছে। বলছেন আমি আগের চেয়েও ভাল শো প্রেজেন্ট করছি, আমাকে আগের চেয়েও ভাল দেখাচ্ছে। আমার তো মনে হয় বিবাহিত জীবনের সুখ আর আনন্দটাই আমার মধ্যে ফুটে উঠছে।

আইপিএলের সময়টা আমি আজ চণ্ডীগড় তো কাল মুম্বই তো পরশু কলকাতায়। এই গরমে আজ এ শহর কাল ও শহরে ঘোরাঘুরি করার কষ্ট তো আছেই। তবু ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি অনুষ্ঠান করতে মজাই লাগে।

লোকে আমাকে হট অ্যান্ড সেক্সি গার্ল হিসেবে জানে সেটা খুব ভাল, কিন্তু আমি নিছকই একজন সুন্দরী মহিলা নই। আমার আরও একটা অস্তিত্ব আছে। ম্যাচের সময় আমি খুব বেশি জল খাই, আর সুযোগ পেলেই ছায়ায় গিয়ে বসি। মনে হয় শান্ত মন আর কাজ ভালবাসার জন্যই এটা সম্ভব। ছেলেদের সঙ্গে বাইরে আড্ডা দিতে ভাল লাগে। ঠাট্টা ইয়ার্কি, মশকরা, জোক এ সব আমার খুবই পছন্দ। ভাল লাগে সিধু পাজির শের-শায়েরি, খুনসুটি, পিছনে লাগা। আইপিএলে খুব পরিশ্রম করে কাজ করার সময়ও মজা হয় অনেক।

আমি অন্য মেয়েদেরই মতো কলকাতার একজন কলেজপড়ুয়া ছিলাম। ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে পড়তাম। তার পর একটা রিয়েলিটি শো- ‘গেট গর্জাস’য়ে অংশগ্রহণ করি। কলকাতায় কোনও দিন মডেলিং করিনি। প্রথম মডেলিংয়ের অ্যাসাইনমেন্টটা করেছিলাম রোমে।

আমার স্বামী (দিল্লির ব্যবসায়ী ধীরাজ পুরি) কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না। ও খুবই বুদ্ধিমান আর মানুষ হিসেবে জনপ্রিয়। ধীরাজ আমাকে সমস্ত কাজে প্রেরণা জোগায়, সমর্থন করে। ও জানে আমার একটা নিজস্ব সামাজিক জীবন আছে, পাবলিক লাইফ আছে। আমাকে নিয়ে লেখালেখি হয়। আমাকে যে লোকে হট অ্যান্ড সেক্সি বলে ধীরাজ সেটাকে প্রশংসা হিসেবেই নেয়। বিয়ের পরই আমি এখন আইপিএলের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি। এই সময়টা ফ্যামিলি লাইফ বলে কিছু নেই। তবে ও ফাঁক পেলেই আমার কাছে চলে আসছে। কিন্তু ‘খতরো কে খিলাড়ি’ করার সময় আমি যে সব স্টান্ট করতাম সেগুলো আমার মা এবং শাশুড়ি মা কারওই পছন্দ ছিল না। মা ফোনে কাঁদতেন। আমি মাকে জিজ্ঞাসা করতাম স্টান্টগুলো কে করছে আমি না মা? স্টান্টের খেলার মধ্যে কোনও মস্তিষ্কের ব্যাপার নেই ঠিকই। কিন্তু আমি অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থির ক্ষরণ পছন্দ করি, ভালবাসি গতির রোমাঞ্চ। কিন্তু আমার মা চাইতেন ‘খতরো কে খিলাড়ি’ থেকে আমি যেন দ্রুত বহিষ্কৃত হই।

অনেক কিছু করলেও সিনেমায় কাজ করায় আমি কোনও আগ্রহ পাই না। সিনেমায় যদি ইন্টারেস্ট থাকত, আট বছর আগে যখন মুম্বই যাই তখনই তা করতে পারতাম। সে দিক থেকে দেখতে গেলে আমি খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী নই। আমি এতটাই ব্যস্ত যে সিনেমাটিনেমা নিয়ে ভাবার মতো অবকাশও নেই। আর একটা কথা, আমি কোনও দিন ‘বিগ বস’য়ের মতো রিয়েলিটি শো করব না। যদিও ওরা আমাকে ‘বিগ বস’য়ের জন্য ডেকেছিল। ওই ধরনের শোতে গেলে বর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। তা ছাড়া আমি মানুষ হিসেবে লাজুক প্রকৃতির। নিজেকে এই ধরনের টিভি শো-তে দেখতে চাই না।

আইপিএল কিংবা আর কোনও অন্য শোয়ে সঞ্চালনা না করলে আমি হয়তো প্রত্নতত্ত্ববিদ হতাম, কিংবা গোয়েন্দা হতাম। মানুষ হিসেবে আমি খুব কৌতূহলী প্রকৃতির। আমার ইতিহাস ভাল লাগে। এ ছাড়া আমি বাঙালিদের মতো পড়তে খুব ভালবাসি। প্রচুর পড়ি।

আইপিএল তারকাখচিত ম্যাচ হলেও আমি কখনও সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ছবি তুলি না। শুধু এক বার সচিনের সঙ্গে একটা সেলফি তুলেছিলাম। ওঁকে বাড়তি শ্রদ্ধা করি বলেই। এ সব ব্যাপারে আমি খুবই ইতস্তত করি। সব বয়েসের মানুষের সঙ্গে স্বচ্ছন্দ ভাবে কথা বলতে পারি, কিন্তু কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কারও সঙ্গে গিয়ে ভাব জমাতে পারি না। এক কথায় আমি খুব বাছাই করা লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করি।

বহু বছর ধরে বিখ্যাত লোকজনের সঙ্গে কাজ করায় তাঁরা এখন আমার বন্ধু হয়ে উঠেছেন। প্রীতি জিন্টা নিশ্চয়ই আমার বিশেষ বন্ধু। খুব ছটফটে, প্রাণবন্ত মেয়ে ও। আর সেই সঙ্গে আশাবাদীও। অন্য দিকে শাহরুখ আপাদমস্তক ভদ্রলোক। মেয়েদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, কী ভাবে মেয়েদের অভ্যর্থনা জানাতে হয় ভালভাবেই জানেন। খুব সহজেই মেশা যায় শাহরুখের সঙ্গে। অন্যান্য তারকার মতো উদ্ধত নন।

অনেকেই আইপিএলের আফটার ম্যাচ পার্টিগুলো আর হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন। কিন্তু আমার এই রকম কোনও আক্ষেপ হয় না। আমার এখনও আইপিএলের শান্তশিষ্ট, ঘরোয়া পার্টিই বেশি ভাল লাগে। এই সব এক্সক্লুসিভ পার্টিতে সারাদিনের পরিশ্রমের পর আরামসে পানীয় নিয়ে বসা যায়। খেলোয়াড়দের যাতে মনঃসংযোগ বাড়ে সেই জন্যই আফটার ম্যাচ পার্টিগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আর সেই কারণেই আইপিএলের ম্যাচগুলো আরও জমজমাট হচ্ছে। সেই কারণেই সরফরজ খানের মতো সতেরো বছরের প্রতিভা উঠে এসেছে। গোটা স্টেডিয়াম ওর প্রতিভার কাছে মাথা নত করেছে। কী অসাধারণ দৃশ্য সেটা!

এখন আমি সঞ্চালনার সময়ে হিন্দি আর ইংরেজি দু’ভাষাতেই কথা বলার চেষ্টা করছি। তাতে জনসংযোগ ভাল হয়। কলকাতাতেও আমার অনেক বন্ধু। তাই কলকাতায় আসাটা আমার কাছে স্পেশাল। টলি তারকাদের মধ্যে রাইমা আমার ঘনিষ্ঠ। প্রসেনজিতের সঙ্গেও ভাল বন্ধুত্ব। সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ সঞ্চালনা করার জন্য আরও অনেকেই বন্ধু হয়েছে।

আমি স্কুলে অ্যাথলিট ছিলাম। বাস্কেটবল খেলতাম। সেখান থেকে আইপিএলের সঞ্চালনায় আসাটা আমার পক্ষে সঠিক নির্বাচন। সঞ্চালনা করছি বলেই যে ধারাভাষ্যকার হতে পারব তা নয়। ধারাভাষ্যকার হওয়ার জন্য চাই অঞ্জুম চোপরা বা ঈশা গুহর মতো ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা। মা-বাবা সব সময় আমাকে নিজের মতো চলার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমি যে এই সব স্টান্ট করি, অ্যাডভেঞ্চার করি তা দেখে আমার বাবা আমাকে পাগল ভাবেন। আমি খুব বর্তমান নিয়ে থাকি। কোনটার পর কী করব তা নিয়ে ভাবি না। এই মুহূর্তে আমি আমার জীবন আর বিয়েটাকে উপভোগ করছি। মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE