— শনিবার সন্ধ্যে ঠিক ৬টা। বিগ বেনের নীচে।
— ওকে, ডান।
এ বার সেটা কিন্তু লন্ডনও হতে পারে, ভিআইপি রোডও হতে পারে।
আজ্ঞে হ্যাঁ, ওয়েবের নেটওয়ার্ক এতটাই জোরালো যে গোটা পৃথিবীকে এনে ফেলতে পারে ছাদনাতলায়। ওহো, একটু ভুল হয়ে গেল। বিয়ে-টিয়ে ও সব তো বেজায় ক্লিশে। আসল ব্যাপার হল চিরকালীন বা তৎকালীন সঙ্গী খোঁজা। যাকে সঙ্গে নিয়ে, যার হাতটা জড়িয়ে, দৌড়ে এসে পেছন থেকে যাকে ‘ধাআআপ্পা’ দিয়ে কেটে যেতে পারে বেশ কিছুটা ‘কোয়ালিটি টাইম’।
কথা হচ্ছে অনলাইন ডেটিং নিয়ে। যদিও সব ধরনের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোই কমবেশি কাজ করে ডেটিং সাইট হিসেবে। অচেনা কোনও প্রোফাইলে কোনও ছবি বা স্টেটাস দেখে মনে ধরল। অমনি টুক করে বন্ধুত্বের অনুরোধ অর্থাৎ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। অথবা প্রাইভেট মেসেজে শুরু কথা চালাচালি। নেহাৎ খুব গরমিল না থাকলে দু’চারটে ‘হাই, হোয়াটস আপ’-এর পরে উল্টো দিকের মানুষটা একটা-না-একটা কিছু উত্তর দিয়েই ফেলে।
এ তো আজকের ব্যাপার নয়! চলছে সেই অর্কুটের জমানা থেকে। সে একেবারে প্রথম দিককার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। তার পরে এল ফেসবুক। ওয়েব দুনিয়ায় আড্ডা চলেছে জোরকদমে। প্রায়শই সেটা পেরিয়ে গিয়েছে শহর-রাজ্য-দেশের গণ্ডী। আর ইদানীং তো নতুন আরও কিছু অ্যাপ এসেছে বাজারে। তাদেরই এক জনের নাম ‘টিন্ডার’। অবশ্য একেবারে নতুন বলা ভুল। কারণ সেই অ্যাপেরও প্রায় বছর চারেক বয়স হল। ফেসবুকের মাধ্যমেই ব্যবহার হয় এই অ্যাপ। ফেসবুক একে বলছে ‘ডেটিং অ্যান্ড সোশ্যাল ডিসকভারি অ্যাপ্লিকেশন’। যেটা আবার ‘লোকেশন বেসড’। মানে, এক জনের জায়গা দেখে সেই মতো আর এক জনকে বেছে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে এখানে। আগ্রহী মানুষেরা এই ‘টিন্ডার’ অ্যাপের মাধ্যমে চ্যাটও করতে পারেন। এটা এক ধরনের ‘সোয়াইপিং অ্যাপ’। বলা যেতে পারে, এটাই প্রথম এমন অ্যাপ যেখানে সোয়াইপ করে করে এক জনের ছবি থেকে চলে যাওয়া যায় অন্য আর এক জনের ছবিতে। আর যখনই কারও ছবি দেখে পছন্দ হবে, সখ্য পাতাতে ইচ্ছে করবে তার সঙ্গে, অমনি ডান দিকে সোয়াইপ করে বেছে নেওয়া যায় সেই মানুষটিকে। আর পছন্দ না হলে ফের বাঁ দিকে সোয়াইপ করে চলে যাওয়া যায় পরেরটায়।
‘‘ফেসবুক আমাদের নতুন কত-কত বন্ধু দেয়! অন্য কলেজে, অন্য শহরে, অন্য দেশে হয়তো এমন অনেকে বসে রয়েছে, এমনিতে যাদের কোনও দিন চিনতেই পারতাম না। জানাই হতো না, তারাও আমার মতোই ভাবে। অনেক ভাল লাগা মুহূর্ত অচেনা থেকে যেত,’’ বলল নৈঋত, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডী পেরিয়েছে সে। সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করছে ত্রিধা। ইচ্ছে রয়েছে সামনের বছর স্কলারশিপ নিয়ে ফ্রান্সের লিয়ঁতে যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। তার কথায়, ‘‘যেখানে পড়তে যাব, এখন থেকেই সেই প্রতিষ্ঠানের, সেই শহরের কত জনের সঙ্গে যে আলাপ হয়ে গিয়েছে কী বলব! নতুন জায়গায় গিয়ে কোনও অসুবিধেই হবে না!’’
তবে বিষয়টা নিছক বন্ধুত্বেরও নয়। ওই যে, মনের মতো সঙ্গী বেছে নেওয়া। কখনও কখনও সেটা বিয়ে বা একসঙ্গে থাকা পর্যন্তও গড়ায়। তেমন লোকজনের সংখ্যাটা নেহাৎ মন্দ নয় এই শহরেও। শুধু তা-ই নয়, ভিন্ন সত্ত্বার মানুষেরাও ব্রাত্য নয় এই ট্রেন্ডে। যেমন বলা যেতে পারে ‘গ্রাইন্ডার’-এর কথা— ‘গে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’। শুধু সমকামীদের জন্য। তারাও বেছে নিতে পারে পছন্দের সঙ্গী এই অ্যাপের মাধ্যমে।
সব সময়ে যে ‘অনলাইন ডেট’কে সকলে চোখের সামনে দেখতে পায় এমনটাও নয়। হয়তো সে রয়ে গেল শুধু চ্যাটেই। বিশ্বাস করে নিতে দোষ কোথায়, যে সে যা বলছে সব সত্যি! তবে বেশি দূর পা বাড়ানোর আগে একটু ভাবনা-চিন্তা করে নেওয়া ভাল। বেমক্কা বিপদ ডেকে আনা তো বাঞ্ছনীয় নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy