Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই আছে যারা বন্ধুত্বের নামে পিঠে ছুরি বসায়

অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা সিরিয়াল ‘জড়োয়ার ঝুমকো’র ঝুমকো ওরফে শ্বেতা ভট্টাচার্যের মুখোমুখি আনন্দপ্লাস রবিবারই বাবা-মা ও তুতো দাদা ও বউদির সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার দিন। একমাত্র বান্ধবী দেবযানীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে হ্যাংআউট করার দিন। সাত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে টানা কাজ করার পর মাত্র এক জন বন্ধু? ‘‘ইন্ডাস্ট্রির কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করতে পারি না।

ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক

ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

মেকআপ সেরে শাড়ি পরতে-পরতে কথা বলতে শুরু করলেন ঝুমকো থুড়ি শ্বেতা ভট্টাচার্য। ঝরনার মতো অনর্গল কথা বলার টানে সাক্ষাৎকার স্রেফ প্রশ্ন-উত্তরের ঘেরাটোপে আটকে না থেকে আড্ডার রূপ নিল।

‘‘জানেন তো, মেদিনীপুরের কোনও অনুষ্ঠানে যেতে আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। ওখানকার মানুষ আমাকে নিয়ে পাগল। এই তো ক’দিন আগে ওখানে শো করতে গিয়ে দর্শকাসন থেকে অনুরোধ এল থালি ডান্স করার। আমার কাছে তখন থালা ছিল না। হঠাৎ ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বৃদ্ধা তাঁর ভাত খাওয়ার থালা আমাকে দিয়ে বললেন, ‘দিদিভাই, তুমি এটার উপর নাচ করো।’ ভাবুন! এই রকম ঘটনা আরও আছে। মেদিনীপুরে আমার সঙ্গে কেউ হ্যান্ডশেক করার সময় জুতো খুলে নেন! প্রথম দিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘জুতো খুললেন কেন?’ উত্তর, ‘মন্দিরে ঢোকার আগে তো জুতো খুলেই ঢুকতে হয়!’ শুধু মেদিনীপুর নয়, খাস কলকাতায় একটি রেস্তোরাঁয় সেলফ সার্ভিসের লাইনে দাঁড়াতেই, অন্যের আগে আমার অর্ডার এসে গেল। এই সুযোগ নিতে অস্বীকার করায় কর্মীটি বললেন, ‘ম্যাডাম, আপনার তো শ্যুটিং আছে’। এই সম্মানগুলোই আমার কাজের পুরস্কার,’’ এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন শ্বেতা। তিন বছর থেকে ভরতনাট্যমে তালিম নিয়েছেন। পুলক আদিত্য ও রিতা সরকার তাঁর গুরু। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নৃত্যশিল্পী হওয়ার, ‘অভিনেত্রী’ শব্দটা কল্পনাতেই ছিল না। একটি নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নিয়েও অসুস্থতার জন্য সরে আসতে হয় তাঁকে। তখনই সিনেমার অফার পান। কিন্তু মানসিক ভাবে প্রস্তুত না থাকায় অফার ফিরিয়ে দেন। যদিও অভিনয় তাঁর পিছু ছাড়ল না। ‘সিঁদুর খেলা’-র লিড চরিত্রের অফারে ‘হ্যাঁ’ বলতেই হল। এর পর ‘ভালবাসা ডট কম’, ‘ তুমি রবে নীরবে’ এবং ‘জড়োয়ার ঝুমকো’... সাত বছরে চারটি সিরিয়ালের লিড। প্রথমটি ছাড়া বাকি তিনটিই স্নেহাশিস চক্রবর্তীর পরিচালনায়! ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে স্নেহাশিসদার কাজ খুব ভাল লাগত। তাই প্রথম সিরিয়ালের পর ওঁকে ফোন করি। স্নেহাশিসদা কারও ফোন তোলেন না, আমারটাও তোলেননি। তখন মেসেজ করে জানালাম, ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চাই। উনি দেখা করতে বললেন এবং তার পরই ‘ভালবাসা ডট কম’।’’ শ্বেতার প্রতিটি কথায় তাঁর প্রিয় ‘দাদা’ স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রসঙ্গ। কী জাদু আছে এই মানুষটার? প্রশ্নটা করতেও হল না, নিজের থেকে শ্বেতা বলতে শুরু করলেন, ‘‘প্রথম সিরিয়ালে ম্যালেরিয়া নিয়ে টানা ২০ দিন শ্যুটিং করেছি! ছুটি পাইনি। কিন্তু এই দেখুন, নাচতে গিয়ে পায়ের তলায় মাংস উঠে গিয়েছে, দাদার কানে এই খবর যেতেই দু’দিনের ছুটি দিলেন। আমি অবশ্য ছুটি নিইনি। ফ্লোরে থাকলেই ভাল থাকি। ক’দিন আগে শ্যুটিং করতে গিয়ে আগুন লেগে আমার চুল, হাত পুড়ে যায়। দাদা সঙ্গে-সঙ্গে প্যাক-আপ করে দিলেন। এর আগেও অসুস্থতার জন্য ২০ দিন ছুটি দিয়েছেন। অসুস্থার পর ঘি-ভাত খাওয়া এবং নো ওয়ার্কআউটের ফলে বেশ মোটা হয়ে গিয়েছিলাম। মোটা বলে কিন্তু দাদা আমাকে বাতিল করেননি। কাজ দিয়েছিলেন এবং লিড চরিত্রে। রবিবার ছুটি পাই। সে দিন খুব বোর লাগে। মনে হয়, কখন সোমবার আসবে!’’

কিন্তু রবিবারই বাবা-মা ও তুতো দাদা ও বউদির সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার দিন। একমাত্র বান্ধবী দেবযানীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে হ্যাংআউট করার দিন। সাত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে টানা কাজ করার পর মাত্র এক জন বন্ধু? ‘‘ইন্ডাস্ট্রির কাউকে বন্ধু বলে স্বীকার করতে পারি না। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। অনেক বেইমানকে দেখেছি, যাঁরা বন্ধুত্বের নামে পিঠে ছুরি বসায়। দেবযানী ইন্ডাস্ট্রির নয়, ও বাল্যবন্ধু। বেস্টফ্রেন্ড তো আমার মা। কোথাও গিয়ে ভাল কিছু খেলে মার কথা মনে পড়ে। যা খাই মার জন্য প্যাক করে নিই।’’ আর বয়ফ্রেন্ড? লাজুক হেসে বললেন, ‘‘সময় দিতে পারি না বলে প্রায়ই ওর সঙ্গে ঝগড়া হয়। আরও কিছু দিন দেখি, সম্পর্কটা টিকে গেলে তখন প্রকাশ্যে আনব ব্যাপারটা। তবে ও কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রির নয়।’’ আপনার জনপ্রিয়তার গ্রাফ বেশ ঊর্ধ্বমুখী, সিনেমার অফার পেলে এখন নিশ্চয় ‘না’ করবেন না? ‘‘শর্ট ড্রেস পরতে পারব না, স্লিভলেস পরব না, ইন্টিমেট দৃশ্য করব না। এর পর কোন পরিচালক আমাকে নেবে বলুন?’’

শট রেডি। আড্ডায় ইতি টানতে হল। কিন্তু তার আগে শেষ প্রশ্ন, আপনি কতটা সঞ্চয়ী? ‘‘প্রতি মাসে বাবার হাতে চেকটা দিয়ে তাঁকে প্রণাম করি। বাবা বলেন ঠাকুরের আসনে রাখতে। আমি রাখি। সকালে উঠে দেখি চেক ভ্যানিশড। এখনও মার কাছ থেকে নিয়মিত হাতখরচ নিই। সুতরাং বুঝতেই পারছেন...’’ গয়না পরতে-পরতে ফ্লোরে যাওয়ার আগে ঝুমকো বলে গেলেন, এক সময় গয়না তাঁর না-পসন্দ ছিল, আর এখন সারাক্ষণ গয়না পরে থাকতে-থাকতে গয়নার প্রতি ভালবাসাটাই ক্রমশ গভীর হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE