• বাবা-মা বলেন
রাস্তাঘাটে সবার কানে ইয়ারফোন। বাব্বা, এত গান-প্রেম তো আগে দেখিনি!
জেনওয়াই বলছে: ‘‘লোকে ভাবে সারাক্ষণ ইয়ারফোন কানে — মানে গান শুনছি। ধুর, আমি তো অডিয়োবুক শুনি। বই পড়তে ভাল লাগে। কিন্তু কলেজ-প্রোজেক্ট-অ্যাসাইনমেন্ট সামলে নভেল পড়ব, সে সময় পাই না। ফাঁকা সময় বলতে কলেজ যাওয়ার বাসে। কিন্তু ট্রাভেল করতে করতে পড়া ঠিক না। বাসের ঝাঁকুনিতে চোখে স্ট্রেন হয়। তাই সুইচ করেছি অডিয়ো বুকে। বই শুনতে শুনতে যাই। চোখের ওপর চাপও পড়ল না। আবার বইটাও পড়া হয়ে গেল। ‘...কার্সড চাইল্ড’ তো এ ভাবেই শেষ করলাম,’’ বলছিলেন ম্যানেজমেন্ট ছাত্রী রোশনি বসু।
বইয়ের বাজারে বছরখানেক আগে যে জায়গা নিয়েছিল ই-বুকস, সেটাই এখন অডিয়ো বুকসের দখলে। বিদেশের পাবলিশাররা তো বটেই, এখন এ দেশের প্রকাশকরাও বইয়ের অডিয়ো ভার্সন রিলিজ করছেন। স্মার্টফোন অনুযায়ী অ্যান্ড্রয়েড প্লে স্টোর বা আইটিউনস স্টোরে পেয়ে যাবেন অডিয়ো বুকস। পছন্দ মতো বই ডাউনলোড করে নিলেই হল। ছাপা বইয়ের থেকে খরচ কম।
• বাবা-মা বলেন
রাত দেড়টা-দু’টো পর্যন্ত ল্যাপটপে কী যে করে? ফেসবুক তো দিনেও করতে পারে!
জেনওয়াই বলছে: ‘‘ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে দিনে মিনিট কুড়ির বেশি থাকি না। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে অনলাইনে কম্পিউটার ল্যাঙ্গোয়েজের ক্লাস করি। আইফোন অ্যাপ তৈরির ল্যাঙ্গোয়েজ জানতাম। চাকরিতে ঢুকে দেখলাম, অ্যান্ড্রয়েড নেটিভটাও জানা দরকার। কিন্তু অফিস করে রেগুলার ক্লাস করা অসম্ভব। তাই জাভা আর জেকোয়ারি-র ওপর কোর্স অনলাইনে করে নিলাম,’’ বলেন পেশায় অ্যাপ ডেভলপার নম্রতা সেন।
সারাদিন অফিস বা কলেজের পর সময়ের বড়ই অভাব জেনওয়াইয়ের। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন অনেক কিছু শেখার দরকার হয়। তা হলে উপায়? কেন, কোর্সেরা-এডএক্স-উডেমির মতো অনলাইন টিউটোরিয়াল সাইট আছে তো। পোশাকি ভাষায় এমওওসি (ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স)। ইন্টারঅ্যাক্টিভ টেক্সটবুক, ভিডিয়ো, হোমওয়ার্ক মিলিয়ে দিব্যি ক্লাসরুমের পরিস্থিতি। অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য চ্যাটরুমের ব্যবস্থাও আছে। আর অল্প টাকায় সার্টিফিকেটও পেয়ে যাবেন কোর্স শেষে।
• বাবা-মা বলেন
সারাদিন মোবাইল হাতে। দিনরাত পোকেমন ধরে কী যে মজা পায়!
জেনওয়াই বলছে: ‘‘ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময়টা আমার মোবাইল হাতে কাটে। তবে ওটাই তো আমার কাজ। আরে বাবা-মা আমার জব প্রোফাইল বোঝে না বলে বকাবকি করে। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হওয়ায় আমার ক্লায়েন্টের ফেসবুক-টুইটার-ইন্সটাগ্রাম-য়ের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ আমাকেই দেখতে হয়। তাদের কোনও প্রোডাক্টে লোকের কী রিঅ্যাকশন সেটা দেখতে হয়। পোকেমন খেলার সময় কোথায়?’’ প্রশ্ন বছর তেইশের অভিনন্দন দে-র।
আসলে কাজের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জেনএক্স-এর কাজের ধরনের থেকে তাই একেবারে অন্যরকম জেনওয়াইয়ের কাজ। পাঁচবছর আগেও যে পেশার কথা ভাবা যেত না, এখন সেই পেশাই ‘ট্রেন্ডিং’। কনসালটেন্সি সংস্থার এক কর্মী বলছিলেন, আগে যেমন প্রোডাক্ট সার্ভের কাজ হত, এখন আর সেটা হয় না। কারণ কোনও জিনিস নিয়ে লোকে কী ভাবছে, সে বিষয়ে খবর এখন ফেসবুক থেকেই জানা যায়। নতুন প্রোডাক্টের আইডিয়াও আসে ফেসবুকের রিঅ্যাকশন থেকে। এই যে শুধু ‘লাইক’য়ের বদলে ছ’রকমের ‘রিঅ্যাকশন’ বাটনের আমদানি ফেসবুকে, সেটা যতটা না আপনার জন্য, তার থেকে বেশি কিন্তু কোম্পানির সুবিধার জন্য।
• বাবা-মা বলেন
এই প্রজন্ম তো শব্দজব্দ করা ভুলেই গিয়েছে। কী যে করে সারাদিন?
জেনওয়াই বলছে: ‘‘আগে ক্রসওয়ার্ড করতাম। কিন্তু এখন তো অফিসের জন্য বেরিয়ে যেতে হয় সাতটায়। তাই আইপ্যাডে ‘ওয়ার্ডস উইথ ফ্রেন্ডস’ খেলি। গেমটা স্ক্রাবলের মতো। জাস্ট তফাত হল, এটা অনলাইনে খেলতে হয়। তবে ক্রসওয়ার্ডের থেকে অনেক ইন্টারেস্টিং। সারাদিন একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হয়। আর লাঞ্চব্রেকে খবরের কাগজে সুডোকু তো আছেই,’’ বলছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী উপাসনা সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy