Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছবি বিক্রির জন্য মিডিয়াতে গসিপ করছি না

কঙ্কনা সেনশর্মা থেকে সত্যজিৎ রায়। অকপট অনন্ত মহাদেবন। শুনলেন নাসরিন খানকঙ্কনা সেনশর্মা থেকে সত্যজিৎ রায়। অকপট অনন্ত মহাদেবন। শুনলেন নাসরিন খান।

অনন্ত মহাদেবন

অনন্ত মহাদেবন

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:১৯
Share: Save:

এই নিয়ে তৃতীয় বায়োপিক। ছবিটা চোদ্দোটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও অনন্ত মহাদেবন বলেন তিনি এখনও পর্যন্ত যা করছেন তা হল দক্ষতাকে শানিয়ে তোলা। সত্যজিৎ রায়ের ‘তারিণী খুড়ো’ গল্পটি কিনেছেন অচিরেই ছবি করবেন বলে।

আপনি নাকি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মাঝরাত্রে?

(হাসি) আমি মাঝরাত্রে কী করি তা জানতে চাইছেন কেন? হ্যাঁ আমার করা বায়োপিক ‘গৌর হরি দাস্তান’ সবাইকে দেখাতে চাই। তার জন্য যে সময়ে যার সঙ্গে দেখা করলে কাজ হবে তার সঙ্গে সেই সময়ে দেখা করছি। হ্যাঁ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মাঝরাতে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ‘গৌর হরি দাস্তান’-এর প্রিমিয়ার হবে ১৪ অগস্ট। ওই প্রিমিয়ারে মুখ্যমন্ত্রীকে নেমন্তন্ন করতে চাই বলেই মাঝরাতে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

আপনি তো বায়োপিক নিয়ে কাজ করতে খুব ভালবাসেন...

এর আগেও বায়োপিক করেছি। প্রথমটা ‘রেড অ্যালার্ট দ্য ওয়ার উইদিন’। আর দ্বিতীয়টা ‘সিন্ধুতাই সাপকাল’। প্রথমটা এক নকশাল কর্মীকে নিয়ে। দ্বিতীয়টা এক নারীকে নিয়ে যিনি কিনা জীবনের ভয়ঙ্কর কিছু দিন কাটানোর পর সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে ওঠেন। ‘গৌর হরি দাস্তান’ এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর গল্প। স্বাধীন ভারতে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে যাঁকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল। আধুনিক ভারতের দর্পণ এই ছবি। এই ছবি আজকের প্রজন্মকে দেখাবে স্বাধীন ভারত কীসের ভিত্তিতে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের অজানা নায়কদের নিয়ে এই ছবি। যাঁদের সম্পর্কে হয় দেশবাসী জানতে আগ্রহী অথবা আগ্রহী নয়।

ইদানীং বায়োপিক তৈরির হুজুগ এসেছে...

কাল্পনিক কাহিনির চেয়ে বাস্তব অনেক সময় বেশি চমকপ্রদ। তাই বাস্তব জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা নাটক নিয়ে পরিচালকেরা ছবি করতে আগ্রহী হচ্ছেন আজকাল। নাচা, গানা, অ্যাকশনের কাহিনি দেখতে দেখতে ক্লান্ত দর্শক পর্দায় বাস্তব জীবন দেখতে চায়। ভারতীয় সিনেমার সঙ্গে বিশ্ব চলচ্চিত্রের তুলনা করলে বোঝা যায় ওরা যখন দুর্দান্ত সব চিত্রনাট্য লিখছে তখন আমরা পড়ে আছি চিত্রনাট্যের বর্ণপরিচয়ে। পঞ্চাশের দশকে ইউরোপ, ফ্রান্স, জাপান, রাশিয়ার ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায় সিনেমার বিষয় এবং প্রযুক্তিতে আমরা কতটা পিছিয়ে।

আমরা কোনও দিন সিনেমাকে তেমন গভীর ভাবে নিইনি। সিনেমায় যে তারকা ভজনা হয়, সস্তার বিনোদন হয়, তার থেকে কিছু পরিচালক বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন এইটুকুই বলা যায়।

আপনিও তো জাঁকজমকের ছবি, তারকাভজনার ছবির একটা অংশ ছিলেন।

হ্যাঁ, আমি জাঁকজমকের ছবি, তারকাখচিত ছবি উপভোগ করতাম। এখন আমি আজকের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ছবি তৈরি করতে চাই। আমি চাই লোকে ভারতীয় সিনেমার দিকে সসম্মানে তাকাক। ফর্মুলার বাইরের ছবিতে তারকাদের অনেক কিছু করার থাকে। ‘গৌর হরি দাস্তান’ বড় প্রেক্ষাপটের ছবি। বিনয় পাঠক, কঙ্কনা সেনশর্মা, তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়, রণবীর শোরের মতো অভিনেতারা চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। ভাল ছবির জন্য এমন অভিনেতা দরকার যাঁরা মেক আপ, গ্ল্যামার এ সবের পরোয়া করেন না।

সিনেমায় বড় তারকারা সব সময়ই কাহিনির থেকে বেশি প্রাধান্য পান। আমি এই নিয়ম ভাঙতে চেয়েছি।

চরিত্রের প্রয়োজনে বিনয় পাঠক তাঁর কমিক ইমেজ ভেঙে ফেলেছেন। এমনকী তিনি মাথা ন্যাড়াও করেছেন...

বিনয় নিজের টাইপকাস্ট ইমেজ থেকে বেরোতে চাইছিলেন। এই চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য দরকার ছিল সূক্ষ্ম, বাহুল্যবর্জিত অভিনয়। বিনয় সেটা নিজের অভিনয়ে চট করে ধরে ফেলেছেন। চরিত্রটার জন্য প্রচুর খেটেছেন। প্যারিসে সেরা অভিনেতার পুরস্কারও পেয়েছেন।

কঙ্কনাকে বৃদ্ধা মহিলার চরিত্রে অভিনয় করাতে রাজি করালেন কী করে?

কঙ্কনা তিরিশ বছরের মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছে। আবার ষাট বছরের মহিলার চরিত্রেও অভিনয় করেছে। ও চিত্রনাট্যের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। তাই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য খুব ভাল ভাবে ধরতে পেরেছে। ওর চরিত্রটা ছবিতে অনেকটা বিবেকের মতো। চিত্রনাট্য আর আমাদের টিম দুটোই পছন্দ হয়েছিল কঙ্কনার।

‘গৌর হরি দাস্তান’য়ের মতো ছবি করার ক্ষেত্রে কী ভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন?

আমি বড় পরিচালকদের ছবি দেখতে দেখতে বুঝেছি সিনেমা মানে অন্য কিছু। এখন আন্তর্জাতিক দর্শকের জন্য ছবি করতে চাই। সত্যাজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, অরবিন্দমের বিশেষ প্রভাব আছে আমার সিনেমা ভাবনায়।

তার জন্যই কি এই রকম পুরস্কার বিজয়ী শিল্পীদের একত্রিত করতে পেরেছেন?

(হাসি) হ্যাঁ, আমাদের দলে বারো জন পুরস্কার বিজয়ী আছেন। তার মধ্যে দশ জন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত। একজন এমি পুরস্কার বিজয়ী, একজন অস্কার বিজয়ী। একজন গ্র্যামি নমিনি। কী করে এত সব প্রতিভাকে একত্রিত করতে পেরেছি সেটা একটা আশ্চর্য ঘটনা। আমি যে খুব পরিকল্পনা করে এঁদেরকে নিয়েছি তা নয়। এটা হয়ে গিয়েছে। শিল্পী-কলাকুশলী মিলে যে ৩৫ জন, তাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও বড় ছবিতে কাজ করে এসেছেন। হয়তো ‘গৌর হরি দাস্তান’য়ের মতো বাস্তবোচিত ছবিতে কাজ করার জন্যই তাঁরা এক জায়গায় সমবেত হয়েছেন। আরও আশ্চর্য, পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতারা এই ছবিতে একটা হাঁটার দৃশ্য পেলে তাতেও অভিনয় করতে রাজি ছিলেন। একবার ভাবুন প্রায় তিরিশ বছর পর এল সুব্রহ্মনিয়মের মতো সুরকার ছবিতে সুর দিতে রাজি হয়ে গেলেন। এ ছাড়া কলাকুশলীদের মধ্যে আছেন জাতীয় এবং অস্কার পুরস্কার প্রাপ্ত টেকনিক্যাল কর্মীরা। যেমন এডিটর শ্রীকর প্রসাদ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন রি-রেকর্ডিস্ট অনুপ দেব। আছেন অস্কার বিজয়ী সাউন্ড ডিজাইনার রসুল পুকুট্টি। এল সুব্রহ্মনিয়ম নিজে গ্রামি নমিনি।

‘গৌর হরি দাস্তান’য়ের জন্য প্রযোজক পেতে কি অসুবিধে হয়েছিল?

এই ধরনের ছবি থেকে প্রযোজকরা সাধারণত দূরে থাকেন। কোন ছবি থেকে টাকা আসবে সেটা বোঝাও খুব সহজ ব্যাপার নয়। তবে এটা ভেবে ভাল লাগে যে এক জাতের প্রযোজক আছেন যাঁরা এই ধরনের ছবিতে টাকা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।

এক দিকে ‘বাহুবলী’র মতো ছবি অন্য দিকে ‘বজরঙ্গী ভাইজান’। তার মাঝখানে ‘গৌর হরি দাস্তান’ কি দর্শক টানবে বলে মনে হয়?

যে সব ছবির বিপণনে প্রচুর খরচ হয় সেগুলোর সঙ্গে আমাদের ছবির প্রতিযোগিতায় নামাটা কঠিন। সেই কারণেই ভেবেচিন্তে ছবির বিপণন করা উচিত। কিন্তু আসল কথা হল শতকরা প্রায় ৯০ ভাগের মতো ভারতীয় দর্শক হলে ছবি দেখতে য়ায় না। যে ১০ শতাংশ হলে ছবি দেখতে য়ায় তার ১ শতাংশ আমাদের ছবি দেখতে আসবে। ছবি দেখে খুশি হবে। তাদের মুখে মুখে ভাল সমালোচনা ছড়িয়ে পড়বে। ছবি বিক্রি করার জন্য কিন্তু মিডিয়াতে আমরা গসিপ জাতীয় স্টোরি দিচ্ছি না।

আপনি কি সত্যাজিৎ রায়ের একটা ছোট গল্পের স্বত্ব কিনেছেন ছবি করবেন বলে?

হ্যাঁ। এটা এমন একটা গল্প যেখানে সত্যজিতের প্রভাবটা কম। গল্পটা এক কথায় অসত্যজিতোচিত। একজন গল্প বলিয়ে নিয়ে এই কাহিনি। ছবিতে সঠিক অভিনেতা-অভিনেত্রী নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। কেন্দ্রীয় চরিত্রটায় অমিতাভ বচ্চনকে নেওয়ার কথা ভেবেছি। হয়তো ‘গৌর হরি দাস্তান’ দেখে অমিতাভজি আমার প্রতি আস্থাশীল হবেন। সত্যজিৎ রায়ের স্টাইলেই ছবিটা বানাতে চাই। যাতে ছবি দেখে হল থেকে বেরোবার সময় দর্শকদের সত্যাজিৎ রায়ের কথা মনে পড়ে যায়।

এর পরে কী করবেন?

আরও একটা ইন্টারেস্টিং ছবির কাজ হাতে আছে। নারীকেন্দ্রিক গল্প। কাস্টিং ঠিক করছি। ‘রাফ বুক’ বলে আরও একটা ছবি করছি। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE