Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘দাড়ি’য়ে আছ তুমি আমার গালের ওপারে

শাহরুখের মতো দাড়ি, রণবীরের মতো গোঁফ। বান্ধবীর মন মজাতে চেক লিস্টে এ দু’টো মাস্ট। লিখছেন মহুয়া গিরিশাহরুখের মতো দাড়ি, রণবীরের মতো গোঁফ। বান্ধবীর মন মজাতে চেক লিস্টে এ দু’টো মাস্ট। লিখছেন মহুয়া গিরি

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:১৬
Share: Save:

প্রেমিকার মান ভাঙাতে চান? কিংবা জিততে চান বান্ধবীর মন? নতুন রেস্তোঁরা, আনলিমিটেড শপিং-এর মতো কোনও আইডিয়াই কাজ করছে না? তাহলে ওই স্পেশ্যাল মানুষটিকে সারপ্রাইজ দিন। নিজেকে প্রেজেন্ট করুন নতুন লুকে। কীভাবে? বেয়ার্ড ডিজাইন করান। মানে, দাড়ি বা গোঁফে নতুন কাট-ছাঁট এনে নিজের লুকটাই বদলে দিন। কে জানে, অ্যানিভার্সারিতে হয়তো এটাই হবে আপনার স্ত্রী-র জন্য সেরা গিফট। সেই সুযোগে বেটার-হাফের সঙ্গে পুরনো প্রেমটা ঝালিয়ে নিতে ভুলবেন না।

কথা হচ্ছিল হেয়ার স্টাইলিং এক্সপার্ট মালিয়া বিশ্বাসের সঙ্গে। বললেন, ‘‘জাস্ট পাগলামি চলছে জেনারেশন নেক্সট-এর মধ্যে। দাড়ি-গোঁফের নানা কাটের মধ্যেই পুরুষের সেক্স অ্যাপিল খুঁজে পাচ্ছেন আজকের মেয়েরা। আর ছেলেরা? তার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে রাজি।’’ ট্রাভেল এজেন্সির ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ করেন বছর আঠাশের রাহুল। লাজুক হেসে বললেন, ‘‘অফিসে ক্লিন শেভ লুক রাখাটাই নিয়ম। কিন্তু কী করি বলুন? ‘বাজিরাও মস্তানি’তে রণবীর সিংহের পাকানো গোঁফের প্রেমে পাগল আমার বান্ধবী। ওকে ইমপ্রেস করতেই এই গোঁফ আর গালপাট্টা। তার জন্য যদিও কড়কড়ে নতুন নোটে ফাইন দিতেও হয়েছে!’’

ক্রেজটা কিন্তু সর্বত্র। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র শাহরুখ খানের লুকটা মনে করুন। মুখে কয়েক দিনের না কাটা দাড়ি।

আর তাতেই বাড়ছে তেরো থেকে তেষট্টির হার্টবিট।

কিংবা ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-র ফওয়াদ খান? ভাঙা চোয়ালে চাপ দাড়ির শার্প লাইন। আর হালকা গোঁফের ফাঁকে মুচকি হাসি। জনপ্রিয় এই পাক-অভিনেতার প্রত্যেকটা পাগল করা লুক কিন্তু চাপ দাড়িতেই। চুল-দাড়ি-গোঁফের কাট-ছাঁট নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন খেলোয়াড়রাও। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বিরাট কোহালির ক্রেজ তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পছন্দের তালিকায় আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। ক্লিন শেভড চকচকে গাল নয়, বরং নিখুঁত করে কামানো গোঁফ আর নানা কাটের দাড়ির বাহারেই এখন মজে খেলার মাঠ বা রুপোলি পর্দার তারকারা।

শুধু স্টাররা নন, শখ করে রাখা গোঁফ-দাড়িতে সেক্সি হয়ে উঠছেন পাশের বাড়ির ছেলেটাও। বাসে-ট্রেনে-মেট্রো কিংবা পাড়ার ঠেক— কেতাদুরস্ত তরুণের মুখে ক’দিনের না কাটা খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখে ভুলেও ভাববেন না তা অযত্নে লালিত। বরং জানবেন তার পিছনে দীর্ঘ পরিশ্রম রয়েছে।

না না। শুধু ‘নো শেভ নভেম্বর’-র হাওয়া নয়। ক্যান্সার রোগীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে এক মাস চুল-দাড়ি না কাটার এই আন্দোলনে পা মেলানোর পাশাপাশি এখন এটাই ছেলেদের স্টাইল স্টেটমেন্ট। সেক্স অ্যাপিলের নতুন ল্যাঙ্গোয়েজ। আপনি বলবেন, নতুন কি? সেই কোন আদ্যিকাল থেকেই তো পুরুষের গৌরব দাড়ি-গোঁফ। কিন্তু পুরুষের বোল্ড লুকের ভাষাটাই যে বদলে গিয়েছে। রাজা-রাজড়াদের মতো শুধু শক্তি বা ক্ষমতার আস্ফালন নয়, পুরুষের পুরুষ্ট গোঁফ আর ঘন দাড়িতেই এখন মেয়েদের মন মজেছে। নতুনত্ব এখন বাহারে, কাটে আর ছাঁটে।

এন-জন স্যাঁলোর হেয়ার ড্রেসার নাভেদ আলির জানালেন, ‘‘আগে ম্যাচিওর্ড লুক আনতে ফ্রেঞ্চ-কাটের চল ছিল বেশি। তরুণরা অবশ্য ক্লিন শেভ়়ড লুকেই স্বস্তি পেতেন। বরং চুল নিয়েই পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতেন তাঁরা। এখন কিন্তু ছোট-বড় সকলেই দাড়ি-গোঁফের নানা স্টাইলের দিকে ঝুঁকছেন।’’ যোগ করলেন, ‘‘অনেকেই এসে আব্দার করেন, অমুকের মত দাড়ি চাই, তমুখের মত গোঁফ। এমনকী ব্রাইডাল লুকেও বিয়ার্ড ডিজাইনের ভরা মরসুম।’’

নাভেদের মতে, কোনও স্টাইল অন্ধ অনুকরণ না করে বরং মুখ ও থুতনির শেপের সঙ্গে মানানসই বিয়ার্ড-ডিজাইন করাটাই ভাল। গোল মুখ হলে গোটি স্টাইল ভাল মানায়। গোটি মানে থুতনিতে মোটা দাড়ির রেখা। উল্টানো ‘T’ কিংবা ‘I’ অক্ষরের মতো দেখতে লাগে। গোঁফের সঙ্গেও গোটি রাখেন অনেকে। এর নাম ‘বলবো’। সরু করে ছাঁটা গোঁফের রেখা গিয়ে মেশে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ির সঙ্গে। আর থুতনিতে গোটি।

একটু কেয়ার ফ্রি লুক চাইলে অবশ্য স্যাঁলোতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কয়েক দিন শেভ করা বন্ধ রাখুন। বাড়িতেই ট্রিমার চালিয়ে সমান করে ছাঁটতে পারেন। তবে সাবধান! নিজে না পারলে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়াই ভাল।

আর যদি রাজকীয় লুক চান? বন্দলোজ ট্রাই করে দেখুন।

ইয়াব্বড় পাকানো গোঁফ। রাজাদের মত। আর বেশ ঘন ও বড় দাড়ি। সম্প্রতি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে এই বন্দলোজ লুকেই দেখা যাচ্ছে। ডিমের মতো, তিন কোণা বা ডায়মন্ড শেপের মুখে দারুণ মানাবে। তবে বন্দলোজ রাখতে গেলে ধৈর্যের প্রয়োজন। অন্তত মাস সাতেক গোঁফ-দাড়িতে কাঁচি ছোঁয়ানো চলবে না। তার পর খুব ধৈর্যের সঙ্গে শেপ দিতে হবে। প্রখ্যাত স্টাইলিস্ট এরিক বন্দলোজ এই লুকটি জনপ্রিয় করেছিলেন।

শুধু ছাঁট নয়, জেন ওয়াই রঙেও সাহসী। চিরাচরিত কালো-সাদার সল্ট-পিপার তো বটেই, ব্রাউন, ব্ল্যাক ব্রাউন, ডার্ক পার্পলের মতো রঙের চাহিদা বেশি।

আর আজকের ইয়ং ইন্ডিয়া কী ভাবছে? সদ্য এমবিএ পাশ করে চাকরিতে ঢুকেছেন শুভ্রতাভ মিত্র। বললেন, ‘‘নানা রকমের গোটি আমার পছন্দ। কয়েক মিনিটেই লুক বদলে নেওয়া যায়। রোজ রোজ নিজেকে নতুন লাগে! আর পছন্দ না হলে? পুরোটাই উড়িয়ে দাও। সেটাও নতুন বটে’’, হাসতে হাসতে বললেন তিনি।

আর্ট কলেজের ছাত্র কুণাল শর্মার মতে, এই হুজুগটা নতুন হলেও গোঁফ আর দাড়ি বরাবর পুরুষকে আকর্ষণীয় করেছে। বললেন, ‘‘মাইকেল অ্যাঞ্জেলো বা রঁদ্যার ভাস্কর্য দেখুন। গ্রিক দেবতাদের সুগঠিত শরীরে চাপ দাড়ির কারুকাজ তখনও যে মন কাড়ত তা বেশ বোঝা যায়।’’

সেক্সি লুকে দা়ড়ি মাস্ট! তবে ফাওয়াদ স্টাইল না শাহরুখ-কাট সেটা শুধু ঠিক করতে হবে আপনাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ananda Plus Beard Face Fashion Trends
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE