Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চেনা বিষয়, ঝকঝকে উপস্থাপনা

‘ম্যায় কওন হুঁ’?— মুভিটির সারকথা। তাই আড়াই ঘণ্টায় ‘সিক্রেট সুপারস্টার’-এর পরিচালক, কাহিনিকার অদ্ভেত চন্দন চরিত্রগুলিকে খেলান, আত্ম-আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে।

ছবিটির একটি দৃশ্য

ছবিটির একটি দৃশ্য

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৮:২০
Share: Save:

সিক্রেট সুপারস্টার

পরিচালনা: অদ্ভেত চন্দন

অভিনয়: জাইরা ওয়াসিম, আমির খান, মেহের ভিজ

৭/১০

‘ম্যায় কওন হুঁ’?— মুভিটির সারকথা। তাই আড়াই ঘণ্টায় ‘সিক্রেট সুপারস্টার’-এর পরিচালক, কাহিনিকার অদ্ভেত চন্দন চরিত্রগুলিকে খেলান, আত্ম-আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে।

মূল চরিত্র ইনসিয়া। তার মা নাজমা মালিক (‌মেহের ভিজ)। নিজের বিয়ে বা রিয়াধ যাওয়া, কোনও সিদ্ধান্তেই নাজমার মতামত নেওয়া হয়নি। ভদোদরায় ‘মডার্ন কলোনি’তে স্বামী ফারুখের (রাজ অর্জুন) সঙ্গে দাম্পত্যে তার প্রাপ্তি, লাঞ্ছনা। যদিও আব্বার দেওয়া হার বিক্রি করে মেয়ের জন্য নাজমার কেনা ল্যাপটপের ‘পাওয়ার বাটন’ চালুর সঙ্গে সঙ্গে যেন পাখা মেলে মুক্তি। তাই নাজমা রিয়াধের পথে, বিমানবন্দরে স্বামীর হাতে ধরায় বিবাহ-বিচ্ছেদের কাগজ।

ফারুখের আত্ম-আবিষ্কার নেই। সে একবগ্গা পুরুষ। জুতো খুলে স্ত্রীর হাতে মোজা ধরানো বা কন্যাসন্তানের সম্ভাবনায় স্ত্রীর গর্ভপাত করানোর ইচ্ছে সেই ‘পুরুষ’কেই প্রতিষ্ঠা দেয়।

এর বিপ্রতীপ অবস্থান শক্তি কুমারের (আমির খান)। বহু নারী সম্পর্ক, দুই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ তাকে দিয়েছে ‘ব্যাড বয়’ স্ট্যাম্প। কিন্তু ইনসিয়ার পাশে দাঁড়ানো এই চরিত্র যেন প্রশ্ন করে কাউকে সরলরৈখিক ভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই। মুভির প্রথম পর্বে চুলে স্পাইক করা আমিরের ক্যামিও-উপস্থিতি। দ্বিতীয় পর্বেও তিনি ‘সুপারস্টার’ নন, বরং নেপথ্য চরিত্রাভিনেতা।

তাই বোধহয় ইনসিয়া (জাইরা ওয়াসিম) চরিত্রটি ভাল ফুটেছে। কিশোরী ইনসিয়া চায়, তার গান পৃথিবীকে শোনাতে। স্বপ্নপূরণে বাধা বাবা। কিন্তু ঘরে আকাশি নীলরঙা ল্যাপটপটাই পট পরিবর্তন করে। ভাইরাল ‘কোলাভরি ডি’-র ভিউয়ারশিপ দেখে সে পরিকল্পনা নেয় ইউটিউবে গান আপলোডের। পরনের বোরখা এখানে গোপনীয়তা রক্ষা করে। গান আপলোডের সঙ্গে সঙ্গে স্বীকৃতি পায় ইউটিউব প্ল্যাটফর্মটির ক্ষমতাও। পরে ৫৮তম ‘গ্ল্যামার অ্যাওয়ার্ডে’র মঞ্চে বোরখার আড়াল ফেলে নিজেকে আবিষ্কার ইনসিয়ার।

ইনসিয়ার সূত্রেই আসে সহপাঠী চিন্তন পারেখ (তীর্থ শর্মা)। ইনসিয়ার রাগ-অভিমান, স্বপ্নপূরণ, সব কিছুর সঙ্গী ‘প্রেমিক’ চিন্তন। ইনসিয়ার ভাই গুড্ডু (কবীর সাজিদ) কমিক-রিলিফ আনে। তবে সে দিদি ও মায়ের অবস্থা সম্পর্কে সহমর্মী।

ছবিতে কিছু বিষয়কে কটাক্ষ করা হয়েছে। প্রথমত, রিয়্যালিটি-শোয়ের বিচারপর্ব কী ভাবে হয়, তা বোঝা যায় শক্তি ও মোনালি ঠাকুরের মতান্তরে। দ্বিতীয়ত, কোনও পুরনো গানের রিমিক্স করতে গিয়ে ‘উঃ..’ জাতীয় ধ্বনিপ্রয়োগ কতটা যুক্তিসঙ্গত, ওঠে সে প্রশ্নও। তৃতীয়ত, আরব-যাত্রায় সঙ্গে গিটার নেওয়া কেন, ফারুখের এ প্রশ্ন যেন ওই দেশের সমাজের দিকে আঙুল তোলে। চতুর্থত, ইনসিয়া ‘সালাম’ না দেওয়ায় ধমক দেয় বড় আপা (ফারুখ জাফর)। কিন্তু বাড়ির বউ প্রহৃত হলেও তার নীরবতা যেন গার্হস্থ্য হিংসাকে প্রশ্রয় দেয়।

অভিনয়ে সকলেই সাবলীল। অমিত ত্রিবেদীর মিউজিক, হেমন্তী সরকারের সম্পাদনা স্মার্ট।

ডিটেলিংয়ে প্রায় নিখুঁত এই ছবি। ছ’বছর বয়সে গিটারে হাত দেওয়া ইনসিয়ার সংগীত বা বাদ্যযন্ত্রশিক্ষা কী ভাবে, তার উল্লেখ অনুপস্থিত। ছবির দ্বিতীয় পর্বে ইনসিয়া ও নাজমার সিক্রেট সুপারস্টার হওয়াতেও যেন একটু তাড়াহুড়ো।

ছবির গল্প নতুন নয়। মা-মেয়ের সম্পর্ক বা স্বপ্নের দিকে দৌড়ের কথা যদি ধরি, তা হলে হিন্দিতেই রয়েছে ‘নীল বাটে সন্নাটা’র মতো ছবি। যদি বাধা ডিঙোনোর আখ্যান ধরা হয়, তা হলেও রয়েছে জাফর পানাহির ‘অফসাইড’। এই ছবি তাই চেনা বিষয়ের ঝকঝকে উপস্থাপনা।

অতীতে কাশ্মীরি কন্যাদের ব্যান্ড ‘প্রগাশ’-কে হুমকি বা অসমের নাহিদ আফরিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং তার প্রতিবাদ, সবই দেখেছে ভারত। এই ছবিটিকে তাই সামাজিক ও গার্হস্থ্য লড়াইয়ের মঞ্চ থেকেও দেখা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE