Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ের চাপ নেবেন না

সামনে বিয়ে। টেনশন হচ্ছে? অত ভাববেন না। লিখছেন রেশমী বাগচীআগেকার দিনে বিয়ের প্রস্তুতি মানে প্রায় আট-দশ মাস ধরে একটু একটু করে কাজ এগোত। আর এখন বর, কনে একদিন বা বেশি হলে দু’দিন সময় দেয় পরিবারকে। তার মধ্যেই কেনাকাটা, মেনু ঠিক করা, ডেকরেশন সব ফাইনাল করতে হবে। ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। দু’জনই জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করছে। বাড়তি উত্তেজনা তো আছেই। তাই হুলুস্থূল শুরু হওয়ার আগে, ঠান্ডা মাথায় গোটা ব্যাপারটা ভাবুন।

অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৩২
Share: Save:

টেনশন, প্রচণ্ড টেনশন। সময়ের বড়ই অভাব।

আগেকার দিনে বিয়ের প্রস্তুতি মানে প্রায় আট-দশ মাস ধরে একটু একটু করে কাজ এগোত। আর এখন বর, কনে একদিন বা বেশি হলে দু’দিন সময় দেয় পরিবারকে। তার মধ্যেই কেনাকাটা, মেনু ঠিক করা, ডেকরেশন সব ফাইনাল করতে হবে। ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। দু’জনই জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করছে। বাড়তি উত্তেজনা তো আছেই। তাই হুলুস্থূল শুরু হওয়ার আগে, ঠান্ডা মাথায় গোটা ব্যাপারটা ভাবুন। আপনি “বিয়ে” করতে চলেছেন, জীবনের এক সুন্দর অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন। এটা কোনও অ্যাসাইনমেন্ট নয়। কিছু দিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়াও নয়। অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক বলছেন, ‘‘এটা অনেকটা পরীক্ষার আগের পরিস্থিতি। মনে হচ্ছে কিছুই পারব না, কিন্তু প্রশ্নগুলো দেখে ঠিক উত্তর লিখতে পারছেন।’’ সত্যি কথা বলতে কী, আপনি যত ভাববেন ততই, স্ট্রেস মাথায় চড়ে বসবে। এক কথায় দারুণ সমাধান দিলেন কোয়েল, “যা হচ্ছে, ভালর জন্য হচ্ছে। তাই খুশি থাকুন, আনন্দে থাকুন।”

হবু বরদেরও কি ঝামেলা কম

এমনিতে অফিসে দু’দিন পর পর ছুটি নিলেই কেমন যেন অপরাধী হয়ে যায় সবাই। বিয়ে বলে কথা। এ ব্যাপারে যদিও কেউ কিছুই বলবে না। তবে হ্যাঁ, সহকর্মীদের সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নেমন্তন্ন করতে হবে। তার পর রয়েছে বিপুল আর্থিক চাপ। বিয়ের আগেও, বিয়ের পরেও। প্ল্যানিং ঠিকঠাক না করলে, খুব মুশকিল। তার পর, আত্মীয়স্বজনদের আপ্যায়ন। একটু এ দিক ও দিক হলেই সকলে বলবে বিয়ের আগেই এই অবস্থা! তা হলে বিয়ের পর কি হবে! অতএব টেনশনেই দিন কাটানো। তবে কি, আপনি তো নিশ্চয় চাইবেন যেন সকলে হাসিখুশি ভাবে আপনার বিয়েতে অংশ নেয়, তবে বিশ্বাস করুন পৃথিবীতে সবাইকে খুশি করা যায় না। দয়া করে এই অসাধ্য সাধন করার চেষ্টা করবেন না।

মনোবিদরা বলছেন, আনন্দ ও দুঃখ, এই দু’ধরনের অনুভূতিতেই আমরা স্ট্রেসড হই। বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে, সকলেরই চিন্তা থাকে, বিয়ের ছুটির পর অফিসে এসে কী হবে, তার অবর্তমানে পরিস্থিতি বদলে যাবে না তো? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুকূল নাও থাকতে পারে, আগে থেকে ভেবে, ব্যাক আপ প্ল্যান ছকে রাখুন।’’ তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে কর্মরত সাগ্নিক যেমন, বিয়ের আগে প্রায় মাস তিনেক কোনও ছুটি নেননি। উপরন্তু, তাঁর সহকর্মীদের ছুটি নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যাতে করে, পরে অন্তত তার বিয়ের ছুটির সময় কলিগের মনে কোনও ক্ষোভ না থাকে।

অনলাইনেই ফাইনাল

বিয়ের আগে টেনশনের অন্যতম কারণ সাজপোশাক। আজকাল একই দিনে ডিজাইনারের কাছে গিয়ে বর-কনে তাঁদের পছন্দমাফিক পোশাক ঠিক করে নেন। তাড়াহুড়োয় অনেক সময় ভুলও হয়। তাই পরিবর্তন করতে চাইলে, আবার দু’জনকে একসঙ্গে আসতে হবে। অত সময় কোথায়? কম সময়ে কী ভাবে ঠিক কস্টিউম বেছে নেবেন, জানাচ্ছেন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য। প্রণয় এ ক্ষেত্রে ডিজাইনারের ওপর ভরসা রাখতে বলছেন। ‘‘সব কিছু সামলে, অনেক সময় পাত্র-পাত্রীরা কস্টিউম পছন্দ করতে গিয়ে গোলমাল করে ফেলেন।’’ তাই ডিজাইনারদের পরামর্শ, বিয়ের পোশাক নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা না করে, সাবেকি রং বা প্যাটার্নে যাওয়াই ভালো। তা ছাড়া ল্যাপটপে কাজ করতে করতে পছন্দের শাড়ি, কুর্তি, আনারকলি, ককটেল ড্রেস দেখে রাখতে তো কোনও অসুবিধা নেই। তার পর হোয়াটসঅ্যাপ করে দিন ডিজাইনারকে। যেমন মৌসুমী। নিজের ও হবু বরের পোশাক অফিসে বসেই পছন্দ করে নিয়েছিলেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় এইচআর ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন মৌসুমী। বিয়ের দু’সপ্তাহ আগে দু’জনে গিয়ে ফিটিং করিয়ে নিয়েছেন। আর ডিজাইনারের কাছে না গেলেও ক্ষতি নেই। এখন, যে কোনও মল বলুন বা বুটিক, মনের মতো সব পাবেন। আগেভাগে অনলাইনে দেখে ব্যাপারটা ফাইনাল করে নিন। কম সময়ে হয়ে যাবে।

স্ট্রেসের যত্ন নিন

তবে বিয়ের তারিখ যতই এগিয়ে আসে, ততই যেন পাত্রপাত্রীর মুখ থমথমে হয়ে যায়। কারণে-অকারণে মেজাজ হারাচ্ছেন। আপনাকে দেখে বাড়ির লোক হয়তো ভাবতে শুরু করলেন, বিয়ের পর কী হবে! তাই বাকিদের টেনশন দেওয়া বন্ধ করুন। স্ট্রেস মাত্রাছাড়া হওয়ার আগে লাগাম দিন তাতে। কারন এত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে আর যাই হোক শরীর আর মন ঠিক রাখতেই হবে। কিন্তু সময়ের অভাবে হাঁটাহাঁটিও প্রায় বন্ধ আপনার। তা হলে উপায়? ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর চিন্ময় রায় বলছেন, ‘‘স্ট্রেস হরমোনকে আয়ত্তে রাখতে ব্যায়াম জরুরি। ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে বাড়িতেই চটজলদি হবে, এমন চারটে ব্যায়াম করলেই হবে। গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে ১০টা পুশ আপ, তিন বার। তার পর পবনমুক্তাসন, ৩০ সেকেন্ড হোল্ড করে। তার পর আবারও গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে ডন বৈঠক। ১০ বার। সব শেষে ভুজঙ্গাসন, ১২ বার। হাঁটতে পারলে বা জগিং করতে পারলে তো কথাই নেই। শরীর-মন দুই-ই ফুরফুরে হয়ে যাবে। ’’

নিত্য ছোটাছুটিতে এখন আপনি দিব্যি অভ্যস্ত। টেনশন জীবন থেকে সম্পূর্ণ উবে যাবে, এটা অসম্ভব। তাই বলে কি দিলওয়ালেদের মুখের হাসিতে টান পড়বে? কখনও না। আমাদের জীবনও অনেকটা হিন্দি সিনেমার মতো। যতই গণ্ডগোল হোক, শেষে ঠিক... হ্যাপি এন্ডিং হবেই হবে। শুভেচ্ছা রইল। আর হ্যাঁ, বিয়ের প্রস্তুতির ছবিও আপলোড করতে পারেন। দেখবেন প্রচুর লাইক পড়বে।

মজা করুন। উপভোগ করুন। ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE