ছবিতে অনুষ্কা ও পরমব্রত
ছবি নিয়ে আলোচনা প্রথম দিন থেকেই। ছবির কাস্টে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের যোগ দেওয়াটাও সমান চর্চাবহুল। মঙ্গলবার ‘পরি’র নির্দেশক প্রসিত রায় আর অভিনেতা পরমব্রত আনন্দ প্লাস-এর দফতরে যখন এলেন, তাঁদের কিন্তু বেশ রিল্যাক্সড দেখাল। যদিও ছবিমুক্তি ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে বলে পরম বললেন, ‘‘এটা প্রায় ঘাড়ে ভূত বসে থাকার মতো অবস্থা। যতক্ষণ না নামবে, স্বস্তি নেই!’’ শুরু হল আড্ডা, টিমের সঙ্গে।
প্র: পরমব্রত, আপনি ভূতে ভয় পান?
পরমব্রত: ভয় পাওয়ার চেয়ে ভূতে বিশ্বাস করতে বেশি ভাল লাগে! চারপাশের পৃথিবীটা তো এমনিতে বোরিং! এর পাশে আর একটা পৃথিবী আছে, সেটা ভাবতে ভাল লাগে।
প্র: প্যারানরম্যাল অভিজ্ঞতা আছে?
পরমব্রত: এক বার জামশেদপুরে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনে গিয়েছিলাম। মা-ও ছিলেন সঙ্গে। সারা দিন কাজের পর হোটেলের রুমে ফিরে দেখলাম, অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছে। এত জায়গায় একা থেকেছি, কখনও ভয়-টয় লাগেনি। অথচ ওই রাতে কিছুতেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে, চোখ খুললেই দেখব পাশে কেউ শুয়ে আছে! তার পর মায়ের ঘরে গেলাম। বেল বাজার তিন সেকেন্ডের মধ্যে মা দরজাটা খুলে দিল! আমি অবাক। মা বলল, ‘আমি জানতাম, তুই চলে আসবি।’ পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দ্যাট? মা বলল, ‘উদ্বোধনে যাওয়ার আগে তোর ঘরে অনেকক্ষণ ছিলাম। আই ডিড্ন্ট লাইক দ্য রুম।’ এ বার আমার ভয়টা লাগল...
পরিচালক প্রসিতের সঙ্গে পরমব্রত। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
প্র: প্রসিত, আপনার কেরিয়ারের শুরুটা বলুন...
প্রসিত: আমি তো দেশপ্রিয় পার্কের ছেলে। সাউথ সিটি কলেজে বি কম পড়েছি। সিনেমার সঙ্গে যোগসূত্র দাদুর কারণে। দাদু প্রণব রায় চিত্রনাট্যকার আর গীতিকার ছিলেন। ফিল্ম নিয়ে বাড়িতে আলোচনা হতো। বাবা-মা অবশ্য চাইতেন এমবিএ পড়ি বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হই। তবে সিনেমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগটা হল এসআরএফটিআই-তে এনট্র্যান্স পরীক্ষা দেওয়ার সময়। ওদের একটা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম হয়। সেখানে ভাল ভাল বিদেশি ছবি দেখানো হয়। ওই সময়টায় আমার জীবন পাল্টে গিয়েছিল। তার পর মুম্বই যাই। আশুতোষ গোয়ারিকর, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা, বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে কাজ করি। মুম্বই যাওয়ার আগে এখানে অনীক দত্তর সঙ্গে বিজ্ঞাপনের কাজও করেছি।
প্র: এই সুযোগটা কী ভাবে পেলেন?
প্রসিত: আগে অনেক পরিচালককে অ্যাসিস্ট করেছি। তখন থেকেই ভাবতাম, নিজের মতো কাজ করব। এই গল্পটা আমি আর আমার সহ-লেখক অভিষেক লিখি। আসলে ‘শাইনিং’ বা ‘অরফ্যানেজ’-এর মতো অন্য ধরনের হরর ছবি তো এ দেশে তেমন হয়নি। তাই আমরাই ভাবলাম একটা করি। লেখার পর অন্য এক প্রযোজককে শুনিয়ে ছিলাম। প্রথমে তাঁরা রাজি হলেও পরে বলেন, তাঁদের হাউস থেকে সেই মুহূর্তে হরর ছবি হবে না। তখন ‘ফিলৌরি’তে কাজ সবে শুরু করেছি। আমি ছিলাম ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। আমাকে মনমরা দেখে কর্ণেশ (অনুষ্কার ভাই) জিজ্ঞেস করল, ব্যাপার কী। শুনে বলল স্ক্রিপ্টটা দিতে। তার পর একদিন কর্ণেশ ডেকে বলল, ‘তোর স্ক্রিপ্টটা পড়লাম। সারা রাত ঘুমোতে পারিনি...’ এটাই সূত্রপাত। এর পর অনুষ্কাও স্ক্রিপ্টটা পড়ে। ওরও ভাল লেগেছিল...
প্র: বিরাট কোহালি সেটে এসেছিলেন?
পরমব্রত: একদম আসেনি (সকলের হাসি)।
প্র: বিরাটের সঙ্গে আপনাদের আলাপ হয়েছে?
পরমব্রত: কই, না তো (অর্থপূর্ণ হাসি)!
প্র: সেটে এত বাঙালি। অনুষ্কা আপনাদের বাঙালিয়ানা দেখে কী বলতেন?
পরমব্রত: রেগে যেত! বলত, আমরা কি বাংলা ছবি করছি?
প্রসিত: আমি তো বাংলা বলা থেকে নিজেকে কন্ট্রোলই করতে পারতাম না, বিশেষ করে টেনশনের সময়। পরমের সঙ্গে আমি হিন্দিতে কথা বলব? হয় নাকি!
পরমব্রত: এর প্রতিশোধ স্বরূপ, যখনই পার্টি করতাম, শুধু পঞ্জাবি গান চলত!
প্র: অনুষ্কাকে কেমন লাগল?
পরমব্রত: খুব ডিরেক্ট। সোজা ভাবে কথা বলে। একটা লেভেলে খুব সাধারণও। সেটা আমার পক্ষে সুবিধের হয়েছিল। দশ দিনের ওয়র্কশপ করেছিলাম। তখন অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিলাম একে অপরের সঙ্গে।
প্র: ‘কহানি’ বা ‘পরি’— পরমব্রতর কেরিয়ারের দুটো জাতীয় স্তরের ছবিতেই তাঁর চরিত্ররা বাঙালি। ন্যাশনাল লেভেলে বাঙালিয়ানা কি আপনার প্লাস পয়েন্ট?
পরমব্রত: আমি এক দিকে যেমন প্রচণ্ড বাঙালি, অন্য দিকে তেমনই গ্লোবাল। সেটা একটা সুবিধে তো বটেই।
প্র: সামনে নতুন কোনও প্রজেক্ট রয়েছে?
প্রসিত: সব ডিপেন্ড করছে ‘পরি’র উপর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy