Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রুদ্রবাবুকে ছোট করতে ছবিটা বানাইনি

শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে কেয়া চক্রবর্তীর জীবন অবলম্বনে তৈরি ‘নাটকের মতো’। পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং সিনেমায় রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের চরিত্রে অভিনয় করা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে আড্ডায় স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে কেয়া চক্রবর্তীর জীবন অবলম্বনে তৈরি ‘নাটকের মতো’। পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং সিনেমায় রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের চরিত্রে অভিনয় করা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে আড্ডায় আনন্দplus

দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

দেবেশ চট্টোপাধ্যায় ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

‘জীবন সম্পর্কে তোমার যে ধারণা, তাতে আমি থুতু ফেলি। তোমরা সবাই কুকুরের মতো। যেটা শুঁকছ, সেটাই চাটছ। এই নির্বোধ একঘেয়েমিকে তোমরা সুখ বলো। তা’ও তোমার চাহিদা আছে। মানুষ যেন জীবনের কাছে বেশি না চায়। আমি সবটুকু চাই, যদি না পাই, সব ভেঙেচুরে দিতে চাই।’

‘নাটকের মতো’র সংলাপ বলতে বলতে ফোটোশ্যুটের জন্য মঞ্চে এলেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। কেয়ার জীবন নিয়ে ছবি করতে গিয়ে কোথায় যেন কেয়ার জার্নিটা তাঁর নিজেরই জার্নি হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গেই মঞ্চে ততক্ষণে হাজির ছবির ‘রুদ্রপ্রসাদ’ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। বলে উঠলেন ‘‘আজ স্টেজে এসে খুব নস্টালজিক লাগছে। এক কালে আমিও তো থিয়েটার পাড়ায় কাজ করেছি।’’ বদলে গেল প্লট। পরিচালক আর অভিনেতা ছবি তুলতে তুলতে সেরে ফেললেন প্রিমিয়ারের প্ল্যানিং।

‘নাটকের মতো’-র প্রিমিয়ারে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত আসছেন তো?

দেবেশ: হঠাৎ এই প্রশ্ন?

আপনার ছবি কেয়া চক্রবর্তীর জীবন নিয়ে। সেখানে রুদ্রপ্রসাদকে আমন্ত্রণ জানাবেন না!

দেবেশ: কাদের নিমন্ত্রণ করা হবে, সেটা প্রযোজকের ব্যাপার।

আপনি নিমন্ত্রণ জানাবেন না?

দেবেশ: (একটু ভেবে) নিশ্চয়ই চাইব ছবিটা রুদ্রবাবু দেখুন। অনেক ভুল বোঝা দূর হবে।

ভুল বোঝা বলতে?

দেবেশ: রুদ্রবাবুকে ছোট করতে ছবিটা বানাইনি আমি।

আপনার ছবিতে ‘প্রসাদ’ চরিত্র রুদ্রবাবুকে ভেবেই তো করা...

দেবেশ: আমার ছবির প্রসাদ কিন্তু রুদ্রবাবুর কপি নয়। ‘নাটকের মতো’ কেয়া চক্রবর্তীর বায়োপিকও নয়। এই ছবি পুরনো সময়ের রাগ, ভালবাসা, আবেগ, ঈর্ষা, দুঃখ নিয়ে তুলে ধরেছে আজকের সময়কে।

কী বলছেন আপনি! ছবিতে খেয়ার জীবন, নাট্যজগৎ থেকে অস্বাভাবিক মৃত্যু— সবই তো কেয়ার জীবনের সঙ্গে মিলে গেছে। অজিতেশ তা হলে অমিতেশ, নান্দীকার নাট্যগোষ্ঠী নটকার নাট্যগোষ্ঠী হয়েছে কেন?

দেবেশ: খেয়া এখানে শুধুই কেয়া নয়। এক্সটেনশন। এই কল্পকাহিনি যখন ক্যানভাসে আসে, তখন তা ঘরে-বাইরে অবিচার অস্বীকার মেনে নেওয়া মেয়েদের স্বর হয়ে খেয়ার মধ্যে বেজে ওঠে। কাদা ছোড়াছুড়ি করার জন্য আমি ছবিটা বানাইনি। রুদ্রবাবু বা তাঁর পরিবারকে আঘাত দেওয়ার জন্য এ ছবি নয়। কোনও ছবিতে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে কথা বলতে গেলে কতগুলো বাস্তব চরিত্র আসে। আমি মানছি কেয়া বা রুদ্রপ্রসাদ বা অজিতেশের আদল আছে ছবির চরিত্রগুলোর মধ্যে। দেখুন, সকলে তো কেয়াকে চেনেন না। কিন্তু ছবিতে খেয়ার নামের মাঝে তাঁরা কেয়াকে চিনবেন। সেই জন্যই এই নামকরণ। ছবিটা দেখার পর মানুষের ওই সময়টা নিয়ে, নাটক নিয়ে নতুন করে আগ্রহ জন্মাবে। আমার তো মনে হয় নতুন প্রজন্মের কাছে এ ভাবেই কেয়ার পরিচয় ঘটবে। সে জন্যই এই ছবি।

শাশ্বত: এখানে আমি একটু বলতে চাই। আমরা শুনে এসেছি এক সময় শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ কাঁপাতেন। কিন্তু কিছু তো দেখিনি! আমি তা-ও ‘হাটেবাজারে’ দেখে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কল্পনায় আনতে পারি। কিন্তু ফেলে আসা নাট্যজগতের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চলমান ইমেজ আমাদের সামনে তো নেই। ‘নাটকের মতো’ ছবিতে এই ইতিহাসের মুখগুলো ধরা থাকবে।

প্রসাদের মতো ও রকম একটা ভার্সেটাইল চরিত্রে, অভিনয় করতে গিয়ে রুদ্রপ্রসাদের সাহায্য নিয়েছিলেন আপনি?

শাশ্বত: দেখুন, রুদ্রবাবুকে ভেবে কিছু করিনি আমি। তাঁর সাহায্য নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

পরিচালকই তো বলছেন প্রসাদ চরিত্রে রুদ্রপ্রসাদের আদল আছে।

শাশ্বত: দাঁড়ান, দাঁড়ান (উত্তেজিত হয়ে) আমার চেহারার সঙ্গে কি রুদ্রবাবুর কোনও মিল আছে? ব্রাত্য অমিতেশ চরিত্রটা করেছে। ওর চেহারার সঙ্গে অজিতেশের মিল খুঁজে দেখান তো।

ছবিতে হুবহু রুদ্রবাবুর আদলে সিগারেট খেয়েছেন আপনি...

শাশ্বত: সিগারেট কিন্তু আমিও খাই। আমার কাছে এই ছবিটার স্ক্রিপ্টই ছিল শেষ কথা। ওটাই আমার একমাত্র রেফারেন্স। আমি কাউকে ভেবে, দেখে, নকল করে অভিনয় করিনি।

তবুও প্রসাদ করা আর বব বিশ্বাসের চরিত্র করা কি এক?

শাশ্বত: না। ‘কহানি’তে বব বিশ্বাস কতটুকুই বা ছিল? আমি সুজয়কে বলেছিলাম বব বিশ্বাস দিনের পর দিন যে অম্লানবদনে খুন করে, সেটা কেন? তার ফ্যামিলি হিস্ট্রিই বা কী? সেগুলো যদি ছবিতে থাকত, বব বিশ্বাস চরিত্রটাই অন্য রকম হয়ে যেত। ‘নাটকের মতো’য় প্রসাদকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে। পুরো কালো সে নয়। বরং গ্রে...

দেবেশ: এই ছবিতে কোনও চরিত্রই সাদা বা কালো নয়। দর্শকদের মনে হতে পারে খেয়ার পজিটিভ দিকটাই আমি শুধু দেখিয়েছি। আসলে খেয়া-প্রসাদের রসায়নটা বোঝাতে গিয়ে খেয়ার অন্য দিকটাও দেখানো হয়েছে ছবিতে।

কিন্তু ছবিতে খেয়া যে প্রসাদকে বিয়ে করেন, তিনি একজন উদ্ধত স্বামী। ঈর্ষাকাতর অধ্যাপক। নাট্যদলের সংগঠকও। তা হলে ছবিতে তার পজিটিভ দিকটা কোথায়?

শাশ্বত: কেয়ার দিক থেকে দেখলে প্রসাদকে কিছুটা উদ্ধত মনে হতে পারে। কিন্তু ওই সময়ের এক মেধাবী মানুষ, তুখড় খেলোয়াড়, দক্ষ নাট্যকর্মী যে ভাবে রিঅ্যাক্ট করে, প্রসাদও তাই করেছে। সবচেয়ে পজিটিভ দিক হল সে অসম্ভব ভাল প্রেমিক।

কেয়া চক্রবর্তী বলতেন বিয়ের আগে তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারেন— এই বিষয়টা আছে ছবিতে?

দেবেশ: কেয়ার মতোই ছবির খেয়া এমন কিছু কথা বলে, যেটা আজকের আধুনিক নারীদের সংলাপ। সতীত্ব, যৌনতা সব বিষয়ে চাঁচাছোলা ছবির খেয়া।

কেয়া চক্রবর্তীকে না দেখে চরিত্রটা তৈরি করতে অসুবিধে হয়নি?

দেবেশ: কেয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে আমার বহু কালের পড়াশুনো। ওর মা লাবণ্য চক্রবর্তীর কাছে দিনের পর দিন কেয়ার কথা শুনেছি। ছবিতে সংসারী খেয়াকে গাঁথতে কেয়ার লেখা ‘মিসেস আর পি সেনগুপ্ত’— পড়েছি।

পাওলি আর শাশ্বতর রসায়নটা কেমন লেগেছে পর্দায়?

দেবেশ: দারুণ। পাওলির বেস্ট পারফর্ম্যান্স।

অজিতেশ আর কেয়ার প্রেমকে ছবিতে কি দেখানো হয়েছে?

দেবেশ: প্রেমিক হিসেবে ব্রাত্য অসাধারণ। ছবিটা দেখলেই বুঝবেন।

কেয়া চক্রবর্তীর মৃত্যু ঘিরে আজও অজস্র প্রশ্ন। ছবিতে তদন্তকারী অফিসার খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই মৃত্যুরহস্য। এই তদন্তকারী অফিসার কি পরিচালক নিজে?

দেবেশ: সত্যিই তাই।

পরিচালক হিসেবে আপনার রায়টা কী? এটা মৃত্যু? হত্যা? না আত্মহত্যা?

দেবেশ: সত্য একমাত্রিক নয়। থাক না... এই রায়টা দর্শকদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE