Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘রাহুল-প্রিয়ঙ্কার মাঝে আমি আসিনি, ওদের সংসারও ভাঙিনি কিন্তু’

লোকে যতই আঙুল তুলুক সব অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন সন্দীপ্তা সেন। দাবি করলেন ‘রাহুলদা’ খুব ‘ভাল বন্ধু।’ সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ দু’বার দেখবেন মর্নিং আর নাইট শোয়ে। তার জন্য নিজের সাক্ষাৎকার বা শ্যুট পিছোতেও রাজি তিনি। শাহরুখ নিয়ে পাগল! নিজের জীবনে ‘জাহাঙ্গির খান’ কে?

ছবি: কৌশিক সরকার

ছবি: কৌশিক সরকার

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

‘ডিয়ার জিন্দেগি’ দু’বার দেখবেন মর্নিং আর নাইট শোয়ে। তার জন্য নিজের সাক্ষাৎকার বা শ্যুট পিছোতেও রাজি তিনি। শাহরুখ নিয়ে পাগল! নিজের জীবনে ‘জাহাঙ্গির খান’ কে? বললেন, ‘‘আয়না আমার জাহাঙ্গির খান। কিছু ঝামেলা হলে নিজেকে বোঝানোর জন্য ওর সঙ্গে কথা বলি।’’

আয়নার কাছে কোনও দিন জানতে চেয়েছেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কার মাঝে আপনি কেন এলেন?

চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘‘দেখুন, আমি এটাই শুনে আসছি! কিন্তু আমি কোনও দিন রাহুল প্রিয়ঙ্কার মাঝে আসিনি। আমি ওদের সংসার ভাঙিনি কিন্তু। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে আমার ওপর। সব গুজব।’’

তা হলে ‘তুমি আসবে বলে’ সিরিয়ালে ও রকম ঘনিষ্ঠ দৃশ্য এক শটে... (থামিয়ে দিয়ে) বললেন, ‘‘রাহুলদা আর আমি খুব ভাল বন্ধু। ওর সঙ্গে ইন্টিমেট সিনগুলো ওই খুব সহজ করে দিয়েছিল। ও একজন ভাল অভিনেতা বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে।’’

তা হলে প্রিয়ঙ্কা সোনারপুরে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে আরম্ভ করল কেন? সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টে প্রশ্ন করলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা কি সোজাসুজি কখনও বলেছে ওদের সম্পর্কে চিড় ধরার জন্য আমি দায়ী? ওর সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভাল। আর ও আমার খুব পছন্দের অভিনেত্রী।’’

নিজেকে খুব লাকি মনে করেন সাইকোলজির এই ছাত্রী। রাজ চক্রবর্তীর একটা ফোন বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবন — ‘‘স্যান্ডু, অ্যাক্টিং করবি?’’

সেখান থেকেই বড় প্রোডাকশন হাউসে ‘দুর্গা’র প্রবেশ। অভিনয় করতে এসে ‘ভরতলক্ষ্মী’ স্টুডিয়োর ফ্লোরে কলেজবেলার বন্ধু গৌরব চট্টোপাধ্যায়কে পেয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন ‘দুর্গা’। অনস্ক্রিন যতই শাশুড়ি-মায়ের সঙ্গে যুদ্ধ চলুক, নিউকামার হিসেবে অফস্ক্রিন মা স্বাগতা মুখোপাধ্যায়ের অবদান কোনও দিন ভুলতে পারবেন না সন্দীপ্তা। সাড়ে আট বছরের সিরিয়াল জীবনে বরাবরই সিনিয়রদের সহযোগিতা পেয়ে এসেছেন তিনি। ‘তুমি আসবে বলে’ শ্যুট করতে করতে মাস্টার্সে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। চিনি ছাড়া কালো কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘হয়তো মেক-আপ রুমে বসে পড়ছি। কেউ গল্প জুড়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে রূপাঞ্জনাদি, স্বাগতাদি বকে ধমকে তাদের চুপ করিয়ে দিত।’’ সহজাত অভিনয় তাঁর ইউএসপি। নয়তো ডেইলি সোপে হিরোইনের চরিত্রে তাঁকে তিনবার ফিরিয়ে আনত না চ্যানেল — ‘‘আমি লাকি। ‘স্টার জলসা’য় আমি প্রথম নায়িকা যাকে রিপিট করা হয়। ‘দুর্গা’ ‘টাপুর’, ‘নন্দিনী’ এতগুলো ভ্যারাইটি পেয়েছি।’’ স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সাহায্যে গোল টিপ আর শাড়ি ছেড়ে মাথায় টুপি পরে ‘টাপুর টুপুর’ ধারাবাহিকে ক্রিকেট খেলতে নেমে গিয়েছিলেন তিনি।

এত কিছুর পরেও এখনও সিনেমায় তাঁকে দেখা যায়নি। খুব আফশোস নিয়ে বললেন, ‘‘সৃজিতদার (মুখোপাধ্যায়) ‘চতুষ্কোণ’ করার কথা ছিল। ডেট ম্যাচ না করায় কাজটা করতে পারিনি। আসলে কাউকে বলতে পারি না বাংলা ছবিতে কাজ দিন,’’ অকপট সন্দীপ্তা। চান শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ করতে। অরিন্দম শীল, রাজ চক্রবর্তীর ছবিতে কাজ করতে।

টালিগঞ্জের প্রিয় অভিনেত্রীদের কথা জিজ্ঞেস করতেই এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন মিমি চক্রবর্তী আর শ্রাবন্তীর নাম। মিমির কেরিয়ার প্ল্যানিংটা শেখার মতো মনে হলেও নিজে প্ল্যান করে কিছু করেন না। আপাতত মেগাতেই কাজ করতে চান। মনে করেন মেগাতে মহিলাদের অভিনয়ের স্কোপ অনেক বেশি। নানারকম শেডে নিজের অভিনয় দেখানো যায়।

অভিনয়ের জন্য ছবিতে স্কিন শো বা চুমু খেতেও আপত্তি নেই তাঁর। মেগায় ইশা সাহার অভিনয় আর ‘ইচ্ছেনদী’র ‘শোলাঙ্কি’কে তাঁর বেশ ভাল লাগে। ইচ্ছে আছে বিক্রমের (চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করার। সিরিয়ালের সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে যেতে চান কাউন্সেলিংটাও। খুব শিগগির নিজের ক্লিনিক তৈরি করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড নয়, এক মুঠো রোদ্দুর বা আকাশ ভাঙা মেঘ কিংবা বিকেলের হঠাৎ ফুচকার মধ্যেই যেন তাঁর অবিরাম ফুর্তি। টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলব-খুলব করেও খোলা হয়নি। যদিও ফেসবুকে তাঁর একতিরিশটা ফেক প্রোফাইল।

মধ্যবিত্ত জীবনের লাল-নীল দেওয়ালেই তিনি কেরিয়ারের ক্যানভাস তৈরি করতে চান। ‘দুর্গা’র পর একতা কপূরের ধারাবাহিকে নায়িকা হওয়ার সুযোগ পেয়েও মুম্বই যাননি, কারণ ‘ইচ্ছে করেনি।’ কিন্তু হঠাৎ ইচ্ছে হলে চলে যান ময়দানে ঘোড়ায় চড়তে বা নৌকো ভাসিয়ে হাওড়া ব্রিজের গায়ে সূর্যাস্ত দেখতে — ফোটোগ্রাফির নেশা তাঁকে পাগল করে দেয়।

কিন্তু ভুল কথায় গান গেয়ে সারাক্ষণ যে অন্যকে পাগল করেন?

প্রশ্নটা শুনেই লজ্জায় গুটিয়ে গেলেন। ‘‘এটা আমার পাগলামি! আমার সঙ্গে শ্যুটে সারাক্ষণ যারা থাকে, তারা আমায় মারতে বাকি রাখে। আমি গান ছাড়া বাঁচতে পারি না। ভুল সুরে, ভুল কথায় গান গেয়ে চলি।’’ গানের লিস্টে পান্নালাল ভট্টাচার্য থেকে হানি সিংহ সবাই রয়েছেন!

কথায় কথায় বললেন, ‘‘আমি এ রকম ভুল গান শুরু করলেই রাহুলদা উঠে চলে যায়... শুধু তাই নয় এজন্য রাহুলদা আমায় গাল দিতেও ছাড়েনি।’’

আড্ডা ছেড়ে হুশ করে উঠে পড়লেন। নোটের এই হাহাকারের বাজারে শপিং থেকে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র টিকিট সবই সারছেন কার্ডে।

সিরিয়ালের সঙ্গে একটা সময় টানা মাচা করেছেন। বললেন, ‘‘আমি না হয় এখন মাচা করি না। কিন্তু জানেন, বহু শিল্পী শুধু মাচা করে বেঁচে আছেন। সেই মুখগুলো মনে পড়লে ভেতরটা কেমন কেঁপে উঠছে।’’

কফি শেষ। মোটা কালো ফ্রেমের চশমা আর চুলে মুখ ঢাকলেও ‘নন্দিনী’কে চিনতে পারা মাত্রই এল সেলফির আবদার। যাওয়ার আগে হঠাৎ ঘুরলেন। একটু থেমে বললেন,

‘‘প্লিজ লিখবেন আমি কিন্তু ‘হোমব্রেকার’ নই...’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandipta Sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE