Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বেঁচে থাকো বাবা

লিখছেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে বাঙালি বাড়ির দাদু-ঠাকুমারা এই বলেই আমাদের আশীর্বাদ করেন, ঘটনাচক্রে যাঁরা এই মায়াময় পৃথিবীতে বহু দিন ধরে বেঁচে আছেন। হিন্দিতে যেমন বয়োজ্যেষ্ঠদের চল আছে বলার, মেরে উমর তেরে লাগ যায়! আর চাইনিজরা তাঁদের সম্রাটের জন্য দশ সহস্র বৎসর আয়ু কামনা করে থাকেন। ইওহান ওয়াংসুই! ওয়াংসুই!

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে বাঙালি বাড়ির দাদু-ঠাকুমারা এই বলেই আমাদের আশীর্বাদ করেন, ঘটনাচক্রে যাঁরা এই মায়াময় পৃথিবীতে বহু দিন ধরে বেঁচে আছেন। হিন্দিতে যেমন বয়োজ্যেষ্ঠদের চল আছে বলার, মেরে উমর তেরে লাগ যায়! আর চাইনিজরা তাঁদের সম্রাটের জন্য দশ সহস্র বৎসর আয়ু কামনা করে থাকেন। ইওহান ওয়াংসুই! ওয়াংসুই!

তবে শুধু প্রার্থনাতেই নয়, চিনেরা বাস্তবিকই দীর্ঘায়ুর অধিকারী হয়। আর এই দীর্ঘ জীবনের নেপথ্যে রয়েছে জীবনভর সংযম ও মাপজোঁক করা খাদ্যাভ্যাস। সুসিদ্ধ খাদ্যেই তাঁদের সিদ্ধিলাভ এই সত্য ইতিহাস প্রসিদ্ধ। ভাজাভুজি, তেলমশলা, ঝালঝোল—এই ত্রহ্যস্পর্শ থেকে চৈনিকরা মুক্ত। এক, এই মুক্তি তাঁদের রেসিপির কল্যাণেই। তার ওপর রয়েছে চাইনিজ রান্নায় বহুবিধ হার্বসের অর্থাৎ ভেষজের ব্যবহার, যা শুধু স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যেরও গ্যারান্টি বহন করে। যেমন ধরুন, জিনসেং স্যুপ, এনার্জি ও লং লাইফের জন্য তো রীতিমতো প্রমাণিত। অথবা চাইনিজ গ্রিন টি, এমন ফ্রেশ বেভারেজ যা জীবনকে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে দেয় অনেকটা পথ। চিনেদের ইন ও ইয়ং দর্শনে রয়েছে শরীরে ঠান্ডা ও গরমে ভারসাম্যের খতিয়ান, যে ব্যালান্স তাঁদের খাবারদাবারেও রয়েছে। প্যান গ্রিলিং— এই টেকনিকে রয়েছে ডিপ ফ্রাই না করেও কম তেলে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত অথচ সুস্বাদু পদের সিক্রেট। না, না— বেজিং বা সাংহাই যাওয়ার দরকার নেই, হাতের কাছের যে কোনও মেনল্যান্ড চায়না আউটলেটের লঞ্জিভিটি ফেস্টিভ্যালে গেলেই এই রেসিপির স্বাদ পাবেন।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে কাল থেকে আপনাকে চাইনিজ রেসিপি অ্যাডপ্ট করতে বলছি। বলার উদ্দেশ্য একটাই, বাঙালি রান্নাতেও কী করে আনা যায় সেই সুস্বাস্থ্যের স্বাদ, সেই সুদীর্ঘ জীবনের আশ্বাস— অবশ্য তার জন্য একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে এমন অনেক টোটকা-টিপস যা আমাদের ঠাকুমা-দিদিমারা রান্না করতে গিয়ে ব্যবহার করতেন। এখানে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের গড় আয়ু কিন্তু আমাদের এখনকার প্রজন্ম থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। তার জন্য শুধু পলিউশন-ফ্রি পরিবেশ নয়, খাবার ও খাবার অভ্যেসও অনেকটা দায়ী।

আমার এক বন্ধু ঠাট্টা করে বলেছিল, বাংলায় শুধু নাকি বিল্পব দীর্ঘজীবী হয়, বাঙালি হয় না! এটা যে কত বড় সত্যি কথা তার প্রমাণ আমাদের সাহিত্য আর ইতিহাসের পাতাতেই তো লেখা আছে। সে পোটরোগা, পিলের জ্বর আর পান্ডুরোগে ভোগা সুকুমার রায়ের সৎপাত্র বিশেষ— টেনিদার চোখে চিরকালের প্যালারাম। ও সব দীর্ঘজীবন-টীবন নিয়ে মাথা ঘামাতে বাঙালিবাবু রাজি নয়।

মাও সে তুং শুনেছি রাত আটটায় ডিনার করতেন, আর বিপ্লবী বাঙালি রাত দশটার সময় চা খেয়ে রাজাউজির মেরে এসে বুক ভরা অম্বল নিয়ে ডিনার করতে বসে। সাধে কি আর বাংলাতে বিপ্লবও দীর্ঘজীবী হল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE