Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এক-এ মাতৃত্ব দুই-এ কেরিয়ার?

মাদারহুড নিয়ে মীরা রাজপুত ও করিনা কপূরের জোর মন্তব্য বিনিময়... সে সব শুনে, কী বলছেন টলিউডের সেলেব মায়েরা? মাতৃত্ব মানে কি দিনের ২৪ ঘণ্টাই সন্তানের সঙ্গে কাটানো না কি কীভাবে সন্তানকে বড় করছেন, সেটা? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় শাহিদ-ঘরনি মীরা রাজপুত মাতৃত্ব বিষয়ে নিজের বক্তব্য রেখেছেন।

করিনা কপূর ও মীরা রাজপুত

করিনা কপূর ও মীরা রাজপুত

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ ও পারমিতা সাহা
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১৩
Share: Save:

মাতৃত্ব মানে কি দিনের ২৪ ঘণ্টাই সন্তানের সঙ্গে কাটানো না কি কীভাবে সন্তানকে বড় করছেন, সেটা? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় শাহিদ-ঘরনি মীরা রাজপুত মাতৃত্ব বিষয়ে নিজের বক্তব্য রেখেছেন। তিনি লেখেন, ‘...আমি চাই না দিনের এক ঘণ্টা মিশার সঙ্গে কাটিয়েই আমাকে কাজে ছুটতে হোক। ওর সঙ্গে এটা কী করছি? মিশা ইজ নট আ পাপি। আমি ওর সঙ্গে সব সময় থাকতে চাই...’ এই মন্তব্যের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে। ওয়ার্কিং মাদারদের কাছে বাচ্চারা কি পাপি?

তার পর-পরই এক সাক্ষাৎকারে করিনা কপূর মাদারহুড নিয়ে মতামত পেশ করেন। তিনি বলেন, ‘...আমি কেমন মা সেটা সময়ই প্রমাণ করবে। তৈমুরকে আমি কতটা ভালবাসি, সেটা ছাদে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে জানানোর প্রয়োজন নেই। প্রেগন্যান্সির সময় থেকেই প্রত্যেক সন্তানের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কের ধরন ভিন্ন। এটা আমার হয়ে কেউ ভেবে নিতে পারে না যে, পোস্ট প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন আদৌ আমাকে গ্রাস করেছে কি না কিংবা সন্তানের জন্ম দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যেই আমি বাড়ি থেকে বেরোব কি না?... আপনি যা-ই করুন না কেন, অন্যেরা মন্তব্য করবেই। কী ভাবে সেটা ডিল করছেন, সেটাই আসল ...’’

নাম না করলেও বুঝতে মোটে অসুবিধে হয় না, তৈমুরের মায়ের এহেন ঝাঁজালো বক্তব্যের নিশানায় কিন্তু মিশার মা। সব মিলিয়ে মায়েরা পেশা সামলে কীভাবে সন্তান মানুষ করবেন, সেটা রীতিমত একটা আলোচনার বিষয় হয়েছে। কেরিয়ার না কি মাতৃত্ব, জীবনে কোনটি গুরুত্ব পাওয়া উচিত? না কি এভাবে আদৌ কোনও তুলনা টানা যায় না? প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল টলিউডের সফল অভিনেত্রী মায়েদের কাছে। সন্তানকে বড় করা এবং তাঁকে সময় দেওয়া নিয়ে কী ভাবেন তাঁরা?

প্রিয়ঙ্কা ও ঋতুপর্ণা

কুড়ি বছরের কেরিয়ার হয়ে গিয়েছে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর। ছেলের জন্মের পরই ‘আলো’ করেছিলেন। মেয়ের জন্মের পরে ‘চারুলতা ২০১১’। ‘‘আমার শাশুড়ি কিংবা মা দায়িত্ব নিয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করেছেন। ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমি সিনেমার সেটেও গিয়েছি। এভাবেই সামলেছি,’’ বললেন ঋতুপর্ণা।

আরও পড়ুন: বিনোদের অবস্থা আয়ত্তে

মাত্র ষোলো বছর বয়সে মা হয়েছিলেন শ্রাবন্তী। শারীরিক অসুস্থতার জন্যই কাজে ফিরতে পারেননি। ছেলে অভিমন্যুর বয়স যখন চার, তখন ফের ছবি করা শুরু করেন শ্রাবন্তী। তিনি কিন্তু প্রকারান্তে মীরাকেই সমর্থন করলেন। তাঁর মতে, ‘‘একদম ছোট বাচ্চাকে বাড়িতে ছেড়ে কাজে চলে যাওয়া ঠিক নয়। ওই সময় মাকে প্রয়োজন সন্তানের। বাচ্চা একটু ব়ড় হলে তো কাজ করতে কোনও সমস্যা নেই।’’ শ্রাবন্তী বাবা-মায়ের কাছে ছেলেকে রেখে যেতেন। ছোট বাচ্চাকে স্রেফ কাজের লোকের হাতে ছেড়ে যাওয়ার বিরোধী নায়িকা।

উলটো দিকে প্রিয়ঙ্কা সরকার কিন্তু প্রেগন্যান্সির সময়ও ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন। তার পর ছেলে সহজের ছ’মাস বয়স হওয়ার আগেই আবার কাজ শুরু করেন। প্রিয়ঙ্কার কাছে ‘‘বাচ্চাদের ছোট থেকেই ওয়ার্ক কালচারটা বোঝা উচিত যে, পরিশ্রম করলে তবেই টাকা রোজগার করা যায়। এভাবেই আপনি আপনার পরিবারকে সাপোর্ট করছেন। আমি ভীষণভাবে চাই, আমার ছেলে বুঝুক মায়ের কাজ করা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট।’’ তাঁর কাছে পেশার সঙ্গে বাচ্চাকে সময় দেওয়ার কোনও বিরোধ নেই। পুরোটাই ব্যালান্সিং।

ছোট পরদার সফল অভিনেত্রী অপরাজিতা ঘোষ যে রকম ডেলি সোপ ‘কুসুমদোলা’ ছাড়া অন্য কোনও কাজ হাতে নিচ্ছেন না, যাতে সাড়ে তিন বছরের ছেলে পান্তকে একটু সময় দিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘‘মা বাচ্চাকে দিনে এক ঘণ্টা সময় দেবে না কি দশ ঘণ্টা, সেটা তিনিই পারেন ব্যালান্স করতে। আমার ক্ষেত্রে চয়েস ছিল, কিন্তু সকলের থাকে না। তবে মনেপ্রাণে মানি, মা কিন্তু নিজের মতো করে সন্তানকে সময়টা দিয়ে দেন। এটা কোনও তিন নম্বর মানুষ ডিসাইড করতে পারেন না।’’

একই সুর শোনা গেল অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর গলাতেও। ‘‘আমার সিদ্ধান্ত আমার উপর নির্ভর করে। আমি বাড়িতে কতটা এফিশিয়েন্টলি একটা প্যারালাল সিস্টেম রাখতে পারছি, যাতে বাচ্চারও যথাযথ খেয়াল রাখা সম্ভব, সেটাই বড় কথা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, প্রথম দশ মাস সন্তানকে দেব। তার পর যখন মোটামুটি ফিট এবং বেবিও একেবারে ছোট নেই, আমি আবার বেরোতে শুরু করি। এখন তো অভিনয়ের জন্য সপ্তাহভর বাড়ির বাইরে থাকছি। এটা আমার সিদ্ধান্ত এবং এতে আমার পরিবারেরও পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’’

হ্যাঁ, টলিউডে সুদীপ্তা হোন বা বলিউডে করিনা, মীরা, এঁরা যে আর্থ-সামাজিক অবস্থানে রয়েছেন, সেখানে তাঁরা নিজেরা ডিসিশন নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের সমাজে কত জন মহিলা সেটা পারেন? সুদীপ্তার কথায়, ‘‘সন্তানের জন্মের পরদিন থেকেই কেউ কাজ করতে চাইতে পারেন, আবার কেউ চান না। কিন্তু সবচেয়ে আগে তাঁকে ওই জায়গাটা দিতে হবে, যেটা তাঁরা পান না। তার পর তো সিদ্ধান্ত!’’ অপরাজিতার মতে, এক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনেই পারেন অন্য জনকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গাটা করে দিতে। সন্তানের প্রতি মায়ের মতো বাবারও কিন্তু সমান কর্তব্য রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Working Mother Film
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE