Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সুমনকে আমি কখনও বোর হতে দিই না

অগস্টের শুরুতে একই দিনে তাঁর দু’টো ছবি রিলিজ হচ্ছে মানেই যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় খুব রেখেঢেকে সাবধানী কথা বলবেন তা নয়। তিনি যেমন তেমনই। প্রেম নিয়ে যেমন, জীবন নিয়েও তেমনই খোলামেলা। ফের আবিষ্কার করলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।অগস্টের শুরুতে একই দিনে তাঁর দু’টো ছবি রিলিজ হচ্ছে মানেই যে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় খুব রেখেঢেকে সাবধানী কথা বলবেন তা নয়। তিনি যেমন তেমনই। প্রেম নিয়ে যেমন, জীবন নিয়েও তেমনই খোলামেলা। ফের আবিষ্কার করলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

বৃষ্টিতে ভাসছে কলকাতা। ট্রাফিক জ্যামে বন্দি শহর। এমনই এক বাদলা দুপুরে সাদা ট্রাউজার আর জর্জেটের ডিপ নেক হাতকাটা টপ পরে হাজির হলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সময়ের থেকে বেশ খানিকটা দেরিতেই এলেন। ছোট চুল আর কালো মোটা ফ্রেমের চশমায় গ্রিন টিতে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘বাবা শ্যুটে না বেরোলে আজকাল আর বাড়ি থেকে বেরোতে পারি না। মা চলে যাওয়ার পর জীবনটাই বদলে গেল।’’

অনেক দিন পর স্বস্তিকাকে একা দেখছি...

মানে? ও বুঝেছি। আমাকে আর লালকে (সুমন মুখোপাধ্যায়) সকলে একসঙ্গে দেখেই অভ্যস্ত। সেটা নিয়ে লোকের যত সমস্যা। আচ্ছা বলুন তো, পাশে থাকার জন্য অন্য কোনও লোককে ভাড়া করে আনব? একসঙ্গে দেখা যাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?

স্বস্তিকার মধ্যে বেশ একটা বোল্ড ব্যাপার আছে। যাদবপুরের ‘হোক কলরব’ থেকে ‘টেক ওয়ান’য়ের ন্যুড শ্যুট—বারো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পর মনে হয় না এই বোল্ডনেসের জন্য অনেক কিছু হারাতে হয়েছে?

আমি খুব বড় কাজের আশা করে ইন্ডাস্ট্রিতে আসিনি। এখন প্রযোজক, পরিচালক, মিডিয়া, এই তিনটে মাধ্যমের সঙ্গে ‘কানেকশন’য়ের ভিত্তিতে যে কোনও অভিনেত্রীকে রেট করা হয়। কোনও প্রযোজক ফোন করে রাতে কফি খেতে ডাকলে আমি যাই না। কেউ মিছিলে হাঁটতে বললে হাঁটিও না। উল্টে অভিনয় করিয়ে নিয়ে কোনও প্রযোজক কথামতো টাকা না দিলে আমি সকলকে জানিয়ে দিই। এ সবের জন্য কাজ কম পাই এটা জানি। তবে হ্যাঁ, প্রোডিউসর কানেকশনটা পরের জন্মে নিশ্চয়ই জোরালো করব।

প্রযোজকের সঙ্গে কফি না হয় খেতে গেলেন না। কিন্তু নিজের ছবির প্রোমোশনের জন্য প্রযোজককে সহযোগিতা তো করতে পারেন। ইন্ডাস্ট্রিতে শোনা যায় স্বস্তিকা নিজের ছবির প্রোমোশন করেন না।

(থামিয়ে দিয়ে) কই না তো!

‘জাতিস্মর’য়ের প্রমোশনে আপনাকে দেখা যায়নি। ‘এবার শবর’ আর ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’য়ের ক্ষেত্রে একই কথা।

দাঁড়ান, দাঁড়ান। সব ছবির একই গল্প নয়।

গল্পটা বলবেন প্লিজ?

‘জাতিস্মর’-এ প্রযোজকের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছিল। রিলায়্যান্স নিজেই ঝামেলাটা মিটিয়ে নিয়েছে। আর ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’য়ের সময় মা নার্সিং হোমে। তখন ছবির প্রোমোশনের প্রশ্নই ওঠে না।

কিন্তু ‘এবার শবর’?

‘এবার শবর’য়ের পরিচালক অরিন্দম শীল। ওঁকে নিয়ে আমি একটাও কথা বলব না। প্লিজ জোর করবেন না। এখন আমি ‘অনুব্রত ভালো আছো’ আর ‘শেষের কবিতা’র প্রোমোশন নিয়েই ব্যস্ত। ‘টেক ওয়ান’য়ের সময়ও তো যথেষ্ট প্রোমোশন করেছি।

‘শেষের কবিতা’র পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়। ‘শেষের কবিতা’ দিয়েই কি সুমন আর স্বস্তিকার কবিতা লেখা শুরু?

(মুচকি হেসে) একেবারেই না। ২০১২-তে শ্যুটের সময়ও ব্যক্তিগত আলাপ ছিল না। রাহুল বসুর জন্য তখন আমি পাগল। রাহুল অমিত করছে শুনে লাফিয়ে উঠেছিলাম।

আর সুমন মুখোপাধ্যায়?

ভেবেছিলাম সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে অভিনয় করলে ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেত্রী হিসেবে দর বাড়বে। অ্যাকাডেমিক স্ফিয়ারে সিনেমা নিয়ে কথা বলতে গেলে আজও ‘হারবার্ট’কে একটা ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ধরা হয়। তার ওপর রবীন্দ্রনাথ। এই রকম একটা ক্লাসিক ছবিতে অভিনয় করে খুব ভাল লেগেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে লাবণ্য না কেটি, কী হতে চান?

অফ কোর্স কেটি। সকলে কেটিকে ভীষণ নেগেটিভ অ্যাসপেক্টে দেখে। কেটি খুব কালারফুল চরিত্র। প্রেমের জন্য সরল, ছেলেমানুষ। ছবিটা দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। আর একটা কথাও বলি, ‘শেষের কবিতা’য় রবীন্দ্রনাথের মূল গল্পের কোনও বদল কিন্তু হয়নি।

কাদম্বরী দেখেছেন?

বেশ ভাল লেগেছে ছবিটা।

‘অনুব্রত ভালো আছো’ ছবিতে পঞ্চাশের এক মহিলার চরিত্র। ‘শেষের কবিতা’য় ঝকঝকে কেটি। দুটো ছবিই একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে। কোন চরিত্রটা জনপ্রিয় হলে আপনি বেশি খুশি হবেন? দুটোই বললে কিন্তু চলবে না।

(একটু ভেবে) আসলে দুটোই।

যে কোনও একটার কথা বলতে হবে।

বেশ ঝামেলার! আসলে ‘শেষের কবিতা’ বেশির ভাগ মানুষের পড়া। কেটি সম্পর্কে মানুষের মনে একটা ছবি আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। সেই ধারণার সঙ্গে আমার কেটি যে পুরো মিলবে তা কিন্তু বলা যায় না। আর ‘অনুব্রত ভালো আছো’ ছবি সম্পর্কে কারও কোনও ধারণা নেই। আমি পাকা চুলের স্বস্তিকা। আমাকে আর ঋত্বিককে আগে কোনও ছবিতে এ ভাবে দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে দর্শকের কাছে পৌঁছনো অনেক সহজ। তবে এখানে একটা কথা বলি?

বলুন না...

‘শেষের কবিতা’র একেবারে শেষে অমিত যখন কেটিকে গ্রহণ করার সময় বলে তোমার নাম বদলে দেব...উফফ্ সেটা একদম মেনে নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল বলি, ‘দরকার নেই। আমার জীবন থেকে চলে যাও।’ কিন্তু কী করব! রবীন্দ্রনাথকে তো বদলানো যায় না।

সুমন মুখোপাধ্যায় যদি বদলে যান, নতুন করে প্রেমে পড়েন...

না... আমার সঙ্গে এতটা সময় কাটানোর পর মনে হয় না সেটা আর হবে। এই সম্পর্কের সব চেয়ে খারাপটাও আমরা দু’জন দেখে নিয়েছি। আর কী বাজে হতে পারে? (মজার হাসি হেসে) তা ছাড়াও একটা মানুষের ভয়ও তো আছে! আমি তো যা খুশি করতে পারি চটে গেলে। আমি ওকে যথেষ্ট এন্টারটেন করি। কখনও বোর হয় না। আর আমাকে যে ভীষণ বাজে দেখতে তার জন্যই ওর সুন্দরী মহিলার দরকার হবে তেমনটাও নয়। তবে এটা ঠিক ওর ইন্টেলেক্টের সঙ্গে হয়তো নিজেকে ম্যাচ করাতে পারব না। তবে অন্য দিক থেকে ম্যানেজ করে দিই।

বিয়েটা কবে হচ্ছে?

২০১৫-য় দাঁড়িয়েও এই প্রশ্নটা আমাকে শুনতে হয়! একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ব্যস্ অমনি বিয়ে করে ফেলো।

মানে বিয়ের প্ল্যানিংও নেই?

আমার জীবনে প্ল্যান করে কিছু হয় না। একটা সময় ভেবেছিলাম যদি ডিভোর্সটা ওয়ার্ক আউট করে, তবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকব...(বলেই বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে গেলেন) মা-ই চলে গেল! বাবাকে ফেলে অন্য কোথাও গিয়ে থাকব? জাস্ট ভাবতে পারি না।

বাড়ির করি-না কপূর থেকে স্বস্তিকা তা হলে গৃহকর্ত্রী?

ইচ্ছে করে না জানেন। সকালে উঠেই সারা দিনের রান্নার মেনু ঠিক করতে হয়। গ্যাসওয়ালা, দুধওয়ালা, মাসকাবারি, এই সব থেকে মনে হয় পালাই। কিন্তু সংসারে আটকা পড়ে গিয়েছি।

আর কেরিয়ার? সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়— প্রথম সারির এই সব পরিচালকের ছবিতে তো স্বস্তিকা নেই?

সৃজিতের ছবি করলাম তো। ‘জাতিস্মর’। আর তার পরে সৃজিত কী করেছে? ‘নির্বাক’। সেটা তো এক জন নারীকে নিয়ে। আর ‘রাজকাহিনি’তেও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মূল চরিত্রে। আমার প্রায় চার মাস লেগেছিল দিবাকরের ব্যোমকেশ করতে। অতটাই সময় দিতে চেয়েছিলাম আমি। যশরাজ ব্যানারে কাজ করা আমার কেরিয়ারের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

কিন্তু ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ও তো সকলের পছন্দ হয়নি।

আমাকে কিন্তু সকলের পছন্দ হয়েছিল। দিবাকর আমাকে জানিয়েছিলেন বিদ্যা বালন, নাসিরউদ্দিন শাহ দিবাকরকে ফোন করে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। দীপিকার সঙ্গে যখন কলকাতায় দেখা হয় ও বলেছিল ‘‘তোমাকে তো এখনও অঙ্গুরী দেবীই মনে হচ্ছে।’’ যেখানে নজরে আসার আমার অভিনয় সেখানে ঠিকই এসেছে।

‘অনুব্রত ভালো আছো’-র জন্য কুইন্সল্যান্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন। কেমন লাগছে?

ছবি রিলিজের মুখেই এই পুরস্কার পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি আসলে বাণিজ্যিক ছবি ছেড়ে দেওয়ার পর কোনও দিনই আর বড় ব্যানারে কাজ করিনি। বরং ছোট ব্যানারের প্রযোজকদের সঙ্গে কাজ করেছি। দেখেছি তাঁরাও ছবির প্রমোশনে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। আর ছবিগুলোও চলেছে।

‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’ চলেনি কিন্তু...

আমেরিকায় সমকামী অধিকার আইন পাশ হওয়ার পর যতই আমরা ফেসবুকের প্রোফাইল রামধনু রঙে সাজিয়ে তুলি, আজও আমারই পাড়াতে যদি দুটো মেয়ে হাত ধরে হাঁটে সবাই চোখ বড় করে তাকায়। আর সিনেমায় যদি লেসবিয়ান সম্পর্ক দেখানো হয় সেটা মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দেখতে যাবে না। তবে পাওলির সঙ্গে কাজটা করে আনন্দ পেয়েছি।

ইন্ডাস্ট্রিতে স্বস্তিকাকে কি ভুল ভাবে ট্যাগ করা হয়? স্বস্তিকা মানেই খোলামেলা পোশাক বা চুম্বনদৃশ্য....

ভুল ট্যাগের কী আছে এতে? সিনেমার জন্য চিত্রনাট্যের খাতিরে ‘টেক ওয়ান’ করেছি। আর কী বাকি আছে? যে রকম ইচ্ছে আমি সেই রকম করব। ব্যোমকেশের পর মুম্বই থেকে প্রচুর অফার পেয়েছিলাম। চরিত্র পছন্দ হয়নি, করিনি।
বছরে ছ’টা ছবি করতে হবে এমন কোনও টার্গেট আমার নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা বদলেছি নিজেকে। এমন চরিত্র করতে চাই যা আগে কখনও করিনি। তবে আজকাল খুব বাণিজ্যিক ছবি করার ইচ্ছে হয়। মনে হয় ভেনিসে গিয়ে প্রচুর নাচি।

কার সঙ্গে?

জানি না... আনন্দবাজারের জন্যই একবার দেবের সঙ্গে শ্যুট করেছিলাম। সকলে বলেছিল আমাদের দেখতে ভাল লেগেছে। তবে এও জানি আমাকে আর ওকে কেউ একসঙ্গে ভাববেও না।

বদলে যাওয়া স্বস্তিকাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। অটোয় চড়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের অ্যাকসিডেন্ট হয়। আপনি থাকলে ওকে অটোয় চড়তে দিতেন?

অমি ওর জীবনে নেই। কী করতাম সেটা ভাববারও প্রয়োজন নেই।

পুরনো প্রেমিকদের কথা মনে পড়লে...

• জিৎ: হি ইজ রকিং। ওর চুল এখন হৃতিক রোশনের মতো। দারুণ লাগছে। আমার তো মনে হয় আজও জিৎ ইন্ডাস্ট্রির সব চেয়ে ভাল দেখতে নায়ক। নিজেকে চমৎকার ভাবে ধরে রাখতে জানে। আর অসম্ভব পরিশ্রমী। ওর জন্য টোটাল থাম্বস আপ।

• পরম: অন স্ক্রিন ম্যাচিওরিটি এসেছে। সকলেরই আসে।

• সৃজিত: আমি কিছু ভাবি না।

• দিব্যেন্দু: ফোনে মাঝে মাঝে কথা হয়। ‘টেক ওয়ান’ দেখে ফোন করেছিল।

• শিলাজিৎ: ফোনে এক-দু’বার কথা হয়েছে।

পুনশ্চ: স্বস্তিকা প্রথমে এ নিয়ে একেবারেই কথা বলতে চাননি। উত্তর দেবার পর বললেন বারবারই এই নামগুলো
নিয়ে আমাকে মন্তব্য করতে বলা হয়। তিনি করেনও। যদিও তাঁর কাছে এগুলোর আজ আর কোনও মূল্য নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE