অক্ষয়
দু’বছর আগেও বলিউডের ছবিটা এ রকম ছিল না। শাহরুখ, সলমন, আমির। তিন খান দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন হিন্দি ছবির জগতে। অক্ষয়কুমারের ‘ব্রাদার্স’ সবে রিলিজ করেছে। সে ছবির বক্স অফিসের অবস্থা একেবারে ভাল নয়। অক্ষয়ের ট্র্যাক রেকর্ডটাও যে খুব আশাদায়ক, তেমনও নয়। বছরে তিনটে ছবির মধ্যে দুটো ফ্লপ হচ্ছেই।
তাঁর পরের ছবির সাংবাদিক সম্মেলনে এক সাংবাদিক সাহস করে প্রশ্ন করেছিলেন, চতুর্থ খানের আসনটা কি তাঁর হাত থেকে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে? বলিউডে অনেক দিন তাঁকে বলা হতো, ফোর্থ খান। কিন্তু সে জায়গা দ্রুত ভরিয়ে দিচ্ছিলেন অনেকে। তাই প্রশ্নটা। অবশ্য সাংবাদিকের কৌতূহলে রেগে যাননি অক্ষয়। স্বভাবসিদ্ধ হাসি মাখিয়ে মোক্ষম উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘প্রতি শুক্রবার বলিউডে ভাগ্য বদলে যায় ভাই।’’
সত্যিই বদলে গেল। শুধু অক্ষয়কুমারের নয়। বলা যায় গোটা বলিউডের। ‘সিংহ ইজ ব্লিং’, ‘এয়ারলিফ্ট’, ‘হাউজফুল থ্রি’, ‘রুস্তম’, ‘জলি এলএলবি টু’, ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’... না, আর ফ্লপের মুখ দেখতে হয়নি ইন্ডাস্ট্রির খিলাড়িকে।
একাই একশো
বলিউডের ‘চতুর্থ খান’ দূরে থাক, এখন বলিউডের প্রথম সারির নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক অভিনেতার নাম নিঃসন্দেহে অক্ষয়কুমার। শাহরুখ খান সেই ‘দিলওয়ালে’ থেকে বক্স অফিসে লাভের মুখ দেখেননি। সলমন খানের ফ্যান বেস-ও সন্দেহের বাইরে থাকছে না। ‘টিউবলাইট’ দপ করে নিভে যাওয়ায় শঙ্কিত স্বয়ং ভাইজানও। বাকি খানদের মধ্যে হিট বলতে আমির খান।
কিন্তু বক্স অফিসের হিসেব নিকেশ বদলে দিয়েছেন অক্ষয়কুমার। বিপরীতে প্রথম সারির নায়িকার উপস্থিতির কোনও দরকার নেই। এমি জ্যাকসন হোন কি নিমরত কৌর, অক্ষয় একাই একশো। বাস্তবিকই একশো কোটির বক্স অফিসের জন্য অক্ষয় যেন সেরা বাজি। আর সেখানেও চমক। অক্ষয়ের বেশির ভাগ ছবিরই বাজেট প়ঞ্চাশ কোটিরও কম। সে দিক থেকে লাভের অঙ্কটা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, অক্ষয় থাকা মানে হিরোইনের খরচ বেঁচে যাওয়া। তবু নায়িকার কাস্টিং নিয়ে নাকি কোনও কথা বলেন না অক্ষয়। নিজেই একবার বলেছিলেন, ‘‘নায়িকাদের কাস্টিং নিয়ে আমি কোনও কথা বলি না। ওটা পুরোপুরি প্রোডিউসর, ডিরেক্টর, কাস্টিং ডিরেক্টরদের ব্যাপার। আমি ওতে নাক গলাই না। আমাকে নিশ্চয়ই বলে। কিন্তু ওটুকুই। আমি শুনি। আমার ভাই সিনেমা করতে এ সব ‘এ লিস্টেড’ অভিনেত্রী দরকার হয় না। এখন এত রকমের অভিনয় করছি। ‘স্পেশাল ২৬’, ‘বেবি’তে তো নায়িকাই নেই।’’
অক্ষয়
বছরে তিনটে ছবি
এত রকমের অভিনয়ের কথাটা যথার্থ বলেছিলেন অক্ষয়। হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে তিনিই একমাত্র নায়ক, ছবির সংখ্যার দিক থেকে যিনি এখনও পুরনো ফর্মুলা চালিয়ে যাচ্ছেন। শাহরুখ, সলমন যেখানে বছরে একটা কিংবা আমির যেখানে দু’বছরে একটা ছবির কাজ হাতে নিচ্ছেন, সেখানে অক্ষয় দিব্যি বছরে তিনটে সিনেমা করে যাচ্ছেন।
এত ছবি করার ব্যাপারেও স্পষ্ট অক্ষয়। ‘‘অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, একটার বেশি ছবি যারা করে না তারা অলস। সবাই যদি সেটে হান্ড্রেড পার্সেন্ট দেয়, ঠিকঠাক সময়ে সেটে আসে, তা হলে বছরে চার-পাঁচটা ছবিও কোনও ব্যাপারই নয়। কিন্তু উপরের দিকের লোকগুলো যদি আনপ্রফেশনাল হয়, তবে অসুবিধা হয়। অন্যরাও ততটা মন দিতে পারে না কাজে,’’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি। যুক্তিটাও তাঁর কাছে স্পষ্ট, ‘‘একটা সিনেমা করতে লাগে ষাট দিন। চারটে সিনেমা করলে দাঁড়ায় দুশো চল্লিশ দিন। তাও পড়ে থাকল একশো পঁচিশ দিন। কয়েক দিন দিলাম প্রোমোশনে। তার পরেও অঢেল সময়। এই তো দেড় মাস ফ্রান্সে ছুটি কাটিয়ে এলাম। এত সময় নিয়ে করবটা কী!’’
আরও পড়ুন:ক্ষীরের বদলে চিনির বরফি
দেশাত্মবোধের নতুন পাঠ
হিন্দি ছবির জগতে এটা অক্ষয়ের নিজস্ব আমদানি। বছর কয়েক আগে পর্যন্তও স্বাধীনতা দিবসের দিন টিভিতে সিনেমা মানেই অবধারিত ভাবে সানি দেওল বা নানা পটেকরের কোনও ছবি। অক্ষয় খুব সুচারুভাবে সেই বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন। ‘স্পেশাল ছাব্বিশ’, ‘বেবি’, ‘এয়ারলিফ্ট’ তার উদাহরণ। শুধু তাই নয়, দেশাত্মবোধের একটা নতুন আবেগও যেন জাগিয়ে দিয়েছেন। ‘টয়লেট...’-এ তো জাতীয়তাবোধের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশিয়ে দিয়েছেন সামাজিক বার্তাকেও। তাঁর পরের ছবি ‘প্যাডম্যান’ বা ‘গোল্ড’ও এই ছকের খুব একটা বাইরে নয়।
অনেকে মনে করছেন, এই বদলটা এসেছে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর। আর অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের পর। সে দিক থেকেও তিন খানের থেকে আলাদা তিনি। একমাত্র তাঁর ঝুলিতেই জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু তবু বিনোদনের দিকেই পাল্লা ভারী রাখছেন তিনি। সামনেই মুক্তি পাবে রজনীকান্তের সঙ্গে তাঁর ছবি ‘টু পয়েন্ট ও’।
তাই অক্ষয়কুমারকে এখন আর শুধু ‘খিলাড়ি’ ভাবলে ভুল হবে। তিনি এখন বলিউডের ত্রাণকর্তাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy