Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দুই খুদের বড় গপ্‌পো

ছোট পরদায় ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় ‘রেশম ঝাঁপি’র তিতলি আর বুলবুলি। নায়িকা হওয়ার সব উপাদানই মজুত ওদের মধ্যে এক জনের বয়স সাড়ে পাঁচ, অন্য জনের পাঁচ! এই দুই কন্যেই বড় হয়ে নায়িকা হতে চায়! অবাক হচ্ছেন তো? ভাবছেন, কী দিনকাল পড়ল, টিভি দেখে-দেখে বাচ্চাদের কী অবস্থা!

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০৩
Share: Save:

ছোট পরদায় ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় ‘রেশম ঝাঁপি’র তিতলি আর বুলবুলি। নায়িকা হওয়ার সব উপাদানই মজুত ওদের মধ্যে এক জনের বয়স সাড়ে পাঁচ, অন্য জনের পাঁচ! এই দুই কন্যেই বড় হয়ে নায়িকা হতে চায়! অবাক হচ্ছেন তো? ভাবছেন, কী দিনকাল পড়ল, টিভি দেখে-দেখে বাচ্চাদের কী অবস্থা! একটু শুধরে দিই, টিভি দেখে নয়, এই দুই খুদেকে আমরাই রোজ ছোট পরদায় দেখছি। এরা বাংলা সিরিয়াল ‘রেশম ঝাঁপি’র তিতলি ওরফে স্মৃতি সিংহ ও বুলবুলি ওরফে অনুষ্কা ভট্টাচার্য।

লিলুয়ার ডি বি মোমোরিয়াল স্কুলের কেজিতে পড়ে স্মৃতি। পুতুল খেলার চেয়ে সাজগোজ করতে বেশি ভালবাসে সে। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের দিকে মেয়ের ঝোঁক নজরে পড়ে স্মৃতির মা সুমিত্রার। মেয়ের ভাললাগাকে তিনি উৎসাহ দিয়েছেন। একটি পোশাক কোম্পানির জন্য ফোটোশ্যুটও করেছিল স্মৃতি। সেই ছবি দেখে ‘রেশম ঝাঁপি’র অডিশনের জন্য তার ডাক পড়ে। তিতলির চরিত্রে পাশ করলেও স্মৃতির বাংলা উচ্চারণ তখন মোটেও ভাল ছিল না। স্মৃতির মা বাঙালি, বাবা পঞ্জাবি। ‘‘ও একেবারে বাংলা বলতে পারত না। সিরিয়ালে সুযোগ পাওয়ার পর পরিচালক মনোজিৎদা মেয়েকে বাংলা শিখিয়েছেন। ওঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ,’’ বললেন সুমিত্রা। বরাহনগরের কি়ড জোন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী বুলবুলি ওরফে অনুষ্কা। অনুষ্কাকে তাঁর বাবা-মা মধুমিতা ও সুরজিৎ অ্যাকটিং স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। অভিনয়ে অনুষ্কার ঝোঁক দেখে প্রথমে ‘ফুলমণি’ সিরিয়ালের অডিশনে মেয়েকে নিয়ে যান। সেখানে না উতরোলেও ছ’মাস পর ডাক পড়ে ‘রেশম ঝাঁপি’র বুলবুলির জন্য।

এই দুই কন্যের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বোঝা গেল, এদের চাওয়া-পাওয়া শিশুসুলভ হলেও কথায় এরা যথেষ্ট পরিণত। স্কুলের প্রসঙ্গ উঠতেই, ‘‘জানো, আমি বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন শেয়ার করে খাই।’’ শুনেছি তুমি নাকি অন্যদের টিফিন খেয়ে নাও? প্রায় আর্তনাদ করে উঠল অনুষ্কা, ‘‘মোটেই না, আমি আগে দিই, তার পর বন্ধুদের থেকে খাই।’’ প্রতিবেদককে নিশ্চিন্ত করতে পেরে স্বস্তি পেল সে। দুষ্টু হেসে বলল, ‘‘টিফিনে যে দিন পিৎজা থাকে সে দিন টিফিন টাইমের আগেই খিদে পেয়ে যায়।’’ পিৎজা ছাড়া অনুষ্কা ভালবাসে আইসক্রিম। ‘‘মা আমাকে আইসক্রিম খেতে দেয় না কিন্তু আমি লুকিয়ে-লুকিয়ে খাই। দাদু-দিদার বাড়ি গেলে দাদু কিনে দেয়। মা জানতেও পারে না,’’ বিজয়ীর হাসি অনুষ্কার ঠোঁটে। আইসক্রিমের চেয়ে চকোলেটটা একটু বেশি ভালবাসে স্মৃতি। ‘‘চকোলেট খেতে খুব ভালবাসি। নতুন একটা চকোলেট বেরিয়েছে না? ওটা এখনও খাইনি। ওটা খেতে হবে,’’ বলল স্মৃতি। চকোলেট ছা়ড়া ডাল আলুসেদ্ধ খেতে খুব ভালবাসে সে। সারাদিন তো শ্যুটিং ফ্লোরেই কেটে যায়। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, পড়াশোনা এগুলো মিস করো না? ‘‘এখন তো গরমের ছুটি। তা ছাড়া যে দিন শ্যুটিং থাকে না সে দিনগুলো স্কুলে যাই। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে মা আমাকে পড়ায়,’’ অনুষ্কার সাফ উত্তর।

একই অবস্থা স্মৃতিরও। ‘‘জানো তো, বন্ধুরা আমাকে বলে, তোকে সিরিয়ালে দেখছি। আমার শুনতে খুব ভাল লাগে। আরও ভাল লাগে যখন ম্যামেরা বলে, কী করে করলি তুই এই সিনটা,’’ উৎসাহ নিয়ে বলল স্মৃতি!

‘‘শ্যুটিংয়ের জন্য অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। আমার উপর বেশ প্রেশার পড়ছে। মেয়েকে বলেওছি, আর করতে হবে না। কিন্তু ‘না’ বললে মেয়ের সে কী কান্না! যতক্ষণ না কথা উইথড্র করব ততক্ষণ কেঁদে যায়,’’ বললেন অনুষ্কার মা মধুমিতা। মেগা সিরিয়ালের লম্বা শিডিউলে অভিভাবকরাই যদি ক্লান্ত হয়ে যান তো শিশুশিল্পীদের কী অবস্থা হয়, বোঝাই যাচ্ছে!

‘‘এমন অনেক সময় হয়েছে যে, সকালে শুরু হয়ে পরের দিন সকালে শ্যুটিং শেষ হয়েছে! সে ক্ষেত্রে প্রোডাকশনের লোকজন খুব সহযোগিতা করেন। বাচ্চাদের মুডকে ওঁরা খুব কেয়ার করেন। তবে আমার মেয়ের অভিনয়ের ব্যাপারে বেশ এনার্জি। রাত-দিন শ্যুটিং করেও ক্লান্ত হয় না,’’ বললেন সুমিত্রা। অভিনয়ের ব্যাপারে স্মৃতি আনকোরা হলেও অনুষ্কা এর আগে বিজ্ঞাপনে এবং ‘ভুতু’, ‘স্ত্রী’ ইত্যাদি সিরিয়ালে ছোটখাট চরিত্র করেছে।

পরদায় বুলবুলি ও তিতলি হরিহর আত্মা। বাস্তবে তারা কেমন বন্ধু? ‘‘আমি মানুষ সাজি, দিদি ভূত। ও আমাকে ধরার জন্য দৌড়য়, আমিও ছুট লাগাই। আমাদের খেলা শুরু হলে সেটে সকলে চেল্লামেল্লি শুরু করে দেয়,’’ হাসতে-হাসতে বলল অনুষ্কা। রাস্তায় বা কোনও পার্টিতে স্মৃতিকে কেউ গাল টিপে আদর করলে মোটেও সেটা তার ভাল লাগে না। কিন্তু এই ব্যাপারটা অনুষ্কা বেশ এনজয় করে।

এই দুই খুদে কন্যের মধ্যে বেশ কিছু অমিল থাকলেও একটি ব্যাপারে দু’জনের পছন্দ এক। দু’জনেরই ফেভারিট কার্টুন ‘ডোরেমন’! দুই কন্যেরই পৃথিবী এখন ‘রেশম ঝাঁপি’। শ্যুটিং তাদের কাছে খেলার মতো আনন্দের।

পুনঃ-‘রাখী বন্ধন’ সিরিয়ালের রাখী (কৃত্তিকা) এবং বন্ধন (সোহম) দর্শকের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেননি। শর্ত, শুধুই অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE