Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাফল্যের নতুন ফরমুলা কি আঞ্চলিক ছবি

খোঁজ নিলেন নাসরিন খানআজকাল আঞ্চলিক ছবি নিয়ে হই চই হয়। অমিতাভ বচ্চন পর্যন্ত বাংলা ছবি ‘বেলাশেষে’ দেখে মুগ্ধ। টুইটও করেছেন, ব্লগেও লিখেছেন এ ছবি নিয়ে। এমন মন ছুঁয়েছে এই ছবির গল্প যে তিনি প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু উনি নয়, দীপিকা পাড়ুকোনও এখন বাংলা ছবি দেখছেন।

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

আজকাল আঞ্চলিক ছবি নিয়ে হই চই হয়। অমিতাভ বচ্চন পর্যন্ত বাংলা ছবি ‘বেলাশেষে’ দেখে মুগ্ধ। টুইটও করেছেন, ব্লগেও লিখেছেন এ ছবি নিয়ে। এমন মন ছুঁয়েছে এই ছবির গল্প যে তিনি প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু উনি নয়, দীপিকা পাড়ুকোনও এখন বাংলা ছবি দেখছেন। ‘পিকু’ ছবিতে বাঙালি কন্যের রোলে প্রশংসা পাওয়ার পর তিনি এখন বাঙালি সংস্কৃতি আর বাংলা সিনেমা নিয়ে খুবই আগ্রহী।
‘পিকু’তে তিনি যে ধরনের বাঙালি সাজে সেজেছেন দর্শকদের সেটা খুব পছন্দ হয়েছে। ক্রেতারা এখন ‘পিকু’র দেখাদেখি বাঙালি পোশাক কিনতে চাইছে। পোশাক নির্মাতারা এখন চাহিদা মেটাতে পারছেন না এমন অবস্থা। এ থেকে একটা ব্যাপার বোঝা যায় আঞ্চলিক ছবির ক্রেজ এখন চড়চড়িয়ে বাড়ছে।
সাফল্যের নতুন ফরমুলা কি এখন আঞ্চলিক ছবি?
কর্ণ জোহরের মতো পরিচালকও এখন ‘বাহুবলী’র মতো দক্ষিণী ছবি উপস্থাপনা করছেন। ‘বাহুবলী’র পরিচালক হলেন এস এস রাজামৌলি। প্রায় ২০০ কোটি টাকা দিয়ে বানানো এই ছবি এখন সর্বভারতীয় ছবির মর্যাদা পেতে চলেছে।
বলিউডের সুপারস্টারেরাও এখন আঞ্চলিক ছবির প্রচার ও উপস্থাপনায় এগিয়ে আসছেন। সলমন খানের মতো তারকা আঞ্চলিক ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। রীতেশ দেশমুখ ২০১৩ সালে প্রথম ‘বালক পলক’ নামে মরাঠি ছবি প্রযোজনা করেন। এই ধরনের ছবি করে রীতেশের মর্যাদা বেড়েছে। ছবিটা হিট করায় ব্যবসাও ভাল হয়েছে। এর পর ‘লয় ভারি’ নামে একটি মরাঠি ছবিতে অভিনয় করেন, প্রয়োজনাও করেন। সে ছবি প্রচুর পুরস্কারও পেয়েছে। ছবিতে সলমনও ছিলেন। সলমন খান থাকায় দর্শকও টেনেছে বেশি করে।

এই মরাঠি ছবি থেকে রীতেশ প্রায় চল্লিশ কোটি টাকা আয় করেছেন। এই সাফল্য দেখে অনেক বলিউড প্রযোজকই এখন মরাঠি ছবিতে বিনিয়োগ করতে চাইছেন। কিন্তু ‘বেলাশেষে’র পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আঞ্চলিক ছবির প্রতি এই আগ্রহ নতুন কিছু নয়। বরাবরই ছিল। যে কোনও ছবি মন ছুঁতে পারলে বুঝতে হবে দর্শক তা দেখতে আসবেন। আর দর্শক এলেই ব্যবসা ভাল হবে। তারকারাও এখন কাহিনিনির্ভর ছবিতে অভিনয় করতে চান। ভাষাটা কোনও বাধা নয়।’’
শুধু সলমন নন, অক্ষয়কুমারও আঞ্চলিক ছবিতে বিনিয়োগ করেছেন, প্রযোজনাও করেছেন। সে ছবির নাম ‘অন্তর’। এক সাংবাদিক বৈঠকে অর্জুন কপূর বলেছেন সিনেমায় ভাষাটা কোনও বাধা নয়। তিনি বলছেন, ‘‘আপনি যদি আবেগটাকে ধরতে পারেন, চরিত্রের মূল ভাবটা বুঝতে পারেন, তা হলে ভাষাটা অন্তরায় হয় না।’’
‘পিকে’ একটা সম্পূর্ণ মাল্টিপ্লেক্স ছবি হওয়া সত্ত্বেও পরিচালক রাজু হিরানি ভোজপুরি ভাষা ব্যবহার করেছেন। আঞ্চলিক দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্যই এই প্রচেষ্টা।
‘লয় ভারী’ ছবির পরিচালক নিশিকান্ত কামাত বলছেন, হিন্দি ছবি বানানোর ক্ষেত্রে অনেক চাপ থাকে, অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকে। তাই আঞ্চলিক ছবিতেই পরিচালকেরা পরীক্ষানিরীক্ষা করার সুযেোগ পান। গল্প নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া যায়। হিন্দি ছবিতে বড় অঙ্কের টাকার লগ্নি থাকে, বড় বড় তারকারা থাকে, তাই নতুন কিছু করার কথা ভাবা সহজ নয়। ‘পিকু’ পরিচালক সুজিত সরকারও চাইছেন বাংলা ছবি প্রয়োজনা ও পরিচালনা করতে। বাংলা ছবি ‘ওপেনটি বয়োস্কোপ’ তিনি ইতিমধ্যে প্রযোজনা করেও ফেলেছেন।

মরাঠি ছবি যে এতটা সফল হচ্ছে তার কারণ জোরালো কাহিনি, সোশ্যাল মিডিয়াতে বলিউডের তারকাদের দ্বারা ছবির প্রচার, আর মহারাষ্ট্র সরকারের সাহায্য। পরিচালক অনির বলছেন, ‘‘মরাঠি সিনেমা এই মুহূর্তে এত ভাল চলছে তার কারণ সরকারের সহযোগিতা। বাংলা সিনেমাতেও যদি সরকার ভর্তুকি দিতে শুরু করে তা হলে বাংলা ছবি আরও ভাল করবে। বাংলা আর কেরল চিরকালই ভাল ছবিতে এগিয়ে। গল্প বলার পদ্ধতি আর সিনেমার ট্রিটমেন্টে বাঙালিরা সব সময়ই এগিয়ে। কিন্তু ইদানীং ব্যবসার কথা ভেবে ছবি বানানো হচ্ছে বলে ইন্ডাস্ট্রি সঙ্কটের মুখে পড়ছে। বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক ভাল ভাল পরিচালক আছেন।’’

সাবটাইটেল দিয়ে আঞ্চলিক ছবি সারা ভারতে তো বটেই, বিদেশেও দেখানো হচ্ছে। ফলে ভিন প্রদেশের দর্শকেরাও এখন আঞ্চলিক ছবি দেখছেন।

এখানেও দেখা যাচ্ছে অবাঙালিরা ‘বেলাশেষে’র মতো ছবি দেখছেন। উত্তর প্রদেশ, জম্মু কাশ্মীরে অনেক হিন্দি ছবির শ্যুটিং হচ্ছে। কারণ সেখানকার সরকার আর্থিক ভাবে তো বটেই, আরও নানা রকম ভাবে সাহায্য করছে ছবি করার জন্য। স্বাভাবিক ভাবেই আঞ্চলিক ছবির ইন্ডাস্ট্রিও এতে উপকৃত হচ্ছে। সেখানকার শিল্পী, কলাকুশলীরা কাজ পাচ্ছেন। আর আঞ্চলিক মাটির গন্ধও ছবিগুলোতে উঠে আসছে।

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিবপ্রসাদ বলছেন, ‘‘আমরা মনে করি আমাদের ছবি বিশ্ব চলচ্চিত্রের একটা অংশ। দর্শক আমাদের ছবি পছন্দ করেন কারণ আমরা মানবিক আবেগ দেখাই। সেখানে ভাষা কোনও বাধা নয়।’’

বাংলা ছবির জনপ্রিয়তার কারণ ‘বেলাশেষে’র সহ পরিচালক নন্দিতা রায় খুব ভাল ভাবে তুলে ধরলেন তাঁর বক্তব্যে। বললেন, ‘‘ আমরা গল্প বলতে, শুনতে আর দেখতে ভালবাসি। বক্স অফিসের কথা ভেবে সিনেমা বানাই না।’’

আঞ্চলিক ছবির সব চেয়ে বড় সম্পদ হল সরল ভাবে সাধারণ গল্প বলা। যেটা মন ছুঁয়ে যায়। সেই কারণেই সব রকমের দর্শক যাচ্ছে আঞ্চলিক ছবি দেখতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE