ককপিট
সারা বছর বাংলা ছবি চলুক, না-চলুক পুজোর সময় ব্যবসায় মার নেই। কিন্তু একসঙ্গে গোটা ছয়েক ছবি গুঁতোগুঁতি করে রিলিজ করলে যেখানে লক্ষ্মী ঠাকুরই কনফিউজড হয়ে যান, সেখানে দর্শকের দশা সহজেই অনুমেয়। সঙ্গে হিন্দি ছবির উপরি চাপ।
প্রশ্ন, বাংলা কি হিন্দিকে গোল দিতে পারল? দ্বিতীয় প্রশ্ন, পুজোর হুজুগে না হয় দর্শক সিনেমা হলে গেলেন, কিন্তু ছবির গুণগত মান কি ছুটির শেষেও সিনেমাগুলোকে হলে টিকিয়ে রাখতে পারছে?
পুজোর সময় হিন্দি রিলিজ ছিল ‘নিউটন’, ‘ভূমি’ এবং ‘হাসিনা পার্কার’। একেবারে ওয়াশ আউট ‘ভূমি’ ও ‘হাসিনা...’। এ রাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশেই। তাই পুজোর সময় প্রথম রাউন্ডে বাংলা ছবি একেবারে কোণঠাসা করেছে হিন্দিকে। তবে ‘নিউটন’ কিন্তু নিজের মতো ব্যবসা করেছে। নবমীর দিন মুক্তি পেয়েছিল ‘জুড়ুয়া টু’। রাজ্যে বেশ ভাল ব্যবসা করেছে বরুণ ধবনের ছবি। আইনক্সের পূর্বাঞ্চলের কর্ণধার শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পুজোর সময় বাংলা ছবিই সাধারণত ভাল চলে। হিন্দিতে ‘নিউটন’ নিজের একটা স্টেডি জায়গা ধরে রেখেছে। তবে ‘জুড়ুয়া টু’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে খুব ভাল ব্যবসা করছে।’’
দ্বিতীয় প্রশ্নের তুল্যমূল্য বিচার করতে গেলে দেখা যাবে, পুজোর কয়েকটা দিন দর্শক সত্যিই চুটিয়ে বাংলা ছবি দেখেছেন। লক্ষ্মীপুজো পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু গত রবিবারও ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’, ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ কিংবা ‘ককপিট’-এর কিছু শো হাউসফুল ছিল। এই তিনটি ছবির মধ্যেই জোর প্রতিযোগিতা চলেছে। কখনও দেবের ‘ককপিট’ এগিয়ে, কখনও ব্যোমকেশ। আবার ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ও নিজের মতো করে দিব্যি উড়ছে।
ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’কে বাকি ছবিগুলোর তুলনায় এগিয়ে রাখছে। দ্বিতীয় সপ্তাহে অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশ দেড় কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে। ‘প্রজাপতি...’ সেখানে এক কোটি ১৫ লক্ষের মতো। তবে আগামী দিনে দুটো ছবির উপরই হল মালিকদের আশা রয়েছে। প্রথম প্রযোজিত ছবির বক্স অফিসের ফলাফলে খুশি শিবপ্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাজেট ছিল ৬৯ লক্ষ। প্রচার এবং রিলিজের খরচও বেশি নয়। সেগুলো ইন ফিল্ম থেকেই উঠে গিয়েছে।’’ খবর অনুযায়ী ‘ককপিট’-এর ব্যবসা এক কোটি ২৫ লক্ষের মতো। এখানে একটা ‘কিন্তু’ রয়েছে। ‘ককপিট’ বেশ বড় বাজেটের ছবি। লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে হলে যতটা ভাল ব্যবসা করতে হতো, এ ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। সপ্তমীতে মুক্তি পেয়েছিল মৈনাক ভৌমিকের ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’। প্রযোজক রানা সরকার জানাচ্ছেন, ১১ দিনে ১৫-১৬ লক্ষ টাকার মতো ব্যবসা করেছে ‘চলচ্চিত্র সার্কাস’। আইনক্স কর্তৃপক্ষের হিসেব বলছে, ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’ সবচেয়ে এগিয়ে। তার পর রয়েছে ‘ককপিট’ এবং ‘প্রজাপতি বিস্কুট’। তবে জায়গার বিচারে ছবির ব্যবসার তফাত হয় বইকী। ‘‘কোনও জায়গায় ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’ খুব ভাল করেছে, কোথাও আবার ‘প্রজাপতি বিস্কুট’। সল্টলেক সিটি সেন্টারে যেমন ব্যোমকেশ সবচেয়ে এগিয়ে। এ দিকে বর্ধমানে আইনক্সের মাল্টিপ্লেক্সে ‘ককপিট’ দারুণ ব্যবসা করেছে,’’ ব্যাখ্যা করে বললেন শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়।
এ তো ব্যবসার কথা। ছবি কি স্রেফ পুজোর হিড়িকেই চলল নাকি সত্যি ভাল বাংলা ছবি উপহার দিতে পেরেছে ইন্ডাস্ট্রি? গুণগত মানের দিক দিয়ে কোনও ছবিই ‘দারুণ’ এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ‘সহজ পাঠের গপ্পো’। পুজোর আগে মুক্তি পেয়েছিল। নামী-দামি ছবির ভিড়ে এখনও টুকটুক করে ব্যাট করে চলেছে। প্রিয়া, পিভিআর ডায়মন্ড প্লাজা এবং আরও কয়েকটি সিঙ্গল স্ক্রিনে একটি করে শো দিয়েই ছবির ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। পুজোর পর আইনক্স হাইল্যান্ডপার্ক ‘সহজ পাঠ...’কে জায়গা করে দিয়েছে। খবর বলছে, মোটামুটি ২৫-৩০ লক্ষের মতো ব্যবসা করেছে মানস মুকুল পালের ডেবিউ ছবি।
(টাকার অঙ্ক ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy