Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্টাইলিস্টের ভূবনে

কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন সাজবেন তাই ঠিক করেন স্টাইলিস্ট। তাঁদের চাহিদা এখন ফ্যাশান ডিজাইনারদেরও ছাপিয়ে গিয়েছে। লিখছেন নাসরিন খানফ্যাশন শো থেকে ফটোশুট, বিজ্ঞাপনের লুক, সিনমার লুক বা সেলিব্রিটির নিজস্ব লুক সবখানেই স্টাইলিস্টের দৃষ্টিভঙ্গিই এখন শেষ কথা। কলকাতার ফ্যাশন দুনিয়ায় এই মুহূর্তে শিরানোমে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন স্টাইলিস্টের নাম।

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

কিন্তু কারা এই স্টাইলিস্ট? এক জন ফ্যাশন ডিজাইনারের সঙ্গে একজন স্টাইলিস্টের তফাৎ ঠিক কী?

ফ্যাশন ডিজাইনারেরা পোশাক বানান বিভিন্ন মরশুমের কথা আর ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে। আর স্টাইলিস্ট দেখেন লুকটা। কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন হেয়ারস্টাইল হবে, প্রসাধন কেমন হবে, গয়না এবং অন্যান্য অ্যাকসেসারিজ কেমন হবে সবটাই ঠিক করেন স্টাইলিস্ট।

ফ্যাশন শো থেকে ফটোশুট, বিজ্ঞাপনের লুক, সিনমার লুক বা সেলিব্রিটির নিজস্ব লুক সবখানেই স্টাইলিস্টের দৃষ্টিভঙ্গিই এখন শেষ কথা।

কলকাতার ফ্যাশন দুনিয়ায় এই মুহূর্তে শিরানোমে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন স্টাইলিস্টের নাম।

ফটোগ্রাফার হিসেবেই প্রথমত লোকে স্বরূপকে চেনে। ফোটোগ্রাফির আগে স্টাইলিংয়ের কাজটাও তিনি নিজে করে থাকেন। ‘‘সঠিক ভাবে ছবিটাকে তুলে ধরার জন্যই আমি স্টাইলিংয়ের কাজ করে থাকি,’’ বলছেন স্বরূপ। শুধু মডেলদের দিয়েই নয় সাধারণ মানুষকেও তিনি নিয়ে এসেছেন স্টাইলিংয়ের বৃত্তে। স্বরূপ তাঁর সদ্য তোলা ছবির সিরিজে বাবু কালচার তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাঁর ছবি আর স্টাইলিং দেখে মনে হয় যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠা চোখের সামনে উল্টে গেল।

স্বরূপ যখন প্রথম স্টাইলিংয়ের কাজ শুরু করেন তখন এ নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না। কলকাতার ফ্যাশন দুনিয়াতেও স্টাইলিং নিয়ে তেমন কোনও কলরব ছিল না।
‘‘সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় প্রথম স্টাইলিংয়ের ট্রেন্ডটা নিজের ফ্যাশন শো তে নিয়ে আসেন। পরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও স্টাইলিংয়ের চাহিদা বাড়তে থাকে। আর এখন তো স্টাইলিং খুব জরুরি একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অভ ফ্যাশন থেকে পাশ করার পর নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়শোনা করে পনেরো বছর আগে স্টাইলিংয়ের কাজ শুরু করেন স্বরূপ। প্রথমে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, শান্তনু গোয়েঙ্কা আর অনামিকা খন্নার মতো বন্ধু ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য ছবি তোলা দিয়েই শুরু ওঁর কেরিয়ার।

‘পাগলু’ সিনেমায় দেবের চেন দেওয়া জ্যাকেট সাঙ্ঘাতিক জনপ্রিয় হয়েছিল। স্যান্ডি দুটো আলাদা আলাদা টি শার্ট জুড়ে চেন বসিয়ে নিজে বানিয়েছিলেন ওই জামা। সেলাইফোঁড়াই জানেন বলেন নিজের ইচ্ছে মতো লুক তৈরি করতে পারেন স্যান্ডি। সেটা হাই ফ্যাশন হোক বা স্ট্রিট স্টাইল। তিনি এই দুই ধারাকে মিলিয়েই লুক তৈরি করতে ভালবাসেন।

ভিভিয়ান লি কলেজ থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং করে অনামিকা খন্নার ওয়ার্কশপ ম্যানেজার ছিলেন স্যান্ডি।

বরাবর গ্ল্যামার জগৎ আকর্ষণ করত স্যান্ডিকে। তাই সিনেমার তারকাদের স্টাইলিং করাটাকেই তিনি কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন। টলিউডের সেরা অভিনেতা- অভিনেত্রীদের নিজস্ব স্টাইলিংয়েও সাহাযা করেন স্যান্ডি।

স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে ওঁর বিশেষ পছন্দ শুভশ্রীকে। কারণ শুভশ্রী স্যান্ডির যে কোনও পরামর্শই মেনে নেন। রাইমা আর শ্রাবন্তীকে রাজি করাতে সময় লাগে। কিন্তু একবার স্যান্ডির কথা বুঝে গেলে ওঁরাও স্যান্ডির কথা মেনে নেন। এবং স্যান্ডির পরামর্শ অনুসারেই স্টাইলিং করেন।

দশ বছর বিজ্ঞাপন আর ফ্যাশন জগতের স্টাইলিং করছেন অনুপম। এক সময় চেয়েছিলেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হতে। এখন ফ্যাশন দুনিয়ার স্পন্দনটা ভালই বোঝেন। ফ্যাশন উইকগুলোতে স্টাইলিং করার সুযোগ পেয়েছেন। মুম্বই – দিল্লির ফুটপাথ থেকে জামাকাপড় কিনেও স্টাইলিং করে দুর্দান্ত লুক দিতে পারেন অনুপম। স্টাইলিং করেন রাইমা থেকে পাওলি সকলের জন্যই।

কিন্তু অনুপমের সব চেয়ে প্রিয় কাজ হল বিজ্ঞাপনের জন্য স্টাইলিং করা। ধোনিকে ভুল করে একবার ছোট সাইজের টি শার্ট পরিয়ে দিয়েছিলেন। হেসে ধোনি সেটা পরেও নিয়েছিলেন। টি শার্টটাকে টেনেটুনে বলেছিলেন, ‘‘জাস্ট দ্যাখো পড়ে আমাকে যাতে খারাপ না দেখায়।’’ সেই ঘটনা মনে করে আজও অনুপম হাসেন।

বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চেয়েছিলেন নেহা। ন্যাশনাল ইন্সটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজিতে পড়ার সময় বুঝতে পেরেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া অত সোজা কথা নয়। অনেক প্রতিযোগিতা। তাই থার্ড ইয়ারেই একটা স্টাইলিংয়ের অফার পেয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই সময় স্টাইলিং বিষয়টা অত জনপ্রিয় ছিল না। ২০০৯ সালে হাত খরচার জন্য শুরু করা কাজ আজ ফুলেফেঁপে একসা। অবাঙালি হওয়ায় বাংলা সিনেমার নায়িকাদের লুকে নিয়ে এলেন একটা আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া। ‘‘ পাশ করে বেরোবার পর আমার হাতে আটমাস কোনও কাজ ছিল না। সেই সময় পরিচালক মৈনাক ভৌমিকের কাছে তাঁর ছবি ‘বেডরুম’য়ে স্টাইলিং করার করার অফার পাই।

সত্যি কথা বলতে কি স্টাইলিংয়ে কী করতে হয় তা আমি জানতাম না। কিন্তু মৈনাকের জোরাজুরিতেই প্রথম বার সিনেমায় স্টাইলিংয়ের কাজটা করে ফেললাম। রাতারাতি বিখ্যাতও হয়ে গেলাম। নিজেও সিনেমায় অভিনয় করার অফার পেতে শুরু করলাম,’’ হাসতে হাসতে বললেন নেহা।

সিনেমার যে চরিত্রের জন্য স্টাইলিং করছে্ন তাকে নিয়ে গবেষণা করতে ভালবাসেন শুচিস্মিতা।

‘‘স্টাইল আমার জন্মগত অধিকার ’’ এই কথায় বিশ্বাস করেন শুচিস্মিতা।

মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কয়েকটি মেয়ের গল্প’ ছবিতে সেরা কস্টিউমের পুরস্কার পান শুচিস্মিতা। কেরিয়ারে আসার আগে ব্র্যান্ড বিল্ডিং কমিউনিকেশনে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তার পর কাজ করেছেন বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় এবং এক্সপোর্ট হাউজে।

‘পরিণীতা’ থেকে ‘কাদম্বরী’ , ‘কহানি’ থেকে ‘হাফ সিরিয়াস’ সব রকম ছবির জন্যই স্টাইলিং করেছেন শুচিস্মিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE