অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
রাত দু’টো। গায়ের চাদরটা মাথা পর্যন্ত আস্তে করে টেনে নিল ঈশানী। পাশেই ঘুমোচ্ছেন মা। মোবাইলের আলো যাতে মায়ের মুখে না পড়ে, সেই জন্যই এই টেকনিক। মা যদি জানতে পারেন, তা হলেই কেস জন্ডিস।
এ দিকে বন্ধুরা সবাই হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন। একটা-দু’টো করে অনেকগুলো মেসেজ জমেছে ইনবক্সে। সারা দিন স্কুল, তার পর টিউশন। কথা বলার এই তো অবসর। রাত যতই হোক, এই ফাঁকেই সেরে নিতে হবে নেক্সট আউটিংয়ের প্ল্যানটা।
হে দেয়ার! আই অ্যাম ইউজিং হোয়াটসঅ্যাপ...
সকালে চোখ খোলা থেকে রাতে চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত প্রতিটা হার্টবিটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই অ্যাপ। পড়াশোনা থেকে প্রেম, ব্রেকআপ থেকে ঝগড়া—সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই মেসেজিং অ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়া লাইফ, ভাবাই যাই না!
• হোয়াটসঅ্যাপে সারাদিন
ক্লাস টেনের ছাত্র চয়ন দত্তের কথায়, “ঘুম না এলে, রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইন থাকি।” হোয়াটসঅ্যাপে একটি ট্রোলিং গ্রুপের অ্যাডমিনও চয়ন। দিনভর চলে ট্রোল শেয়ারিং। “বাড়িতে ফ্রি ওয়াইফাই, তাই বন্ধুদের ফোনটাও হোয়াটসঅ্যাপেই করি,” বললেন ভিক্টোরিয়া কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী ওয়াহিদা পারভিন।
“শুধু আড্ডা নয়, বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়াও হয় হোয়াটসঅ্যাপেই,” মুচকি হেসে স্বীকার করলেন বারাণসীর সেন্ট মেরিজ স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্র শিবাঙ্গ মিশ্র। আদিত্য অ্যাকাডেমির ক্লাস নাইনের ছাত্রী বিয়াস ভৌমিক বললেন, “গ্রুপ চ্যাটে আমি অত অ্যাক্টিভ নই। তবে পার্সোনাল চ্যাট বেশি করি।”
• হোয়াটসঅ্যাপ ক্লাসরুম
খাতা-পেন নিয়ে নোট নেওয়া এখন সেকেলে। “স্কুলে যেতে না পারলে ভয়েস মেসেজেই বন্ধুরা জানিয়ে দেয় ক্লাসে কী হয়েছে. আর স্ক্রিনশটে পাঠিয়ে দেয় ক্লাসওয়ার্কের ছবি. সেখান থেকেই আমি কপি করে নিই,” বললেন বিয়াস।
অঙ্ক নিয়ে স্নাতক করছেন ওয়াহিদা। ক্লাসে কোনও সমস্যায় পড়লে অধ্যাপক নন, প্রথম ভরসা হোয়াটসঅ্যাপ। “কোনও অঙ্ক আটকে গেলে বন্ধুকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাই। ও সলভ করে হোয়াটসঅ্যাপেই পাঠিয়ে দেয়,” বললেন তিনি। ‘‘কলেজের যাবতীয় ইনফর্মেশন, প্রোজেক্টের ডেডলাইন, নতুন কোনও আইডিয়া, সব শেয়ার হয় হোয়াটসঅ্যাপেই,” বললেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের থার্ড ইয়ারের ছাত্রী অনন্যা মুখোপাধ্যায়। টিচার-স্টুডেন্টসদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও ইন। বলাই বাহুল্য, ভার্চুয়াল ক্লাসরুমও স্কুল-কলেজের ক্লাসরুমের মতোই এখন গুরুত্বপূর্ণ।
• প্রেম @হোয়াটসঅ্যাপ
আলাপ ফেসবুকে হোক বা টিন্ডারে, ডেস্টিনেশন কিন্তু সেই হোয়াটসঅ্যাপ। ফেসবুকে কয়েক দিন কথার পর সাহস করে কোনও পক্ষ তাই বলেই ফেলেন, “বাকি কথাটুকু হোয়াটসঅ্যাপে হতে পারে?” সরাসরি ফোন নম্বর চাওয়ার থেকেও ‘হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাড করি’ বলতেই বেশি কমর্ফটেবল জেনওয়াই। সম্পর্ক লং ডিসট্যান্স হোক বা কাছের, রাত জেগে লাভবার্ডসরা কল করেন কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপেই।
তবে হোয়াটসঅ্যাপ প্রেমের সাইড-এফেক্টসও কম নয়।
লাস্ট সিন দেখাচ্ছে রাত তিনটে। এদিকে দু’টোয় মেসেজ করেছে গার্লফ্রেন্ড। সেই মেসেজের জবাব দিতে মিস হলেই জবাবদিহি করেও পার পাওয়া খুব মুশকিল।
আবার হোয়াটসঅ্যাপে বাবা-মা থাকলেও, প্রেমে প্রবলেম। গল্প শোনাচ্ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অমিতাভ ঘোষ। “তখন কলেজে ফার্স্ট ইয়ার, সবে প্রেম করছি। গার্লফ্রেন্ডকে ইমপ্রেস করতে একটা সেলফি হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি দেব ভেবেছিলাম. কিন্তু বাবাও তখনই হোয়াটসঅ্যাপ জয়েন করলেন। সাহসে কুলোয়নি। গার্লফ্রেন্ড রেগে আগুন।”
• হোয়াটস আপ পেরেন্টস?
ছেলেমেয়েদের উপর নজরদারি রাখতে অনেক টেক-স্যাভি বাবা-মাও কিন্তু এখন হোয়াটসঅ্যাপে। ছেলে-মেয়ে কেমন পড়াশোনা করছে, সেই ফিডব্যাকও টিচার্সদের থেকে হোয়াটসঅ্যাপেই নিয়ে নেন তাঁরা। “সারাদিন অ্যাপে বুঁদ হয়ে থাকলে মায়ের থেকে বকা খেতে হয়, তবে মা হোয়াটসঅ্যাপ জয়েন করার পরে আমার কথাটা বুঝতে পারেন,” বলছিলেন বিয়াস। আবার হোয়াটসঅ্যাপে পড়াশোনার কাজও যে হয় সেটা বাবাকে বোঝানো কঠিন, বলছিলেন ওয়াহিদা।
ট্রেন্ড ফলো করে নিজেদের আপডেটেড রাখতেও হোয়াটসঅ্যাপে হাতেখড়ি হয়েছে অনেক অভিভাবকের। কর্মসূত্রে পুণেতে থাকেন বছর সাতাশের অভিষেক সেনগুপ্ত। বলছিলেন, “ বাইশ বছরের পুরনো বান্ধবীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়েছে মায়ের।” তবে কি হোয়াটসঅ্যাপের এখন কোনও বিকল্প নেই? ‘‘এটা নেসেসিটি,” বলছিলেন অনন্যা। বেসিক নেসেসিটি বললেও কি ভুল বলা হবে? অভিভাবকরা এটাই বুঝতে পারেন না। পড়া থেকে প্রেম সবই এখন হোয়াটসঅ্যাপে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy