Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আমাকে নিয়ে কেউ বিরাটকে প্রশ্ন করে না

নিষেধাজ্ঞা ছিল বিরাট কোহলিকে নিয়ে প্রশ্ন করা চলবে না। কিন্তু তা আর মানা হল কই! প্রথম প্রযোজনা, ‘এনএইচ ১০’ থেকে বিরাটের ফর্ম, প্রত্যেক বলে স্টেপ আউট করলেন অনুষ্কা শর্মা। মুম্বইতে তাঁর মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়আগে থেকেই বলা হয়েছিল বিরাট কোহলিকে নিয়ে একটাও প্রশ্ন করা যাবে না। প্রশ্ন করতে হবে প্রযোজক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘এনএইচ ১০’ নিয়ে যা আজকেই মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু আড্ডা শুরু হওয়ার পর কোনও নিষেধাজ্ঞাই আর মানলেন না অনুষ্কা শর্মা... মুম্বইতে তাঁর মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

অন্ধেরিতে ইরস ইন্টারন্যাশনালের অফিসে তখন দুপুর ১-টা। মেক আপ ম্যান, নিজের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্টদের সঙ্গে নিয়ে সাদা শার্ট এবং ট্রাউজার পরে কনফারেন্স রুমে ঢুকলেন তিনি।

আগে থেকেই বলা হয়েছিল বিরাট কোহলিকে নিয়ে একটাও প্রশ্ন করা যাবে না। প্রশ্ন করতে হবে প্রযোজক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘এনএইচ ১০’ নিয়ে যা আজকেই মুক্তি পাচ্ছে।

কিন্তু আড্ডা শুরু হওয়ার পর কোনও নিষেধাজ্ঞাই আর মানলেন না অনুষ্কা শর্মা...

একটা কথা প্রথমেই ক্লিয়ার করতে চাই...

নিশ্চয়ই, বলুন...

আপনার লাস্ট ছবি ছিল ‘পিকে’। আজকে আমার সামনে বক্স অফিসে ৩০০ কোটির সাফল্য পাওয়া সেই ‘জগজ্জননী’ বসে আছেন, না ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ফার্স্ট লেডি?

হাহাহাহা। দ্বিতীয়টা তো কখনওই নয় (হাসি)।

এটা কোনও কথা হল!

(হাসি) ওটাই আসল কথা। আমি ও ভাবে ভাবি না ব্যাপারগুলো। একটা আমার পার্সোনাল লাইফ, সেটা আমার প্রধান পরিচয় হবেই বা কেন বলুন?

তা হলে ৩০০ কোটি কামানো ‘পিকে’র হিরোইন বসে আছেন সামনে...

এই পরিচিতিটাই বেটার কারণ সেটার জন্য আমি প্রচুর খেটেছি। আর ‘পিকে’র হিরোইনের থেকেও একটা বেটার আইডেন্টিটি আছে আমার। সেটা অভিনেত্রীর। অ্যাকট্রেস অনুষ্কা শর্মা ইজ মাই আইডেন্টিটি।

আর যদি ‘পিকে’র কথা বলেন, তা হলে বলব কখনওই কোনও ছবি কারও একার নয়। পুরোটাই টিমওয়ার্ক।

‘পিকে’ বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হিট। কিন্তু আমি সেটা নিয়ে আর ভাবতে চাই না। ওটা হয়ে গিয়েছে। আর পিছন ফিরে তাকানোর মানে হয় না।

এ রকম করে তো ক্রিকেটাররা পোস্ট ম্যাচ কনফারেন্সে কথা বলেন...

(হাসি) বুঝতে পেরেছি কোন দিকে যাচ্ছেন...

বুঝতেই যখন পেরেছেন, তখন বলুন ২৯ মার্চ, ইন্ডিয়া ফাইনালে উঠলে কি আপনাকে দেখা যাবে এমসিজিতে?

মনে হয় না। আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। আমার এখানে অনেকগুলো কাজ রয়েছে। প্রযোজক হিসেবে আমার প্রথম ছবি ‘এনএইচ১০’-এর রিলিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তার পর বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজ রয়েছে। মনে হয় না অস্ট্রেলিয়া যাব।

‘এনএইচ১০’ নিয়ে তো ঝামেলার শেষ নেই। এই ছবির প্রযোজকও আপনি। সেন্সর না কি একদম খুশি নয় আপনার ছবি নিয়ে?

(একটু বিরক্ত হয়ে) সেন্সর নিয়ে ক’জন খুশি এটা একটু বলবেন? যত সব বস্তাপচা আইডিয়া। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমি বেশ বিরক্ত আমাদের সেন্সর নিয়ে। ছবিটা মুক্তি পেলে মানুষ বুঝতে পারবে সেন্সরের বাড়াবাড়িটা কত বড় ভুল ছিল।

আপনার সঙ্গে ইন্টারভিউ করতে বসার আগে একজন বড় পরিচালকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি বলছিলেন অনুষ্কা সায়লেন্টলি অ্যাগ্রেসিভ।

সেটা আমি জানি না। তবে আমার মধ্যে একটা সায়লেন্ট কনফিডেন্স আছে। আমি আসলে মেন্টালি খুব সর্টেড। আমি জানি আমি কী কী করব না।

একবার ওভাবে যদি আপনি ভেবে নেন, দেখবেন জীবনটা সহজ হয়ে গিয়েছে। আর হ্যাঁ, আমার জেদ সাঙ্ঘাতিক। যদি মনে হয় এটা করব, তা হলে সেটা আমি করবই।

রিস্ক-ও নিতে পারেন দেখছি। না হলে অত বড় হিটের পর কেউ প্রযোজক হয়ে অত ঝামেলা নেয়?

আজ রিস্ক নেব না তো কবে নেব? ‘পিকে’র পর তো আরামসে আরও কয়েকটা ছবি সই করতে পারতাম। কিন্তু আমার ‘গাট ইনস্টিঙ্কট’ বলছিল ‘এনএইচ১০’ আমার প্রোডিউস করা উচিত। সেটাই করলাম।

কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ‘রব নে বনা দে জোড়ি’তে শাহরুখের হিরোইন হয়ে। কিন্তু তার পর নাকি ছ’মাস কেউ আপনাকে ডাকেননি। সত্যি কি তাই?

একদমই তাই। এক দিকে শাহরুখের হিরোইন, তার ওপর আদিত্য চোপড়ার ছবি। আমি ভেবেছিলাম ছবি রিলিজের পরের দিন থেকে আমার বাড়ির সামনে প্রোডিউসারদের লাইন লেগে যাবে। লাইন তো ছাড়ুন। একটা ফোনও আসত না।

আই ওয়াজ ডিভাস্টেটেড।

নিজেকেই প্রশ্ন করতাম তা হলে কি আমি যোগ্য নই? প্রায় ছ’মাস পরে ‘বদমাশ কোম্পানি’র অফার এলো। তবে ওই ছ’মাসে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ওই সময়টা আমাকে কেরিয়ারে অনেক সাহায্য করেছে। মেন্টালি স্ট্রং করেছে।

গত বছর যখন বিরাট কোহলি ইংল্যান্ডে রান পাচ্ছিলেন না, হঠাৎ করে মিডিয়া বলা শুরু করল তার জন্য নাকি আপনি দায়ী। সেই প্রেশার থেকে বেরোতেও তো মেন্টালি স্ট্রং হওয়ার দরকার ছিল?

অবশ্যই ছিল। মিডিয়ার ম্যাসিভ প্রেশার ছিল...

খারাপ লাগত না?

খারাপের থেকেও বিরক্তি লাগত বেশি। কিছুতেই বুঝতে পারতাম না বিরাটের খারাপ ফর্মের জন্য আমাকে কেন দায়ী করা হবে। ব্যাপারটা একেবারে ছেলেমানুষি ছিল। হাইলি ইমম্যাচিওর।

আজকে যখন অস্ট্রেলিয়াতে বিরাটের এই রকম মারকাটারি ফর্ম, তখন কী রকম লাগছে?

বিরাট রান পেলে তো ভাল লাগবেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে একটা ব্যাপার বুঝতে পারি না জানেন...

কী সেটা?

দেখবেন মিডিয়া কিন্তু আমাকে ক্রমাগত বিরাট সম্পর্কে প্রশ্ন করে চলে। কিন্তু বিরাটকে কেউ অনুষ্কাকে নিয়ে প্রশ্ন করে না। কেন এই রকম হবে বলুন তো?

বিরাটকে প্রশ্ন করলে গালাগালি খাওয়ার ভয় থাকে সাংবাদিকদের...

না। সেটা কারণ নয়। বিরাটকে প্রশ্ন করে না মিডিয়া কারণ ওরা মনে করে ক্রিকেট ব্যাপারটা সিরিয়াস। আমরা যেহেতু ফিল্মে অভিনয় করি তাই বোধ হয় আমাদের কাজটা খেলো।

ওদের ধারণা এই রকম, আরে এরা তো ফিল্মটিল্ম করে, এদের এসব প্রশ্ন করাই যায়। কেউ বোঝে না ক্রিকেটারদের মতো আমরাও আমাদের কাজটা নিয়ে অতটাই সিরিয়াস। কিন্তু সেটা বোঝাবে কে?

ডিসেম্বরে যখন টেস্টে বিরাট একটার পর একটা সেঞ্চুরি করছিলেন আপনার ছবি দিয়ে কত হোয়াটস্যাপ আসত- ‘ইন্ডিয়া মে পিকে, অস্ট্রেলিয়া মে ভিকে’। এগুলো আপনার কাছে পৌঁছোয়?

(হাসি) পৌঁছোয়, পৌঁছোয়। সব ক’টা নয়, কয়েকটা আসে। ওয়ার্ল্ড কাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর একটা এসেছিল। হাসি ওগুলো দেখে। আর কী করব?...

অনুষ্কা শর্মার পৃথিবীটাও তো বদলে গিয়েছে। বিরাট সেঞ্চুরি করে ফ্লাইং কিস দেন আপনাকে। সেটা নিয়ে শেন ওয়ার্ন, সুনীল গাওস্করের মতো লেজেন্ডরা কথা বলেন। অনুষ্কা তো আর শুধু হিরোইন নন আজকে...

হ্যাঁ, জানি আপনি কী বলতে চাইছেন। এইটুকুই বলব আমি আমার স্পেসে খুব ভাল আছি। সেটা নিয়ে বেশি কথা সত্যি বলতে চাই না। আমি অসম্ভব প্রাইভেট একজন মানুষ। কখনও দেখবেন না আমাকে রোজ রোজ পার্টি করতে বা সব ব্যাপারে ‘কোট’ দিতে। আমি মন দিয়ে কাজ করি আর ফ্যামিলির সঙ্গে আড্ডা মারি। বাংলা পেপার বলে বলছি আমার মামি কিন্তু বাঙালি।

তাই?

ইয়েস। মামির জন্য বাঙালিদের আচার-আচরণ খুব ভাল করে জানি। কলকাতা আমারও ভীষণ প্রিয় শহর। আর কখনও কখনও মনে হয় ফিল্ম মিডিয়াতে সব্বাই কলকাতার সাংবাদিক হলে কী ভাল হত। এত দিন কাজ করে দেখেছি কলকাতার ফিল্ম মিডিয়া সব চেয়ে ইন্টেলিজেন্ট। বাকি মিডিয়া আপনার কাছে শুধু নানা ইভেন্টের ‘কোট’ চায়। কলকাতার মিডিয়া এমন প্রশ্ন করে যেটার উত্তর দিতে আপনাকেও বুদ্ধি খাটাতে হবে। এটা কিন্তু শুধু আমার মত নয়। বহু সেলিব্রিটিরই এই মত। এই যেমন রেসট্রিকশন থাকা সত্ত্বেও বিরাটকে নিয়ে ঠিক কয়েকটা প্রশ্ন করে নিলেন...( হাসি)।

তা হলে এটাও বলে দিন, আমির বা শাহরুখ বিরাটকে নিয়ে আপনার সঙ্গে খুনসুটি করেন না!

হা হা হা। এখনও অবধি তো করেনি। কিন্তু ইন্ডিয়ার খেলার দিন সকালে ওদের সঙ্গে যদি দেখা হয় সিওর থাকতে পারেন অবশ্যই ওরা দু’জনেই আমার লেগপুল করবে...

আপনার লেগপুল তো তখনও হয়েছিল যখন ‘কফি উইথ কর্ণ’য়ের একটা এপিসোডের পর থেকে আপনার ঠোঁটের সার্জারি বা লিপ জব নিয়ে বেশি কথা হয়েছিল...

ওটা কিন্তু লিপ জব ছিল না, ছিল লিপ এনহ্যান্সমেন্ট। আমার একটা ছবি আসছে ‘বম্বে ভেলভেট’। ওই ফিল্মের একটা চরিত্রের জন্য আমার লিপ এনহ্যান্সমেন্ট করার দরকার পড়েছিল। দর্শকেরা ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন আমি কী বলছি।

তবে হ্যাঁ, ‘কফি উইথ কর্ণ’য়ের এপিসোডের পর আমাকে এত গালাগালি করা হয়েছিল যে আমি কেঁদেই ফেলেছিলাম। তার পর ভাবলাম কাঁদার জন্যই তো আমাকে এত হ্যারাস করা হচ্ছে।

ডিসাইড করলাম টুইটারে খোলাখুলি কথা বলব। টুইট করার পর থেকেই সব চুপচাপ হয়ে গেল। ওই ঘটনার পর বুঝেছি কেউ যদি আপনাকে হ্যারাস করতে, ‘বুলি’ করতে চায়, সব চেয়ে ভাল স্ট্র্যাটেজি খোলাখুলি তাদের সঙ্গে সংঘাতে যাও। অ্যাগ্রেশন ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স।

ক্রিকেট মাঠে একজন ভারতীয় ক্রিকেটার যেমনটা নিয়মিত করেন...

আবার? ...(হাসি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

indranil roy anushka sharma virat kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE