Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Presents

আজকের সঞ্চয় আগামীর আয়

এমন ফান্ড, যা তৈরিই অবসরের টাকা জমানোর জন্য। এখানে লগ্নি খাটবে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারে। ফলে ঝুঁকি আছে। কিন্তু তেমনই রয়েছে ভাল রিটার্ন ঘরে তোলার সুযোগও। ৬০ বছর পর্যন্ত জমানো টাকায় হাত দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলে রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের কথা ভেবে দেখতে পারেনএমন ফান্ড, যা তৈরিই অবসরের টাকা জমানোর জন্য। এখানে লগ্নি খাটবে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারে। ফলে ঝুঁকি আছে। কিন্তু তেমনই রয়েছে ভাল রিটার্ন ঘরে তোলার সুযোগও। ৬০ বছর পর্যন্ত জমানো টাকায় হাত দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলে রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের কথা ভেবে দেখতে পারেন

নীলাঞ্জন দে
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

ক’দিন ধরেই সায়ন মনমরা। যে ভোজনরসিক সুধীনবাবুকে বরাবর বাজারের সেরা রুই, কাতলা, ইলিশ, চিংড়িতে ব্যাগ ভরাতে দেখে এসেছেন, এখন খরচ সামলাতে তাঁরই পাতে কি না সপ্তাহে দু’দিন নিরামিষ? বাকি দিন কাটা বা ছোট পোনা। সপ্তাহান্তে দু’এক টুকরো মুরগির ঝোল। কর্মজীবন আর অবসরের আর্থিক সঙ্গতির ফারাকটা যে এমন নিদারুণ হতে পারে, সেটা কল্পনাও করতে পারেননি সায়ন। তা হলে কি ৬০ পেরোনোর পরে সব শখ-আহ্লাদ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভাল লাগায় এমন ভাবে দাঁড়ি টানতে হবে তাঁকেও! তাঁরও তো বেসরকারি চাকরি। পেনশন নেই। রোজকার খরচ-খরচার সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। চড়েছে জীবনযাত্রার মান। অথচ সঞ্চয় তেমন তৈরি হয়নি। এ দিকে অবসরও আর বেশি দূরে নয়।

অবসর জীবনে অস্বাচ্ছন্দ্যের যে ভয় ক্রমাগত সায়নকে খোঁচা দিচ্ছে, সেটা ঠিক একই ভাবে অসুরক্ষিত আর বিপন্ন করে তোলে চারপাশের বেশির ভাগ মানুষকে। পিএফ, পিপিএফের মতো সঞ্চয়ের চেনা ঠিকানাগুলি তো আছেই। জিনিসপত্রের চড়া দাম যুঝে সঞ্চয় আরও বাড়ানোর জায়গা খুঁজতে অনেকে ঝোঁকেন মিউচুয়াল ফান্ডের দিকেও। যে-কারণে শেষ জীবনকে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো পুঁজি জমানোর লক্ষ্য নিয়ে সেখানে নতুন নতুন আর্থিক পণ্য ও প্রকল্পের জন্ম হতে দেখি আমরা। মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায় তেমনই এক সদ্যোজাত প্রকল্প রিটায়ারমেন্ট ফান্ড।

এ বার প্রশ্ন হল— রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে এগোনোর পথটা কী রকম? যাঁর অবসর খুব বেশি দূরে নয়, তিনি কী সঞ্চয় বাড়াতে পারবেন একে ভর করে? পারলে, কী ভাবে? সদ্য চাকরি পেয়েছেন যিনি, তাঁর কৌশলই বা কী হতে পারে? কেন সঞ্চয়ের তালিকায় রাখা যায় এই ফান্ডকে? আমরা এই সমস্তই একে একে বুঝে নেব রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য, ঝুঁকির মাত্রা, লাভের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে করতে। সেই সঙ্গে ভেবে দেখব এই লাঠি নিয়ে ঠিক কী ভাবে এগোলে অবসর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথে এক ধাপ এগোনো যেতে পারে।

চরিত্র কেমন?

রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের মূল লক্ষ্য দু’টি। তহবিল যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো। এবং কর্মহীন জীবনে স্থায়ী আয়ের উৎসমুখ খুলে রাখা। লগ্নির তিরকে এই দুই নিশানায় বিঁধতে ফান্ডটি কিছু কৌশল নেয়। এগুলি হল—

তহবিল বিভিন্ন অনুপাতে শেয়ার ও ঋণপত্রে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে কতটা শেয়ারে খাটানো হবে আর কতটা ঋণপত্রে, সেটা নির্ভর করে লগ্নিকারীর বয়স, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদির উপর। এমনকী কোন ধরনের শেয়ার বা কোন ধরনের ঋণপত্রে খাটানো হবে, সেটাও ঝুঁকির মাত্রা বিচারে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। মূলত সদ্য চাকরিতে ঢোকা, মাঝারি বয়সী, অবসর জীবনের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া এবং ইতিমধ্যেই কর্মজীবনে ইতি টানাদের সঞ্চয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকির ফারাকের কথা মাথায় রেখেই আলাদা আলাদা ফান্ডের থাকছে তহবিল বাড়ানোর আলাদা আলাদা কৌশল।

যেমন— ১) কোনও রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের তহবিল পুরোটা শেয়ারে বা পুরোটা ঋণপত্রে লগ্নি করা হতে পারে। পুরোটা শেয়ারে ঢাললে ঝুঁকি অনেক বেশি, কিন্তু লম্বা মেয়াদে রিটার্নের সম্ভাবনাও বেশি অন্য যে কোনও লগ্নির থেকে। শুধু ঋণপত্রে তহবিল ঢালা হলে আবার ঝুঁকি এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে। মূলত যাঁরা অবসরের দোরগোড়ায় বা ইতিমধ্যেই কর্মজীবনে ইতি টেনেছেন, তাঁদের কথা ভেবেই এই পথ খুলে রাখা।

২) কোনও ফান্ড ম্যানেজার কিছুটা বেশি ঝুঁকি নিয়ে শেয়ারেই বেশি অংশ ঢালতে পারেন, বেশি রিটার্নের আশায়। বাকিটা ঋণপত্রে।

৩) ঝুঁকি খুব কম রাখতে বেশির ভাগটা ঋণপত্রে লাগানো হতে পারে।

৪) আবার শেয়ারে লগ্নির ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা কমাতে তহবিলের একাংশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পের শেয়ার কেনা হতে পারে। কারণ, একসঙ্গে সমস্ত শিল্পে মন্দা আসে না। কোনওটি ভাল রিটার্ন দিতে না পারলে, আর একটি শিল্প সংস্থার শেয়ারের সেটা পুষিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাকে বলে ডাইভার্সিফাই করা।

৫) পরিস্থিতি বিচার করে কোনও ফান্ড ম্যানেজার হয়তো মনে করলেন, কোনও একটি শিল্প আগামী দিনে সার্বিক বৃদ্ধির মুখ দেখতে চলেছে। তখন তিনি শেয়ারে বরাদ্দের অংশটি দিয়ে সেই শিল্পেরই বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার কিনতে পারেন। যাতে সুযোগ এলে পুরো অংশটিই এক সঙ্গে বিপুল বৃদ্ধির মুখ দেখতে পারে।

৬) কোন সংস্থার বন্ড কত দিনের জন্য কেনা হচ্ছে, সেটার উপরও নির্ভর করবে ঋণপত্রে ঢালা বরাদ্দের ঝুঁকি।

অল্প বয়সে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে লগ্নিকারী এমন কোনও ফান্ড বেছে নিতে পারেন, যা শেয়ারে বেশি বা পুরো তহবিল বরাদ্দ করে এবং সব থেকে বেশি ঝুঁকি নিয়েই। আবার যিনি একেবারে শেষ বেলায় এই সঞ্চয়ের পথে পা রাখছেন, তিনি চাইলে ঝুঁকি তুলনায় কম রেখেই অবসরের পুঁজি গড়ে তোলার চেষ্টায় নামতে পারেন। বেছে নিতে পারেন ভাল ঋণপত্র ভিত্তিক কোনও রিটায়ারমেন্ট ফান্ড। ঝুঁকি কম থাকবে, আবার ফিক্সড ডিপোজিটের মতো সঞ্চয়ের তুলনায় তহবিল অনেক বেশি জমবে। সামান্য কিছু অংশ শেয়ারে ঢালার ঝুঁকিও নেওয়া যেতে পারে। বাড়তি টাকা হাতে আসতে পারে। ফান্ড ম্যানেজাররা অবসরের তহবিল গড়তে এখানে খুব হিসেব কষেই শেয়ারে টাকা খাটান।

ফান্ডের তহবিল সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে খাটিয়ে স্থায়ী আয়ের (ইনকাম) ব্যবস্থা করা। এই ধরনের রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে তহবিলের কোনও একটি অংশ বা পুরোটা খাটে মূলত উঁচু মানের (উঁচু রেটিং অর্থাৎ সুদ-সমেত আসলের টাকা মার যাওয়ার ঝুঁকি যেখানে অনেক কম) ঋণপত্রে। এবং সেখানে নিয়মিত আয়ের বন্দোবস্ত থাকে। তহবিল যে-ভাবে বাড়ে, সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ফান্ডের তহবিল দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করা। ভেবে দেখুন, পিএফে কি আমরা বাধ্য না-হলে হাত দিই। ধরেই নেওয়া হয় ওই টাকাটা শেষ জীবনের জন্য। এখানেও তাই। যাঁরা কম বয়সে এই ফান্ডে টাকা ঢালছেন, তাঁরা যাতে অবসর জীবনে পা রাখার আগেই তা ভাঙিয়ে না-নেন, সে জন্য বিভিন্ন ভাবে নিরুৎসাহ করা হয় তাঁদের। এ জন্য অনেক রিটায়ারমেন্ট ফান্ডে আগেভাগে লগ্নি তুলে নিতে চাইলে এগজিট লোড (ফান্ড ভাঙিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ফি) গুনতে হয়।

যেমন— রিলায়্যান্স রিটায়ারমেন্ট ফান্ড। লগ্নিকারী ৬০ বছর বয়সে পৌঁছনোর আগেই যদি এই ফান্ড ভাঙিয়ে রিটার্ন তুলে নিতে চান, তা হলে এগজিট লোড দিতে হয়।

এটি একটি করসাশ্রয়কারী এবং পেনশন প্রকল্প হিসেবে বাজার আসতে শুরু করেছে। অবসর নেওয়ার পরে ফান্ডের তহবিল না-ভাঙিয়ে নিলে, সেখান থেকে মাসে মাসে পেনশন পাওয়ার ব্যবস্থা রাখছে কিছু ফান্ড সংস্থা। বাঁচতে পারে করও।

যে কোনও সময়ে রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের ইউনিট কেনার সুযোগ পাবেন লগ্নিকারী।

ঝুঁকির মাত্রা

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, অবসর জীবনের পুঁজি বাড়ানোর লক্ষ্যে আনা হলেও, এই লাঠি পুরোপুরি বাজারের উপর নির্ভরশীল। রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের তহবিল দিয়ে ঋণপত্র ও শেয়ার কেনা হয় বলে সেগুলির বাজার ওঠা-নামার সরাসরি প্রভাব পড়ে ফান্ডের উপর। লগ্নির ঝুঁকি বাড়ে। আবার বাজার-নির্ভর হওয়ায় রিটার্ন কতটা মিলবে বা কতটা মুনাফায় পকেট ভরবে, সে সম্পর্কে গ্যারান্টি দিয়ে কিছু বলাও যায় না।

অল্প বয়সীদের এতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের মজা হল, এর মাধ্যমে অবসর জীবনের কাছাকাছি পৌঁছনো লগ্নিকারীদেরও ভরসা জোগানো হচ্ছে। ফান্ড সংস্থাগুলির তরফে বলা হচ্ছে, সারা জীবনে যা করা হয়নি, অবসরের আগের কয়েকটা ল্যাপে এর মাধ্যমে সেটাই করার কথা। কারণ, সুদ নামতে নামতে এখন এমন জায়গায়, যেখানে ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রাখলে তা মূল্যবৃদ্ধিতেই খেয়ে যাবে। শুধু ডাকঘর, পিপিএফ বা পিএফের উপর ভরসা করলে জমানো টাকা চোখেই দেখা যাবে না। কাজেই হাতে রইল শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। কারও ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি ঝুঁকি নিয়ে এবং কারও ক্ষেত্রে কিছুটা কম রেখে তাই এই ফান্ডকেই টাকা জমানোর অস্ত্র করতে উদ্যত সংস্থাগুলি।

উদাহরণ

রিটায়ারমেন্ট ফান্ড সবেমাত্র বাজারে আসায়, বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকবে অনেকের মনে। তাই এ ধরনের নির্দিষ্ট একটি ফান্ডের উদাহরণ তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে এই উদাহরণকে কিন্তু আমার তরফে আগামী দিনে ফান্ডটি কেনার জন্য কোনও সুপারিশ বলে ভাববেন না।

যেমন, সেবির সায় পেলে কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে আসতে পারে আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল রিটায়ারমেন্ট ইনকাম ফান্ড। লগ্নিকারীদের এতে চার ধরনের প্রকল্প বেছে নেওয়া সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একটি ফান্ডে তহবিল পুরোপুরি ইকুইটি বা শেয়ারে খাটানো হবে। আর একটি ঋণপত্র ভিত্তিক। ইনকাম বা নিয়মিত আয়ের বন্দোবস্ত করা হবে। আর অপর দু’টিতে তহবিল বিভিন্ন অনুপাতে শেয়ার ও ঋণপত্রে খাটানো হবে। যাকে বলে হাইব্রিড প্রকল্প। যার মধ্যে একটির বেশির ভাগটা লাগানো হবে শেয়ারে এবং অপরটির ঋণপত্রে।

এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল এমএফ বেশি, মাঝারি, কম— ঝুঁকির প্রতিটি মাত্রা মাথায় রেখেই তাদের রিটায়ারমেন্ট ফান্ড বাজারে এনেছে। যাতে সব ধরনের লগ্নিকারীকেই টানা যায়। তারা প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের কাছে এই ফান্ডের লগ্নিতে করছাড়ের প্রস্তাবও দাখিল করেছে।

কার জন্য কোনটা?

কে কোন ধরনের রিটায়ারমেন্ট ফান্ড পছন্দ করবেন, সেটা নির্ভর করবে মূলত তাঁর বয়স, অবসর জীবনের দূরত্ব, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও মানসিকতার উপর। তবু লগ্নিকারীদের সুবিধার জন্য খুবই সরল করে মোটামুটি ভাবে একটা ধারণা দেওয়া হল এখানে:

অল্প বয়স। কর্মজীবন শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি। খুব বেশি দায়-দায়িত্ব নেই। কম রোজগার। তবে হাতে সম্পদ তৈরির সময় অনেক।

পরামর্শ: পুরোপুরি বা বেশির ভাগ তহবিল শেয়ার বাজারে খাটবে, এমন রিটায়ারমেন্ট ফান্ড কেনা উচিত। মাসে মাসে বড় অঙ্কের এসআইপি করতে পারলে ভাল। লগ্নি করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে।

লগ্নির ব্যাপারে মানসিকতা রক্ষণশীল। জানেন, শেয়ার বাজারে টাকা খাটালে তহবিল অনেকখানি বাড়তে পারে। তবু তার থেকে সাত হাত দূরে। এমনকী এ ব্যাপারে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায় ঘোরতর আপত্তি।

পরামর্শ: সঞ্চয়ের নিশ্চয়তা চাই। সুতরাং ভাল কোনও ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ড বাছাই ভাল।

বছর ৪৫ বয়স। কেরিয়ারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। অনেক দায়-দায়িত্ব ঘাড়ে। অবসর জীবনের জন্য দ্রুত জমাচ্ছেন টাকা। ধীরে ধীরে ঝুঁকতে চাইছেন স্থায়ী আয়ের দিকে।

পরামর্শ: ধীরে ধীরে শেয়ার বাজারে কম এবং ঋণপত্রে বেশি তহবিল খাটাবে এমন ফান্ডের দিকে ঝোঁকা বাঞ্ছনীয়। উঁচু রেটিংয়ের ঋণপত্রে তহবিলের বড় অংশ খাটাবে, এমন আয় (ইনকাম) ভিত্তিক ফান্ড কিনলেও উপকারে লাগবে। এর থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্থায়ী রোজগার করার সুযোগ থাকে। সেই রোজগার ব্যবহার না-করে তা ফের লগ্নি করে দিয়ে সঞ্চয় আরও বাড়ানো যাবে। দেখবেন ফান্ডে শেয়ারে লাগানো অংশ যেন ডাইভার্সিফায়েড হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের শিল্পের একাধিক সংস্থার শেয়ারে যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে তহবিল।

অবসর জীবনে পা রেখেছেন। মাসের আয় বন্ধ হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক চিন্তা প্রতি মুহূর্তে ভাবাতে শুরু করেছে। জীবনযাপনের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে নিয়মিত আয় জরুরি।

পরামর্শ: ঝুঁকি যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। শেয়ার বাজার নির্ভর ফান্ডে টাকা ঢালার দরকার আছে বলে মনে হয় না। বরং নির্দিষ্ট সময় অন্তর রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে, এমন ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি থাকলে ভাল হয়।

ফান্ডের কতটা শেয়ারে এবং কতটা ঋণপত্রে খাটালে ভাল হয়, সেটা বোঝার একটা সহজ নিয়ম আছে। এটা হল: মোটামুটি ১০০ বছর থেকে নিজের বয়সকে বাদ দিন। যে সংখ্যা পাবেন সেটা শেয়ারে লগ্নি করা উচিত। বাকিটা ঋণপত্র খাতে।

উদাহরণ: ধরা যাক কারও বয়স ৩০ বছর। ১০০ থেকে ৩০ বাদ দিন। হল ৭০। অতএব, ফান্ড দুনিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, লগ্নিকারীকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তাঁর ফান্ডের ৭০% যেন শেয়ারে খাটে। বাকি ৩০% ঋণপত্রে।

তুরুপের তাস

বাজারে সঙ্গে যুক্ত থাকায় ঝুঁকি রয়েছে। তবু হালে নজর কাড়ছে রিটায়ারমেন্ট ফান্ড। অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন অন্তত কিছুটা ঝুঁকিটা না-নিয়ে উপায় নেই। কারণ—

যত দিন যাচ্ছে চড়ছে জিনিসপত্রের দাম। চিকিৎসা খরচ হয়ে যাচ্ছে মাত্রাছাড়া। দ্রুত খরচসাপেক্ষ হয়ে পড়ছে জীবনযাপন। অথচ টাকার মূল্য কমায় আজ যে-তহবিল অনেকখানি বলে মনে হচ্ছে, কাল তা প্রয়োজনের সিকি ভাগও পূরণ করতে পারছে না। ফলে এটা খুব পরিষ্কার যে, মূল্যবৃদ্ধির এই দৈত্যকে পরাস্ত করতে এমন প্রকল্পে লগ্নি করতে হবে, যা রিটার্ন দেবে তুলনায় বেশি হারে।

ফিক্সড ডিপোজিটের মতো নিশ্চিত রিটার্নের সঞ্চয় প্রকল্পে আস্থা কমছে। সাধারণ মানুষ আগে প্রকৃত সঞ্চয় বলতে এগুলোকেই বুঝতেন। ভরসাও ছিল অটুট। কিন্তু ‌দৈনন্দিন খরচ যত বাড়ছে, এই সব নিশ্চিত রোজগারের প্রকল্প যে-নিশ্চিন্ততা ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা অবসর দিতে পারবে না, এটা এক প্রকার অবধারিত হয়ে যাচ্ছে। যার জেরে বিপাকে পড়ছেন প্রবীণ মানুষেরা।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সকলেই কিছুটা সাহসী হয়ে ওঠেন। কারণ, তাঁদের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ তেমন খোলা থাকে না। চাকরির দুনিয়া অনিশ্চিত। অথচ বাড়ছে চাহিদা। আয় কমছে। কিন্তু বাড়ছে খরচ। ফলে অবসরের পর হাতে কতটা কী থাকবে এবং সেটা দিয়ে কতটা কী হবে, সেই ভাবনা তৈরি করছে আতঙ্কের বাতাবরণ। তাই ঝুঁকি বয়েও যে-কোনও উপায় সঞ্চয় বিপুল পরিমাণে বাড়ানোই হয়ে পড়ছে প্রধান লক্ষ্য। এমনকী কর্মজীবনে দাঁড়ি পড়ার সময় খুব কাছে চলে এলেও।

এ সবের পাশাপাশি লগ্নিকারীর নজর কাড়ার ক্ষেত্রে রিটায়ারমেন্ট ফান্ডের বাজি আরও দু’টি।

১) লগ্নির ব্যাপারে আমজনতার রক্ষণশীলতা ভাঙতে থাকা। আগে অবসর জীবনের জন্য টাকা জমানো বললে যেটাতে ঝুঁকি একেবারেই নেই, সেটা বাছতেন সকলে। কিন্তু এখন অনেকেই ঝুঁকি নিতে আর তেমন ভয় পাচ্ছেন না। হলই বা তা অবসরের তহবিল। ফলে অবসরের সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বাড়ছে শেয়ার ও ঋণপত্রের সঙ্গে যুক্ত লগ্নি প্রকল্পের।

২) নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাড়তে থাকা লগ্নি-সচেতনতা। অনেকের মধ্যেই অবসর জীবনের জন্য টাকা জমানোর ভাবনা চলে আসছে চাকরি জীবনের শুরুতেই। ফলে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। যে সময়ে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতেও বুক কাঁপা উচিত নয়, যদি সাধ্য থাকে।

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে
বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা, পিন-৭০০০০১। ই-মেল: bishoy@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE