Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

সিলেবাসের বাইরে গিয়ে এ বারে ছোটদের নিয়ে একটি পুজোর আয়োজন কলকাতায়। স্কুলে ছোটদের অনেক কিছুই শিখতে হয় লিখতে হয়, তারপর সেই কাগজ পরিণত হয় ঠোঙায়।

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৭
Share: Save:

ছোটদের সৃষ্টি নিয়েই মণ্ডপসজ্জা

সিলেবাসের বাইরে গিয়ে এ বারে ছোটদের নিয়ে একটি পুজোর আয়োজন কলকাতায়। স্কুলে ছোটদের অনেক কিছুই শিখতে হয় লিখতে হয়, তারপর সেই কাগজ পরিণত হয় ঠোঙায়। শিল্পীর নজর পড়েছিল সেই দিকে। ঠোঙা হওয়ার আগেই শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত কয়েকটি স্কুল থেকে সেই সমস্ত লেখা কাগজ চেয়ে নিয়েছিলেন তাঁর মণ্ডপ তৈরির কাজের জন্য। ছোটদের সেই লেখা, ছড়া আর আঁকা ছবি দিয়েই সেজে উঠছে হরিদেবপুরের বিবেকানন্দ অ্যাথলেটিক ক্লাবের মণ্ডপ। শিল্পীর ভাষায়, ‘প্রথাগত শিক্ষা এখানে ফলিত শিল্পের রূপ নিয়েছে, ছোটরাই যেটুকু করেছে, আমি তো অণুঘটক মাত্র।’ গাঁয়ের থান থেকেই এই ভাবনাটা এসেছিল শিল্পীর মনে। যেখানে মনোবাসনা পূরণের জন্য মানুষ নিজের সেরাটা দিয়েই দেবতার কাছে মানত করে, দেবতাকে উৎসর্গ করে হাতিঘোড়া। এই থানের ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এখানে ইটের দেওয়ালের গাঁথনিতে গড়ে উঠেছে মণ্ডপ আর সেখানে এসেছে ছোটদের কল্পনার রঙে রাঙানো অসংখ্য ঘোড়া। ঠিক যে ভাবে স্কুলের পরীক্ষার সময় ছোটরা নিজের সেরাটাই দিয়ে থাকে। বাঁকুড়া পাঁচমুড়ার এই ঘোড়াদের সঙ্গেই সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে দশাবতার তাসের আদলে ছোটদের আঁকা ছবি, বৌদ্ধ ধর্মস্থলের পতাকার মতো রঙিন কাপড়ের পতাকার মধ্যে ছোটদের লেখা ছড়া আর অসংখ্য পোড়ামাটির মূর্তি। সঙ্গের মানানসই প্রতিমা গড়েছেন শিল্পী নিজেই। ‘এই পুজো আসরে স্কুল পালানো ছুটির মেজাজ/ মধ্যিখানে দেবীর স্থানে ছড়ায় ঘোড়ায় রঙ কারুকাজ।’ বিষয়ের সঙ্গে মানিয়ে ছড়াও লিখেছেন তিনি। পার্থবাবুর এই ‘ছড়ায় মজায় দুর্গাপূজায়’ বিষয় ভাবনায় সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে চারটি স্কুলের বাচ্চারা, সানন্দে কাজ করেছে মণ্ডপের উপকরণ তৈরিতে। পাঠভবনের ১২টি বাচ্চা গেয়েছে থিম সঙ। নিজেদের সৃষ্টি মণ্ডপে দেখে তারা খুব খুশি। ভাবছে বুঝি, শেখার এমন আনন্দ পেলে কে আর স্কুল পালায়! ছোটদের সৃষ্টির আনন্দ এ বারে দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নেবে বিবেকানন্দ অ্যাথলেটিক ক্লাবের পুজো। ছবি তুলেছেন সোমনাথ ঘোষ।

পুজোর তাৎপর্য

খড়মাটির মূর্তিতে যে কালিমা থাকে, সপ্তমীর প্রাণপ্রতিষ্ঠার আগে তাকে শুদ্ধ করে নেওয়া হয় অধিবাসে। মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হলে দেবী চিন্ময়ী হন। তর্পণ থেকে জগদ্ধাত্রী পূজা পর্যন্ত প্রতিটি অনুষ্ঠানের ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক-সামাজিক তাৎপর্য নিয়ে সহজ ভাষায় যে আলোচনা করেছিলেন আচার্য সৌম্যেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, তারই সংকলন করেছেন কাবেরী মুখোপাধ্যায় (পূজা প্রকৃতি/ আধ্যাত্মিক অনুধ্যান, সিটিভিএন প্লাস), সঙ্গে আছে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ইংরেজি ভাবানুবাদও। সচিত্র বইটির মুদ্রণ-পারিপাট্য লক্ষণীয়। অধ্যাত্ম জগতের ব্যক্তিত্ব আচার্য সৌম্যেন্দ্রনাথ ছিলেন শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী, ভারতীয় ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে নিরলস।

তিনশো বছর

ঢাকা মানিকগঞ্জের বালিয়াটি গ্রামের রায়চৌধুরী বাড়িতে ভরদুপুরে উপস্থিত হন এক ফকির। হতদরিদ্র পরিবার, ফকির এক দানা চিনি ও এক গ্লাস জল পান করে দিয়ে যান একটি শালগ্রাম শিলা। সেটিই কুলবিগ্রহ ‘রাজরাজেশ্বর’। এর পরেই নাকি পরিবারে শ্রীবৃদ্ধি ও জমিদারি প্রাপ্তি হয়। গড়ে ওঠে বালিয়াটি প্রাসাদ। শুরু হয় দুর্গাপুজো। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের সময় পরিবারের অনেকেই কলকাতায় চলে আসেন। এ বছর রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিটের ‘নগেন্দ্র নিবাস’-এ সাবেকি প্রতিমায় সে পুজোর ৩০০ বছর উদ্‌যাপিত হবে, জানালেন নীরেন রায়চৌধুরী।

সন্দেশ

‘হাসিখুশি দেখছ মানেই/ আজকে আমার পরীক্ষা নেই।’ শঙ্খ ঘোষের ছড়া যেন পুজোর আনন্দে গেঁথে দিয়েছে সন্দেশ-কে (সম্পা: সন্দীপ রায়)। ছড়া-কবিতা, কার্টুন-কমিক্‌স, প্রকৃতি পড়ুয়ার দফতর, ভ্রমণ, নাটক, স্মৃতিকথা, খেলা, গল্প উপন্যাসে জমজমাট শারদ সংখ্যা। বাড়তি পাওনা, সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ ছবির বয়স ষাট হওয়ার সুবাদে সুস্বাদু নানা রচনা। এ ছবি কেন আজও অমলিন, তা নিয়েই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পদ্য: ‘তা দেখে মানুষ যেন বহুদিন পরে/ স্বদেশভূমির ছোঁয়া পেল অন্তরে—’। তরুণ মজুমদারের স্মৃতিলেখ পড়তে-পড়তে চোখ ভিজে ওঠে। ছোট দুর্গা রুণকি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন সে দিনের কথা। সৌমেন্দু রায়ের ছবি তৈরির ডকুমেনটেশন। এ ছাড়াও প্রয়াত বিজয়া রায়ের ‘আমার কথা’য় তাঁর বড় হয়ে ওঠার স্মৃতি, তখনও তিনি বিজয়া দাশ, সত্যজিতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেননি।

দেবলীনার গান

সাবেক প্রতিমা ছেড়ে থিম পুজোয়। তরুণ প্রজন্মের উৎসাহে ৬৮ তম বর্ষে টালাপল্লি সাধারণ দুর্গোৎসব সমিতির মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে হীরক রাজার কেল্লার আদলে। অনুভব দত্তের পরিকল্পনায় মণ্ডপের প্রথম ভাগে দেখা মিলবে মন্ত্রিসভার। তার পর কোষাগার। সেখানেই থাকবে গুপি আর বাঘা। আর সব শেষে মগজ ধোলাইয়ের ঘর যন্তর মন্তর। ওখানেই দেবী দুর্গা থাকবেন যক্ষের মুখে। অসুর স্বয়ং হীরক রাজা। অস্ত্রহীন দেবী আশীর্বাদ করেই অসুরের মগজ ধোলাই করবেন। এই থিমের জন্য গান লিখেছেন ও গেয়েছেন দেবলীনা ঘোষ। গান দিয়েই মণ্ডপ ও ছবির হীরক রাজার দেশকে বর্ণনা করা হয়েছে।

ওরাও উদ্যোগী

গাছ কাটা হচ্ছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে শুকনো বাকল। পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। এই ভাবেই বিশ্ব উষ্ণায়ন ধরা পড়েছে নিউটাউনের ‘সানরাইজ পয়েন্ট’ অ্যাপার্টমেন্ট-এর পুজোয়। মণ্ডপের বাইরে গাছ কাটার বিরূপ ফল ধরা পড়লেও ভেতরে দেবীর আশপাশ সবুজে ছাওয়া। ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে আছেন বৃক্ষমাতা। প্রকৃতি কী দিয়েছিল, আর গাছ কেটে মানুষ কী করছে, সেই বৈপরীত্যই ধরা পড়েছে মণ্ডপে। গত কয়েক মাস স্কুল থেকে ফিরে কমপ্লেক্সের কচিকাঁচারা বসে যেত প্রস্তুতিতে। তারাই পুরনো কাপড়, খবরের কাগজ, থার্মোকল দিয়ে গড়ে তুলেছে মণ্ডপ। গত বছর থেকেই তারা এতে শামিল।

বিদেশে ‘শক্তি’

সে দেশে ভারতীয় বাঙালি মেরেকেটে দেড়শো জন আর রাজধানী প্রাহায় মাত্র পনেরো জন৷ সেখানেই এখন অস্থায়ী ঠিকানা কলকাতার শিল্পী পাপিয়া ঘোষালের৷ বছর বারো আগে, প্রাহায় প্রথম পদার্পণ, প্রথম প্রদর্শনী জেন্ডার স্টাডিজ গ্যালারিতে৷ তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্রও হয়েছে সে দেশে৷ এ বার পাপিয়া বোহেমিয়া অঞ্চলের দুর্গাপুজোর প্রধান উদ্যোক্তা৷ পুজো উপলক্ষে প্রাহায় স্তারমেস্ত্কা নামেস্তির রামোভাতে গালেরি লাপিদারিউম-এ শুরু হয়েছে দুর্গা ও কালীর ওপর পাপিয়ার চিত্রপ্রদর্শনী ‘শক্তি’৷

লিপিনাগরিক

‘দুর্গাপুজো, চালচিত্র রচনা, আগমনী গান গাওয়া সবই এক বিরাট বাঙালি জীবনের মনমি কাহিনি...’ লিখেছেন সুধীর চক্রবর্তী (‘আগমনীর তত্ত্বকথা’)। লিপিনাগরিক (সম্পা: দেবব্রত মিত্র সৈকত মুখোপাধ্যায়) পত্রিকায় যত্নে সাজানো পুজোর উপচার। নন্দলালের ছবিতে দুর্গা নিয়ে সুশোভন অধিকারী, আবার পোড়ামাটির মন্দিরে দুর্গার কথা অজয় কোনারের লেখায়। হিরাপুরের চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির নিয়ে সচিত্র আলোচনা দেবাশিস নন্দীর। সে কালের পুজো, পুজোর রীতি, পুজোর যাত্রা, পুজোর মেলা, কত কী! সঙ্গে সৈকত মুখোপাধ্যায়ের গদ্যে জীবন পেয়েছে সেই সময় (‘নিরাকারের দ্বন্দ্ব’)।

যারা পরিযায়ী

মানস ভ্রমণ, যারা পরিযায়ী-র (সম্পা: তন্ময় চক্রবর্তী) শারদসংখ্যার পাতা ওলটালেই। পরিযায়ী হাঁসের কথা ও ছবি ধৃতিমান মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার ছবি তোলার গল্প’-এ। কেদার উপত্যকাবাসী একাশি বছরের কালিদাস চক্রবর্তীকে নিয়ে বনভূষণ নায়কের ‘ঘরের বাইরে পড়লে পা’। জাপান, কেরল, কলকাতার চিনেপাড়া, লেখা-আঁকায় চা-বাগানের টুকরো স্মৃতি। বরিশালের কীর্তনখোলা নদী, পাতারহাট দ্বীপ— শুদ্ধব্রত দেবের লেখায়, সঙ্গে দেবাশীষ দেবের ছবি। আনোয়ারুদ্দিন চৌধুরীর কলমে ‘মানস/ এক বিপন্ন ঐতিহ্য’। প্রদীপ ওয়াহুলের লেখা-আঁকায় তাওয়াং, ইন্দোনেশিয়া জয়দীপ মিত্রের রচনায়। আছে বিপর্যয়ের কথাও, দীপঙ্কর ঘোষের লেখায়, ভূমিকম্পের সময় অন্নপূর্ণার শিখর স্পর্শ করা ছেড়ে তাঁরা নেমে আসেন দুর্গম পার্বত্য গ্রামে দুর্গত মানুষদের পাশে।

উত্তরসূরি

সাহিত্যিক বনফুলের প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রী, শেওড়াফুলির কানাইলাল মুখোপাধ্যায়ের কন্যা অঞ্জলি কবিতা লিখতেন এবং গাইতেন রবীন্দ্রগান। ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় হাইকোর্টের কর্মী জীবন চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ের সুবাদে ব্যারাকপুরে আসেন। জীবন সনিষ্ঠ নাট্যকর্মী ছিলেন। তাঁর গ্রুপ ‘উত্তরশঙ্খ’ বহু জায়গায় প্রতিবাদী নাটক মঞ্চস্থ করে পুরস্কৃত হয়। এঁদের আদর্শের উত্তরসূরি ‘অঞ্জলি জীবন কল্যাণ ব্যারাকপুর’ বিত্তোৎপীড়িত শিল্প-প্রতিভার পাশে দাঁড়াবার সংকল্পে সৃষ্ট সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি তারা প্রয়াত সাহিত্যিক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তেমন কিছু নবীন প্রতিভাকে ব্যারাকপুরে সুকান্ত সদনে প্রকাশ করার অনুষ্ঠান করল। সাহিত্যের আড্ডায় ছিলেন সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র, নাট্যকার চন্দন সেন প্রমুখ। সমর্থনে সংগীতাঞ্জলিতে মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ চক্রবর্তী এবং শ্রাবণী সেন।

মাতৃরূপেণ

মহাষষ্ঠী। মাতা জগন্ময়ী তাঁর ষড়ৈশ্বর্যময়ী রূপ ও মাহাত্ম্য লইয়া হৃদয়ে ও মণ্ডপে আসীন। দিকে দিকে অসংখ্যা মানুষের ঢল নামিয়াছে। প্রাণে খুশির তুফান উঠিয়াছে। আকাশ-বাতাস-অন্তরীক্ষ, সকল প্রাণ ও প্রাণী, দেব-যক্ষ-রক্ষ সকলেই কহিতেছেন, যে দেবী সর্বপ্রাণীতে মাতৃরূপে অবস্থিতা তাঁহাকে প্রণাম। গঙ্গাপাড়ের কেল্লাঅধ্যুষিত এ কলিকাতা শহরে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র বলিতে আর কিছু নাহি। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ বলিতে আর কিছু নাহি। আজ সবাই আনন্দ মুখরিত। কে তুমি? কেন তোমার চক্ষে জল? কেন করুণ মুখ? আইস আজি শুভদিনে মাতার ভবনে অমৃত সদনে চলো যাই। বৃদ্ধ চলিয়াছেন বৃদ্ধার হাত ধরিয়া, যুবতী চলিয়াছে যুবকের শার্টের কলার খামচাইয়া। শুধু ধায়। উৎসব ধায়, সময় ধায়, আনন্দ ধায়, শুধু কে ও! ও মাগো! তুমি তো আমাদের ঘরেরই সেই কন্যা। তবু তুমি কুমোরটুলি বা পটুয়াপাড়ায় মৃৎশিল্পীর চালাঘরে একান্তে নির্জনে রহিয়া গিয়াছ, সসন্তান অসুরনিধনে ব্যাপৃত। কেহ তোমাকে সাদরে লইয়া যায় নাই। প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে নাই। তাহাতে ক্ষতি কী। তুমি তো সদাজাগ্রত। গড্ডলিকা প্রবাহ থেকে দূরে তোমাকে প্রাণ ভরিয়া দেখি। ওগো মা তোমাকে দেখিয়া আঁখি না ফিরে।

প্রাচীনা

প্রাচীন বাংলায় দেবী দুর্গার রূপ কেমন ছিল তা দেখতে হলে শুধু কোনও সংগ্রহালয়ে কি থিমপুজোর মণ্ডপে যেতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। এ শহরের কিছু মন্দিরে এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহে আজও আছে বেশ কিছু প্রাচীন দেবীমূর্তি। যেমন কুমোরটুলির দুর্গাচরণ ব্যানার্জি স্ট্রিটের একটি মন্দিরে রয়েছে সেন যুগের একটি নিখুঁত অষ্টভুজা মহিষমর্দিনী মূর্তি। মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় তিন ফুট। যদিও নীচের অংশটি মাটিতে গাঁথা রয়েছে। মূর্তিতে দেবী ত্রিভঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, ডান পা মহিষের পিঠে। মূর্তিটির পাদপীঠের উপরের দিকে কীর্তিমুখের দু’পাশে মালা হাতে গন্ধর্ব। দেবীর মাথায় জটা মুকুট। ডান দিকের চারটি হাতে রয়েছে খড়গ, তূণ থেকে নির্গত তীর, চক্র এবং ত্রিশূল। বাঁ দিকের চারটি হাতে রয়েছে ধনুক, ঢাল, গদা এবং নীচের হাতে ধরা রয়েছে অসুরের মাথা। মহিষের কাটা গলা থেকে বেরিয়েছে মহিষাসুর। বাঁ দিকে দেবীর পায়ের তলায় তুলনায় ছোট আকারের সিংহ যা মহিষাসুরের একটি পা কামড়ে ধরেছে। নীচে দু’পাশে ঢাল ও খড়গ হাতে নারী ও পুরুষের মূর্তি। এই মন্দিরের সেবায়েত দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তাঁর পূর্বপুরুষ নীলকান্ত সরস্বতী ১৮৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের শ্রীহট্ট থেকে মূর্তিটি কলকাতায় এনে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নাকি স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী শ্রীহট্টের একটি নদীর মধ্যে থেকে মূর্তিটি পেয়েছিলেন। দুর্গাপুজো ছাড়াও এই মন্দিরে অগ্রহায়ণ মাসে দেবী ‘সঙ্কটা’ রূপে পূজিত হন।

নবকুমার

একদম চ্যালেঞ্জ নেন নবকুমার ভট্টাচার্য। যে মানুষটি সংস্কৃতের ‘স’ জানেন না তাঁকে অবধি দশ দিন, রোজ এক ঘণ্টা ক্লাস নিয়ে ‘স্পোকেন সংস্কৃত’র জন্য তৈরি করে দেবেন। হ্যাঁ, এমনটাই ওঁর দাবি। স্পোকেন ইংলিশ হলে স্পোকেন সংস্কৃত হবে না কেন? মাধ্যমিকে সংস্কৃতে লেটার, এর পর বাংলায় স্নাতক ও বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর। অতঃপর কাশী বিদ্যাপীঠের বিশেষ সম্মান— শাস্ত্রী-আচার্য। ’৯২ সালে ‘দেবভাষা’ নামে এক ত্রৈমাসিকের শুরু। মহারাষ্ট্র সরকার তাঁকে নিরন্তর সংস্কৃত চর্চা ও প্রসারের জন্য ‘সংস্কৃতসেবী’ সম্মান জানায়। পশ্চিমবঙ্গে এখনও ছ’শো টোল রয়েছে। তাঁরই একটির দায়িত্বে নবকুমার। সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারের জন্য গিয়েছেন বাংলাদেশ ও জার্মানিতেও। ’৯০-এ পুরোহিতদের নিয়ে ‘কর্মশালা’ শুরু করে শিখিয়েছিলেন কী ভাবে ঠিকমতো পূজা সম্পাদন করতে হবে। দক্ষিণা ছিল দশ দিন দশ টাকা করে। জানালেন, কাব্য-ব্যাকরণ-স্মৃতি-পুরাণ পড়তে আগে অনেকে আসতেন। এখন আসেন পুরোহিত ও জ্যোতিষাদি ক্রিয়াকর্ম শিখতে। সংস্কৃত ভাষার অবস্থান জানাতে ‘প্রেক্ষাপট’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। কাশীর পণ্ডিত সমাজ থেকে পেয়েছেন ‘মহোপাধ্যায়’ উপাধি। এত কিছুর পরও বৈদ্যবাটির চতুষ্পাঠী লেনে একটি বাড়িতেই দুর্গাপুজো করেন। এ বছর বেরিয়েছে তাঁর বই দেবীমাহাত্ম্য ও শ্রীশ্রীদেবী দুর্গা (পরি: পুস্তক বিপণি)। দুর্গাপুজো নিয়েই লিখেছেন আরও কয়েকটি বই।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE