Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

এই সেপ্টেম্বরেই ৯৫-এ পা রাখলেন, কিন্তু শিল্পের সাধনায় আজও তিনি নিরন্তর সক্রিয়। তিনি অতসী বড়ুয়া, চিত্রশিল্পী অসিতকুমার হালদারের কন্যা। কর্মসূত্রে কলাভবনের অধ্যক্ষ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৯১১-য় শান্তিনিকেতনে যোগ দেন অসিতকুমার।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

শিল্পীকন্যার শিল্পচর্চা

এই সেপ্টেম্বরেই ৯৫-এ পা রাখলেন, কিন্তু শিল্পের সাধনায় আজও তিনি নিরন্তর সক্রিয়। তিনি অতসী বড়ুয়া, চিত্রশিল্পী অসিতকুমার হালদারের কন্যা। কর্মসূত্রে কলাভবনের অধ্যক্ষ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ১৯১১-য় শান্তিনিকেতনে যোগ দেন অসিতকুমার। সপরিবার সেখানেই থাকতে শুরু করেন। ১৯২১-এর ৪ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে অতসীদেবীর জন্ম। অতসী নামটি রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ছোট থেকেই শিল্পের পরিমণ্ডলে বড় হওয়া। ব্যস্ত বাবা ছোট মেয়েকে খাতা-পেন্সিল এগিয়ে দিতেন আঁকার জন্য। পরে জয়পুর ও লখনউ-এ বাবার কর্মস্থল বদলে যায়। সেখানেও কন্যার শিল্পচর্চা অব্যাহত। বাবা মাঝে মাঝে আঁকার খাতা টেনে নিয়ে পরামর্শ দিতেন। প্রচলিত কোনও শিক্ষা না নিয়েও সাবলীল ভাবে এঁকে যেতেন অতসী। বাবার সূত্রে বাড়িতে নিয়মিত আসতেন অতুলপ্রসাদ সেন, পাহাড়ি সান্যাল, তাঁরাও মুগ্ধ হতেন অতসীর আঁকায়। ১৯৩৭-এ অরবিন্দ বড়ুয়ার সঙ্গে বিয়ের পর স্থায়ী ভাবে চলে এলেন কলকাতায়। শিল্পচর্চা অব্যাহত ছিল। অতুল বসু ও রমেন চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণায় চল্লিশের দশকের গোড়ায় কলকাতার কমলালয় ভবনে সর্বভারতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে অতসীদেবীর তিনটি ছবি স্থান পায়। সেই প্রথম প্রকাশ্য প্রশংসা। পরে বহু বার তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছে। কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি পঞ্চাশের দশকে বুদ্ধদেবের জীবন ও বাণী নিয়ে তাঁর ছবি দিয়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। ষাটের দশকের শুরুতে বেলগাছিয়ার পরেশনাথ মন্দিরের দেওয়ালে আঁকা ২৬টি প্যানেল চিত্র তাঁর অনন্য কীর্তি। ১৯৭২-এ বুদ্ধগয়ায় প্রশংসিত হয় বুদ্ধদেবের জীবন নিয়ে একক চিত্রপ্রদর্শনী। ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারের বেশি ছবি এঁকেছেন। হিরোশিমার বুদ্ধমন্দিরে আছে তাঁর কাজ। সাত দশক ধরে শিল্পী সংগ্রহ করে রেখেছেন বাবার অসংখ্য ছবি, চিঠিপত্র ও নানা তথ্য। এ সবের ভিত্তিতেই গৌতম হালদার লিখেছেন অসিত হালদারের জীবন ও কর্ম, যা প্রকাশিত হতে চলেছে কিছু দিনের মধ্যেই। অতসী বড়ুয়ার ছবি তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য।

পূর্বাপর

তিন বছর আগেও ছবি করেছেন, ‘গেবো অ্যান্ড দ্য শ্যাডো’ (সঙ্গের স্থিরচিত্র), সেটাই শেষ দীর্ঘ কাহিনিচিত্র। এ বছর এপ্রিলে প্রয়াত হলেন, বয়স হয়েছিল ১০৭ (জ. ১৯০৮)। গত বছরও দর্শক দেখেছে তাঁর স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র ‘দি ওল্ড ম্যান অব বেলেম’। পর্তুগালের পরিচালক মানোয়েল দ্য অলিভেরা। দীর্ঘকাল স্বৈরশাসনে আক্রান্ত নিজের দেশ ও দেশের মানুষের সংকট সর্বজনীন আবেদন নিয়ে উঠে আসত তাঁর ছবিতে। যখনই নতুন ছবি করতেন তা নিয়ে খোঁজ নিতেন বা দেখতেন মৃণাল সেন। স্বদেশের সম্মান ছাড়া গত বছরই পেয়েছিলেন ফরাসি দেশের সর্বোচ্চ সম্মান। ভেনিস ফেস্টিভ্যালের ‘গোল্ডেন লায়ন’ ও কান ফেস্টিভ্যালের ‘গোল্ডেন পাম’ পেয়েছেন তিনি। সুখবর, এ বার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর রেট্রোস্পেকটিভ। ‘শতায়ু এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতেই এ আয়োজন’, জানালেন উৎসব-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল।

সুবর্ণজয়ন্তী

গানকে শুধু সুখশ্রাব্য হিসেবে না দেখে তার কলাসম্মত দিকের উন্নয়নে প্রয়াসী হন শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তনী ত্রয়ী সুপূর্ণা চৌধুরী (ঠাকুর), সুভাষ চৌধুরী ও জয়শ্রী রায়। রবীন্দ্র পূর্ববর্তী ও রবীন্দ্র-সমসাময়িকদের রচিত গানের অনুশীলন ও প্রচারের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রসিক শ্রোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালে গড়ে ওঠে ইন্দিরা সঙ্গীত শিক্ষায়তন। পরের বছর সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। প্রতীক এঁকে দেন সত্যজিৎ রায় (সঙ্গের ছবি)। ওদের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান শুরু ২১ নভেম্বর শেক্সপিয়র সরণির অরবিন্দ আশ্রমে, বিকেল পাঁচটায়। বিশ্বভারতী রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষণা কেন্দ্র ও শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমের সহায়তায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আছে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতে যন্ত্রানুষঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা এবং গবেষণা কেন্দ্র ও ইন্দিরা শিল্পী গোষ্ঠীর নিবেদনে ‘ঠাকুরবাড়ির গান’। সূচনা করবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে ১৭ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় আইসিসিআর-এ ‘দুই পর্বে রবীন্দ্রনাথ’। অপালা বসু, কাজল সুর, প্রসেনজিৎ ঘোষ, শাশ্বতী গুহ ও তাপসী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ে মঞ্চস্থ হবে ‘চোখের বালি’ শ্রুতিনাটক। পরে রত্না মিত্রের ভাবনা ও পাঠে গীতিআলেখ্য ‘বৃষ্টিবেলা’। গানে শ্রাবণী সেন মাধবী দত্ত।

বটুকদার গান

একদা তাঁর কথা ও সুরের অভ্রান্ত বয়নে ‘নবজীবনের গান’ বাংলা গানের ক্লাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রবাস জীবনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকুমার রায়, বিষ্ণু দে, ক্ষিতীশ রায় ও তাঁর নিজের নানা গানে সুর দেন কবি-সুরকার-গায়ক জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। কিন্তু শ্রোতাদের কাছে তা সে ভাবে পৌঁছয়নি। এ বার প্রসূন দাশগুপ্ত শিল্পীর সুরারোপিত স্বরলিপি সহ সে সব গান সংকলন করেছেন বটুকদার গান (থীমা)-এ। বছরের শুরুতে প্রকাশিত হয়েছিল শিবাদিত্য দাশগুপ্ত ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত শতবর্ষীয়ান জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (থীমা)। ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র-র ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতী সভাগৃহে প্রকাশিত হবে বটুকদার গান, উপস্থাপনায় নৃপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘গান্ধির সত্যাগ্রহের প্রাথমিক ইতিহাস, চার্লস এন্ড্রুজ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বিষয়ে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র স্মারক বক্তৃতা, বক্তা ইতিহাসবিদ উমা দাশগুপ্ত।

স্মরণ

পাঠ আর আবৃত্তিই শুধু নয়, বাচিক শিল্প নিয়ে গভীর চর্চা করতেন অমিতাভ বাগচী৷ ‘রানার’-এর মতো কিছু কবিতার বঙ্গজীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার নেপথ্যে বাচিক শিল্প এবং গানের সম্পর্ক কী, তা নিয়ে লিখলেন, ‘...সুকান্ত ভট্টাচার্যের “রানার”। এটি গান হিসেবে আমাদের কাছে এত পরিচিত ছিল যে কবিতা হিসেবে পড়াটাই ছিল মুশকিল। পড়তে গেলেই চোখের সামনে ভেসে উঠতো ছোটবেলায় কলকাতার উপকণ্ঠে শারদীয়া জলসার স্মৃতি। এক গৌরাঙ্গ নবীন যুবা খালি গায়ে, পায়ে নূপুর, হাতে লাঠি ও পিঠে বোঝা নিয়ে নেচে চলেছে — পেছনে রেকর্ডে সলিল চৌধুরীর সুরে হেমন্ত মুখার্জীর গলায় গানের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে।’ শিল্পীর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘অপরাজিতা’ তাঁর প্রয়াণের পরে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজন করে স্মারক বক্তৃতার৷ এ বছর বলবেন দেবশঙ্কর হালদার, ‘দৃশ্যে সংলাপে সংযোগে’ প্রসঙ্গে৷ পার্থ ঘোষকে স্মৃতিসম্মান অর্পণ করবেন অশোক পালিত৷ গানে ও কবিতায় রাজশ্রী ভট্টাচার্য প্রণতি ঠাকুর, ২০ নভেম্বর সন্ধে ছটায়, সুজাতা সদনে৷

খেলার ছবি

ক্ষিদ্দা-কে মনে পড়ে? বস্তির কালো মেয়ে কোনিকে সাঁতারু তৈরি করার জন্যে পাগল... এ বারে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের দর্শকেরা ফিরে দেখবেন ‘কোনি’। সৌমিত্র-শ্রীপর্ণা অভিনীত সরোজ দে’র ছবি। খেলার ছলে তো ছবিতে লড়াইয়ের কথাই বলেন পরিচালকেরা, বার্তা দেন নতুন ভাবে জীবনটাকে নিয়ে বাঁচার। সে উদ্দেশ্যেই ‘ফিল্মস অন স্পোর্টস’ বিভাগে খেলা নিয়ে দেশবিদেশের নানা ছবি। ‘কোনি’র সঙ্গে আছে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ (মিলখা সিংহ-এর লড়াই), আবার নাতসিদের সঙ্গে ফুটবলকে কেন্দ্র করে লড়াই— ‘এসকেপ টু ভিকট্রি’। অন্যান্য ছবি: ব্রেকিং অ্যাওয়ে, রেজিং বুল, দ্য ন্যাচারাল, চ্যারিয়টস অব ফায়ার (সঙ্গের স্থিরচিত্র)।

উৎসবের আড্ডা

আলো মরে আসা বিকেলে মন ভাল করে দেবে, এমন আড্ডাই শুরু হয়েছে কাল থেকে। রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে। ‘উৎসবে সিনেমা দেখার সঙ্গে তা নিয়ে আড্ডাও তো দিতে পারেন দর্শকেরা। বিশেষজ্ঞ থেকে বিশিষ্ট জন সকলেই থাকছেন, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন দর্শকের।’ জানালেন তথ্যসংস্কৃতি মন্ত্রকের মুখ্যসচিব অত্রি ভট্টাচার্য। গোয়েন্দা, সঙ্গীত, কৌতুক, ক্যামেরা, হলি-বলি-টলি— নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা, থাকছে ক্যুইজও। ১৯ নভেম্বর অবধি, ৫-সাড়ে ৬টা।

সীমার নাটক

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এর মতো পথিকৃৎ বিজ্ঞানসভার কথা জানা থাকলেও ক’জন জানেন এর প্রস্তুতিপর্বে কত প্রতিকূলতা ছিল। আর এর স্থপতি তো আরওই বিস্মৃত: মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪)। ডাকসাইটে চিকিৎসক এই মানুষটির মধ্যে ছিল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানগ্রন্থ প্রকাশের তাগিদ, মেয়েদের শিক্ষা আর সমকালীন রাজনীতি নিয়ে লড়াই করার মন। আবার নাস্তিক হওয়া সত্ত্বেও শ্রীরামকৃষ্ণের চিকিৎসা করতে গিয়ে জড়িয়ে যান নতুন এক দর্শনে। আত্মবিস্মৃত বাঙালির কাছে এই বর্ণময় জীবনকে স্মৃতিধার্য করতেই তাঁকে নিয়ে নাটক লিখেছেন সৌনাভ বসু: ‘অব্যক্ত’। রঙরূপ-এর নতুন প্রযোজনা। ‘মহেন্দ্রলালের সূত্রে যে যুগ ভাবায়, শেখায়, উৎসাহ দেয়, সে সময়টাকেই তুলে আনার চেষ্টা করেছি’, জানালেন পরিচালক সীমা মুখোপাধ্যায়। মহেন্দ্রলালের ভূমিকায় বিমল চক্রবর্তী (সঙ্গের ছবি)। গিরিশ মঞ্চে ২২ নভেম্বর রবিবার সন্ধে সাড়ে ৬টায়।

শিল্পপত্র

শিল্পকলা নিয়ে পত্রিকা কোথায়? তা সে নতুন পুরনো, ঐতিহ্যবাহী কি আধুনিক যে শিল্পই হোক না কেন। আর সাম্প্রতিক বিশ্ব-প্রেক্ষিতে শিল্প নিয়ে খোলামেলা আলোচনা তর্কবিতর্কের একটা জায়গা খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে, মনে করেন যোগেন চৌধুরী। তাই প্রকাশ পাচ্ছে নতুন শিল্পপত্র ‘আর্টইস্ট’। সম্পাদনায় যোগেন চৌধুরীর সঙ্গে সৌমিক নন্দী মজুমদার ও সোমা ভৌমিক, আছেন পার্থ দাশগুপ্ত তাপস কোনারও। আজ সন্ধ্যা ৬টায় আইটিসি সোনার-এর ওয়েলকাম আর্ট গ্যালারিতে প্রথম সংখ্যার প্রকাশ, তাতে হরিশ্চন্দ্র হালদারকে নিয়ে আলোচনা, শিল্পশিক্ষা, সোমনাথ হোরের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি নানা বিষয়।

বেলাশেষের গান

রোজ কমলা রঙের ঠাণ্ডা রোদ্দুর নিয়ে এখন বিকেল নামছে কলকাতায়। হেমন্ত। তাতে স্মৃতির হাতছানি, বেলাশেষের গান... ‘পথে পড়ে থাকা বইগুলো/ ওলটালে আনমনা ধুলো/ ছোঁয়াটোয়া গায়ে লাগে তারই/ লেপ কাঁথা মাদুর মশারি।’ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গানের সঙ্গে এ শহরের পুরনো বাড়ির ছাদে রোদে-দেওয়া আচারের বয়াম, পুরনো বইয়ে গুঁজে-দেওয়া নিমপাতা; কলেজস্ট্রিটে পুরনো বইয়ের দোকান, আর কফিহাউসের ছবি। এখনও চলছে নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলাশেষে’। ২০০ দিন পূর্ণ হচ্ছে আজ।

সলিল চৌধুরী ৯০

হাতে গোনা যে ক’জন বাঙালি মুম্বইয়ের সিনেমা জগৎ মাতিয়ে়ছেন, সলিল চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। লতা মঙ্গেশকর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর অন্যতম পছন্দের সুরকার ‘সলিলদা’। সত্যেন বসুর ‘পরিবর্তন’ ছবিতে শুরু, বিমল রায় পরিচালিত ‘মধুমতী’ তাঁকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে। ১৯২৫-এর ১৯ নভেম্বর জন্ম। ছেলেবেলা কেটেছে অসমের চা বাগানে। কলকাতায় এসে ১৯৪৪-এ আইপিটিএ-তে যুক্ত হন। গান লিখে সুর দিতে শুরু করেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে লিখলেন ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’! ছড়িয়ে পড়তে থাকে সলিলের সুরে ‘রানার’, ‘অবাক পৃথিবী’। সে সময়কার দিকপাল শিল্পীরা সকলেই তাঁর সুরে গেয়েছেন। বেঁচে থাকলে এ বছর ৯০ পূর্ণ করতেন। ১৯ নভেম্বর কলামন্দিরে সলিল চৌধুরী ফাউন্ডেশন অফ মিউজিক, সেন্টারস্টেজ এন্টারটেনমেন্ট ও শ্যামসুন্দর কোম্পানির আয়োজনে স্মরণসন্ধ্যা। শিল্পীর সুরে গান শোনা যাবে মনোময়, মহালক্ষ্মী আইয়ার, রূপঙ্কর, অন্বেষা দত্তগুপ্ত, সবিতা চৌধুরী অন্তরা চৌধুরী সঞ্জয় চৌধুরীর কণ্ঠে। শান্তনু মৈত্র বলবেন সলিল চৌধুরীকে নিয়ে। সম্মান জানানো হবে কে জে জেসুদাস, সুরেশ ওয়াডকর এবং অমিতকুমারকে। ২১ নভেম্বর সন্ধে ৬-১৫-য় আইসিসিআর-এ নির্মাল্য দেবমান্নার পরিকল্পনায় গীতি আলেখ্য ‘ও আলোর পথ যাত্রী’। কোরিয়োগ্রাফি গৌতম বর্মন। শিল্পীকে গানে শ্রদ্ধা জানাবেন কন্যা অন্তরা চৌধুরী। আয়োজনে ‘অনন্য অন্যমন’।

সম্মান

আজন্ম তাঁর যোগ থিয়েটারের সঙ্গে। মাতামহ-মাতামহী অরুণ ও রেণু দাশগুপ্তের নাট্যগোষ্ঠী ‘অভিযাত্রিক’। আর ফাল্গুনী, রুমকি ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়— জেঠু-জেঠিমা ও বাবা, তাঁদের হাত ধরেই ‘লোককৃষ্টি’ প্রযোজিত নাটকে মঞ্চে আসা, তখন তাঁর বয়স চার। সেই মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়ের অধ্যয়ন বা কর্ম, সব কিছু জুড়ে এখন শুধুই থিয়েটার। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগ তাঁর ঘরসংসার। শেক্সপিয়ার অবলম্বনে রবীন্দ্রভারতী রেপার্টরির ‘ফাগুন রাতের গপ্পো’তে তিনি অভিনেতা তো বটেই, সেখানকার কৃতী ছাত্রীও, গবেষণারত। ‘তরুণ প্রধান, শুভব্রত সিংহরায়ের সঙ্গে বিভাগের সব শিক্ষক, কর্মীদের প্রশ্রয়ে থিয়েটার করে চলেছি।’ জানাচ্ছিলেন মোনালিসা। এর আগে প্রেসিডেন্সি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ভরতনাট্যম-এর তালিম থাঙ্কমণি কুট্টি আর নরেশ কুমারের কাছে। ধ্রুপদী গানের তালিম বীণা রায়চৌধুরীর কাছে। একের পর এক করে গিয়েছেন রক্তগাথা, ল্যাবরেটরি, পেজ ফোর, গ্যালিলিও গ্যালিলেই-এর মতো নাটক। এখন করছেন বিলে, রম্‌কম্‌, সিস্টেম। নিজের নির্দেশনায় অভিনয় চিরন্তনী-তে (সঙ্গের ছবি)। শ্যামল সেন স্মৃতি সম্মান-এর সঙ্গে সদ্য পেলেন দিল্লির সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি-র যুব সম্মান: ‘উস্তাদ বিসমিল্লা খান পুরস্কার’। ‘দাদু শান্তিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সাহিত্য আর ঠাকুমা নীলিমার কাছে গানের হাতেখড়ি। দাদা আবীরের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা। আর মা দোলন চট্টোপাধ্যায়ের অভিভাবকত্ব। সর্বোপরি বিভাস চক্রবর্তী ও অবন্তী চক্রবর্তী— এঁরা ছাড়া আজ এখানে এসে পৌঁছতেই পারতাম না।’ স্বীকারোক্তি মোনালিসার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE