Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

ছোটবেলায় স্কুল যাওয়ার পথে পড়ত নাগেরবাজার। রথের মেলা, দোকানপাট, মানুষজন। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে, ভিড়ের মধ্যে নেমে দেখার অনুমতি ছিল না। বেশিটাই দেখেছিলেন চোখের আলোয়। মনের গভীরে সঞ্চিত সেই স্বপ্নভূখণ্ড আজ উজ্জ্বল হয়ে ফিরে এল চিত্রপটে। কুড়ি কুড়ি বছর পেরিয়ে কলকাতায় একক প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ করে ‘নাগেরবাজার’ ছবিটি (বাঁ দিকে) এঁকেছেন জয়শ্রী বর্মন (ডান দিকে)।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:১১
Share: Save:

লৌকিক-অলৌকিকে অন্তর্যাত্রা

ছোটবেলায় স্কুল যাওয়ার পথে পড়ত নাগেরবাজার। রথের মেলা, দোকানপাট, মানুষজন। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে, ভিড়ের মধ্যে নেমে দেখার অনুমতি ছিল না। বেশিটাই দেখেছিলেন চোখের আলোয়। মনের গভীরে সঞ্চিত সেই স্বপ্নভূখণ্ড আজ উজ্জ্বল হয়ে ফিরে এল চিত্রপটে। কুড়ি কুড়ি বছর পেরিয়ে কলকাতায় একক প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ করে ‘নাগেরবাজার’ ছবিটি (বাঁ দিকে) এঁকেছেন জয়শ্রী বর্মন (ডান দিকে)। শান্তিনিকেতন আর কলকাতায় সরকারি আর্ট কলেজে শিল্পদীক্ষা, শিল্পী পরেশ মাইতির সঙ্গে বিয়ের পর দিল্লিতে থিতু হয়ে তাঁর প্রকৃত শিল্পযাত্রা শুরু। দেশবিদেশে অনেক প্রদর্শনী, সম্মান, রসিকজনের আগ্রহ— সব কিছুর মধ্যে জয়শ্রী বারবার ফিরে আসেন নিজের কাছে, ‘আমার প্রতি মুহূর্তের অনুভূতি দিয়ে আমি ছবি আঁকি।’ মিথ-পুরাণ তাঁকে অমোঘ আকর্ষণে টানে, তাঁর দেবদেবীরা মানবশরীরে মর্ত্যলীলায় মগ্ন। তাঁর নারী বলাকা, ধরিত্রী— শিশু থেকে বেড়ে ওঠা মাটির কন্যা, ‘যেন সে পরিপূর্ণ হয়ে এ বার প্রকৃতির হাওয়ার বিপরীত বেগকে কাটিয়ে হাঁসের মতন করে এগিয়ে চলে চিরন্তন, অনির্দিষ্ট, অজানা পথের উদ্দেশ্যে...’। লৌকিকের অনেক গভীরে প্রোথিত জয়শ্রীর শিকড়, অথচ অবলীলায় তিনি পৌঁছে যান অলৌকিকে।

বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলছে জয়শ্রী বর্মনের চিত্র ও ভাস্কর্যের প্রদর্শনী, দেখা যাচ্ছে নতুন পুরনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, বিশেষ করে বড় আকারের ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। এর পর ১-৩০ ডিসেম্বর এই প্রদর্শনী থাকবে গ্যালারি সংস্কৃতি-তে, সেখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছে অন্তর্যাত্রা/ আ জার্নি উইদিন (প্রাককথন অমিতাভ বচ্চন, ভূমিকা অম্বিকা বেরি) নামে তাঁকে নিয়ে একটি বড় মাপের বই। অত্যন্ত সুমুদ্রিত বইয়ে তাঁর বহু চিত্র-ভাস্কর্যের ছবি, তাঁর সম্বন্ধে রাজীব চন্দ্রনের লেখা, ইনা পুরির সাক্ষাৎকার, তাঁর ভাস্কর্য দেখে প্রীতীশ নন্দীর কবিতা, সঙ্গে জয়শ্রীর নিজস্ব টুকরো টুকরো ভাবনাচিন্তা তাঁর শিল্পজগৎকে আগ্রহীজনের কাছে তুলে ধরেছে।

কমলকুমার

‘‘কোনও এক রবিবার সকালে কমলকুমার মজুমদার তাঁর প্রথম উপন্যাস আমাদের কয়েকজনকে উপহার দেন। উপন্যাসটি বেরিয়েছিল একটি ক্ষুদ্র সাহিত্য পত্রিকায় ক্রোড়পত্র হিসাবে, ...কমলকুমার পত্রিকাটি থেকে তাঁর রচনাংশ ছিঁড়ে আলাদা কাগজে নিজে মলাট সেলাই করে একটি সম্পূর্ণ পুস্তক হিসেবেই দিয়েছিলেন আমাদের। উপন্যাসটির নাম ‘অন্তর্জলী যাত্রা’।’’ কমলকুমারের রচনার সঙ্গে সেই প্রথম পরিচয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। কমলকুমারকে ‘কৃত্তিবাস’-এ লেখার অনুরোধ জানান সুনীল। এ ভাবেই সুনীল ও তাঁর পঞ্চাশের লেখকবন্ধুদের সঙ্গে কমলকুমারের হৃদ্যতা বাড়ে। তাঁকে নিয়ে নানা পত্রিকায় সুনীলের লেখা সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন প্রশান্ত মাজী (আমার কমলকুমার, ভালো বই)। অন্য দিকে, সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন কমলকুমারের স্ত্রী দয়াময়ী মজুমদার। কমলকুমারের ১০১তম জন্মদিনে উত্তরপাড়ার স্টুডিয়ো ‘জীবনস্মৃতি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল ‘দয়াময়ী মজুমদার স্মরণ’। বললেন প্রশান্ত মাজী।

পরিচালক

চে-টুপি আর মুখভর্তি দাড়িই তাঁর ব্র্যান্ড ভ্যালু। তাঁর ক্যামেরায় উঠে আসত জীবন্ত প্রকৃতির ক্যানভাস। চাইতেন কমার্শিয়াল ঘরানার বাইরে থাকতে। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৭০ সালের ২৮ অগস্ট। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র, যাদবপুরে এম এ পড়তে পড়তেই সিনেমায়। প্রথমে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সহকারী। ১৯৯৮-এ প্রথম ছবি ‘সম্প্রদান’। ছবিতে এক মা তাঁর মেয়েকে সম্প্রদান করছেন। ‘তখন স্কুলে পড়ি। হলে বসে ‘সম্প্রদান’ দেখতে দেখতে চোখের জলকে আটকাতে পারিনি!’ স্মৃতিচারণ বাপ্পাদিত্য পরিচালিত ‘কাগজের বউ’ এবং ‘এলার চার অধ্যায়’-এর নায়িকা পাওলি দামের। ছবিটি ২০০০-এ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। ‘শিল্পান্তর’ ২০০২-এ। ২০০৩-এ বিএফজেএ পুরস্কার। ২০০৫-এ হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় তৈরি ‘দেবকী’ হেলসিঙ্কি উৎসবে যায়। দেশভাগ নিয়ে ‘কাঁটাতার’ ছাড়াও ‘কাল’, ‘হাউসফুল’, তাঁর অন্যান্য কাজ। শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘নায়িকা সংবাদ’। মুক্তি না পেলেও ‘সোহরা ব্রিজ’ দেখানো হচ্ছে গোয়া উৎসবে। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির মধ্যে শুটিং করতে গিয়েই নিউমোনিয়া, চলে গেলেন নিতান্ত অসময়ে।

ভারতী পরিষদ

শ্যামবাজার মোড় থেকে আর জি কর রোডে ঢুকতেই ডান দিকে প্রায় শতাব্দী-প্রাচীন একটি বাড়ি। একতলায় হরেক কিসিমের ছোট-বড় দোকান, তিন তলায় ‘ভারতী পরিষদ’ লাইব্রেরি (১২৯৭ বঙ্গাব্দ/ ১৮৯০ সালের ২৯ নভেম্বর স্থাপিত)— উত্তর কলকাতার গ্রন্থকীটদের নয়নের মণি। সংগ্রহ প্রায় ৪০ হাজার গ্রন্থ ও সাময়িকপত্রের। ১৮৯৩-এ বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্কিমচন্দ্র, প্রধান বক্তা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নানা সময়ে নাম বদলে শেষে থিতু হয় এই ‘ভারতী পরিষদ’-এ। অবহেলিত এ গ্রন্থাগার নিয়ে এ বার অনুষ্ঠান: ‘অভিযাত্রা ১২৫’। জন্মদিনে, ২৯ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় শোভাবাজার রাজবাড়িতে। বিশিষ্টজনকে সারস্বত সম্মাননার সঙ্গে আছে অভিভাষণ: রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। ১২৫ বর্ষপূর্তি ভাষণে স্বপন চক্রবর্তী, বিষয়: ‘ভবিষ্যতের স্মৃতি’। প্রকাশিত হবে সুমন ভট্টাচার্য সম্পাদিত পাঠাগার পরিপ্রেক্ষা, যেখানে রবীন্দ্রনাথ, প্রফুল্লচন্দ্র থেকে যোগেশচন্দ্র বাগলের ৭টি লেখায় উঠে এসেছে গ্রন্থাগারের কর্তব্য থেকে আন্দোলন, গবেষণার প্রসঙ্গও। ভারতী পরিষদ-এর সঙ্গে উদ্‌যাপনে সূত্রধর। এ দিকে সূত্রধর ও প্রবুদ্ধ ভারত সংঘ-এর উদ্যোগে ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্রাঙ্গণে (৯বি সিংহী লেন, কালী সিংহী পার্ক) প্রকাশিত হবে প্রয়াত শচীন্দ্রকুমার সিংহের সিমলা ব্যায়াম সমিতির গোড়ার কথা (১৯২৫-৩০) বইটি। থাকবেন বিভিন্ন বিপ্লবী-পরিবারের অনেকেই।

উৎস মানুষ

কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে ঠেকাতে না পেরে এঁড়ে তর্ক জুড়ে দিলে হিতে বিপরীত হবেই। আমাদের তো সিধুজ্যাঠা নেই যে যুক্তির ওজন মেপে জুতসই উত্তর সাপ্লাই দেবে, সে কাজ করছে কিছু গণবিজ্ঞান সংগঠন ও পত্রিকা। বিজ্ঞানমনস্কতাই পারে অপবিজ্ঞান ও কুসংস্কারকে ঠেকাতে। সে কথা মাথায় রেখে ‘উৎস মানুষ’ ১৯৮০ থেকে আজও বিজ্ঞানমনস্কতাকে বুকে আগলে রেখেছে। পত্রিকার অন্যতম পরিচালক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে জোর ধাক্কা খেয়েও ফের দাঁড়িয়েছে পত্রিকাটি। তাঁর প্রয়াণ মাসে ‘উৎস মানুষ’ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। ২৮ নভেম্বর জীবনানন্দ সভাঘরে বিকেল ৫টায় বলবেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। বিষয় ‘বাঙালি মননে বিজ্ঞান চেতনা’।

ফিরে দেখা

নীলিমা সেন, গীতা ঘটক বা ঋতু গুহর জীবনের পাথেয় ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তাঁদের কথা খুব কমই আলোচিত হয়। বিধাননগর উপাসনা ও কলাকল্প তাই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, নীলিমা সেন, গীতা ঘটক ও ঋতু গুহ— এঁদের স্মৃতিতে আয়োজন করেছে ‘ফিরে দেখা— রবিধন্যা পঞ্চকন্যা।’ ২৪ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আইসিসিআর-এ স্মৃতিচারণা ও গানে স্মরণ, প্রাককথনে পঙ্কজ সাহা। অন্য দিকে রবিচ্ছায়া-র উদ্যোগে ২৫ নভেম্বর সন্ধে ছ’টায় আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রাণের খেলা’। গ্রন্থনায় রত্না মিত্র ভালবাসাকেই তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র। ভালবাসা যে এক আশ্চর্য অনুভূতি, কখনও প্রেম উত্তীর্ণ হয় পূজায় আবার পূজা থেকে প্রেম— তাই-ই উঠে আসবে অনুষ্ঠানটিতে।

নগর বাউল

পরনে জিনস-টিশার্ট, এক মুখ দাড়ি। হাতে দোতারা ব্যাঞ্জো গিটার। লোকগান গেয়ে গত শতকের আশির দশকে সাড়া ফেলেছিলেন স্বপন বসু। কখনও গুরুদাস পালের কথায় ও সুরে ‘থাকিলে ডোবাখানা’ বা সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে ‘নন্দলাল ও দেবদুলাল’। কোনও একটি ধারায় আবদ্ধ না থেকে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বাউল, ফকির, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, চটকা বা ঝুমুরে। উত্তরবঙ্গের পার্বত্য জনজাতির লোকগান নিয়ে গবেষণাও চলত। লোকগানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গীতজীবনের বয়স হয়ে গেল ৩৬। অনেক বছর পর আবার কলকাতার মঞ্চে ফিরছেন নগর বাউল। সঙ্গী সহজিয়া লোকগানের দল। যৌথ অনুষ্ঠান ‘সঙস অব সয়েল অ্যান্ড সোল’ ২৭ নভেম্বর সন্ধে ছ’টায় রবীন্দ্রসদনে। আয়োজনে হৃদকমল।

সবুজ কলকাতা

ধুলোকালিকয়লামাখা, পাহাড়-সমুদ্রহীন একটা শহরকে কি শান্ত সবুজ এক শহরে পালটে ফেলা যায়? জেমস ব্রেনার্ড বলবেন, যায়। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ছোট্ট শহর কারমেল-এর মেয়র জেমস এই প্রথম ভারতে, গুয়াহাটি-হায়দরাবাদ ঘুরে কলকাতায়। আমেরিকান সেন্টারে বলছিলেন তাঁর ‘স্মার্ট সিটি’র ধারণা: কারমেলই হোক কি কলকাতা, শহর মানেই উপচে-ওঠা ঘরবাড়ির পাশেই, থাকতেই হবে পর্যাপ্ত সবুজ, খোলা জায়গা, ছায়াবীথি, পাড়ার ছোট্ট পার্ক। নিজের শহরে রাস্তার পরিসর ছোট করে বাড়িয়েছেন ফুটপাত, তৈরি করেছেন সাইকেল-পথ, সিগনালওলা মোড়ের বদলে গোল আইল্যান্ড। যানবাহনের জ্বালানি-ব্যবহার, বর্জ্য নিষ্কাশন, নাগরিকের দায়দায়িত্বের বাঁধা গৎকে আমূল পালটে, তাঁর কাজ জিতে নিয়েছে বহু পুরস্কার। উষ্ণায়ন আর বেলাগাম সবুজ-ধ্বংস নিয়ে যখন চারিদিকে উদ্বেগ, মার্কিন কনসুলেট ও বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত ‘গ্রিন ফেয়ার’-এ জেমস দিয়ে গেলেন পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ কলকাতা’র দিগ্‌দর্শন।

বাংলা আকাদেমি

কয়েক বছর ধরেই ২৫ নভেম্বর দিনটিতে শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করে আসছে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। সে দিন কবির জন্মদিন। এ বারও কবিতারই রেশ ধরে উদ্‌যাপন। ২৪ নভেম্বর জন্মদিনের প্রাকসন্ধ্যায় অভীক মজুমদারের সঙ্গে কথোপকথনে স্মৃতিচারণ করবেন কবিজায়া মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়, সভামুখ্য জয় গোস্বামী। ২৩ নভেম্বর কবিতা নিয়ে আকাদেমির নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘কবির সঙ্গে দেখা’। কবিতা পড়বেন নিত্য মালাকার, পিনাকী ঠাকুর, রাকা দাশগুপ্ত। প্রাককথনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। দুই দিনের অনুষ্ঠানই সন্ধে ছ’টায়। আর ২৬ নভেম্বর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায় ‘আদিবাসী চর্চায় সুনীতিকুমার’ বিষয়ে বলবেন সুহৃদকুমার ভৌমিক, সভামুখ্য অভীক মজুমদার।

ধ্রুপদী

দূরদর্শন কেন্দ্র কলকাতা তার চল্লিশ বছর পূর্তিতে ধ্রুপদী নৃত্যের পৃষ্ঠপোষণায় এক অভিনব পদক্ষেপ করেছে। ডি ডি বাংলা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ঠাকুরদালানে গতকাল ও আজ ধ্রুপদী নৃত্যের এক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মুদ্রা-২০১৫’ আয়োজন করেছে। রবিবার বিকেল ৫টায় এর উদ্বোধন করেন প্রসার ভারতীর মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক জহর সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। সহযোগিতায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্য সংগীত, নৃত্য, নাটক ও দৃশ্যকলা আকাদেমি। এই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা জানানো হল বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী রানি কর্ণা নায়েক, কে যতীন্দ্র (জিতেন) সিংহ, থাঙ্কমণি কুট্টি, অলকানন্দা রায় এবং অমিতা দত্তকে। উৎসবের বিভিন্ন পর্বে রয়েছে ভরতনাট্যম, কত্থক, ওড়িশি, মণিপুরি, কুচিপুরি, মোহিনীআট্যম থেকে কথাকলি পর্যন্ত নৃত্যের বিভিন্ন ধ্রুপদী আঙ্গিক— আর সঙ্গে রবীন্দ্র নৃত্য।

ডায়ালগস

ন’বছরে পড়ল কলকাতার এলজিবিটি ফিল্ম ও ভিডিয়ো উৎসব ‘ডায়ালগ্‌‌স’। দেশ-সমাজ-পরিবারের বেঁধে দেওয়া গণ্ডির বাইরেও যে প্রেম, ঈপ্সা, দর্শন, বেঁচে থাকা, বিশ্বের নানা প্রান্তে সে-সবই তুলে ধরেন ছবি-করিয়েরা, আর অনেক চেষ্টায়-শ্রমে সেই সব ছবি এ শহরে এনে দেখান স্যাফো ফর ইকুয়ালিটি ও প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট-এর কর্মীরা। উৎসব ২৬-২৯ নভেম্বর, ম্যাক্সমুলার ভবনে। আছে ১৩টি দেশের ৩৭টি ছবি— তথ্যচিত্র, কাহিনিচিত্র, ছোট ছবিও। উদ্বোধনে অনুপ শর্মার বহু-আলোচিত ও পুরস্কৃত ছবি ‘কিস্‌সা’, এ ছাড়াও আছে কান চলচ্চিত্রোৎসবে দেখানো রোমানিয়ার ছবি ‘বিয়ন্ড দ্য হিল্‌স’, আর্জেন্টিনার ‘প্ল্যান বি’, ড্রেসডেন ও বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভাল-এর বাছাই ক’টি আর দেবলীনার পরিচালনায় স্যাফোর নিজস্ব নির্মাণ ‘তিন সত্যি/ ইন ফ্যাক্ট’।

ভাষ্যকার

পূর্ব মেদিনীপুরের কেলোমাল গাজনের জন্য বিখ্যাত। সেখানেই ১৯৬৮-’৭০ পর্বে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলেন রাল্‌ফ নিকোলাস। ১৯৫৮-য় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মলকুমার বসুর কাছে নৃতত্ত্বে ক্ষেত্রসমীক্ষার পাঠ, আর সমীক্ষার সঙ্গী তারাশিস মুখোপাধ্যায়। শুধু গাজন নয়, বাংলার গ্রামজীবনে বছরভর যে পালা-পার্বণ চলে, তারই সন্ধান করছিলেন রাল্‌ফ। বর্তমানে শিকাগোর নৃতত্ত্ব বিভাগে এমেরিটাস অধ্যাপক এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজের অছিপরিষদের সভাপতি, অশীতিপর এই মানুষটি সারা জীবনে অধ্যাপনা-গবেষণায় বহু সম্মান পেয়েছেন, কিন্তু কেলোমালের সেই অনুসন্ধান তাঁকে বঙ্গসংস্কৃতির এক অসামান্য ভাষ্যকারের মর্যাদা দিয়েছে। ২০০৩ সালে তিনি এ নিয়ে প্রথম বই লেখেন, ফ্রুটস অব ওয়রশিপ/ প্র্যাক্টিক্যাল রিলিজিয়ন ইন বেঙ্গল। সেখানে গুরুত্ব পেয়েছিলেন চণ্ডী ও শীতলা। এর পর গাজন নিয়ে রাইটস অব স্প্রিং এবং দুর্গা থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে নাইট অব দ্য গডস। এ বার প্রকাশ পাচ্ছে চতুর্থ বই, থার্টিন ফেস্টিভ্যালস/ আ রিচুয়াল ইয়ার ইন বেঙ্গল (সব ক’টি বইয়েরই প্রকাশক ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান/ আর সি এস), যেখানে থাকছে অন্যান্য পুজোপার্বণের কথা। রাল্‌ফ আসছেন কলকাতায়, ২৬ নভেম্বর ৫ টায় আইসিসিআর-এ বলবেন ‘দি অ্যাক্সিস অব বেঙ্গলি কালচার’ নিয়ে, সভাপতি গৌতম সেনগুপ্ত। সেখানেই তাঁর নতুন বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে। ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’ নিছক ঊনকথন, গ্রামে তাঁরা তেষট্টিটা পার্বণ গুনতে পেরেছিলেন, তা-ও অনেক ব্রতের অনুষ্ঠান বাদে, জানিয়েছেন রাল্‌ফ।

মধুবনী

চার বছরের দুরন্ত মেয়েটি বিকেলে অন্যদের সঙ্গে খেলতে বেরিয়ে যেত। আর দিদা টেনে আনতেন নাচের ক্লাসে। স্বভাবতই নাচের প্রতি অসম্ভব বিরক্তি, খারাপ লাগা। কিন্তু এক সময় সেই নাচই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। প্র্যাকটিস বাদ পড়লে ফাঁকা ফাঁকা লাগত। স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন ভরতনাট্যম শিল্পী মধুবনী চট্টোপাধ্যায়। ‘এখন ভাবলে ম্যাজিকের মতো মনে হয়! যে কোনও শিল্পই এই ভাবেই ভালবাসতে শেখায়।’ নাচই মধুবনীর ধ্যান-জ্ঞান। শাস্ত্রীয় নৃত্যের ভাষা বুঝতে বেদ, পুরাণ, বাংলা ও সংস্কৃতের পাঠ নিয়েছেন। ভরতনাট্যম শিখেছেন থাঙ্কমণি কুট্টি, কলানিধি নারায়ণ ও আলারমেল ভাল্লির কাছে। ‘এক বার প্রচণ্ড গরমের দিনে রিহার্সাল করাচ্ছিলেন থাঙ্কমণি কুট্টি। হঠাৎ বললেন, আর না। বলে উনি আমায় নিয়ে লেকে বেড়াতে গেলেন। অন্ধকার রাস্তা দিয়ে দুই জনে পাশাপাশি হেঁটে চলেছি নিঃশব্দে। এ ভাবেই বোধহয় গুরু-শিষ্যার বন্ধন গড়ে ওঠে।’ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেসন্স তাঁকে জাতীয় স্তরে নৃত্যশিল্পীর স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সালে ‘জাহ্নবী সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখযোগ্য কোরিয়োগ্রাফি ‘নবরসনায়কী’, ‘অন্য আমি’, ‘চার অধ্যায় রামায়ণ’, ‘বৈষ্ণব পদাবলী’ ও ‘ভানুসিংহ’। ‘রক্তকরবী’ নাটককে নৃত্যনাট্যে রূপান্তর ও ইংরেজিতে ‘রেড ওলিয়েন্ডার’ প্রয়োজনা। নাচ নিয়ে ২৫ বছর পেরিয়ে গেল। তাই ২৭ নভেম্বর ৭টায় জিডি বিড়লা সভাঘরে মধুবনীর একক ভরতনাট্যম উপস্থাপনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE