Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

ত খন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বড় কর্তা বাবু দেবেন্দ্রনাথ। তাঁর প্রশ্রয়ে পুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনে ঠাঁই পেত সংস্কৃতির নিত্য-নতুন চর্চা। কখনও কবিতা, কখনও গান আবার কখনও নাট্যচিন্তা। প্রায় সমবয়সি খুড়তুতো দাদা গুণেন্দ্রনাথ ছিলেন ‘হরিহর আত্মা’।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

জোড়াসাঁকো মঞ্চ-গাথা

ত খন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির বড় কর্তা বাবু দেবেন্দ্রনাথ। তাঁর প্রশ্রয়ে পুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনে ঠাঁই পেত সংস্কৃতির নিত্য-নতুন চর্চা। কখনও কবিতা, কখনও গান আবার কখনও নাট্যচিন্তা। প্রায় সমবয়সি খুড়তুতো দাদা গুণেন্দ্রনাথ ছিলেন ‘হরিহর আত্মা’। জ্যোতি-বয়ানে ‘গুণুদাদা বড় বড় কল্পনায় বড় আমোদ পাইতেন। কত রকম কল্পনা যে আমাদের মাথায় আসিত, তাহার আর ইয়ত্তা নাই... পুরাতন ‘সংবাদ-প্রভাকর’ হইতে কতকগুলি মজার মজার কবিতা জোড়াতাড়া দিয়ে একটা ‘অদ্ভুতনাট্য’ খাড়া করিয়া, তাহাতে সুর বসাইয়া... মহা উৎসাহের সহিত তাহার মহলা আরম্ভ করিয়া দিলাম।’ সে নাট্যপথে আর ‘গোপাল উড়ের যাত্রার প্রভাবে’ গড়ে উঠল জোড়াসাঁকো নাট্যশালা— ১৮৬৫তে। নাট্যশালার সার্ধশতবর্ষে পূর্বাপর প্রয়োজনার মঞ্চগান ঘিরে একাডেমি থিয়েটারের উৎসব ‘জোড়াসাঁকো মঞ্চ-গাথা’। ধারাবাহিক ইতিহাসের সঙ্গে ঠাঁই পাবে মধুসূদন দত্ত-রামনারায়ণ তর্করত্ন-বঙ্কিমচন্দ্র-জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-স্বর্ণকুমারী-রবীন্দ্রনাথ থেকে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানি ও অবনীন্দ্রনাথের মঞ্চগান। দেবজি‌‌ত‌ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা-নির্মাণে সঙ্গীতাংশে তাঁর সঙ্গী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাষ্যে দেবাশিস বসু। আসর বসবে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ৬ ডিসেম্বর আর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, নাটক, সঙ্গীত ও দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমির সহায়তায়) ১২ ডিসেম্বর, রোজ সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। সূচনা পর্বে (৬ ডিসেম্বর) রবীন্দ্রভারতী থিয়েটার রেপার্টরির প্রযোজনা ‘ফাগুন রাতের গপ্‌পো’ অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে বেলা তিনটেয়। নাট্যশালার তথ্যভরা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি তাঁর ডায়রির ছিন্নপত্র আর নানান সংযোজনায় নবকলেবরে দে’জ সংস্করণে প্রকাশ পাবে দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। ঠাকুরবাড়িতে গ্রন্থটির উন্মোচন করবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী। সঙ্গের ছবিতে বাঁ দিকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর; ডান দিকে ‘নটীর পূজা’-য় উপালির ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ, ছবিটি অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তোলা।

চলচ্চিত্র-উৎসব

শহরে আবারও সিনেমার উৎসব। ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস আয়োজিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘ফেস্টিভ্যাল অব ফাইভ কন্টিনেন্টস’ ছ’বছরে পড়ল, সঙ্গী আইসিসিআর। ১-৫ ডিসেম্বর আইসিসিআর-এ উনিশটা দেশের ছবি, ফ্রান্স-পর্তুগাল-ইতালি-স্পেনের সঙ্গে ভেনেজুয়েলা-তুরস্ক-আর্জেন্তিনা-দক্ষিণ কোরিয়া। আছে ২০১৪-র কান উৎসবে পুরস্কৃত ‘টিম্বাকটু’ (সঙ্গের ছবি), আফ্রিকার দেশ শাদ-এর ‘গ্রিগ্রিস’, ফ্রাঁসোয়া ওজোঁ-র ‘দ্য নিউ গার্লফ্রেন্ড’, হলিউড-ছবি ‘ফিফটি শেড্‌স অব গ্রে’। ১ ডিসেম্বর বিকেলে উদ্বোধনে মাধবী মুখোপাধ্যায়, থাকবেন দেবজ্যোতি মিশ্রও। অন্য দিকে, ফিওদর দস্তয়েভস্কি-র উপন্যাস ‘অপরাধ ও শাস্তি’র সার্ধশতবর্ষ সমাগত। ‘দৃশ্য’ চলচ্চিত্র ফোরামের উদ্যোগে ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় চিত্রকূট আর্ট গ্যালারি-তে দেখানো হবে ফিনল্যান্ডের পরিচালক আকি কারিসমাকি-র ছবি ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ (১৯৮৩)। আলোচনায় সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। সহযোগিতায় চিত্রকূট আর্ট গ্যালারি এবং সোঁতা প্রকাশন।

জন্মদিন

আজই ১০৭ বছরে পা দিচ্ছেন বুদ্ধদেব বসু। এক দিকে ‘বন্দীর বন্দনা’ বা ‘স্বাগতবিদায়’-এর মতো কবিতা, ‘তিথিডোর’-এর মতো উপন্যাস। নিজের সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় জীবনানন্দ থেকে সমর সেন, বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যাকে তুলে এনে বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া। আবার যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রতিষ্ঠা, কালিদাস থেকে বদলেয়ার, রিলকে সবাইকে অনুবাদে বাংলায় নিয়ে আসা। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে চালু হল বুদ্ধদেব বসু স্মৃতি পুরস্কার। প্রথম বারে সম্মানিত হচ্ছেন কেতকী কুশারী ডাইসন। অক্সফোর্ড থেকে তাঁর অনুরোধ, পুরস্কারটি তিনি নিজে নিতে চান। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আপাতত অপারগ। আগামী বছর কলকাতা লিটারারি মিটে আসবেন, তখন যদি....! আবেদনে সাড়া দিয়ে পুরস্কারটি ১৬ জানুয়ারি রোটারি সদনে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে। দিনক্ষণ মেনে উৎসব নয়, সাহিত্যের সঙ্গে প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে সহবাসই তো ছিল বুদ্ধদেবের মন্ত্র।

লোকসংস্কৃতি

চদর-বদর পুতুলনাচের কৌশল দেখিয়ে গান গেয়ে বেড়ান উত্তর দিনাজপুরের ডমন মুর্মু। আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দুখুশ্যাম চিত্রকর পটশিল্পী। লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের ২১তম বর্ষপূর্তিতে এই দুই শিল্পীকে জানানো হবে সম্মান। ছিট-কালিকাপুরে ৬-৮ ডিসেম্বর সান্ধ্য অনুষ্ঠানে দেখা যাবে দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখা খেল, নদিয়ার কুবির গোঁসাইয়ের গান আর পশ্চিম মেদিনীপুরের কোল নাচ। থাকবে কারুশিল্পের প্রদর্শনী ও বিক্রয়। লালন মঞ্চে বাংলার আদিবাসী সমাজ ও বাংলার পটের দুর্গা নিয়ে প্রদর্শনী। অন্য দিকে সল্টলেকের করুণাময়ী সেন্ট্রাল পার্কে চলছে কারিগর হাট। দশম বর্ষের মেলায় সাতপুরুষ ধরে কাজ করে চলেছেন এমন সাতজন শিল্পীকে সম্মানিত করা হল। শিল্পকলার সঙ্গে আছে বাংলার পুলিপিঠে থেকে রাজস্থানের ডালবাটিচুরমা। এখানেই আত্মপ্রকাশ করল বীরভূমের মোরাম লোকগ্রামে অনুন্নত সম্প্রদায়ের শিল্পীদের তৈরি পোশাক ‘দেশজ’। রোজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১২-৮ টা।

গদ্য পদ্য

নিজের ছোটবেলার কথা ছেলেবেলা-য় লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সম্পূর্ণ বইটি এ বার পাঠ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৩টি অডিয়ো সিডির সেই সংকলন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা’ (ভাবনা রেকর্ডস) প্রকাশ করবেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, ৫ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় প্রেস ক্লাবে। অন্য দিকে, কবিতার আড়াল আবডালে লুকিয়ে থাকা ব্যঞ্জনাকে যদি ধরা যায় সুরে— এই ভাবনা থেকেই পাঁচ বছর আগে কবিতাস্কোপ-এর জন্ম হয়েছিল বাচিক শিল্পী সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। মানবিকতা, সীমান্ত, স্বনির্ভরতা, নারী সমস্যা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কবিতার বিষয়। এই সব নিয়েই এ বারের পঞ্চম বার্ষিক আয়োজন ৪ ডিসেম্বর সন্ধে সাতটায়, উত্তম মঞ্চে। সঙ্গে থাকবেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

নাট্যোৎসব

সত্তরের দশকে এগারো জন ছেলে মিলে তৈরি করেছিল নাট্যগোষ্ঠী ‘সায়ক’। তাদের ৪২তম উৎসব শুরু হয়েছে। আজ অ্যাকাডেমিতে সন্ধে সাড়ে ৬টায় সায়নদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় স্মরণিক (বেঙ্গালুরু)-র প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হবে ‘নটী বিনোদিনী’। ১ ডিসেম্বর শিশির মঞ্চে থাঙ্কমণি কুট্টিকে ‘শিশিরকুমার বসু স্মৃতি সম্মান’ এবং অমলেশ চক্রবর্তীকে ‘দীপঙ্কর সেনগুপ্ত স্মৃতি সম্মান’ দেওয়া হবে। ২ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমিতে মঞ্চস্থ হবে চন্দন সেনের নাটক ‘দায়বদ্ধ’, নির্দেশক মেঘনাদ ভট্টাচার্য। অন্য দিকে, সেন্টার স্টেজ ক্রিয়েশনস-এর উদ্যোগে ১-৫ ডিসেম্বর জি ডি বিড়লা সভাগারে ‘সভাগার থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’, সহযোগিতায় ব্রিটিশ কাউন্সিল ও রয়্যাল শেক্সপিয়র কোম্পানি। শুরুর দিন ৭টায় ফিল্টার থিয়েটার-এর ‘টুয়েলফথ নাইট’। আছে আনন্দ লালের আলোচনা, রজত কপূরের কর্মশালা, নানা আয়োজন।

দৃশ্য শিল্প

ফোটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ভিডিয়ো আর্ট: সবই এখন ভিসুয়াল আর্টের ছাতার তলায়। এই সূত্র ধরেই আলোকচিত্রী অতনু পালের থার্ড আই-এর নিবেদন ‘১৭তম ভিসুয়াল আর্ট উৎসব ২০১৫’। থার্ড আই-এর সদস্যদের যে-সব আলোকচিত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঠাঁই পেয়েছে, জিতেছে পুরস্কারও, সে সব নিয়ে বিশাল আর্কাইভাল ক্যানভাস, স্লাইড শো। সনাতন দিন্দার ইনস্টলেশন আর্ট, দেবাশিস মল্লিক চৌধুরীর ভাস্কর্য। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ১-৬ ডিসেম্বর, ৩-৮টা।

অন্য শাড়ি

মঙ্গলাহাট থেকে শাড়ি কিনে তাতে ব্লক প্রিন্ট করতেন নন্দিতা রাজা। সেটা ১৯৭০। তবে চেনা ফুল-কলকা নয়, নিয়ে এলেন লোকশিল্পের নকশা। ক্রমে দেবনাগরী, চিনা হরফ দিয়ে স্ক্রিপ্ট প্রিন্টিং। আর এ ভাবেই কলকাতার শাড়িপ্রেমীদের মন জয় করে নেয় নন্দিতার ‘কনিষ্ক’। কলকাতাকে নিয়ে উষা উত্থুপের গানের কথা শাড়িতে নকশা করে দেন নন্দিতা। ‘কনিষ্ক’র ৪৫ বছর পূর্তিতে সম্প্রতি ছিল বিশেষ অনুষ্ঠান। র‌্যাম্পে হাঁটলেন অপর্ণা সেন, কল্যাণ রায়, উষা গঙ্গোপাধ্যায়, জুন মালিয়া। বিক্রম ঘোষের পরিচালনায় নেপথ্যে বাজল ঢাক, ঢোল, ঘট্টম।

চুরি বিদ্যা...

সেই বিদ্যার মন্দ-ভাল, সবই আছে। এ সময়ের ছবিতেও উঠে আসছে সে চিন্তা। চুরি-শিক্ষার নানা কথা নিয়ে ৪ ডিসেম্বর আসছে ‘মনচুরি’। একই প্রতিষ্ঠানে নানা পাঠ্যক্রমে ভর্তি ছেলেমেয়েরা। ব্যাঙ্ক ডাকাতি, জালিয়াতিতে অনার্স কোর্স। বছরের সেরা ছাত্র কার্তিক এবং গণেশ নাম লিখিয়েছে মনচুরি-র কোর্সে। পছন্দের মেয়েদের মন কী ভাবে কাড়া যায়, সেটাই শিখছে ওরা। শিক্ষা-রাজনীতি-প্রেম-গণতন্ত্র প্রহসন হিসেবে উঠে আসছে পরিচালক প্রেমাশিস দে-র নতুন ভাবনায়।

ধ্রুপদী

উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতের মূল ধারা ধ্রুপদকে সহজ ও সাবলীল ভাবে শিক্ষা দিয়ে যে সাধক ও প্রচারবিমুখ মানুষটি ‘গোপালজিউ’-এ নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উদয়ভূষণ ভট্টাচার্য। শুধুমাত্র ধ্রুপদ গান নয়, বাংলার নানা উৎসবের নানা ধরনের গানের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন তিনি। পাথুরিয়াঘাটায় ছিল তাঁর বাড়ি এবং তাঁর স্থাপিত ধ্রুপদ সঙ্গীতচর্চার কেন্দ্র ‘ভারত সঙ্গীত বিদ্যালয়’, যা আজ অবহেলিত। তাঁর গানের ভাণ্ডার থেকে কিছু গান ও কথা নিয়ে তাঁর পরিজন ও ছাত্রছাত্রীরা আলোচনায় উদ্যোগী। ৩-৪ ডিসেম্বর রবীন্দ্রভারতীর বি টি রোড ক্যাম্পাসে এই স্মরণের উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কণ্ঠসঙ্গীত বিভাগ।

প্রদর্শনী

শিল্পকলার পাঠ নিয়েছিলেন প্রথমে বিশ্বভারতী, পরে বডোদরার এম এস বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেষে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট-এ। থেমে নেই ইন্দ্রপ্রমিত রায়ের তুলি। দেশ-বিদেশের নানা গ্যালারিতে তাঁর একক ও যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে। মুম্বইয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও শোভা পাচ্ছে তাঁর সৃষ্ট বিশাল ম্যুরাল। এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলার দীর্ঘ দিনের শিক্ষক তিনি। পাশাপাশি ‘বহুরূপী’র প্রযোজনায় মঞ্চসজ্জাও করেছেন, সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ ছবিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি গ্যালারি-৮৮-এ শুরু হয়েছে তাঁর একক প্রদর্শনী। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সঙ্গে তারই একটি ছবি।

শতবর্ষ

দাদাঠাকুর হেঁয়ালি করেছিলেন: ‘এই যে শ্রী ধড়, বড্ড খাটাখাটনি হচ্ছে, না! এত পরিশ্রম করলে ধড়ে শ্রী ফিরবে কেমন করে?’ ১৯৩৫-এ জীবিকার জন্য কলকাতায়। রঙ্গমঞ্চের প্রম্পটার হিসেবে জীবন শুরু। হাতের লেখা মুক্তোর মতো, নাটকের পাণ্ডুলিপি কপি করে দিতেন। এ ভাবেই নাটক লেখা শুরু। নজর পড়ে বাণীকুমারের (বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য)। তাঁর হাত ধরেই বেতারে আত্মপ্রকাশ করেন শ্রীধর ভট্টাচার্য। নাট্যরূপদান, প্রযোজনা ও অভিনয়— বেতার-নাটকের এই তিনটি ক্ষেত্রেই ছিলেন সমান পটু। সংলাপ কী ভাবে বলতে হবে, তা তিনি দেখিয়ে দিতেন অভিনেতাদের। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত লিখেছেন, ‘‘আকাশবাণীতে... আমার প্রথম অভিনয় বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে। প্রযোজক প্রয়াত শ্রদ্ধেয় শ্রীধর ভট্টাচার্য শুরুতেই একটি দামি উপদেশ দিয়েছিলেন: ‘রুদ্র, মাইক্রোফোনটিকে তোমার শ্রোতার কান মনে করে কথা বোলো...।’ আজও... সেই উপদেশটুকু আমার পাথেয় হয়ে আছে।’’ শ্রীধর বহু নাটকের নাট্যরূপ দেন ও প্রযোজনা করেন: যেমন ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘রামের সুমতি’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘কাবুলিওয়ালা’। জন্ম ১৫ নভেম্বর ১৯১৫, প্রয়াণ ৫ নভেম্বর ১৯৭৩। ফরিদপুর কোটালিপাড়ার ঊনশিয়া গ্রামে। তাঁর অভিনীত বেতার নাটক: ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘নিঃসঙ্গ নায়ক’ ইত্যাদি। নিঃশব্দেই পেরিয়ে গেল তাঁর শতবর্ষ।

নতুন নাটক

চলচ্চিত্র উৎসবের মতো এ বঙ্গে সরকারি থিয়েটারের উৎসবেও এখন তারকার উপস্থিতি৷ মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের জাতীয় নাট্য উৎসবে নিজের সাম্প্রতিক নাটক নিয়ে আসছেন নাসিরুদ্দিন শাহ৷ ‘মটলে’-র প্রযোজনায় নাসিরুদ্দিন অভিনীত ও নির্দেশিত নাটক ‘গাধা অউর গাড্ডা’-র অভিনয় ২ ডিসেম্বর সন্ধেয় রবীন্দ্রসদনে, উৎসবের শেষ দিনে৷ কৃষ্ণ চন্দের গল্প অবলম্বনে এ নাটকে হাসির আড়ালে সমকালের সমাজ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তুলেছেন নাসির৷ আগামিকাল এ শহরে আসছেন তিনি৷ দেশের অন্যান্য শহরে তাঁর এই সাম্প্রতিক নাটকের বেশ কিছু অভিনয় হলেও কলকাতায় এই প্রথম৷ ২৬ নভেম্বর মিনার্ভায় শুরু হওয়া উৎসবে থাকছে বাংলার বাইরের কয়েকটি নাটক, ‘রাজু রাজারাম অউর ম্যায়’, ‘টু টু ট্যাঙ্গো, থ্রি টু জাইভ’৷ সঙ্গে এ বঙ্গের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক, ‘চৌমাথা’, ‘রস’, ‘প্রতারক’৷ জেলার নাটক শহরে আর শহরের নাটক জেলায় এই বাঁধা বৃত্ত ছেড়ে সরকারি উদ্যোগের নাট্যমেলা যথার্থ ভারতীয় হওয়ার দিকে পা বাড়িয়েছে, শুভ লক্ষণ বইকী৷ পাশাপাশি, মৌলিক একটি প্রশ্নে বিতর্কসভাও হয়ে গেল উৎসবে, ‘ভর্তুকি ছাড়া থিয়েটার অচল’৷ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের প্রযোজনায় শেক্সপিয়রের ‘টুয়েলফথ নাইট’ অবলম্বনে ব্রাত্য বসুর ঝলমলে নাটক ‘মুম্বই নাইটস’ বোধহয় এক অর্থে ওই বিতর্কেরই উত্তর, ভর্তুকির ভরসায় থিয়েটার চলে না, মনোরঞ্জনের জগতে তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE