Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

দেশে বা দেশের বাইরে যখন অসহিষ্ণুতা, হিংসার আবহ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, তখন গৌতম বুদ্ধ, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতে সেই ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব’-এর শরণাপন্ন হওয়ার বোধ হয় এটাই আদর্শ সময়।

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:১৬
Share: Save:

ভারত-বাংলাদেশের বৌদ্ধ-ঐতিহ্য

দেশে বা দেশের বাইরে যখন অসহিষ্ণুতা, হিংসার আবহ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, তখন গৌতম বুদ্ধ, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের উপলব্ধিতে সেই ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব’-এর শরণাপন্ন হওয়ার বোধ হয় এটাই আদর্শ সময়। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা-র (বেঙ্গল বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন) উদ্যোগে ‘কৃপাশরণ হল’-এ (বউবাজার থানার পিছনে) পণ্ডিত বেণীমাধব বড়ুয়ার ১২৭তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে চলছে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এম এ তাহেরের ‘বুদ্ধিজম অ্যান্ড বুদ্ধিস্টস অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী। বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে প্রদর্শিত ছবি দেখে বললেন, ‘ছবি যেন ছবি নয়, জীবন্ত ফ্রেমবন্দি কিছু অবয়ব’। আর সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের কথায়, ‘তাহেরের ছবি মানেই আত্মদর্শন’। সভাপতিত্ব করেন বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার সাধারণ সম্পাদক হেমেন্দুবিকাশ চৌধুরী। (চলবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত, ৫-৮টা)। প্রদর্শনীটিতে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চার বিভিন্ন বিষয়, আচার-অনুষ্ঠানের নানা আলোকচিত্র শৈল্পিক সুষমায় তুলে ধরা হয়েছে। এই বিষয়বস্তু কেন আকর্ষণ করে তাঁকে? তাহের একান্ত আলাপচারিতায় বললেন, ‘ঢাকার সবুজবাগে আমার বাড়ির পাশেই ধর্মরাজিকা বৌদ্ধবিহার আছে। সেখানে ছেলেবেলা থেকেই বৌদ্ধজনগোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান এবং তার আশপাশ ও ভিতরকার দৃশ্য আমায় বার বার টানে।’

তাহেরের ছবিতে ধরা পড়েছে বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির, সারনাথ, শ্রাবস্তী, নালন্দা, কুশীনগরের বৌদ্ধ কীর্তি, আবার পালযুগের সোমপুর মহাবিহার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস গ্র্যাজুয়েট, তিপ্পান্ন বছরের তাহেরের জন্ম ঢাকার সবুজবাগে। বাংলাদেশে তিনি ফিচারধর্মী লেখক হিসেবেও পরিচিতি অর্জন করেছেন। তাঁর কয়েকটি বইও আছে। তিনি আলোকচিত্র শিক্ষা করেছেন নিউ ইয়র্কেও। তাঁর ঝুলিতে এই মুহূর্তে দুটো জাতীয় ও সাতটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তাঁর তোলা ছবি দেশবিদেশ মিলিয়ে বত্রিশটা প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে। তবে তিন দশক ধরে তোলা তাঁর এই ছবির প্রদর্শনীটি এ-পার বাংলায় তথা ভারতে এই প্রথম। সঙ্গের ছবি, বুদ্ধগয়ায় আশি ফুটের বুদ্ধমূর্তি।

কথানদী

১৯৯২ সালের ‘শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত উপন্যাস ‘কাচের দেওয়াল’ চমকে দিয়েছিল বাংলার পাঠককুলকে। দু’বছর পরে ‘শারদীয় দেশ’-এ বেরোল ‘দহন’। সাপ্তাহিক ‘দেশ’-এ তাঁর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘কাছের মানুষ’ জনপ্রিয়তায় তুফান তুলল। লেখকের নাম সুচিত্রা ভট্টাচার্য। তাঁর ঋজু কলম, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি, মধ্যবিত্ত সমাজে মূল্যবোধের ক্রমিক বদলকে প্রায় পঁচিশ বছর ধরে এমন নিপুণ ভাবে এঁকেছে যে, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এখন তা স্থায়ী সম্পদ। লিখেছেন বেশ কিছু ছোট গল্প। সামাজিক ভূমিকা পালনেও তিনি পিছিয়ে থাকেননি। খ্যাতির মধ্যগগনেই গত বছর ১২ মে আকস্মিক ভাবে প্রয়াণ ঘটে সুচিত্রার। এখনও সেই শোকের অভিঘাত থেকে মুক্ত হতে পারেননি সুচিত্রার অনুরাগীরা। ১০ জানুয়ারি সুচিত্রার জন্মদিনে তাঁর পরিবার ও প্রিয়জনদের উদ্যোগে প্রকাশিত হতে চলেছে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের একটি সংকলন কথানদী সুচিত্রা। বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে, সন্ধ্যা ৬টায়।

পদাতিক ৭৫

‘কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?/ কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে...’। পদাতিক কাব্যগ্রন্থের সূচনা-কবিতার শুরু। লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তখন একুশ। (সঙ্গে তাঁর ছবি)। বুদ্ধদেব বসু লিখলেন, ‘‘দশ বছর আগে বাংলার তরুণতম কবি ছিলাম আমি।... বাংলার তরুণতম কবি এখন সুভাষ মুখোপাধ্যায়।’’ তেইশটি কবিতা নিয়ে বত্রিশ পৃষ্ঠার পদাতিক বেরোল ‘কবিতা ভবন’ থেকে, ১৯৪০-এ। সমর সেন বলেছিলেন, ‘তুমি তো আমাদের ভাত মারবে হে...।’ এত বছরে পদাতিক-এর প্রচ্ছদ বদলেছে ছ’বার। অনিলকৃষ্ণ থেকে সোমনাথ হোর, পূর্ণেন্দু পত্রী থেকে গৌতম রায়, বাংলাদেশ সংস্করণের প্রাণেশ মন্ডল থেকে দেবব্রত ঘোষ। এ বছর পঁচাত্তর পূর্ণ করল পদাতিক। কিন্তু বইপাড়ায় বইটির একক অস্তিত্ব নেই, সমগ্রভুক্ত হয়ে আছে। পঁচাত্তর বছরে কমরেডরা নবযুগ আনতে না পারলেও পদাতিক-এর পুনঃপ্রকাশ জরুরি নয় কি?

সাংস্কৃতিক

রবীন্দ্রনাথের আঘাত ও উত্তরণের গানগুলি বেছে নিয়েছেন তিন শিল্পী সুকান্ত চক্রবর্তী, সেঁজুতি বড়ুয়া ও অভিজিৎ মজুমদার। সুকান্ত বাংলাদেশের শিল্পী, রবীন্দ্রসংগীতে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত। বাংলাদেশের আর এক শিল্পী সেঁজুতি সেখানে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনে প্রথম স্থানাধিকারী। আর অভিজিৎ বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে গবেষণা করছেন। তিন শিল্পীর বারোটি গান নিয়ে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে ডিভিডি ‘রাত বলেছে যাই...’। এখন পাওয়া যাচ্ছে কলকাতাতেও। উইভার্স স্টুডিয়ো ৭-১০ জানুয়ারি আয়োজন করেছে কৃষ্টি উৎসব— সাহিত্য সংস্কৃতির এক অন্য রকমের অনুষ্ঠান। শুরু ও শেষে নাটক ও গল্প বলার কর্মশালা, ৮ তারিখ থাকছে কবিতাপাঠের সঙ্গে (শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়) যন্ত্রসংগীত (সৌম্যজ্যোতি ঘোষ ও অম্লান হালদার)। নাচ গান ও কবিতার কোলাজে লাহাবাড়ির নাটমন্দিরে আর এক অনুষ্ঠান। আনন্দ গুপ্ত ও সুস্মেলী দত্তের পরিকল্পনায় রয়েছে শ্রুতি নাটক ‘কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন দিয়ে যাও’, নৃত্যগীতিআলেখ্য ‘দোলে প্রেমের দোলনচাঁপা’। ভালবাসার গানে লন্ডনের ‘দক্ষিণায়ন’। পরিবেশনায় ‘উচ্চারণ’ সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শতবর্ষ

‘ওমা শরৎ, দেখ আমার ছেলের কী হল’, বলেই মা সারদাদেবী ছোট্ট ছেলেটিকে কোলে তুলে নিলেন। ১৯১৫ সালের জুনে ঢাকা বিক্রমপুরের ভরাকর গ্রামে শিশুটির জন্ম। ১৯১৮-য় দুরন্ত শিশুকে নিয়ে তাঁর বাবা-মা বাগবাজারে এলেন সারদা মায়ের আশীর্বাদ নিতে। সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে শিশুটির সামান্য রক্তপাত ও ব্যথা, কান্না থামল সারদা মায়ের স্নেহস্পর্শে। সেই শিশুই নিখু, ওরফে নিখিলরঞ্জন সেনগুপ্ত। খুব কম বয়সেই তিনি উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষায়তন সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয় ও শিল্পশিক্ষা সদন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কলকাতা পুরসভার ‘ড্রেনেজ’ বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। নারীশিক্ষা প্রসার ও মেয়েদের স্বনির্ভর করতে তিনি ছিলেন অগ্রণী। পূর্ববঙ্গের ছিন্নমূল মানুষের কথা ভেবে ১৯৫৭-য় তৈরি করেন কোন্নগরের নবগ্রাম ‘সি ব্লক’ নামে একটি গ্রাম। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সারদামণি প্রতিষ্ঠান’, ‘হীরালাল পাল বালিকা বিদ্যালয়’, ‘হীরালাল পাল কলেজ’ ও ‘নবগ্রাম হাইস্কুল’। তাঁর জন্মশতবর্ষ স্মরণে সরস্বতী বালিকা বিদ্যালয় মঞ্চে প্রাক্তনীদের তরফে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠান হল। অনুষ্ঠানে স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজি মহারাজ স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন।

প্রয়াণ

গ্রন্থাগার দিবসে (২০ ডিসেম্বর) চলে গেলেন কুণাল সিংহ। জন্ম ১৯৩৬-এর ১৯ নভেম্বর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র কুণাল সিংহ পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন। গ্রন্থাগার অন্তপ্রাণ মানুষটি বহু দিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক ছিলেন। কল্যাণী পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা-সদস্যদের তিনি ছিলেন অন্যতম। ধুলো ঘেঁটে খুঁজে বার করেছিলেন বাংলার কোথায় কোন গ্রন্থাগারে পড়ে আছে অমূল্য গ্রন্থসম্পদ। তারই ফল তাঁর রচিত দুটি মৌলিক গ্রন্থ প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরাতন গ্রন্থাগার ও নথিপত্র সংগ্রহ। ইতিহাসবিদ নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহের কনিষ্ঠ পুত্র কুণাল সিংহ সম্পাদিত দুটি গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথের চিঠি পারুল দেবীকে এবং অধ্যাপক নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ: স্মারকগ্রন্থ।

নতুন গান

এক সময় দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কে তাঁর প্রিয় ছাত্রীটিকে একটু দেখিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (মোহরদি)। শ্রবণা ভট্টাচার্যের ঝুলিতে নানা সম্মান। শান্তিনিকেতনে বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও আধুনিক, লোকগীতি, হিন্দি গান গাইতেও সমান পারদর্শী। বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে তাঁর ‘তোমাকে’ অ্যালবামের গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গেয়েছেন বিদেশেও। সারেগামা থেকে তাঁর রবীন্দ্রসংগীতের সিডি: আনন্দলহরী, ঋতুমালিকা, হে মহাজীবন, ভিন্ন নারী ভিন্ন রূপে ইত্যাদি। সম্প্রতি সমিধ মুখোপাধ্যায়ের যন্ত্রানুষঙ্গে সারেগামা থেকে প্রকাশ পেয়েছে শ্রবণার সিডি ‘টেগোর টাইমলেস’।

সন্দেশ

এই জানুয়ারিতেই মুক্তি পেয়েছিল ‘পরশপাথর’, ১৯৫৮। তখনও অপুচিত্রত্রয়ী সম্পূর্ণ করেননি সত্যজিৎ রায়, এটি তাঁর তৃতীয় ছবি। বিভূতিভূষণের পর পরশুরাম-এর (রাজশেখর বসু) গল্প নিয়ে এই প্রথম ছবি করলেন সত্যজিৎ, আর ‘পথের পাঁচালী’র পার্শ্বচরিত্রের পর তুলসী চক্রবর্তীকে দিয়ে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করালেন, আজও অবিস্মরণীয় সেটি। ছোট্ট চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে সন্তোষ দত্তের এটি প্রথম ছবি হলেও পরে তিনি হয়ে ওঠেন সত্যজিতের অপরিহার্য অভিনেতা। এ সব তথ্যের সঙ্গে পুরো চিত্রনাট্যটি প্রকাশ পেল সন্দেশ-এর (সম্পা: সন্দীপ রায়) বিদায়ী বছরের শেষ সংখ্যায়। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ রচনা— ‘দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’-এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি এবং চিত্তপ্রসাদের আঁকা ছোটদের পৃথিবী।

বোতল পুরাণ

‘সোমরস পান করি যত দেবগণ,/ করিলেন সত্যযুগে অসাধ্য সাধন।’ ‘দাদাঠাকুর’ শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের অভিনব বোতল পুরাণ ১৩৩২ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রচ্ছদে ও নামপত্রে বোতল পুরাণ-এর তলায় লেখা ছিল: ভেণ্ডার— শ্রীশরচ্চন্দ্র পণ্ডিত। তখন ইংরেজ আমল। কলকাতার রাস্তায় গান গেয়েই পুস্তিকাটি ফেরি করতে বেরিয়েছেন দাদাঠাকুর। ধেয়ে এল ব্রিটিশ পুলিশ, তাঁদের জন্য তৎক্ষণাৎ বানিয়ে ইংরেজিতে গান ধরলেন তিনি। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ তো থ, নগ্নগাত্র ও পাদুকাবর্জিত এমন এক হকারকে ইংরেজিতে গান গাইতে দেখে। শুধু উৎসাহ জোগাতেই আট কপি কিনে নিয়ে গেল তারা। সেই বোতলের আকৃতি অবিকল রেখেই তৃতীয় বার মুদ্রিত হল বোতল পুরাণ, লালমাটি সংস্করণে। মুখবন্ধে দাদাঠাকুরের দৌহিত্র রতন বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন ‘বাংলার হাস্যরসপিপাসু পাঠকেরা আশা করি এই বোতলের হাস্যমদিরা পান করে আনন্দিত হবেন।’

বাঘের জন্য

গান ধরছে গুপী, ‘পায়ে পড়ি বাঘমামা, মেরো নাকো বাঘমামা’— সত্যজিতের ছবির এই দৃশ্য বড় চেনা। তবে বাঁচার তাগিদে পারলে বাঘই এখন মানুষের পায়ে পড়ে। বাঘের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে চোরাশিকারিদের উৎপাত। এ বার বাঘ বাঁচাতে ছোটদের উপরেই ভরসা রাখল শের (সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসোর্স) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সুন্দরবন ও কলকাতার ১২টি স্কুলের পড়ুয়ারা রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছে বাঘের হরেক কিসিমের ছবি। এই ছবিগুলি দিয়েই সেজে উঠল ২০১৬-র বারোমাস। ক্যালেন্ডার প্রকাশ করলেন ‘হর হর ব্যোমকেশ’ ছবির অভিনেতারা।

শিল্পী

পণ্ডিত রতন জনকর গানের পরীক্ষায় তাঁকে দিলেন প্রথম স্থান। গান শুনে দেবব্রত বিশ্বাস বললেন, ‘কী ভাল গাইস।’ পরে শ্রোতাদের এটাও বলে দিলেন, ‘আরে, সুবীর সেন নামে এক শিল্পী আসে, উনি যা গাইসেন, তার পর আর আমার গান চলে না’। চিন্ময় লাহিড়ী বলে দিলেন, ‘রতন জনকরের কাছে প্রথম হয়েছ, তোমায় আর কী শেখাব? বরং এক কাজ করো, একটু ঠুমরি শেখো।’ ১৯৩৪ সালে অসমের ডিব্রুগড়ে সুবীর সেনের জন্ম। বাবা ডাক্তার। গান খুব ভালবাসতেন। আর মা খালি গলায় খুব ভাল গাইতে পারতেন। সংগীত শিক্ষার শুরু ডিব্রুগড়েই। এর পর তিনি কলকাতায় এলেন। মামারবাড়িতে। এখানেই রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হল। প্রথম রেকর্ড বেরোল এইচ এম ভি থেকে। ঠিক ওই সময়েই গুরু দত্ত এলেন কলকাতায় শুটিং করতে। আলাপের পর মুম্বই যেতে বললেন। মহালক্ষ্মী স্টুডিয়োয় ওঁর গান শুনে শঙ্কর সঙ্গে সঙ্গে দু’হাজার টাকায় কন্ট্রাক্ট সই করিয়ে নিলেন। প্রথমেই গাইলেন বলরাজ সাহানির লিপে ‘কাঠপুতলি’ ছবির সেই বিখ্যাত গান— মঞ্জিল ওহি হ্যায় পেয়ার...। একে একে ‘আস কা পঞ্ছী’, ‘বয়ফ্রেন্ড’, ‘ছোটি বহিন’-এর মতো অনেক ছবিতে। পরে স্থায়ী ভাবে কলকাতায় ফেরেন। সলিল চৌধুরী, সুধীন দাশগুপ্ত, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনল চট্টোপাধ্যায়ের সুরে গান করেছেন। গেয়েছেন নিজের সুরেও। ‘এত সুর আর এত গান’ নিয়ে ‘আরও কিছু ক্ষণ’ আর থাকা হল না সুবীর সেনের। চলে গেলেন সম্প্রতি। ছবি: সৌরভ দত্ত

রোমহর্ষক

ব্যারিস্টার আশুতোষ চৌধুরীর ভাই, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর দাদা। নিজেও ব্যারিস্টার, আর প্রথম সারির শিকাির। সঙ্গের ছবিতে শিকারের পোশাকে সেই ঝিলে জঙ্গলে খ্যাত কুমুদনাথ চৌধুরী (১২৬৯-১৩৪০ বঙ্গাব্দ), যিনি প্রাণ দেন বাঘের হাতেই। ভারতীয় রাজন্যবর্গের ধারায় শিকারের নেশা ছিল বাঙালি অভিজাতদেরও। সুসঙ্গের ভূপেন্দ্রচন্দ্র সিংহ থেকে ময়মনসিংহের জিতেন্দ্রকিশোর ও ব্রজেন্দ্রনারায়ণ আচার্যচৌধুরী, সুধাংশুকান্ত ও সূর্যকান্ত আচার্য, লালগোলার ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায় এঁদের মধ্যে সুপরিচিত। আবার এই দলে ছিলেন বিশিষ্ট ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী বা রাজনীতিবিদ হীরালাল দাশগুপ্তও। অনেক শিকারি একই সঙ্গে চমৎকার লেখকও, আবার শিকারসঙ্গী সাহিত্যিকরাও অনেক সময় তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন। এমন সব দুর্লভ রোমহর্ষক কাহিনি এ বার দু’মলাটে নিয়ে এলেন বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর সম্পাদিত বাঙালির দুষ্প্রাপ্য শিকার অভিযান (বুকফার্ম) বইয়ে। শুধু ১৯ জন লেখকের ২৩টি লেখা নয়, শুরুতেই আছে চল্লিশ পাতা আলোকচিত্র, যেখানে বাঙালি শিকারি আর তাঁদের শিকার ছাড়াও ভারতীয় রাজন্যদের সঙ্গে সাহেবদের শিকারের দৃশ্য। ময়ূখ চৌধুরীর শতাধিক রেখাচিত্র এই বইয়ের অমূল্য সম্পদ। পরিশিষ্টে যুক্ত হয়েছে নানা সূত্র থেকে বিপুল তথ্য। শিকারের সরঞ্জাম, আগ্নেয়াস্ত্রের বিবর্তন, বাংলার বন্যপ্রাণী ইত্যাদির কথা। আংশিক লেখক-পরিচিতি ও শিকারের বইয়ের তালিকাও আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE