Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব এ বার পাঁচ বছরে পা দিচ্ছে। ‘ছোটদের ছবির উৎসব, তারা যাতে পুরোপুরি এ উৎসবে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৩১
Share: Save:

ছোটদের শামিল করেই শিশু চলচ্চিত্র উৎসব

কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব এ বার পাঁচ বছরে পা দিচ্ছে। ‘ছোটদের ছবির উৎসব, তারা যাতে পুরোপুরি এ উৎসবে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ বার যেমন রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে সে কাল থেকে হালফিল পর্যন্ত ফিল্মে ব্যবহৃত ক্যামেরার প্রদর্শনী, বিবর্তনের ইতিহাস। সিনেমা নিয়ে ছোটদের শেখার দিকটায় জোর দিচ্ছি।’ জানালেন অর্পিতা ঘোষ, উৎসব-অধিকর্তা। আগামিকাল বিকেল ৫টায় উদ্বোধন নন্দন-এ। দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত কর্মশালা-ভিত্তিক ছবি ‘লাস্ট ডে অব সামার ভেকেশন’ (বাঁ দিকের ছবিতে শুটিংয়ে দেবেশ ও ছোটরা) দেখানো হবে এ দিন। আঠারো জন ছেলেমেয়ে এই কর্মশালায় যোগ দিয়েছিল। পদ্মনাভ দাশগুপ্তের সহযোগিতায় ছোটরাই ছবির চিত্রনাট্য তৈরি করে। রূপকলা কেন্দ্রে আয়োজিত এই কর্মশালায় সেখানকার শিক্ষকরাও বারো মিনিটের ছবি তৈরিতে সাহায্য করেন ছোটদের। দেখানো হবে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মরাঠি ছবি ‘কিল্লা’, থাকবেন ছবির পরিচালক অবিনাশ অরুণ ও শিশু শিল্পীরা। নন্দন, রবীন্দ্রসদন সহ আটটি প্রেক্ষাগৃহে সাত দিন ধরে দেখানো হবে কুড়িটি দেশের দেড়শোর ওপর ছবি। অধিকাংশ ছবিই নানা উৎসবে পুরস্কৃত। বিশেষ গুরুত্ব ‘ওয়াইল্ড লাইফ’ সংক্রান্ত সিনেমায়, তেমনই এক রুশ ছবি ‘সেলেস্টিয়াল ক্যামেল’, হায়দরাবাদে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা-র শিরোপা পেয়েছে (ডান দিকে স্থিরচিত্র)। থাকছে বিভিন্ন কর্মশালা। নানা দেশের ছোটদের ছবি নিয়ে ডাকটিকিটের প্রদর্শনী (সঙ্গে ‘মিকি মাউস’-এর ডাকটিকিট), গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়, কিউরেটর: দীপক দে। প্রকাশিত হবে বাস্টার কিটন ও লরেল-হার্ডি’র ওপর দুটি স্বতন্ত্র রঙিন স্মারকগ্রন্থ। আট দিনই প্রকাশিত হবে দৈনিক রঙিন বুলেটিন। উৎসব চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ধন্য কলকাতা

চৌরিচৌরার দু’বছর আগে যুবক কেশবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বেনারস গিয়ে দেখেন এক সাধু একটি পাত্রের উপর আর একটা পাত্র বসিয়ে অল্প সময়ে রান্না সারছেন। কলকাতায় ফিরে তিনি ১৯২০ সালে তৈরি করলেন ‘ফ্যামিলি’, ওরফে ‘গৃহস্থ’ কুকার! অপর দিকে, স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তাল কলকাতায় গড়ে ওঠে বহু দেশলাইয়ের কারখানা। মানিকতলায় এসাভি ম্যাচ ফ্যাক্টরি, তার পর ক্যালকাটা ম্যাচ ওয়ার্কস, ভাগীরথী, ক্রাউন, পায়োনিয়ার ইত্যাদি। এদের হাত ধরেই দেশলাই বাক্সে ছবি ও লেখা ফুটে উঠল: ‘স্বাধীনতা সম সুখ নাই’, ‘বিদেশী পণ্য বর্জন ও স্বদেশি গ্রহণ’। এই সবের সঙ্গে থাকছে পুরনো দিনের এনামেলের বিজ্ঞাপন (সঙ্গে তারই একটি)। দেখা যাবে, কলকাতা বিষয়ক পত্রপত্রিকা। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি দেওয়া তাস, খাগের কলম, কালির দোয়াত, পোর্সেলিনের জিনিস, আরও অনেক কিছু। ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে এমন ‘সাত ঘাটের জল এক করে’ ‘কিঞ্জল’-এর নিবেদনে আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব ও পত্রভারতীর উদ্যোগে গোর্কি সদনে ‘কলকাতা বিষয়ক প্রদর্শনী’, চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংগ্রাহকদের তালিকায় প্রয়াত অভিনেতা বিমল চট্টোপাধ্যায় থেকে ডা. উৎপল সান্যাল, আনন্দ মুখোপাধ্যায়, পরিমল রায়, সন্দীপ মিত্র প্রমুখ। গোর্কি সদনেই ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত হল পুরনো কলকাতা নিয়ে চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বই কলকাতা কথকতা (পত্রভারতী)।

ভয় নেই

সুকুমার রায় কবেই লিখেছেন ‘...করে নাকো ফোঁসফাঁস, করে নাকো ঢুঁশঢাঁশ/ নেই কোনও উৎপাত...’। সত্যিই, সাপ কিন্তু অহেতুক ঝুটঝামেলা পছন্দ করে না। তবু এই ভিতু জীবকে আমরা দেখা মাত্রই মনে করি শত্রু। এর প্রধান কারণ ভয়। ভয়ের কারণ এদের ভাবগতিক অজানা, আর কুসংস্কার! ফলে ধীরে ধীরে সাপও ডোডো-র পথে! এর থেকে বেরোনর পথই বাতলেছে সাপ, কামড় ও চিকিৎসা বইটি (বাংলা ও ইংরেজি দুটি ভাষায়)। পঁচিশ বছরের বেশি সাপ ও কুসংস্কার নিয়ে কাজ করা যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা, ক্যানিং প্রকাশিত, ডা. বাসুদেব মুখোপাধ্যায় এবং ড. দিলীপকুমার সোম সম্পাদিত (সহ সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য সৌম্যেন পাল) এই বইটি সাপ ও সাপের কামড়ের চিকিৎসা সম্বন্ধে দক্ষিণ ২৪ পরগনা অঞ্চলে ক্ষেত্রসমীক্ষাভিত্তিক সংকলন। আছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এবং তাদের কামড়ে আক্রান্ত মানুষের ছবি, নকশা ও তথ্য সমৃদ্ধ সারণি। অন্য দিকে, জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-র সহযোগিতায় ভারতীয় সংগ্রহশালায় ‘সাপের কামড় ও কুসংস্কার’ সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচি ২২ ডিসেম্বর (১১-২টো)। বলবেন সাপ-বিশেষজ্ঞ এবং ওঝারা, দেখা যাবে নানা রকম সাপ।

নাট্যপরিসর

বঙ্গরঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে নিয়মিত থিয়েটার করার লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন অনেকেই, কেউ সফল কেউ-বা ব্যর্থ, কিন্তু তাতে লড়াইয়ের ইতিহাসটা মিথ্যে হয়ে যায় না। সেই লড়াই জারি রাখতে রাজারহাট রবীন্দ্রতীর্থে শুরু হচ্ছে বর্ষব্যাপী নাট্যপ্রয়াস— ‘রাজার-হাটে ৮ রাজা’। অর্ণ মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস রায়, অভি চক্রবর্তী, দেবাশিস ঘোষ দস্তিদার, শুভদীপ গুহ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, কৌশিক কর, দেবাশিস দত্ত, এই আট নাট্যপরিচালকের কাছে এ হল এক বিকল্প নাট্যপরিসরের অন্বেষণ। তাঁরা তাঁদের নাট্যগোষ্ঠীর সাম্প্রতিকতম প্রযোজনাগুলি মঞ্চস্থ করবেন ২০১৬-র জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসের প্রতি রোববার সন্ধে ৬টায়। শো-এর দিন এয়ারপোর্ট ও উল্টোডাঙা থেকে রবীন্দ্রতীর্থের বাস ছাড়বে বিকেল সাড়ে ৫টায়। উদ্যোগটির সহায়তায় হিডকো ও রবীন্দ্রতীর্থ এবং পরিবহণ দফতর। তবে এ উদ্যোগ আলোর মুখই দেখত না যদি না ব্রাত্য বসু এই তরুণ পরিচালকদের পাশে দাঁড়াতেন, নাটমঞ্চ পাওয়া থেকে পরিবহণ ব্যবস্থা, সব বন্দোবস্তই তাঁর। ‘আসুন সকলে মিলে শামিল হই এই লড়াই-এ’— আহ্বান জানিয়েছেন পরিচালকবৃন্দ।

নতুন পত্রিকা

বৃদ্ধাশ্রমের নিঃসঙ্গতার করুণ কাহিনি যে কোনও মানুষের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। ভাগ্যহীন নাতি-নাতনিরা দাদু-ঠাকুমার সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হয়। আমরা ভুলে যাই ঠাকুরমার ঝুলির কথা। সেই দাদু-ঠাকুমাদের কথা মাথায় রেখে সবার জন্যই আসছে একটি পত্রিকা ‘নাতি-নাতনির বুলি’। আয়োজনে ‘কুশীলব’, সম্পাদনায় বৈশাখী মারজিৎ। পত্রিকাটিতে বিশিষ্টদের লেখা ছাড়াও থাকবে নাতি-নাতনিদের লেখা। প্রথম সংখ্যায় থাকছে জয় গোস্বামীর লেখা, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটক। প্রকাশিত হবে মল্লিকবাজারের কাছে ইলিয়ট রোডের একটি বৃদ্ধাশ্রমে, ২৫ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায়।

শিক্ষা ও মুক্তি

শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে মনের মুক্তি। ক্লিশে হয়ে যাওয়া কথাটা কতখানি সত্যি? মুক্তি বলতে কী বোঝায়? কার মুক্তি? মুক্তি কি কেউ দেয়, না মুক্তি ঘটে? মুক্ত মনের মানুষ কী করে? ‘শিক্ষা কি মনের মুক্তি আনে?’— এই বিষয় নিয়ে প্রয়াত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দেবেন ‘আপনারে বলছি স্যার’-এর অনুবাদক শিক্ষাবিদ সলিল বিশ্বাস। তুলে ধরবেন ওপরের প্রশ্নগুলো। ড. গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন এ দেশে মন আর শিক্ষার পাভলভীয় ব্যাখ্যা নিয়ে চর্চার পথিকৃৎ। পাভলভ ইনস্টিটিউট ও মানবমন পত্রিকার আয়োজনে এটি শোনা যাবে ২৩ ডিসেম্বর সন্ধে পাঁচটায় কলেজ স্ট্রিটের বই-চিত্র সভাঘরে।

বাতায়ন

কল্যাণকর্মে ব্রতী ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন পিকচার আর্টিস্টস্ ফোরাম একই সঙ্গে দুঃস্থ শিল্পী ও দেশবিদেশের দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। তাদেরই সাহিত্য মুখপত্র বাতায়ন (সম্পা: রমেন রায়চৌধুরী) নতুন কলেবরে বেরল। অভিনয়-শিল্পীরা নিজস্ব কলমে লিখেছেন তাঁদের ভাবনা-মতামত, রয়েছে সাক্ষাৎকারও। সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, সলিল চৌধুরী, ভূপেন হাজারিকা, ভি বালসারা প্রমুখের উদ্যোগে ১৯৬২-তে ‘ক্যালকাটা সিনে মিউজিশিয়ানস অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠা। সেই সময় সুনাম অর্জন করলেও দিন রাত কাজ করে নানা অর্কেস্ট্রার শিল্পীরা টাকাকড়ি কমই পেতেন। এই চিন্তা থেকে তাঁদের মুক্ত করতেই জন্ম হয় সংস্থার। ৫৩ বছরের প্রতিষ্ঠানের ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ সম্প্রতি পালিত হল কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে বহু শিল্পী সমারোহে।

উৎসব

শীতের সঙ্গেই শহরে উৎসবের পালা। এরই মধ্যে রয়েছে মুদ্রা উৎসব। কলকাতা মুদ্রা পরিষদ আয়োজিত এই উৎসবে এ বারের আকর্ষণ বেশ কিছু ঐতিহাসিক নথি। রয়েছে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্বাক্ষরিত নথি, আজাদ হিন্দ ফৌজের নোট, মেডেল এবং সঙ্গে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ভারতে মুদ্রার বিবর্তন। ‘হেরিটেজ অফ বেঙ্গল’ শীর্ষক উৎসবে প্রতি বারের মতোই থাকছে প্রাচীন মুদ্রা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের বেচাকেনা এবং মুদ্রা বিশেষজ্ঞদের আলোচনা। বালিগঞ্জ পার্কের কাছে হলদিরাম ব্যাঙ্কোয়েটে ২৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় এর উদ্বোধন করবেন নেতাজি গবেষক রাজশ্রী রায়চৌধুরী। চলবে ২৭ পর্যন্ত (১০-৮)। এ দিকে উত্তর দিনাজপুরের তুলাইপাঞ্জি, কাঁটারিভোগ, গিন্নি-পাগল; কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের কালো নোনিয়া; বর্ধমানের গোবিন্দভোগ— বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ সুগন্ধি এই সব চালেরই পসরা বসছে পৌষ উৎসবে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে মধুসূদন মুক্তমঞ্চ ও মোহরকুঞ্জে (২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি)। উৎসবে আর থাকবে বাংলার বিভিন্ন জেলার লোকসংস্কৃতি।

রবিবাসর

সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমী ক’জন যুবক ভবানীপুরে গড়ে তুলেছিলেন ‘রবিবাসর’, ২৪ নভেম্বর ১৯২৯। সদস্য শরৎচন্দ্রের জন্মদিন পালিত হবে তাঁরই বাড়িতে, খবর পেয়ে আর এক প্রবীণ সদস্য রবীন্দ্রনাথ এসে আশীর্বাদ করলেন। জলধর সেন পৌরোহিত্য করেন। ‘রবিবাসর’ সম্প্রতি ৮৭ বছরে পা রাখল। বাংলা ভাষার বহু লেখক ও শিক্ষক সদস্য হিসেবে ‘রবিবাসর’-এ রচনা পাঠ করেছেন। সম্প্রতি শরৎচন্দ্রের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা দিবসে স্মারক ভাষণ দিলেন সত্যবতী গিরি, বিষয় ‘রবীন্দ্রনাথ ও বৈষ্ণব সাহিত্য’। সভাপ্রধান ছিলেন উজ্জ্বলকুমার মজুমদার।

শ্রদ্ধার্ঘ্য

কিশোরী মেয়েটির নাচ দেখে রবীন্দ্রনাথ উপাধি দেন ‘কত্থক সম্রাজ্ঞী’। আশপাশের সব চরিত্রকে নাচের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তুলতেন সীতারাদেবী। ১৯২০-তে কলকাতায় জন্ম। ছয় দশক ধরে কত্থক নাচে নিজের অবদান রেখে গিয়েছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। গত বছর বড়দিনে প্রয়াত হন তিনি। কালিন্দীর দর্পণ সোশিও কালচারাল অরগানাইজেশন এ বছর বড়দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে মোহিত মৈত্র মঞ্চে। থাকবেন শিল্পীর পৌত্র বেনারস ঘরানার কত্থক শিল্পী বিশাল কৃষ্ণ। অন্য দিকে ২৪ ডিসেম্বর থেকে দেশপ্রিয় পার্কের ‘ভাষা মঞ্চে’ শুরু হচ্ছে দুই দিনের ‘ভগীরথ নৃত্য উৎসব’। পথিকৃৎ নৃত্যগুরুদের শ্রদ্ধা জানাতেই এর পরিকল্পনা করেছেন পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়। প্রবীণ নৃত্যশিল্পী সুধাকর সাহুকে দেওয়া হবে বিরল প্রতিভা সম্মান। আয়োজনে নর্তেশ্বর কালচারাল সেন্টার।

শতবর্ষে

তাঁর কণ্ঠে ‘বন্দেমাতরম’ শুনে নেতাজি আবেগাশ্রু ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর সঙ্গীতবোধ এতটাই উচ্চ মানের ছিল যে পণ্ডিত রতনজনকর লখনউয়ের মরিস কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষক হিসেবে তাঁকে সরাসরি নিযুক্ত করেছিলেন। পণ্ডিত বিষ্ণু গোবিন্দ যোগ, পণ্ডিত ধ্রুবতারা যোশী, পণ্ডিত সুনীল বসু-রা ছিলেন তাঁর গুণগ্রাহী, ঘনিষ্ঠ সতীর্থ। ১৯১৬-য় মুরারিমোহন মিশ্রর জন্ম। সঙ্গীত শিক্ষা বাবা পণ্ডিত মোহিনীমোহন মিশ্রের কাছে। তিনি ছিলেন শিল্পী নির্মলা মিশ্রর মেজদাদা। নির্মলা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘...মেজদা খুব ভাল গান করতেন। মেজদা টাইটেল নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন লখনউতে। দাদাকে খুব দুঃখজনক ভাবে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। ওখানে বড় বড় শিল্পী গিয়েছিল, মেজদার গান সবার ভীষণ ভাল লেগেছিল। খুব হইহই, রইরই পড়ে গেল, অন্য শিল্পীরা গেল খেপে। মেরে দাও। মেরে দিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার গান শুনে বাবা মাকে বলেছিলেন,‘দেখেছ, আমার রেণু (মুরারিমোহন) ফিরে এসেছে’ ওই প্রথম এবং শেষ, বাবার চোখে জল দেখেছিলাম।’ বিশিষ্ট শিল্পীর জন্মশতবর্ষ ও ‘মুরারি স্মৃতি সঙ্গীত সম্মিলনী’র ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষে চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চে হয়ে গেল এক সঙ্গীতানুষ্ঠান। ছিলেন তবলায় পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী ও পণ্ডিত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীতে নির্মলা মিশ্র, সেতারে পণ্ডিত সুগত নাগ, কত্থকে পণ্ডিত রাজেন্দ্র গঙ্গানীর (দিল্লি) এবং ‘তবলা তরঙ্গ’ বাদনে শঙ্কর ঘোষের তালিমপ্রাপ্ত পনেরো বছরের সুভদ্রকল্যাণ রানা।

প্রতিমা

এই ডিসেম্বরেই প্রয়াত হন প্রতিমা বড়ুয়া, তেরো বছর আগে। ‘হস্তির কন্যা’ বা ‘মুর মাহুত বন্ধুরে’-র মতো গান এখনও অমলিন পুরনো মানুষজনের স্মৃতিতে। লোকগানের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী প্রতিমা বড়ুয়া পাণ্ডে-র গান আজও অসম্ভব জনপ্রিয় অসমে। ধুবড়ি জেলার গৌরীপুর রাজপরিবারের মেয়ে হলেও জন্ম তাঁর কলকাতায়, ১৯৩৫-এ। লালজি’র (প্রকৃতীশচন্দ্র বড়ুয়া) মেয়ে প্রতিমার প্রথম জীবনের পড়াশোনাও এ শহরে। ‘কিন্তু তাঁর মন পড়ে থাকে অসমের জঙ্গলে, নদীর ধারে। মাহুত (হস্তিচালক), মইশাল (মহিষপালক বালক), মাঝি (নৌকাচালক)— রাজপরিবারের বেড়া ভেঙে খুঁজে নেন তাদের বেঁচে-থাকার আনন্দ, গাইতে শুরু করেন তাদের জীবনের আশ্চর্য গান।’ বলছিলেন ববি শর্মা বরুয়া (সঙ্গের ছবি), গুয়াহাটির পরিচালক। ছবি করছেন তিনি প্রতিমাকে নিয়ে: ‘সোনার বরন পাখি’, কলকাতায় এসেছিলেন সদ্য তারই শুটিং করতে। তাঁর প্রথম ছবি ‘অদম্য’ ইতিমধ্যেই দেশবিদেশের ফিল্মোৎসবে দেখানোর পর পেয়েছে সম্মান ও পুরস্কার। মেয়েদের আত্মপরিচয়ের স্বাতন্ত্র্য তুলে আনার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকসংস্কৃতিও বিধৃত করতে চান নিজের ছবিতে, জানালেন ববি। তাঁর আপশোস, ‘‘ঋত্বিক ঘটকের ‘বগলার বঙ্গদর্শন’ অসমাপ্ত রয়ে গেল, তাতে কত গান গেয়েছিলেন প্রতিমা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE