Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

গ ত শতকের বিশের দশকে কলকাতার সাহেবপাড়ার সাহেব স্টুডিয়োর সঙ্গে পাল্লা দিত কলেজ স্ট্রিটের অ্যালবার্ট হলে চারু গুহ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশি সি গুহ স্টুডিয়ো। অ্যালবার্ট হল নাম বদলে আজ কফি হাউস।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০০:২২
Share: Save:

৭৫ বছর পর কামাক্ষীপ্রসাদের আলোকচিত্র প্রদর্শনী

গ ত শতকের বিশের দশকে কলকাতার সাহেবপাড়ার সাহেব স্টুডিয়োর সঙ্গে পাল্লা দিত কলেজ স্ট্রিটের অ্যালবার্ট হলে চারু গুহ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশি সি গুহ স্টুডিয়ো। অ্যালবার্ট হল নাম বদলে আজ কফি হাউস। সি গুহ স্টুডিয়ো আজ নব অবতারে বই-চিত্র, কলকাতায় অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সেই পরম্পরা এ বারে আরও প্রসারিত, সেখানে গড়ে উঠল উত্তর কলকাতার প্রায় একমাত্র আধুনিক ব্যবস্থাযুক্ত চিত্র প্রদর্শশালা— সি গুহ মেমোরিয়াল গ্যালারি। ৩ অগস্ট বিকেল ৫ টায় জনসমক্ষে তার উদ্বোধন, শঙ্খ ঘোষের হাতে। আর সেই সঙ্গে ঘটবে এক আশ্চর্য উন্মোচন। সমর সেন-গবেষক পুলক চন্দর রত্নসন্ধানী চোখ নতুন করে আবিষ্কার করেছে সমর-সুহৃদ কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের (১৯১৭-১৯৭৬) আলোকচিত্রী সত্তাকে। কামাক্ষীপ্রসাদকে আমরা চিনি কবি হিসেবে, অবিস্মরণীয় শিশু-পত্রিকা ‘রংমশাল’-এর সম্পাদক হিসেবে, গল্পকার হিসেবে, রুশ সাহিত্যের বঙ্গানুবাদক হিসেবে, দার্শনিক দেবীপ্রসাদের দাদা হিসেবে। কিন্তু আলোকচিত্রী কামাক্ষীপ্রসাদকে আমরা ক’জন চিনতাম? সিদ্ধার্থ ঘোষই বোধহয় প্রথম সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অথচ আলোকচিত্র ছিল কামাক্ষীপ্রসাদের আশৈশব নেশা। পাতলা মসলিনকে কোমলায়ন-ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করে স্ত্রী রেখার যে-মুখচ্ছবি তিনি তুলেছিলেন, তার বৃত্তিনিপুণ মুনশিয়ানা সে সময় রসিকমহলে সাড়া জাগিয়েছিল। কলকাতা শেষ বার তাঁর তোলা ছবি দেখবার স্বাদ পেয়েছিল পঁচাত্তর বছর আগে— ১৯৪০ সালে, তখনকার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ। এত দিন পর আবার দেখা যাবে সেই সব ছবি— যার ভৌগোলিক বিস্তার কলকাতা থেকে পাঞ্চেত হয়ে মস্কো পর্যন্ত, যার বিষয়বস্তু আদিবাসী শ্রমিক পরিবার থেকে শুরু করে বরফ-ঢাকা মস্কো-প্রবাসী বঙ্গবধূ। রেখা চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে তার দু’টি নমুনা এখানে ছাপা হল। নিরলংকার একখানি পরিচায়িকায় নবতিপর রেখা চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, জ্বরের পর বেশি করে ভাত খাবার টোপ দিয়ে বালক কামাক্ষী মায়ের কাছ থেকে আদায় করত এক টাকা করে ঘুষ, পরে যার মাত্রা বেড়েছিল। এমনি করে কেনা অতি সাধারণ এক লাইকা ক্যামেরা নিয়ে রাজ্য জয় করে বেড়াত ‘সনু-মনু’ দুই ভাই। বিয়ের পর রেখা দেখেন, শোবার ঘরের মেঝেতে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা সার-সার বাঁধানো আলোকচিত্র। সাত দিন পর সেগুলো চালান হয়ে যাবে খাটের তলায় রাখা মাদুরে, আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে অন্য এক প্রস্ত ছবি। এমনি ভাবে চলবে ঘরোয়া প্রদর্শনী-মালা। মেধা আর নন্দনের গাঁটছড়ায় বাঁধা বিস্মৃত সেই বাঙালি জীবনের আলোক-উদ্ভাস কলকাতাকে নন্দিত করে রাখবে ৩-১৫ অগস্ট, প্রতি দিন (রবিবার বাদে) দুপুর ২টো থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত, বই-চিত্র সভাঘরে নবসজ্জিত সি গুহ মেমোরিয়াল গ্যালারিতে।

বাঘ দিবস

বাঘ শুধু উইলিয়াম ব্লেকের কবিতা নয়, ফেসবুকের লাইক পাওয়া ছবিও নয়, সে ভারতবর্ষের জীবন্ত হেরিটেজ, কাল্ট, ধর্ম ও লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রামায়ণ, মহাভারত, অথর্ববেদ, বোধিসত্ত্বের কথা এবং বিভিন্ন ভাষার লোকাখ্যান— সবেতেই এক বিশেষ জায়গায় থাকা ভারতের এই জাতীয় প্রাণীটি দেশের সম্পদ এবং গর্ব। সেই বাঘের ঐতিহাসিক-সামাজিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা ২৯ জুলাই ৪টেয়, আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হলে, বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে। থাকবে বিশেষ প্রদর্শনী (৭ অগস্ট পর্যন্ত)। সকাল ১১টায় দেখা যাবে ওড়িশার বিখ্যাত বাঘনৃত্য। আয়োজনে ভারতীয় সংগ্রহশালা, প্রাণিতত্ত্ব সর্বেক্ষণ, সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চেস (শের) ও অ্যাক্ট। আলোচনায় জীবন্ত কিংবদন্তি পার্বতী বড়ুয়া, সুন্দরবন জীব পরিমণ্ডলের অধিকর্তা ও বাঘ বিশেষজ্ঞ প্রদীপ ব্যাস, করবেট ব্যাঘ্র প্রকল্পের সমীর সিংহ, সব্যসাচী চক্রবর্তী, তিলোত্তমা মজুমদার ও সংরক্ষণকর্মী রাজ বসু। সঙ্গে ওড়িশার বাঘ-মুখোশ।

নাট্যপ্রেমিক

গণনাট্য বিকাশ পর্বে বাংলা থিয়েটার অঙ্গনে থিয়েটারের অ্যাকাডেমিক দিক নিয়ে তিনিই ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। বাংলায় সহজ করে নাট্যতত্ত্বের বই লিখেছেন। মাত্র ৫৬ বছরের জীবনে

সাধনকুমার ভট্টাচার্যের নাট্যপ্রেম ও নাট্যতাত্ত্বিক কর্মকাণ্ড বিস্মিত করে। ১ অগস্ট জীবনানন্দ সভাঘরে জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে পবিত্র সরকার প্রকাশ করবেন চিরসাধন স্মারকগ্রন্থ। স্মারককথনে চন্দন সেন ও দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় । সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত নাটকের গান শোনাবেন। সাধন স্মারক সম্মান পাবেন প্রভাতকুমার দাস। পর দিন ‘বাংলা থিয়েটারে বিনোদিনী থেকে কেয়া চক্রবর্তী’ বিষয়ে বলবেন দেবাশিস রায়চৌধুরী, দেবপ্রিয়া বিশ্বাস, ফণীভূষণ মণ্ডল, বিজয়কুমার দাস। সঙ্গের ছবি: মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। ১ অগস্ট অবনীন্দ্র সভাঘরে সন্ধ্যা ৬টায় ঋত্বিক সিনে সোসাইটির রাণা সরকার স্মারক বক্তৃতা। ‘নাটক ও চলচ্চিত্র’ বিষয়ে বলবেন অরুণ মুখোপাধ্যায়।

উদ্যোগী ব্যাঙ্ক

কলকাতার ইতিহাসের কোনও বিষয়ই পুরনো হয় না। সম্প্রতি ব্রাবোর্ন রোডে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অফিসের সভাগৃহে তিন ঘণ্টার আলোচনায় উঠে এল এমনই নানা দিক। পি টি নায়ার, শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র, পল্লব মিত্র, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস ভট্টাচার্য, নরেন মুখোপাধ্যায় বললেন বড়বাজার গড়ে ওঠা, কলকাতার প্রত্নতত্ত্ব, কলকাতায় নানা সম্প্রদায়ের মানুষ, মনীষীদের বাড়ি, বাংলা সিনেমায় কলকাতা, বাণিজ্যিক অগ্রগতিতে ব্যাঙ্কের ভূমিকা ও হারিয়ে যাওয়া নানান পেশা ইত্যাদি নিয়ে। ব্যাঙ্কের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অমিতাভ মৈত্রের উদ্যোগে এটি আয়োজিত হয়। শতাব্দী প্রাচীন এই ব্যাঙ্কে একদা জালিয়ানওয়ালাবাগ কমিটি এবং মহাত্মা গাঁধী প্রমুখ অনেকেরই অ্যাকাউন্ট ছিল। লালা লাজপত রায় ছিলেন পরিচালন কমিটির সদস্য।

স্মরণে বরণে

১৯২২ সালের ২৭ জুলাই লোকসংগীতশিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্ম পূর্ব বাংলার শ্রীহট্টে। কলকাতায় প্রথম গান গাওয়া শ্রদ্ধানন্দ পার্কে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী এক অনুষ্ঠানে। উৎপল দত্তের ‘অঙ্গার’ নাটকে ধারাবাহিক ভাবে অভিনয় ও গান করেছেন। জওহরলাল নেহরু তাঁর কাছে কয়েকটি বাংলা লোকসংগীত শিখেছিলেন। নির্মলেন্দু ছিলেন আমৃত্যু ভারতীয় সাংস্কৃতিক দলের অন্যতম প্রতিনিধি। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কণ্ঠসঙ্গীত বিভাগে। পুত্র উৎপলেন্দু চৌধুরী বাবার ধারা বহন করেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। মাত্র ৫৯ বছর বয়সে দুই শিল্পীরই জীবনাবসান ঘটে। নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্মদিনকে ঘিরে এই দুই লোকশিল্পীর স্মরণে অনুষ্ঠান ২৭ জুলাই বিকেল ৫টায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। উদ্যোগে রবীন্দ্রভারতীর কণ্ঠসঙ্গীত বিভাগ ও নির্মলেন্দু চৌধুরীর গড়া সংস্থা ‘লোকভারতী’। সহযোগিতায় ‘মাদল’। থাকবেন বিশিষ্ট শিল্পীরা।

রোম্যান্টিক

রুপোলি পর্দার রোমান্সই তো বাঁচিয়ে রাখে আমাদের। রিল-লাইফ আর রিয়েল-লাইফ তখন একাকার। বলিউড-জুটিরা তাই কত কাল ধরে আমাদের নিভৃত গহন জীবনে... রাজ কপূর-নার্গিস, গুরু দত্ত-ওয়াহিদা, রাজেশ-শর্মিলা, ধর্মেন্দ্র-হেমা, শাহরুখ-কাজল। কত লুকনো গল্প এঁদের জীবনে। সে সব নিয়েই আলেখ্য সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের, তাঁর ভাষ্যে শোনা যাবে ৩১ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় জ্ঞানম়ঞ্চে। বলিউডের মনকেমন করা গান গাইবেন অসমের শিল্পী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (সঙ্গের ছবি)। উদ্যোগে ‘ফ্রিডম ফরএভার’। অন্য দিকে ২৯ জুলাই সন্ধে ৬টায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে দেখা যাবে দুই ধ্রুপদী শিল্পীর যুগলবন্দির ভিডিয়ো। নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতারের সঙ্গে স্বপন চৌধুরীর তবলা। বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৪-র ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং। প্রয়াস-এর উদ্যোগে নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ সন্ধ্যা। তাঁর সম্মানে সংগীত সৃষ্টি করবেন শঙ্কর ঘোষ সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় কুশল দাস।

মনীষী

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর অগ্রজ, বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত অনুজ। বিপুল মনীষার অধিকারী মহেন্দ্রনাথ (১৮৬৯-১৯৫৬) সম্পর্কে স্বামী ব্রহ্মানন্দ বলতেন, ‘মহিম সাদা কাপড়ে সন্ন্যাসীরও বাড়া।’ রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ ও তাঁর অন্য গুরুভাইদের প্রসঙ্গে মহেন্দ্রনাথের দেওয়া তথ্য ও বিবরণ যেমন মূল্যবান, তেমনই সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান শিল্প স্থাপত্য চিত্রকলা রাজনীতি অর্থনীতি সমাজ বিষয়ে তাঁর অজস্র রচনা বিরল পাণ্ডিত্যের পরিচয়বাহী। সৌভাগ্যের কথা, তাঁর অনেক বই-ই এখনও ৩৬/৭ সাহিত্য পরিষৎ স্ট্রিটে মহেন্দ্র পাবলিশিং কমিটির অফিসে পাওয়া যায়। ওদেরই উদ্যোগে তাঁর ১৪৭তম জন্মদিন পালিত হবে ১ অগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায়, বিবেকানন্দ সোসাইটি হলে। থাকবেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন, স্বামী পুণ্যাত্মানন্দ, ধীরাজ বসু, বিজ্ঞানী সঞ্জয় ঘোষ।

প্রয়াণ

সৎ, দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তিনি যেমন সহকর্মীদের শ্রদ্ধা-ভালবাসা পেয়েছেন, অন্য দিকে পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজনীতিকদের বিরাগভাজনও হয়েছেন। অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই কৃতী ছাত্র ১৯৬৯-এ স্টাডি লিভ নিয়ে ম্যাসাচুসেটস-এর উইলিয়ামস কলেজ থেকে ডেভেলপমেন্ট ইকনমিক্স-এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালের আই এ এস প্রদ্যোৎকুমার সরকার পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও ডি ভি সি-র চেয়ারম্যান, রাজ্যের অর্থসচিব, কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক, স্টিল কন্ট্রোলার প্রভৃতি পদে বৃত হয়ে সুনাম ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রচারবিমুখ এই মানুষটি অবসর নেওয়ার পর নিজেকে জনকল্যাণমূলক ও প্রতিবন্ধী মানুষের পুনর্বাসনের কাজে নিয়োজিত করেন। ১৬ জুলাই আশি বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।

মনসামঙ্গল

বঙ্গদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে মনসার থান বা মন্দির আছে, তাতে দেবী পূজিত হন। তেমনই তাঁর গানও হয়, অঞ্চলভেদে নানা সুরে ও নামে— বিষহরার গান, সাপুড়ের গান, বেদের গান ইত্যাদি। লোকসংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ‘ভ্রমরা’ দীর্ঘকাল ধরে লোকগানের সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রসারে ব্রতী। তাঁরা এ বার ‘মনসামঙ্গল কাব্য’ পালাগানটি মঞ্চস্থ করবে ২৯ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় শিশির মঞ্চে। এটি মূলত বিজয় গুপ্ত জগজ্জীবন ঘোষাল কোটীশ্বর দাস আর অখ্যাত আঞ্চলিক কবি রচিত।

শতবর্ষে

ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ও রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা সম্পর্কে ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম লেখেন। তিনি দেখান, স্মলপক্স ভাইরাসের তীব্রতা এবং কী ভাবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় এও জানিয়েছেন যে, চিকনগুনিয়া ভাইরাস থেকেও ডেঙ্গু হতে পারে। জলধিকুমার সরকার। বছর পাঁচেক আগে প্রয়াত এই স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীর জন্ম বর্ধমানে, ১৯১৬-র ১ অগস্ট। কুষ্ঠ রোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করে তার চরিত্র নির্ধারণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র ‘ভাইরাল ডিজিস’ বিশেষজ্ঞদের অন্যতম জলধিকুমার ছিলেন স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন-এর অধ্যাপক ও অধিকর্তা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এশিয়াটিক সোসাইটি তাঁকে নানা সম্মানে ভূষিত করে। দীর্ঘদিন ‘উদ্বোধন’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। মহেন্দ্রলাল সরকারকে নিয়ে বই লিখেছেন। ২ অগস্ট তাঁর ৮৭ গল্ফ ক্লাব রোডের বাসভবনে শতবার্ষিকী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান (১০-১)। প্রকাশিত হবে একটি স্মারক পুস্তিকাও।

‘গান্ধারী’

রবীন্দ্রনাথের গানের ভাণ্ডারী যেমন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলামের তেমন ধীরেন্দ্রনাথ দাস৷ নজরুল নাকি তাঁকে বলতেন তাঁর ‘গান্ধারী’৷ বহু শিল্পী তখন নজরুলের গান রেকর্ডের আগে গান তুলতে আসতেন ধীরেন্দ্রনাথের কাছে৷ গান আর অভিনয় জগতের এই মানুষটির জন্ম ১৯০৩-এ, প্রয়াণ ১৯৬১-তে৷ পিতা কালীচরণ দাস ছিলেন রানিগঞ্জের বেঙ্গল কোল কোম্পানির কর্মচারী৷ তাঁর কাছেই শ্যামাসঙ্গীত আর ভক্তিমূলক গান শেখা৷ এ ছাড়া শিখেছিলেন রাধিকা গোস্বামী এবং সাতকড়ি মালাকারের কাছে৷ পরে তাঁর একই সঙ্গে শিক্ষক ও সহযোগী ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দে ও জমিরুদ্দিন খান৷ অভিনয়ে তাঁর প্রথম প্রেরণা শিশিরকুমার ভাদুড়ীর কাছে৷ তখন তিনি বিদ্যাসাগর কলেজে ছাত্র৷ অভিনয় করেন শিশিরকুমারের ‘রঘুবীর’ নাটকে৷ ক্ষীরোদপ্রসাদের ‘নরনারায়ণ’-এ বৃষকেতুর চরিত্রে ধীরেন্দ্রনাথের অভিনয় সাড়া ফেলে। এতেই তিনি প্রথম গায়ক-অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি পান৷ গ্রামোফোন কোম্পানিতে সুরকার ভূতনাথ দাসের সহকারী রূপে যোগ দেন ধীরেন্দ্রনাথ৷ দীর্ঘকাল ছিলেন ট্রেনার৷ এই পরিচয়ে তাঁর সব থেকে বেশি বিকাশ বলেও অনেকে মনে করেন৷ নজরুলের ১৪টি গানে সুর দিয়েছেন ধীরেন্দ্রনাথ৷ তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য ও তাঁর রেকর্ডগুলি সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর পরিবার৷ অভিনেতা অনুপকুমার তাঁর পুত্র৷ অপর পুত্র হিমাদ্রিকুমার সযত্নে সংগ্রহ ও রক্ষা করেছেন বাবার স্মৃতি৷ তাঁর উদ্যোগে ধীরেন্দ্রনাথের গান ও আবৃত্তির সংকলন ‘শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও’ প্রকাশ ১ অগস্ট (সারেগামা)৷ নজরুলগীতি ছাড়াও এতে থাকছে চারটি রবীন্দ্রসঙ্গীতও৷ পাইকপাড়ার মোহিত মঞ্চে প্রকাশ-অনুষ্ঠান৷

চলচ্চিত্র উৎসব

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিল্মের দুনিয়ায় কে না চেনে ফারুকি-কে! মোস্তোফা সারোয়ার ফারুকি (সঙ্গের ছবিতে), বাংলাদেশের এই তরুণ চলচ্চিত্রকার নতুন ভাষায়ই শুধু ছবি করছেন না, পুরনো ভাবনাকেও ছিঁড়েখুড়ে নিজস্ব বয়ান তৈরি করছেন। সামাজিক অসংগতিকে চিনিয়ে দেয় তাঁর ‘স্যাটায়ার’ধর্মী সিনেমা। প্রথম ছবি ‘ব্যাচেলার’। তাঁর ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ বা ‘টেলিভিশন’ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে সমাদৃত ও পুরস্কৃত। সিনেমায় যে ‘নিউ ওয়েভ’ বুনে দিতে চাইছেন তিনি, নাম দিয়েছেন তার ‘ছবিয়াল’। এ দেশে আগেও দেখানো হয়েছে তাঁর ছবি। এ বারে কলকাতায় আসছেন তাঁর নতুন ছবি ‘পিপড়া বিদ্যা’ (অ্যান্ট স্টোরি) নিয়ে। নন্দনে ৩ অগস্ট সন্ধে ৬টায় দেখানো হবে ছবিটি, তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন ব্রাত্য বসু ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। এ-ছবি দেখিয়েই কলকাতা থেকে শুরু হচ্ছে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর ভ্রাম্যমাণ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, চলবে ৭ অগস্ট অবধি। এরপর এ উৎসব পশ্চিমবঙ্গের নানা স্থানে তো বটেই, প্রান্ত পেরিয়ে অসম ওড়িশা ঝাড়খণ্ড বিহার উত্তরাখণ্ড মহারাষ্ট্র অন্ধ্র তেলঙ্গানা কর্নাটক কেরল তামিলনাড়ু আন্দামান এবং দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। ‘আগামী ছ’মাস ধরে সারা দেশ ঘুরবে এ উৎসব। ভারতীয় সিনেমার দর্শকদের শিল্পরুচি তৈরির জন্য দুনিয়ার সেরা ছবি দেখানোর আয়োজন দীর্ঘকাল ধরেই করে আসছে ফেডারেশন, তবে এরকম ভ্রাম্যমাণ ফেস্টিভ্যাল এই প্রথম।’ জানালেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রেমেন্দ্র মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE