Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

ধারাবাহিক পারিপাট্যে গ্রন্থনির্মাণ

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

ধারাবাহিক পারিপাট্যে গ্রন্থনির্মাণ

সঞ্চয়িতা, গীতবিতান, গল্পগুচ্ছ বই তো সকলের ঘরে ঘরে, এবং সকলেই তাঁদের সংগ্রহে রাখার জন্য কিনতে চান। কিন্তু বইয়ের কাগজ, ছাপা ইত্যাদির মান এত নেমে গিয়েছে যে প্রশ্ন করলে তার উত্তর পাওয়া যায় না।’ বছর পাঁচেক আগে লেখা রচনাটি যেন চিনিয়ে দেয় সুবিমল লাহিড়ীকে (বাঁ দিকের ছবি)। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রপ্রকাশনায় ধারাবাহিক পারিপাট্য যাঁদের শ্রমে ও ভাবনায়, সুবিমল তাঁদের অন্যতম। পিতা তারকনাথ রংপুর থেকে পড়তে এসে আশ্রমের সুখদুঃখে জড়িয়ে যান। তাঁকে দেখেই সুবিমল (জ. ১৯৩৩) প্রাণিত হন রবীন্দ্রচর্চায়। দেশভাগের পর এসে বাবার চিঠি নিয়ে তাঁর

সহপাঠী পুলিনবিহারী সেনের সঙ্গে দেখা করলে তিনিই সুবিমলকে নিয়ে আসেন গ্রন্থনবিভাগে। তাঁর আদর্শেই দীক্ষিত হন সুবিমল: ‘পুলিনবাবুর কারখানা ছিল এমনই যেখানে কখনো ভোঁ বা ছুটির বাঁশি বাজত না। সব কাজই ছিল আবেগ আনন্দ গভীর আন্তরিকতায় ভরা।’ সহকর্মী রূপে পান কানাই সামন্ত, জগদিন্দ্র ভৌমিক, শুভেন্দুশেখর মুখোপাধ্যায়, সুভাষ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বকে। সুবিমলকে নিয়ে সম্মাননা সংখ্যা প্রকাশ করল কোমল গান্ধার (সম্পা: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়। মুখ্য উপদেশক: অরুণ দে)। কবিতা লিখেছেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত: ‘সুবিমল ওরফে উপনন্দ’। প্রবোধচন্দ্র সেনের কন্যা সংঘমিত্রা তাঁর পিতার সুবিমলের উপর নিশ্চিন্ত নির্ভরতার কথা জানিয়ে, বর্ণনা করেছেন: ‘নাতিদীর্ঘ, কৃশকায়, গৌরবর্ণ, আয়তলোচন, স্কন্ধ পর্যন্ত লম্বিত কেশ, ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত, কাঁধে বহুদ্রব্য-সম্বলিত আজানুলম্বিত এক থলি— মানুষটি আমাদের সুবিমলদা।’ পুলিনবিহারীকে (ডান দিকের ছবি) নিয়ে আলোচনা বুদ্ধদেব বসু শুভেন্দুশেখর মুখোপাধ্যায় শঙ্খ ঘোষের। আছে সুবিমলের নির্বাচিত রচনা, তাঁকে নিয়ে রচনা, ক্রোড়পত্রে তাঁর পিতার ‘ঝাপসা স্মৃতির পুরনো পাতা’। যে কোনও গ্রন্থকে সম্পাদনায় তথ্য ও মুদ্রণপ্রমাদহীন এবং অঙ্গসৌষ্ঠবে সুন্দর করে গড়ে তোলার কাজ আজও নিরন্তর করে চলেছেন তিনি। গ্রন্থনবিভাগে দীর্ঘ দিন কাজের পর এখন যুক্ত আছেন আনন্দ পাবলিশার্সে। যুক্ত ছিলেন ‘ভারতকোষ’ প্রকল্পেও। পুলিনবিহারী একটি চিঠিতে লিখছেন : ‘বহু বৎসর তোমার উপর এসব কাজে নির্ভর করতে অভ্যস্ত হয়েছি।’... পুলিনবিহারীর সঙ্গে আমরাও, নিঃসন্দেহে।

ফিরে দেখা

‘মার্কসবাদে বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর গভীর আস্থা। তখনও অন্ধকার আসেনি তা নয়, কিন্তু সেই অন্ধকারের মধ্যেই পাওয়া গেছে ‘আরেক আলো’। কখনো মহাকাব্যিক বিস্তারে, কখনো মিতায়তন গীতিকবিতার চকিত উচ্চারণে বিষ্ণু দে কবিতা লিখেছেন একের পর এক কবিতার বইতে।’— অরুণ সেনের বিষ্ণু দে বেরল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রকাশিত ‘সাহিত্য-সাধক চরিতমালা’য়। শিল্পসাহিত্যের মনস্বী গদ্যকার অরুণ সেন বিষ্ণু দে বিষয়ে দীর্ঘকালের গবেষক। তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্য অকাদেমি থেকে বেরল বিষ্ণু দে: সাতরঙার সিম্‌ফনি। অকাদেমির জাতীয় আলোচনাচক্রে নিবেদিত রচনার সংকলন। বাংলাভাষী আলোচকদের সঙ্গে ভারতীয় অন্য ভাষার আলোচকদের লেখার যৌথতায় এক সর্বভারতীয় প্রেক্ষিতে বিষ্ণু দে-কে নতুন ভাবে আবিষ্কার করা গেল বইটিতে। শেষে ‘সভা-বিবরণ ও অনুষঙ্গ’ এবং ‘বিষ্ণু দে: জীবন ও রচনা’, এই দু’টি অধ্যায় যুক্ত করেছেন সম্পাদক। গত ১৮ জুলাই ছিল কবির (১৯০৯-১৯৮২) জন্মদিন।

স্মরণীয়

শুধু জগদীশচন্দ্র বসুর স্ত্রী হিসেবে নন, অবলা বসু (১৮৬৪-১৯৫১) স্মরণীয় নারীশিক্ষার প্রসারে অবদানের জন্য। অবলা বেথুন থেকে এফ এ পাশ করে ডাক্তারি পড়তে যান মাদ্রাজে। দুই বছর পরই বিয়ে হয় তাঁর। এক সময় ব্রাহ্মবালিকা শিক্ষালয়ের সম্পাদিকা ছিলেন। ১৯১২-য় প্রতিষ্ঠা করেন বিদ্যাসাগর বাণীভবন। নারীশিক্ষার প্রসার ও বিধবা মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নারীশিক্ষা সমিতি’। ৮৮টি প্রাথমিক স্কুল ও ১৪টি বয়স্ক-শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং-এর প্রবক্তা লেডি অবলা বসুই। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলি এখনও সক্রিয়। গত বছর তাঁর সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে ‘নারীশিক্ষা সমিতি’ আয়োজন করেছিল নানা অনুষ্ঠান। এ বছর সমাপ্তি অনুষ্ঠান বিদ্যাসাগর বাণীভবনে ৮ অগস্ট।

চিঠি

‘...তুমি যে লোকটাকে চিঠি লিখছ, তার হাবভাব চেহারা এমনকি কণ্ঠস্বরও বোধহয় তোমার মোটামুটি জানা আছে, কিন্তু আমি যাকে লিখছি তার শুধু হস্তাক্ষর এবং তার চিঠির ভাষা ও বক্তব্যের ভিতর দিয়ে তার মনের পরিচয় ছাড়া আর কোন পরিচয়ই আমার কাছে নেই...’ ১৯৭৪-’৯১ তরুণী দেবযানী রায় আর মানিকদার পত্র বিনিময় চলে। সত্যজিতের মুক্তাক্ষরে লেখা সত্তরের বেশি চিঠি দেবযানীর ঝুলিতে। এতে ধরা পড়েছে লেখকের চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং লেখক জীবনের ছবি। এরই কিছু প্রকাশিত হচ্ছে প্রশান্ত মাজী সম্পাদিত প্রতিবিম্ব পত্রিকায়। আজ জীবনানন্দ সভাঘরে সন্ধে ৬টায় এটি উদ্বোধন করবেন অনুপ মতিলাল। দেবযানী রায় লিখেছেন এই পত্র বিনিময়ের প্রেক্ষাপট। থাকছে অরুণ ভট্টাচার্যকে লেখা জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, নীহাররঞ্জন রায় এবং আবু সঈদ আইয়ুব প্রমুখের চিঠি। অনুষ্ঠানে প্রকাশ পাবে কমলকুমার মজুমদারকে নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আমার কমলকুমার। রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে এটি গ্রহণ করবেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। গানে রাজশ্রী ভট্টাচার্য ঋতুপর্ণা মতিলাল। অন্য দিকে, রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান মন্দার মুখোপাধ্যায়কে অনুপ্রাণিত করেছে বর্ষার কবিতা রচনায়। এক একটি গান থেকে এক-একটি বৃষ্টিভেজা কবিতা। ‘মগ্ন মেঘ জল’ অনুষ্ঠানে কবিতাগুলি শোনা যাবে কবিকণ্ঠে, উৎস-গানগুলি গাইবেন সুদেষ্ণা বসু। ৫ অগস্ট সন্ধে ৬-৩০-এ, উইভার্স স্টুডিয়োতে।

ইতিহাসের খোঁজে

তাঁর পিতামহ চাকরি করতেন উলুবেড়িয়ায়। বাবা বিপিনবিহারী চৌধুরীর জন্মও ওখানে। ‘সোমপ্রকাশ’ সহ নানা পত্রিকায় নিয়মিত চিঠিপত্র লিখতেন তাঁর প্রপিতামহ, আধুনিক ওড়িয়া সাহিত্যের জনক ফকিরমোহন সেনাপতি। ওড়িশার সরকারি কলেজে ইতিহাসের শিক্ষকতা ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে কিছু দিন খড়গপুরে কাটান নিবেদিতা মহান্তি। গবেষণা হাইডেলবার্গে, বিষয় ওড়িয়া জাতীয়তাবাদ। বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ দীর্ঘ দিনের। সম্প্রতি ধরেছেন র‌্যাভেনশ কলেজের ইতিহাস। সে কালে প্রেসিডেন্সি থেকে বাঙালি অধ্যাপকরা ওখানে বদলি হতেন। প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ নীলকণ্ঠ মজুমদার, তৃতীয় বিপিনবিহারী গুপ্ত। রাধাপ্রসাদ গুপ্তের স্মৃতিকথার সূত্র ধরে বিপিনবিহারীর একটি তৈলচিত্র এবং ওই সব বঙ্গজ মাস্টারমশাইদের নথিপত্রের সন্ধানে সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি ঘুরে গেলেন নিবেদিতা। এলেন বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন ও কলেজে। বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ নিবেদিতা কলেজের ইতিহাস বিভাগে শ্বশুরমশাই ওড়িয়া সাহিত্যিক গোপীনাথ মহান্তির লেখার অনুবাদ আর ওড়িয়ায় মেয়েদের লেখালেখি নিয়ে আড্ডা দিলেন। সঙ্গের ছবিটি বিদ্যাসাগর কলেজে তুলেছেন সৌমেন সরকার।

বিতর্ক

তামিলনাড়ুর এরওয়ারডি দরগায় আগুনে পুড়ে মারা যান ২৮ জন মনোরোগী। শিকল বাঁধা অবস্থায় থাকায় ওঁরা জীবন্ত দগ্ধ হন ২০০১-এর ৬ অগস্ট। ভারতে মনোরোগীরা কেমন আছেন, ঘটনাটি তার নিদর্শন। ১৪ বছরে কি অবস্থা পাল্টেছে? উত্তর খুঁজতে অঞ্জলি মানসিক স্বাস্থ্য সংগঠন আরও একবার উদ্যোগী। পাভলভ হাসপাতালে ৬ অগস্ট বিকেল ৩টেয় ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে মনোরোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উপকারী’, এই বিষয়ে একটি বিতর্কে থাকবেন স্বাতী ভট্টাচার্য, অশোক বিশ্বনাথন, কৌশিক গুপ্ত, গণেশ প্রসাদ, অদিতি রায় ঘটক, রুচিরা গোস্বামী, নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী, অনন্যা সরকার এবং পাভলভের রোগিণীরা। সঞ্চালনায় অনিরুদ্ধ দেব।

প্রয়াণ

শিক্ষার মানবৃদ্ধি ও ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ করে তোলার মধ্যেই নিহিত দেশের উন্নতি— এই বিশ্বাস থেকেই জীবনভর শিক্ষকতা করেছেন প্রভাতরঞ্জন রায়। প্রাইভেট টিউশনি করেননি। বিনা পারিশ্রমিকে দুঃস্থদের পড়িয়েছেন। ১৯৮৮-তে অবসরের পর কলকাতায় চলে এসে বাড়িতে বানিয়েছিলেন গ্রন্থাগার। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে কর্মশালা সংগঠন করেছেন। দীর্ঘকাল নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের (জামসেদপুর) সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন গাঁধীবাদী ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ। বেহালা বইমেলার সূচনায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ছিলেন ‘পূষন কবিতা পত্রিকার’ সভাপতি। সম্প্রতি প্রয়াত প্রভাতরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজে দেহ দান করেছেন।

রবীন্দ্র-স্মরণ

নিজের জন্মদিন উপলক্ষ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন গান, ঘনিষ্ঠজনকে চিঠি; আশ্রমিকদের উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন। এ নিয়েই প্রকাশ পেল ‘হে নূতন’ (ভাবনা)। আবৃত্তি-পাঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গানে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রচনা বিন্যাস পরিচালনাও তাঁর। কবির প্রয়াণদিন বাইশে শ্রাবণ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তন ‘গীতবিতান’ প্রাক্তনীরা রবীন্দ্রগান গাইবেন ‘গীতবিতান’-এর ভবানীপুরের বাড়িতে, ৮ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টা। ‘রবীন্দ্রনাথের গানে জীবন ও মৃত্যুর দর্শন ভাবনা’ নিয়ে বলবেন পল্লব সেনগুপ্ত। অন্য দিকে বাংলা আকাদেমির কবিপ্রণামও বাইশে শ্রাবণ। সাড়ে ৬টায় শিশির মঞ্চে প্রকাশিত হবে রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ড। জলপাইগুড়ি ইমন-এর প্রযোজনা ‘চিত্রাঙ্গদা’, নির্দেশনায় শৈবাল বসু। প্রকাশ পাবে আকাদেমি পত্রিকা-র ৩৬তম সংখ্যা।

আবার মঞ্চে

একদা থাকতেন পার্ক স্ট্রিটে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। এখন পার্ক সার্কাসের ঘুপচি ঘরে। সত্যজিৎ রায় থেকে অমিতাভ বচ্চন দেখতে যেতেন তাঁর অনুষ্ঠান। ষাটের দশকের মধ্যবিত্ত বাঙালি লুকিয়ে দেখতেন তাঁর নাচ। তিনি মিস শেফালি, ক্যাবারে ডান্সার। বৈচিত্রপূর্ণ তাঁর জীবনকে ডকু-থিয়েটার ‘শেফালির পথ বাহিয়া’য় তুলে আনছে টোটাল থিয়েটার। তাঁর জীবনের টুকরো টুকরো কথা নিজেই শোনাবেন শেফালি, মঞ্চে আসছেন ৩৫ বছর পর। কিছু ঘটনা অভিনয় করবেন টোটাল থিয়েটারের সদস্যরা। অন্য মাত্রা আনবে সমীর আইচের আঁকা শেফালির ছবি। ৫ অগস্ট নেহরু চিলড্রেন্স মিউজিয়ামে।

নগর ছাড়িয়ে

হিরণ মিত্রের সৃষ্টি নগর ছাড়িয়ে পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাম-মফস্‌সলে। উত্তরপাড়া থেকে সোদপুর হয়ে হাওড়ায়। কালি ও ছেঁড়া কাগজের কেমিস্ট্রি এখন তাঁর হাতের জাদুতে। ছেঁড়া কাগজের আঁশগুলি লম্বালম্বি আড়াআড়ি এঁকেবেঁকে অনিশ্চিত হয়। হিরণ তাদের টেনে এনে একের পর এক জুড়ে দিতে থাকেন ক্যানভাসের শরীরে, ‘আঠা, কাগজ, ক্যানভাস, আমি সব কেমন জড়িয়ে মড়িয়ে...’। তাঁর শিল্পপ্রদর্শনী ‘স্পর্শ’ শুরু হয়েছে সোদপুরের জলসাঘর আর্ট গ্যালারিতে, চলবে ৫ অগস্ট অবধি। ‘‘নিজেই ছিঁড়ি, নিজেই জুড়ি। ছুঁয়ে থাকি তাদের শরীর। ভালবাসি, তাই নাম রেখেছি ‘স্পর্শ’।’’— শিল্পীর স্বীকারোক্তি।

সেবাব্রত

বিয়ের প্রথম বছরে, ১৮৬১-তে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক বিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রী স্ত্রী রাজকুমারী। বরাহনগরের সেই স্কুল এখন রাজকুমারী বালিকা বিদ্যালয়। সস্ত্রীক ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় তাঁকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়। বন্ধ করা হয় স্কুল। স্কুলে ছাত্রী টানতে পারিতোষিকের ব্যবস্থা করেন তিনি। শিবনাথ শাস্ত্রীর কথায়, অন্তঃপুর শিক্ষার প্রবর্তক ছিলেন শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। বরাহনগরে ১৮৪০-এ জন্ম। শ্রমিকদের জন্য সান্ধ্য স্কুল গড়েন, তৈরি করেন শ্রমজীবী সঙ্ঘ। পরে টেম্পারেন্স সোসাইটি। ১৮৭৩-এ প্রকাশিত হয় ‘বরাহনগর সমাচার’ সাপ্তাহিক পত্রিকা। পরে ‘বরাহনগর পাক্ষিক সমাচার’। এর পর ‘ভারত শ্রমজীবী’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। সে কালে এর প্রচার সংখ্যা ১৫,০০০ ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্যের কারণে উচ্চশিক্ষা নিতে না পারলেও মেয়েদের ও শ্রমিকদের শিক্ষা ও অধিকারের জন্য বারবার সোচ্চার হয়েছেন। তাঁদের কথা ভেবেই বরাহনগরে আনা ব্যাঙ্ক তৈরি করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে শশীপদ বিয়ে করেন ব্রাহ্ম গার্লসের বিধবা শিক্ষিকা গিরিজা দেবীকে। ১৮৮৭ সালে বিধবাদের জন্য আশ্রম তৈরি করেন বরাহনগরে। ১৮৭৬-এ তৈরি করেন শশীপদ ইনস্টিটিউট। অনেক সমস্যা নিয়ে এখনও টিকে রয়েছে সেটি। ১৭৫ বছরেও আড়ালে রইলেন শশীপদ। তবে পাঠাগারের তরফে পালিত হয়েছে ১৭৫ বর্ষপূর্তি, জানালেন শশীপদ ইনস্টিটিউট-এর জন্মোৎসব কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক রঞ্জনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঠাগারের পক্ষ থেকে তাঁর স্মরণিকা ও জীবনী প্রকাশ হয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক তাপস রায়ের আর্থিক সাহায্যে পাঠাগার ভবনের আংশিক সংস্কার হয়েছে। পাঠাগার সংলগ্ন সমাধিস্থলের সংস্কার করেছে বরাহনগর পুরসভা।

কল্কিযুগ

কলিযুগ নয়, কল্কিযুগ। এক জটিল হত্যা রহস্যের চাবিকাঠি। দেবারতি গুপ্তর দ্বিতীয় ছবির উপজীব্য যে হেতু ওই খুন ও তার সমাধান, ছবির নামও তাই ‘কল্কিযুগ’। সব গোয়েন্দা ছবি হয়তো রহস্য রোমাঞ্চ ছবি, কিন্তু সব থ্রিলার আবার গোয়েন্দা ছবি নয়। পঁয়ত্রিশ পেরোনো দেবারতি নিখাদ গোয়েন্দা ছবিই বানাতে চেয়েছেন, গ্ল্যামারের রূপটানের বদলে তাই বোধহয় গুরুত্ব পেয়েছে বৌদ্ধিক দিকটি। যাতে শান দিতে থাকছে শঙ্খ ঘোষের কাব্যগ্রন্থ ধুম লেগেছে হৃৎকমলে-র নামটা একটু বদলে তৈরি করা দু’টো ধাঁধা। যা শুধু গোয়েন্দাকে নয়, ভাবাতে পারে দর্শকদেরও। ‘এমন ভাবে ছবিটা বলতে চেয়েছি, যাতে দর্শকও চিন্তা তথা তদন্তের অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন।’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সাংবাদিকতার ছাত্রী দেবারতির কথায়, ‘গোয়েন্দা-ছবি মানেই ক্যালকুলাসের অঙ্ক নিখুঁত ভাবে করতে হবে। এতে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। চিত্রনাট্যকার রণজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কল্কিযুগ শোনানো মাত্র ছবি করার কথা ভাবলাম।’ ছবিতে রহস্যভেদ করবেন যিনি, তিনি কিন্তু শখের ডিটেকটিভ নন, লালবাজারের এক সাদামাটা অফিসার। অপর্ণা সেন, সোনালি বসুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা দেবারতির প্রথম ছবি ‘হইচই’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৩-য়। দ্বিতীয় ছবির বিভিন্ন চরিত্রে লকেট চট্টোপাধ্যায়, রিমঝিম মিত্র, সৌরভ চক্রবর্তী, দেবশঙ্কর হালদার, ব্রাত্য বসু প্রমুখ। তবে কলকাতার পটভূমিকায় তৈরি বাংলা ছবিটি আগে মুক্তি পাবে মার্কিন মুলুকে, ৯ অগস্ট, সানফ্রান্সিসকো গ্লোবাল মুভি ফেস্ট-এ, আর এই রাজ্যে অগস্টের শেষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE