Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

বয়েস মাত্রই পনেরো। সালটা ১৮৮৩। দেশজ পদ্ধতিতে রাসায়নিক কালি তৈরি করলেন কিশোরীমোহন বাক্‌চি (১৮৬৮-১৯২৩, বাঁ দিকে প্রিয়গোপাল দাসের খোদাই করা কাঠের ব্লকের ছবি)। জার্মানিতে এ ধরনের কালি তার মাত্র চার বছর আগে বেরিয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০০:১৩
Share: Save:

নাগরিক ইতিহাসের দুর্লভ আকর

বয়েস মাত্রই পনেরো। সালটা ১৮৮৩। দেশজ পদ্ধতিতে রাসায়নিক কালি তৈরি করলেন কিশোরীমোহন বাক্‌চি (১৮৬৮-১৯২৩, বাঁ দিকে প্রিয়গোপাল দাসের খোদাই করা কাঠের ব্লকের ছবি)। জার্মানিতে এ ধরনের কালি তার মাত্র চার বছর আগে বেরিয়েছে। শুধু তাই নয়, বালিকা স্ত্রীকে সহকারী করে নিজের হাতে তৈরি সেই ‘সরস্বতী’ মার্কা কালি বোতলে ভরে লেবেল সেঁটে মাথায় করে দোকানে দোকানে বিক্রি করতে লাগলেন তিনি। দাঁড়িয়ে গেল ‘দর্জিপাড়া কেমিক্যাল ওয়ার্কস’, প্রশংসা পেল দেশ জুড়ে। আস্তে আস্তে চৌষট্টি রকমের কালি থেকে রাবারস্ট্যাম্প, সুগন্ধি তেল, প্রসাধনী, ফলের সিরাপ, আঠা, নানা ওষুধ, পরে প্রকাশনা— এক বাঙালি শিল্পোদ্যোগীর প্রতিভা তাঁর বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যকে কোথায় তুলেছিল, সে ইতিবৃত্ত আজ বোধহয় আবার মনে করার সময় এসেছে।

পাঁচ বছরের মধ্যে নামান্তর, ‘পি এম বাক্‌চি অ্যান্ড কোম্পানি’, এ বার পঞ্জিকার প্রাঙ্গণে। কিশোরীমোহন ইংল্যান্ড থেকে আনালেন মুদ্রণযন্ত্র। ১৮৯৯-এ পঞ্জিকায় যোগ করলেন ‘ষ্ট্রীট ডাইরেক্টরী’, ইংরেজি অ্যালম্যানাক বা ডিরেক্টরিতে যা দেখা যাচ্ছে ১৮৫৬ থেকেই। বাংলায় এর কিছু নজির থাকলেও ধারাবাহিক ভাবে যে কাজ ‘পি এম বাক্‌চি’ শুরু করল, তা ছিল দ্বিতীয়রহিত। নিজস্ব তথ্যসন্ধানীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে খবর সংগ্রহ করতেন কিশোরীমোহন। সাহেবি বইয়ে নেটিভ কলকাতার যে সব খবর গুরুত্ব পেত না, তার হদিশ থাকত এখানে। এই ডিরেক্টরিতে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নামও পাওয়া যায়। এ উদ্যোগ অক্ষুণ্ণ ছিল বহু কাল। এ বার কিশোরীমোহনের পৌত্র জয়ন্ত বাক্‌চির দশকব্যাপী উদ্যমে ১৯১৫ সালের তেমনই এক ডিরেক্টরি-র সটীক সংস্করণ প্রকাশ করছে পি এম বাক্‌চি। পাতায় পাতায় বিপুল তথ্য সংযোজন করেছেন জয়ন্তবাবু, তথ্য সহায়তার সঙ্গে দীর্ঘ প্রাক্‌কথন দেবাশিস বসুর। প্রধান সম্পাদকীয় উপদেশক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। আটশতাধিক পাতার বইটিতে যুক্ত হয়েছে বহু দুর্লভ সাদাকালো ও রঙিন ছবি, আর ১৯০০ সালের মানচিত্র। ২৬ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় রামমোহন লাইব্রেরি সভাঘরে এটি প্রকাশ করবেন গৌতম ভদ্র, প্রধান অতিথি সুকান্ত চৌধুরী। পুরনো কলকাতার আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের সঙ্গে ধর্মজীবন, পরিবেশ, জনবিন্যাস, পুরাকীর্তি, আরও কত না অদেখা উপকরণ ছড়িয়ে আছে এই পথপঞ্জির পাতায় পাতায়! আজ তা এল পাঠকের নাগালে।

ষাট পেরিয়ে

চল্লিশের দশকের শেষে যখন সিনেমার নিজস্ব ভাষা খুঁজছেন সত্যজিৎ রায়, তখন কলকাতায় এসে তাঁকে উৎসাহিত করেন জাঁ রেনোয়া। সত্যজিৎ লেখেন, ‘আমাদের সিনেমার যা চাই, তা হল একটা নিজস্ব শৈলী, একটা বিশিষ্ট প্রকাশভঙ্গি, একটা আপন রূপ...।’ ১৯৫৫-য় তাঁর হাতে-তৈরি যে ছবি মুক্তি পেল, তার সুবাদে ভারতীয় সিনেমার পুরোধা রূপে স্বীকৃত হলেন সত্যজিৎ। সেই ‘পথের পাঁচালী’ ২৬ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল। একটি বাংলা আঞ্চলিক ছবি কী ভাবে ভারতীয় বা আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে, সে সূত্রটিকে খেয়াল রেখেই ছবিটির ষাট বছর পূর্তি উদ্‌যাপনে ‘সত্যজিৎ রায় সোসাইটি’ আয়োজন করেছে একটি আলোচনাসভার: ‘ইন্ডিয়ান সিনেমা: হোয়াট ইজ ন্যাশনাল, হোয়াট ইজ রিজিওনাল’। বক্তা: অপর্ণা সেন দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় দিলীপ পাদগাঁওকর নন্দিতা দাশ শর্মিলা ঠাকুর সুজিত সরকার সুজয় ঘোষ সুমন মুখোপাধ্যায়। সঞ্চালক: ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। ৩০ অগস্ট কলামন্দিরে সকাল সাড়ে দশটায়। দেখানো হবে সত্যজিৎ রায়ের উপর জেমস বেভারিজ নির্মিত একটি দুর্লভ তথ্যচিত্র। সঙ্গে ‘পথের পাঁচালী’র বুকলেট-এর প্রচ্ছদ, ‘মুক্তির আগে এটি তৈরি করেছিলেন বাবা, তবে শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি’, জানালেন সন্দীপ রায়।

সজনীকান্ত

ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় (১৮৬১-১৯০৭) সম্পর্কে সজনীকান্ত দাস লিখেছিলেন ‘ব্রহ্মবান্ধব ব্রিটিশ শৃঙ্খলাবদ্ধ ভারতে বিপ্লবের কবচকুণ্ডলসহ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং দেশমাতার বন্ধনমুক্তির জন্য তাঁহার সেই বিপ্লবের স্বরূপ ছিল ‘‘তরবারির বিপ্লব’’।’ এই স্বাধীনতার মাসে সূত্রধর প্রকাশ করছে সজনীকান্ত দাসের ফিরিঙ্গিভয়-হারী ব্রহ্মবান্ধব (সম্পা: সুবীর ঘোষ) এবং দশরত্ন, দশ জন বাঙালি মনীষীকে নিয়ে লেখা কবিতা, সঙ্গে কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তর আঁকা ছবি। ২৭ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায় মিলন মন্দিরে ফেডারেশন হল সোসাইটি ও সূত্রধর আয়োজিত ‘স্মরণ-সাজিতে সজনীকান্ত’ অনুষ্ঠানে সভামুখ্য অলোক রায়, আলোচনায় রুশতী সেন ও সুমন ভট্টাচার্য। সঙ্গের ছবিটি পরিমল গোস্বামীর তোলা।

ঝুলনবাড়ি

‘আজু কি আনন্দ, ঝুলত ঝুলনে শ্যামর চন্দ’— আজও ঝুলনদিন স্মরণ করে সংগীত উৎসব বউবাজারের বাবুরাম শীল লেনের রামকানাই অধিকারীর ঝুলনবাড়িতে। এই আসরে যদু ভট্টের গানে পাখোয়াজে সঙ্গত করতেন রামকানাই অধিকারী। সে ১৮৭০-’৭৫ সালের কথা। হীরুবাবু-শ্যামবাবু থেকে শুরু করে এ টি কানন, ভি জি যোগ, মশকুর আলি খাঁ সাহেব, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের মতো ওস্তাদ আসর উজ্জ্বল করেছেন। ‘আজও শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়’, জানালেন উৎপল অধিকারী। উৎসব শুরু ২৫ অগস্ট সন্ধে ৭ টায় সতীনাথ ভট্টাচার্যের ধ্রুপদ গানে। ২৯ অগস্ট সমাপ্তিতে প্রবীণ সেতারশিল্পী মনোজশঙ্কর ও তাঁর শিষ্য পার্থ বসু। এ দিকে আইসিসিআর-এ ২৭ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ছ’টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘রবি-র রাধা’। কৃষ্ণের ছায়ামূর্তি ঘিরেই রাধার নৃত্যায়ন। নিখাদ কত্থক শৈলীতে ভানুসিংহকে নতুন আঙ্গিকে মঞ্চস্থ করবেন সুরঙ্গমা দাশগুপ্তের পরিচালনায় সুছন্দা সঙ্গীতালয়ের ছাত্রীরা।

আত্মপ্রতিষ্ঠা

মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৩৯-এ তৈরি হয় লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। ২৬ অগস্ট ওদের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাদিবস। বিকেল সাড়ে ৫টায় কলেজের উইমেনস স্টাডিজ সেন্টারের উদ্যোগে রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রসাহিত্যে নারী বিষয়ে সঙ্গীত ও পাঠ ‘হে নিরুপমা’, আর লোকগাথা থেকে আধুনিক কবিতা, সঙ্গীত, নাচ, অডিয়ো-ভিসুয়ালের মেলবন্ধনে ‘নির্ভয়া’। অনুষ্ঠানটিতে ‘ঘরপোষা নির্জীব মেয়ে’দের আত্মপ্রতিষ্ঠার গল্পই বলবেন ছাত্রীরা। গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় অপরাজিতা দাশগুপ্ত ও নাতাশা দাশগুপ্ত। থাকবেন নারীকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা ও ভারতী রায়। এটি ফের হবে রবীন্দ্রতীর্থে, ২৯ অগস্ট সন্ধে ছ’টায়।

রসগোল্লা

দুধ কাটিয়ে ছানার জন্ম বলে আদ্যিকাল থেকেই তা অপবিত্র সারা ভারতে, ক্ষীর প্যাঁড়া দিয়েই দেবতার ভোগ হয়। ব্যতিক্রম বঙ্গদেশ। চৈতন্যই ছানাকে পবিত্র করেন, সেই পর্বেই ছানার মিষ্টি, রান্নায় ছানার ব্যবহার শুরু। তাঁর আমলেই ছানা ওড়িশা যায়, রাজা প্রতাপরুদ্র ছানাকে জগন্নাথদেবের ভোগে নিবেদন করেন। চৈতন্যের প্রিয় ছানাবড়া-ই আজকের রসগোল্লার প্রপিতামহ। উনিশ শতকে নদিয়ায় জন্ম, শান্তিপুর হয়ে কালিদাস ইন্দ্রর হাত ধরে বাগবাজারে আসে রসগোল্লা। নবীনচন্দ্র দাশ ‘স্পঞ্জ রসগোল্লা’র জন্ম দেন, পুত্র কে সি দাশের মধ্য দিয়ে আবিষ্কার পূর্ণতা পায় পৌত্র সারদাচরণের হাতে। এর সৃষ্টি নিয়ে যখন ওড়িশা থেকে দাবি ওঠে, তখন বাঙালিকে কে রোধিবে। রসগোল্লা-র ইতিহাস লিখে সৃজন-সংশয় কাটিয়েছেন হরিপদ ভৌমিক: রসগোল্লা/ বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার (গাঙচিল)। বইটি আজ প্রকাশিত হচ্ছে।

বাঙালি

‘পরের জন্মে যেন বাঙালি হয়ে জন্মাতে পারি’, এমনটা প্রায়ই বলতেন কাজুও আজুমা। আশি বছরের যে জীবন যাপন করেছিলেন, তাতেই বা তিনি কম বাঙালি ছিলেন কীসে! জাপানের ইয়াকোহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী চাকরি ছেড়ে সস্ত্রীক চলে আসেন বিশ্বভারতীতে। শান্তিনিকেতনে নিপ্পন ভবন ও কলকাতার বিধাননগরে রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন নির্মাণে তিনিই প্রধান রূপকার। তাঁর স্মরণে গত বছর থেকে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আয়োজন করছে কাজুও আজুমা স্মারক বক্তৃতা। এ বার বলবেন সুশোভন অধিকারী, বিষয় ‘প্রাচ্যশিল্প: শিকড় ও ডানা’। উপস্থিত থাকবেন কাজুও আজুমার স্ত্রী কেইকো আজুমা ও জাপানের কনসাল জেনারেল কাজুমি এন্ডো।

অস্ত্রচর্চা

শুধু বিপ্লবী নন, ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রধান সংগঠক পুলিনবিহারী দাশ ছিলেন অস্ত্রচর্চা বিশারদ। অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের অস্ত্রচর্চার আকরগ্রন্থ লাঠিখেলা ও অসিশিক্ষা-র সঙ্গে পুলিন দাশের মূল পাণ্ডুলিপি অনুসরণে সংকলিত হয়েছে বড়লাঠি, ছুরি, বাঁক, ধনুর্বিদ্যা, ও নিরস্ত্র অবস্থায় আত্মরক্ষার কৌশল (যুযুৎসু) শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য ও পূর্বে অপ্রকাশিত নথি। সংযোজিত হয়েছে তাঁর ছাত্র জ্যোতির্ময় দেব রায় ঠাকুরের বড়লাঠি বা রায়বাঁশ-খেলা। সম্পাদনা: দীপ্তনীল রায় ও নিখিলেশ ভট্টাচার্য।

আজ সন্ধে সাড়ে পাঁচটায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়্রে থেকে এইচ এল রায় প্রেক্ষাগৃহে প্রকাশিত হচ্ছে অস্ত্রচর্চা। বইটিতে আরও সংযোজিত হয়েছে সমর বসু সংকলিত বিস্মৃত বলীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা।

নমিতা ও ফুটবল

রোজ বিকেলে পাড়ার ছোট মেয়েদের একজোট করে ফুটবল খেলেন নমিতা হাঁসদা। বিয়ের পরও পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের কুচিয়া গ্রামে নমিতার খেলা বন্ধ হয়নি, স্বামীর উৎসাহেই। ২০১৩-য় ভালপাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে নমিতার দেখা পান বিশিষ্ট আলোকচিত্রী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি করেন নমিতাকে নিয়ে ১৩ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘নমিতা ও ফুটবল’ (সঙ্গে তারই ছবি)। সঙ্গে আরও একটি ১৯ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘কলকাতা সিটি অব সায়েন্স’। কলকাতা যে এক সময় বিজ্ঞানচর্চার পীঠস্থান ছিল, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে তার কথা। দুটো ছবিই দেখানো হবে নন্দনে ২৮ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। থাকছে আলোচনাও। সঙ্গে সুখবর, সার্বিয়া-র ছবির উৎসব, নন্দনে আজ থেকে। আয়োজক ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটি।

হোমিয়োপ্যাথি

বিদ্যাসাগর এক বার মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় উপকার পান হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসায়। সেই থেকে তিনি নিজেই হোমিয়োপ্যাথি শুরু করেন। শেষ জীবনে কার্মাটাঁড়-এ থাকাকালীন সাঁওতালদের চিকিৎসা করতেন। ভাই ঈশানচন্দ্রকে বীরসিংহ গ্রামে হোমিয়োপ্যাথি শুরু করতে বলেন তিনি। ঈশানচন্দ্রের ছেলে পরেশনাথ ও তাঁর ছেলে প্রশান্ত হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা করতে থাকেন। ১৯৬০-এ প্রশান্ত কলকাতায় এসে বিপুল জনপ্রিয়তা পান। বিদ্যাসাগরের চিকিৎসা শুরুর ১৫০ বছর উপলক্ষে সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে হয়ে গেল একটি প্রদর্শনী। ছিল পুরনো ছবি, বিদ্যাসাগরের প্রেসক্রিপশনও।

প্রভাতচন্দ্র

রামমোহন চর্চায় তিনি ছিলেন প্রাজ্ঞ। জাতীয় আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার নির্ভীক সাংবাদিক প্রভাতচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। বাংলার নারীমুক্তি ও মানবতাবাদী আন্দোলনে পথিকৃৎ দম্পতি দ্বারকানাথ-কাদম্বিনীর পুত্র প্রভাতচন্দ্রের জন্ম ২৩ অগস্ট ১৮৯০, কলকাতায়। ছেলেবেলার সঙ্গী ভাগ্নে-ভাগ্নি সুকুমার, সুখলতা, সুবিনয়, পুণ্যলতা, প্রতিবেশী প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ। ‘ননসেন্স ক্লাব’-এর অনুষঙ্গে সাহিত্যচর্চা শুরু। ‘বিচিত্রা’, ‘ভারতী’ ‘জাহ্নবী’, ‘যমুনা’, ‘বৈকালী’, ‘আনন্দবাজার’, ‘শনিবারের চিঠি’র সাহিত্য আসরে মধ্যমণি। ‘আনন্দবাজারে’ যোগ দেন সম্ভবত ১৯৩২ সালে। ‘দেশ’ ও ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’-এও জড়িয়ে পড়েন। যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের (বাঘা যতীন) নেতৃত্বে ‘যুগান্তর’ দলে। ১৯৪২ সালে দৈনিক ‘ভারত’-এর সম্পাদকীয়তে ইংরেজ শাসকের বর্বরতার প্রতিবাদ করায় বিনাবিচারে ১০ মাস কারাবাস হয়। লিখেছেন নানা পত্রিকায়। ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের খসড়া, রামমোহন প্রসঙ্গ, বাংলার নারী জাগরণ, কস্তুরবা গান্ধীর জীবনী, বিপ্লবী যুগের কথা তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯৭৩ সালে প্রয়াত প্রভাতচন্দ্রের জন্মের ১২৫ বছর উপলক্ষে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ ও প্রভাতচন্দ্রের উত্তরসূরিদের উদ্যোগে বিধান সরণির সমাজগৃহে ২৫ অগস্ট অনুষ্ঠান, বলবেন কানাইলাল চট্টোপাধ্যায়, গৌতম নিয়োগী ও পবিত্র সরকার। প্রকাশিত হচ্ছে একটি স্মারকগ্রন্থ, পরে তা গ্রন্থবদ্ধ হবে। সঙ্গের ছবিটি পরিমল গোস্বামীর তোলা।

বড় পর্দায়

ষাট-সত্তরের দশক, অগ্নিগর্ভ সময়। দারিদ্র, শোষণ, বিনাবিচারে আটক, রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু লাগাতার চলছে। প্রতিবাদে গ্রুপ থিয়েটারের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভালোমানুষ’ নাটকে সময়েরই প্রতিচ্ছবি। ‘শান্তা’র ভূমিকায় কেয়া চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘আমার সব্বদাই মনে হয় মানুষ মানুষের জন্যি কিছু করতি চায়। কী করে বুঝি জানো? চারিদিকে মানুষের সব্বদাই কেমন যেন দয়া দয়া ভাব। যে সব মানুষের কোনও দয়া নেই তারা কেমন যেন গোলমেলে নোক!’’ সেই উত্তাল সময়কে ধরতেই দেবেশ চট্টোপাধ্যায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘নাটকের মতো’-র নায়িকা ‘খেয়া’কে গড়েছেন কেয়া চক্রবর্তীর আদলে। দেবেশের কথায়, ‘তখনকার থিয়েটার, সংঘর্ষ, রাজনীতি, ভালবাসা, থিয়েটারের প্রতি মানুষের প্যাশন ধরার জন্য এই ছবি।’ ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’, ‘ফ্যাতাড়ু’, ‘ড্রিম ড্রিম’, ‘দেবী সর্পমস্তা’, ‘সূর্য পোড়া ছাই’-এর মতো নাটকের নির্দেশক দেবেশের বড় পর্দায় এটাই প্রথম নির্দেশনা। বিষয়ের প্রয়োজনেই বড় পর্দায় কাজ। এই মুহূর্তে দেবেশের কাজে শুধুই কেয়া চক্রবর্তী। সম্প্রতি টেক্সাসের বাঙালিদের নিয়ে মাস তিনেকের মহড়ায় মঞ্চস্থ করলেন ‘ভালোমানুষ’। কিংবা গিরিশ কারনাড-এর ‘তুঘলক’ নাটকে তাঁর অভিনয়। এতে ‘সৎমা’র চরিত্রটি করতেন কেয়া। ২৭ সেপ্টেম্বর নাটকটি মঞ্চস্থ হবে অ্যাকাডেমিতে। ১৯৯৩-এ দেবেশ প্রকাশ করেছিলেন কেয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে সংসৃতি নাট্য পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। তার সঙ্গে আরও নানা তথ্য একত্র করে প্রকাশিত হয়েছে কেয়া (দীপ)। ‘কেয়া’ ব্যতীত দেবেশের এই মুহূর্তে কাজ ছোটদের জন্য ‘ভরতের নাট্যশাস্ত্রের সহজপাঠ’ ( শিশু কিশোর আকাদেমি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE