Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

সাদা-নীল শাড়ি-জামা পরে বেণী দুলিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যেত এক ঝাঁক মেয়ে। ওদের মতোই স্কুলে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল প্রীতিরও। উপায় ছিল না।

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ২৩:০৮
Share: Save:

অন্য পাঠশালা থেকে মাধ্যমিকে

সাদা-নীল শাড়ি-জামা পরে বেণী দুলিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যেত এক ঝাঁক মেয়ে। ওদের মতোই স্কুলে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল প্রীতিরও। উপায় ছিল না। অন্যের দোকানে যে কয়লা ভাঙেন বাবা। রোজ কাজই জোটে না, দু’বেলা খাওয়া দূর অস্ত্। উত্তর শহরতলির ছোট্ট দরমার ঘরে প্রীতিদের বারমাস্যা। এক দিন ইচ্ছেপূরণের হদিশ মিলেছিল পাড়ারই এক কাকিমার কাছে। বাকিটা প্রীতি কুমারীর জেদ। সালটা ২০০৮। রুক্ষ চুল, কালিমাখা মুখের মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলেন কান্তা দিদিমণি। ছোট বন্ধুদের সঙ্গে শুরু হল স্কুলজীবন। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে সেই প্রীতি।

ঘন ঘন মাইকের ঘোষণা, ট্রেনের আওয়াজ আর মানুষের হুটোপুটিতে ব্যস্ত দমদম স্টেশন চত্বর। স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের হকার্স ইউনিয়নের অফিসের সামনে কাপড় ঘেরা সেই জায়গাটায় আজও চলে এই অন্য পাঠশালা। যেখান থেকে এই প্রথম বার কেউ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। প্রায় ন’বছর আগে পথশিশুদের নিয়ে কান্তা চক্রবর্তী শুরু করেছিলেন এটি। স্টেশন চত্বরে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট মেয়েদের দু’বেলা খেতে দেওয়া আর লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন তখন থেকেই।

প্রথম স্কুলে যাওয়ার আনন্দটা আজও টাটকা প্রীতির মনে। ‘‘তখনই ঠিক করেছিলাম যে ভাবেই হোক পড়াশুনোটা করতেই হবে। আজ যেটুকু পারছি তা দিদিমণির জন্যেই।’’

কান্তাদির কথায়: ‘‘হাজার বাধা এলেও ওদের যে কোনও সাফল্য আমাকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেয়। আর বলতেই হবে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের হকারদের কথা। ওদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি নিয়ে সন্তানস্নেহে পাশে আছেন লালদা। যে কোনও সমস্যায় পূর্ব রেল ও মেট্রো রেলের স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট দেবনারায়ণ সান্যাল এবং কানাইলাল মুখোপাধ্যায় সব সময় পাশে থেকেছেন।’’

প্রীতির প্রিয় বিষয় জীবনবিজ্ঞান। ক্যারাটেতে অরেঞ্জ বেল্ট মেয়েটির বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে। কেন? ‘‘দিদিমণির মতোই আরও অনেক ছোটদের পড়াব আমিও।’’ লাজুক দৃষ্টি তখন শেষ বারের মতো বুলিয়ে যাচ্ছে ছাপার অক্ষরে। অবসরে আঁকতে ভালবাসে প্রীতি। রং-তুলির টানে অবলীলায় ফুটিয়ে তোলে পথের পাঁচালির সেই পরিচিত দৃশ্য— কাশবন, নীল আকাশ আর দুইয়ের মাঝে ছোট্ট হয়ে যাওয়া ছুটন্ত ট্রেন। সঙ্গে শুভাশিস ভট্টাচার্যের ছবিতে ওদের পড়া, সামনে কান্তাদি আর প্রীতি।

অযান্ত্রিক

‘রাধুবাবু হলেন ভারতীয় যন্ত্রসঙ্গীতের নীরব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ পণ্ডিত রাধিকামোহন মৈত্র (১৯১৭-’৮১) সম্পর্কে বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। কেবল বাদনই নয়, নানা বাদ্যযন্ত্রের ওপরেও মরমি দৃষ্টি ছিল এই সুরতাপসের। একসময় নিজেই উদ্যোগী হয়ে নানা বয়সের শিষ্যদের কথা ভেবে বিভিন্ন মাপের সরোদ তৈরি করাতে শুরু করেন তিনি। সুরবাহার এবং সেতার মিলিয়ে সৃষ্টি করেন ‘মোহনবীণা’। পরে দিলবাহার বা নবদীপাও। শুরু করেন সংগৃহীত যন্ত্রের সংরক্ষণ। ওঁর সংগ্রহে ছিল হুসেন আলি সৃষ্ট ‘সুরচয়ন’, বাবা গোলাম আলির তৈরি প্রথম ধাতব প্লেট ও তার লাগানো সরোদ ইত্যাদি। কচ্ছপীবীণা, সেতার, সুরশৃঙ্গার, ভারতীয় ব্যাঞ্জো, সুররবাব এবং সবচেয়ে প্রাচীন ধ্রুপদী রবাবও আছে। আশার কথা ওঁরই সুযোগ্য শিষ্য সোমজিৎ দাসগুপ্ত গুরুর থেকে পাওয়া এই যন্ত্রসম্ভার শুধু সংরক্ষণই নয়, তার বাদনও করে চলেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। ৩০টি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এ বার প্রদর্শনী বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহালয় এবং এখানকার ‘কালেক্টর্স কর্নার’–এর উদ্যোগে।১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর বারোটায় উদ্বোধন। রাধিকামোহনের (সঙ্গের ছবি) ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে নিবেদিত ‘আ হেরিটেজ অব মিউজিকাল ইনস্ট্রুমেন্টস’ চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ১০-সাড়ে ৫টা।

সঙ্গে সুমন

মোদীর অশ্বমেধ। বাঙালির বিশ্বকাপ। লে লুল্লু। ব্রিগেডিজম। যশোদাবেনের বিরাশি সিক্কা।— পঞ্চাশটি শিরোনাম থেকে বেছে নেওয়া পাঁচ। কিন্তু পাঁচের মধ্যে পঞ্চাশের চুম্বক খুঁজতে চাইলে মস্ত ভুল হবে। কারণ বাংলা সংবাদ চ্যানেলের জনপ্রিয়তম সাংবাদিক সুমন দে’র প্রত্যেকটি লেখাই নিজস্ব স্বাদে স্বতন্ত্র। ‘এবেলা’ পত্রিকায় শনিবারের পাক্ষিক কলাম যাঁরা পড়েন, তাঁরা সে কথা জানেন। অন্যরা এ বার জানতে পারবেন, কারণ এই বইমেলায় হাতে পাওয়া গেল ২০১৪’র ৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৫’র ৫ ডিসেম্বর অবধি প্রকাশিত অর্ধশত কলামের সংকলন সঙ্গে সুমন (সপ্তর্ষি)। প্রধানত রাজনীতি, বিশেষ করে রাজ্য রাজনীতি নিয়ে ঝকঝকে লেখাগুলি সাহিত্যগুণেও উজ্জ্বল। একটি লাইন: ‘রাজসভায় এসে অ্যালিস দেখল মহারানি নিজেই বসে গেছেন বিচারপতির আসনে, মুকুটের উপর চাপিয়ে নিয়েছেন জজসাহেবের পরচুলা।’ এবং এই লেখা শেষ হয়: ‘‘ওঠ্, অ্যালিস,’’ দিদি বলল, ‘‘অনেকক্ষণ তো ঘুমোলি!’’ সঙ্গে বইটির প্রচ্ছদ।

দুই শহর

লন্ডন যদি এক নম্বর, তবে দুইয়ে কে? ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশ-বৃত্তে ‘দ্বিতীয় শহর’ হিসেবে উঠে এসেছে বহু নাম: কলকাতা, গ্লাসগো, লিভারপুল, ডাবলিন। এর মধ্যে কলকাতা আর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো নানা সম্পর্কের সুতোয় বাঁধা। ‘স্কটিশ এনলাইটেনমেন্ট’-এর বহু নক্ষত্র এসেছেন, থেকেছেন, তাঁদের কীর্তিতে সমৃদ্ধ হয়েছে সে কালের শুধু কলকাতা কেন, সারা ভারত। দুই ঐতিহাসিক শহর আর সেই সব ইতিহাস-পুরুষদের ফিরে দেখতেই গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি আর কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আজ সেন্টারে ও কাল প্রেসিডেন্সিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘সেকেন্ড সিটিজ ইন দ্য সার্কিট্‌স অব এম্পায়ার’। স্কটিশ প্রাচ্যবিদ জন লিডেন, শিল্পী উইলিয়াম সিম্পসন, সমীক্ষক ফ্রান্সিস বুকানন, সার্জন ওয়াইজ, জর্জ ওয়াট— দেশবিদেশের বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করবেন এই কৃতীদের নিয়ে। কোথায় কী ভাবে মিলেছিল দুই মহাদেশের দুই শহরবাসী, ফিরে দেখা সেটাই।

বাংলায় খেয়াল

ছোটবেলা থেকে তেরো বছর টানা কালীপদ দাসের কাছে খেয়ালে তালিম নিয়েছেন। তবু কবীর সুমন কিন্তু আকাশবাণীতে খেয়ালের অডিশন দেননি। গুরুরা বলতেন, চল্লিশের আগে বাইরে গাইবে না। তার সঙ্গে তেরো-চোদ্দো বছর পাশ্চাত্যে সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকা— এ সব কারণেই তাঁর আর খেয়াল গাওয়া হয়ে ওঠেনি। এ বার ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৬টায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতে বাংলায় খেয়াল গাইবেন কবীর সুমন। ‘এই সাতষট্টি বছর বয়সে খেয়ালে ‘ওস্তাদ’ আখ্যা পাওয়ার কোনও বাসনা থেকে আমি বাংলায় খেয়াল গান লেখা এবং বাংলা খেয়াল গাওয়ায় ব্রতী হইনি। চেষ্টা করছি আধুনিক বাংলা ভাষায় নানান রাগে খেয়ালের বন্দিশ বা গান রচনা করতে।...’ শিল্পীর কথায়, ‘আমি নিতান্তই একটি সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে চাইছি। খেয়াল আঙ্গিকটিকে যদি বাঁচাতে হয় তো আজকের বাংলা ভাষায় খেয়াল গাইতে হবে...।’ আয়োজনে ভাবনা।

পূর্বাপর

‘আমার ছবি দেখানোর চেয়েও বড় কথা, এখানে বাংলা ছবির বিশিষ্ট পরিচালকদের ছবি দেখানো হচ্ছে, যা থেকে নতুন প্রজন্ম বাংলা ছবির উজ্জ্বল পর্বের একটা আঁচ পাবে।’ বলছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘অপুর সংসার’ দিয়ে তাঁর রেট্রো শুরু হয়েছে বসুশ্রীতে, চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি অবধি, প্রতিদিন সন্ধে ৬টা ও রাত সাড়ে ৮টায়। দেখানো হচ্ছে ঝিন্দের বন্দী, বাক্স বদল, অভিযান, ক্ষুধিত পাষাণ, আতঙ্ক, অশনি সংকেত, কোনি, গণদেবতা, অংশুমানের ছবি, হুইল চেয়ার, রূপকথা নয়। উদ্যোগে হ্যাপেনিংস। এদের উদ্যোগেই থীমা থেকে কিছু দিন আগে বেরিয়েছে সৌমিত্রর ভূমিকা সহ গল্পগুচ্ছ নাট্যরূপে। মাস্টারমশায়, হালদারগোষ্ঠী, বোষ্টমী, পয়লা নম্বর— রবীন্দ্রনাথের এই চারটি গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

সাবর্ণ সংগ্রহশালা

১৪ ডিসেম্বর ১৯৩১। সূর্য সেনের শিষ্য শান্তি ঘোষ সহপাঠী সুনীতি চৌধুরীকে নিয়ে কুমিল্লার কালেক্টর স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করলেন। শান্তির জন্মশতবর্ষে সে দিন তাঁর পরা শাড়ি। কিংবা ১৮৫৭-র ব্রিটিশ পুলিশের তরোয়াল, অসম পুলিশের বেল্ট, জুতো। বা কার্জনের চায়ের কাপ। দেশীয় রাজ্যগুলির স্ট্যাম্প সহ নথি, স্ট্যাম্প, কয়েন, হস্তশিল্প— এ সবই দেখা যাবে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের উদ্যোগে ‘কলোনিয়াল ইন্ডিয়া ১৬১৫-১৯৪৭’ শীর্ষক সাবর্ণ সংগ্রহশালার প্রদর্শনীতে। বড়িশা, সপ্তর্ষি ভবন, ১০ ফেব্রুয়ারি (১০-৯টা) পর্যন্ত।

আড্ডা

নারীশিক্ষার প্রসারে স্বর্ণকুমারী দেবী প্রতিষ্ঠা করেন সখী-সমিতি। আবার, পত্রিকা ঘিরে জমে ওঠে পরিচয়, কবিতা বা শনিবারের চিঠি-র আড্ডা। আড্ডার সেদিন থেকে এদিন— এ নিয়েই এ বার আলোচনা এই শহরে। ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় বিধাননগরে ভারতীয় মানববিজ্ঞান সর্বেক্ষণের সভাঘরে এটি উদ্বোধন করবেন প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার। সর্বেক্ষণের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দি ইনক্লুসিভ মিউজিয়াম যৌথ আয়োজক। শঙ্খ ঘোষ ছাড়াও বলবেন গৌতম ভদ্র, অশোক বিশ্বনাথন, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, জয়া মিত্র, দেবাশিস বসু ও অন্যরা।

শিল্পীর চোখে

পাখি আর প্রজাপতির চমৎকার রং এবং রঙের সামঞ্জস্যই সকলকে আকৃষ্ট করে। মুগ্ধ করে বিয়াল্লিশ বছরের শিল্পী দেবব্রত হাজরাকেও। শিল্পী বললেন, ‘বিভিন্ন স্যাংচুয়ারিতে গিয়ে বিচিত্র পাখিদের দেখতে ভাল লাগে। তা ছাড়া পাখিরা তো আজ কোণঠাসা-প্রজাতি, সেখান থেকে বেরনোর পথ খোঁজা, অর্থাৎ সামাজিক সচেতনতাও বলতে পারেন।’ সেই ভাবনা থেকেই বিড়লা অ্যাকাডেমিতে তাঁর ‘দ্য গার্ডেন অব অ্যাভিয়ান ডিলাইটস’ চিত্র প্রদর্শনী। চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। (৩-৮টা, সোমবার বাদে)। দেবব্রতর জন্ম রেলশহর খড়্গপুরে, শিক্ষা সরকারি আর্ট কলেজে। তাঁর আঁকা ছবি দেশবিদেশে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে।

স্বাধীনতা

আমতলা রোডে দশটা বাস স্টপের সাতটাতেই আলো নেই। কলকাতা যখন ত্রিফলায় মোড়া, তখন শহর-ঘেঁষা এলাকায় কী দশা, তা নিয়ে কলম ধরেছে জোকা, আমতলার তরুণীরা। লিখেছে, সামালি থেকে কেয়াতলা হাট পর্যন্ত মস্তানদের উৎপাত। সন্ধ্যার পর মেয়েরা আতঙ্কে ভোগে। আটটার পর অটো মেলে না, অথচ কোচিং থেকে ফিরতে হয়। রীতিমতো ম্যাপ এঁকে দেখিয়ে দিয়েছে, রাস্তায় আলো, শৌচালয়, যাতায়াত ব্যবস্থা কোথায় নেই। কী ভাবে পড়াশোনা, কাজের সুযোগ কমছে। ‘সাথী’ পত্রিকায় এ বারের প্রচ্ছদ ‘মেয়েদের চলাফেরার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা’। বধূদের কলমে স্বাধীনতা-হীনতার ছবি। ভাইফোঁটা দিতে যেতে চাইলে শুনতে হয়, ‘‘তাহলে আর শ্বশুরবাড়িতে আসতে হবে না,’’ লিখছেন কমলা, মিতা।

ত্রিপুরা সন্ধ্যা

এ বারও প্রকাশিত হচ্ছে ত্রিপুরার জন্য অহর্নিশ (সম্পা: শুভাশিস চক্রবর্তী)। কুড়ি ছুঁয়ে পত্রিকাটি পরের কুড়িতে হয়ে উঠবে ত্রিপুরা-চর্চার পত্রভূমি, জানালেন সম্পাদক। সূচনা গত ফেব্রুয়ারিতে— প্রথম ত্রিপুরা সাহিত্য সন্ধ্যায়। অহর্নিশ-এর আয়োজনে ৯ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ‘ত্রিপুরা সাহিত্য সন্ধ্যা’ ২০১৬-র, জীবনানন্দ সভাঘরে, বিকেল সাড়ে ৫টায়। পত্রিকাটি উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ। তাতে দুই অঞ্চলের ব্যক্তি, প্রকৃতি ও সাহিত্য নিয়ে পারস্পরিক অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা। সংবর্ধিত হবেন ত্রিপুরার বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক কল্যাণব্রত চক্রবর্তী, তাঁর হাতে সংবর্ধনাপত্রও তুলে দেবেন শঙ্খবাবু। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের কবি শামীম রেজা এবং শিক্ষাবিদ্‌ গোপা দত্ত ভৌমিক। অনুষ্ঠানের মধ্যে ‘ত্রিপুরার সাহিত্য উদ্ভাস: কবিতা পাঠ’; সব শেষে ‘মেঘদূত সন্ধ্যা’, সৃজনে রাজা ভট্টাচার্য ও সোমা মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী।

ভুলি নাই

তখনও তিনি ক্যামেরাম্যান, পরিচালক হননি। হেমেন গুপ্তের ছবি ‘ভুলি নাই’-এর শুটিং, ১৯৪৭। বিকাশ রায়ের চরিত্রে অন্তর্দ্বন্দ্ব ফোটাতে অপ্রচলিত ক্লোজ শট নিলেন অজয় কর। ফলে বিকাশ রায়ের চরিত্রটির মুখের অভিব্যক্তি বিকৃত হয়ে গভীর ভাবে দর্শকের মনে রেখাপাত করে। চল্লিশের দশকের একেবারে শেষে সব্যসাচী ছদ্মনামে কয়েকটি ছবি পরিচালনা করলেও স্বনামে তাঁর প্রথম ছবি ‘জিঘাংসা’ (১৯৫১)— ‘আমার কাছে ওই ছবিতে ফটোগ্রাফির গুরুত্ব অপরিসীম।’ বলেছেন সিনেমাটোগ্রাফার সৌম্যেন্দু রায়। আর তপন সিংহ বলেছেন ‘কম আলো ব্যবহার করে তিনি ভয়ের আবহাওয়া তৈরি করেন।’ শ্যামলী, বড়দিদি, হারানো সুর, শুন বরনারী, সপ্তপদী, অতল জলের আহ্বান, সাত পাকে বাঁধা, বর্ণালী, কাঁচ কাটা হীরে, পরিণীতা, মাল্যদান, দত্তা, নৌকাডুবি— একের পর এক তাঁর এই সব ছবি বাংলা সিনেমার দিগন্তকে ক্রমপ্রসারিত করেছে। যদিও তাঁর জীবৎকাল ১৯১৪-’৮৫, তবু ‘বৈশাখী’ (সম্পা: ধ্রুবজ্যোতি মণ্ডল) বিশেষ সংখ্যা: ‘শতবর্ষে অজয় কর’। মূল্যায়ন সাক্ষাৎকার স্মৃতিচারণের সঙ্গে আছে ছবির সমালোচনা আলোকচিত্র ও বুকলেট। উল্লেখ্য সংযোজন প্রভাতকুমার দাসের ‘সপ্তপদী উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র আর যাত্রায়’। অজয় করের ছবি সুকুমার রায়ের সৌজন্যে।

প্রতিবাদী

তিনি নৃত্যশিল্পী। তিনি অ্যাকটিভিস্টও। পিটার ব্রুক-এর ‘মহাভারত’-এর দ্রৌপদী তিনি। আবার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েও সরব হয়েছেন। মল্লিকা সারাভাই। সদ্যপ্রয়াত ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী মৃণালিনী সারাভাই এবং বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের কন্যা মল্লিকার আন্তর্জাতিক খ্যাতি ভরতনাট্যম এবং কুচিপুড়ি নৃত্যের জন্য। পাশাপাশি তাঁর শৈলীর মধ্যে দিয়ে সমাজসচেতনতার কাজটিও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়গুলি তুলে ধরে পরিবর্তনের পক্ষে সায় দিয়েছেন। সম্প্রতি মল্লিকা কলকাতায় এলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে মানবী বিদ্যাচর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘রঞ্জাবতী সরকার স্মারক বক্তৃতা’র প্রথম বক্তৃতাটি দিলেন তিনি। আশি-নব্বইয়ের দশকে রঞ্জাবতী আর মল্লিকার যাত্রাপথ ছিল অনেকটাই সমান্তরাল। দুজনের ভাবনার বৃত্তটাও ছিল কিছুটা মেলানো-মেশানো। পরের সেমিনার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, ‘স্বর’-এর উদ্যোগে। দুটি বক্তৃতাতেই মল্লিকা জোরালো বক্তব্য রাখলেন লিঙ্গভিত্তিক-হিংসার বিরুদ্ধে। ৭ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানটি ছিল কলামন্দিরে। নারী নির্যাতনের ওপর তিনি পরিবেশন করলেন ডান্স থিয়েটার, ‘দ্য রেভলিউশন উইদিন’। অনুষ্ঠানগুলির যৌথ দায়িত্বে ছিল কলকাতা সংবেদ, ডান্সার্স গিল্ড, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, স্বর এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবী বিদ্যাচর্চা কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE