Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

নবরূপে সেজে উঠছে বাগবাজারের ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়ি। ১৮৯৯-এর এক সন্ধেয় এই বাড়ির উঠোনেই বসেছিল এক চায়ের আসর। রবীন্দ্রনাথ গাইছেন ‘এসো শান্তি...’।

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

প্রাণ ফিরে পেল নিবেদিতার বাড়ি

নবরূপে সেজে উঠছে বাগবাজারের ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়ি। ১৮৯৯-এর এক সন্ধেয় এই বাড়ির উঠোনেই বসেছিল এক চায়ের আসর। রবীন্দ্রনাথ গাইছেন ‘এসো শান্তি...’। শ্রোতা স্বামীজি, মহেন্দ্রলাল সরকার, মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়, মি. মুখোপাধ্যায়, মিসেস পি কে রায় (অবলা বসুর দিদি) এবং নিবেদিতা। আরও দুটি গান গেয়েছিলেন কবি। মার্গারেট এলিজাবেথ নোব্‌ল ওরফে সিস্টার নিবেদিতা (১৮৬৭-১৯১১) তাঁর দি ওয়েব অব ইন্ডিয়ান লাইফ বইয়ে লিখেছেন, ‘আমার নিজের একটা বাড়ি— যেখানে আমি খেতে শুতে আর একটি মেয়েদের স্কুল চালাতে পারব আর কাছাকাছি একদল মহিলাবন্ধুর অন্দরমহলে দিনেরাতে যখন ইচ্ছে যাই না কেন, সেখানে তারা আমায় সাদরে গ্রহণ করবে।’ ১৮৯৮ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় শ্রীশ্রীমায়ের ১০/২ বোসপাড়া লেনের বাড়িতে এসে ওঠেন তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যেই ১৬ বোসপাড়া লেনের বাড়িটি নিবেদিতার জন্য ভাড়া নেওয়া হয়। ১৩ নভেম্বর স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী ব্রহ্মানন্দ এবং স্বামী সারদানন্দের উপস্থিতিতে স্বয়ং শ্রীসারদা মা এই বাড়ির ঠাকুরদালানে বিধিমতো পুজো-পাঠ করে প্রতিষ্ঠা করলেন নিবেদিতার বহুকাঙ্ক্ষিত বালিকা বিদ্যালয়। তাঁর কাছে এই বাড়িটি খুবই প্রিয় ছিল। তিনি লিখেছেন, ‘মাই হোম ইজ ইন মাই আইজ, চার্মিং। দুটি উঠোন, কিছুটা অংশ দোতলা, পাঁচটি ধাপবিশিষ্ট এক প্রাচীন অদ্ভুত ধরনের ছাদ— সব মিলিয়ে বাড়িটি যথার্থ পুরনো হিন্দু স্থাপত্যকলার এক অসংলগ্ন নিদর্শন। বাড়ির কোথাও এক খণ্ড কাচের ব্যবহার নেই। একতলার জানলাগুলিতে লোহার গরাদ, দোতলার জানলায় কাঠের গরাদ বসানো। নীচে আমার পড়ার ঘরের জানলায় গাঢ় সবুজ রঙের চিক বাইরের রোদকে স্নিগ্ধ করে তোলে। অথচ ওপরে আমার শোবার ঘর থেকে সারা রাত্রি আকাশের তারা দেখা যায় (পর্দা নেই)।

আমার বাড়িতে একটি আঙিনা আছে। বাড়ির মধ্যে এই জায়গাটি আমার আকাশ ও তারার সঙ্গে মিলনের স্থান। দিনের বেলা এখানে শীতল ছায়া বিছিয়ে থাকে, রাতে এটি হয়ে ওঠে অসীমের পূজামন্দির, আবার এখানে মাতাল হওয়ার খেলার আসর, খোলা সূর্যঘড়ি।’ বাগবাজারের এই বাড়িই ধরে রেখেছে স্বামীজির মানস-কন্যার স্মৃতি। ভারতবর্ষে তাঁর বিপুল কর্মযজ্ঞের শুরু হয়েছিল এই বাড়ি থেকেই। পরে ১৭ বোসপাড়া লেনের যে বাড়িতে তিনি ১৯০২-’১১ অবধি থেকেছেন, তা আজ সম্পূর্ণ পুনর্নির্মিত। তাই ১৬ নং-ই ২০০৫-এ ‘ঐতিহ্যবাহী ভবন’ ঘোষিত হয়। দীর্ঘ আইনি বাধা পেরিয়ে ২০১৩-য় রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের হাতে আসে এটি। তাঁদের উদ্যোগে, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণের কাজ এখন শেষের পথে। ২৮ অক্টোবর নিবেদিতার ১৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে এখানেই এক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, যা তাঁর প্রাক-জন্মসার্ধশতবর্ষকেও সূচিত করবে। সঙ্গে বাঁ দিকে ১৬ নং বাড়ির ছাদে নিবেদিতা (সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুল প্রকাশিত প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা রচিত ভগিনী নিবেদিতা বই থেকে), ডান দিকে বর্তমান ছবি, তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য।

কিছু স্মৃতি

জীবন্ত কিংবদন্তি! জন্মসূত্রে ভারতীয় ঠিকই, কিন্তু তাঁর বাসভূমি সমগ্র বসুন্ধরাই। ঈশ্বরপ্রদত্ত অতুলনীয় কণ্ঠস্বরের অধিকারিণী এই মানুষটির জীবন প্রাণবন্ত, বর্ণময় বৈচিত্রে ভরপুর। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর মেয়েকে বুঝিয়েছিলেন, ‘সব সময় মনে রাখবে শব্দ এবং সুর সমান ভাবে গুরুত্ব পায়।’ বাবার কাছেই লতার (জন্ম: ১৯২৯) গানের প্রথম পাঠ। অভিনয়েও হাতেখড়ি পাঁচেই। চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। তেরো বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে জীবিকার তাগিদে প্লেব্যাক গান তো বটেই, অভিনয় করাও শুরু করেন। সম্প্রতি প্রকাশিত পল্লব মিত্রের লতা মঙ্গেশকর/কিছু স্মৃতি কিছু গান (পারুল) বইটি এমন নানা তথ্যে ঠাসা। বইটিতে শিল্পীর সংগ্রামী জীবনের পরিচয়, তাঁর গাওয়া পঞ্চাশটি বাংলা গান, তাঁর সম্পর্কে সমসাময়িক ব্যক্তিত্বদের উচ্ছ্বাস ও স্মৃতিচারণা এবং লেখকের নেওয়া শিল্পীর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও আছে, যা পুরোপুরি প্রথম প্রকাশিত হল।

উজ্জ্বল

‘‘মহালয়ার দিন বিকেলে স্বামীজী বেলতলায় বসে বোধনের গান ধরলেন— ‘গিরিগণেশ আমার শুভকারী।’... তাঁর ইচ্ছে দুর্গাপূজার সময় শ্রীমা সারদাদেবীকে মঠের পাশেই নীলাম্বর মুখার্জির বাগানবাড়িতে এনে রাখবেন।’’— স্বামী কৃষ্ণনাথানন্দের রচনা ‘বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গোৎসব’ যেন উপুড়-করা পুরনো দিনের ঝাঁপি, তাতেই জানা গেল, স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০১-এ তীর্থদর্শন সেরে এসে বললেন ‘এবার মঠে দুর্গোৎসব করবার ইচ্ছে আছে।’ কালীঘাটের পট নিয়ে সুশোভন অধিকারী, সত্যনারায়ণ পাঁচালি-র পালারূপ নিয়ে প্রভাতকুমার দাস, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্তের ‘প্রত্নভাস্কর্যের চামুণ্ডা’, কঙ্কাবতী দত্তের ‘কলকাতার পুজো’, সুদীপ সিংহের ‘পুজোর ছবি’... এমনই নানা উজ্জ্বল লেখা আর ছবি নিয়ে লিপিনাগরিক (সম্পা: দেবব্রত মিত্র ও সৈকত মুখোপাধ্যায়)। সঙ্গে প্রচ্ছদ।

বই পড়া

‘বিবিধ কারণে আমরা পড়ি, কখনও সেই পড়া বাধ্যতামূলক, কখনও পড়া আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রকাশ।... আমরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পড়ি, কখনও জ্ঞানের জন্য, কখনও তৃপ্তির জন্য, কখনও অবসর বিনোদনের জন্য... কখনও নিজের স্বাতন্ত্র্য ঘোষণার জন্য... কখনও পড়ি নিতান্তই কর্তব্যবোধে...’, শিশিরকুমার দাশের ‘পড়া: রূপ ও রূপায়ণ’ প্রবন্ধটি প্রায় আমাদের বই পড়ার বৃত্তান্ত যেন, তাতে একই সঙ্গে তথ্য-ইতিহাস-বিশ্লেষণ। কখনও লিখেছেন, ‘গত শতাব্দী থেকে শিক্ষিত পরিবারগুলিতে পড়ে-শোনানো সাংস্কৃতিক জীবনের একটি কৃত্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’ কখনও বা, ‘‘ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শিক্ষিত বাঙালির জীবনে ‘পড়া’ ক্রিয়াটি অনেকগুলি সম্ভাবনা খুলে দিয়েছিল, অবসরযাপন থেকে আত্মাবিষ্কারের বিভিন্ন পদ্ধতি।’’ প্রয়াত শিশিরকুমারের লেখাটি দিয়েই শুরু হয়েছে পরিকথা-র (সম্পা: দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়) ‘বই পড়া’ সংখ্যাটি। এতে বিশিষ্ট জনেরা আমাদের বই পড়ার বিভিন্ন দিকে আলো ফেলেছেন। ‘বই পড়ারও আছে এক না-বলা ইতিহাস, আছে এক অনন্য ধারাবাহিকতা। এর গোটা ইতিহাস কোনো পত্রিকার একটি মাত্র সংখ্যায় ধারণ করা অসম্ভব। তবুও একটা চেষ্টার নমুনা রইল এখানে।’ জানিয়েছেন সম্পাদক।

পরিযায়ী

আশ্বিনের আনন্দে বেড়ানোয় মেতে-ওঠা বাঙালির জন্যেই বেরোয় যে পত্রিকাটি, সেই যারা পরিযায়ী-র (সম্পা: তন্ময় চক্রবর্তী) এ বার শততম সংখ্যা। এ পত্রিকা পড়তে-পড়তে খেয়াল থাকে না কখন ঘর ‘বাহির’ হয়ে গিয়েছে, বা বাইরের পৃথিবী দরজায় কড়া নেড়ে ঢুকে পড়েছে ঘরের ভিতর। অভিজিৎ চক্রবর্তীর অনবদ্য ছবিতে অপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের রচনা ‘স্মৃতিঘরের বাতিওয়ালা’। অধিকাংশ লেখকেরই অবশ্য নিজের তোলা ছবি— ‘মেরু ভালুকের সন্ধানে’র লেখক রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়, মধ্যপ্রদেশ-খাজুরাহো নিয়ে হীরক নন্দী, লোসার-তাবো নিয়ে বনভূষণ নায়ক, কল্পা নিয়ে অমিতাভ ঘোষ, বা আরও অনেকেই। ‘আমার প্রচণ্ড কৌতূহল ছিল বাংলাদেশের এক বিলুপ্তপ্রায় মাছ ধরার প্রকরণ নিয়ে... এখন শুধু বেঁচে আছে বাংলাদেশের খুলনা আর নড়াইলের দশ-বারোটি গ্রামে...’, শুদ্ধব্রত দেবের রচনা ‘অলৌকিক যৌবনের দেশে’। আরও বিবিধ স্বাদের রচনা— সুব্রত রায় চৌধুরীর ‘ফরাসডাঙার শেষ ফরাসি’, অনিমেষ সিনহার ‘সুন্দরবন নামের উৎস’, রথীন চক্রবর্তীর ‘সূর্যের সাত ঘোড়া’। সঙ্গে প্রচ্ছদ।

সাহিত্য উৎসব

বাংলা সাহিত্য নিয়ে আড্ডা তর্ক আলোচনা ক্রমশই যেন কমে আসছে, এমন চলতে থাকলে লেখালেখির মান পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়। এমতাবস্থায় ‘এপিজে বাংলা সাহিত্য উৎসব’ সেই পরিসরটা তৈরি করে দিচ্ছে যেখানে কথোপকথনের ভিতর দিয়ে আমাদের সাহিত্যের সম্ভাবনা ও সংকট দৃষ্টিগোচর হয়। ২১-২২ অক্টোবর, প্রতি দিন বিকেল ৪টে থেকে, পার্ক স্ট্রিটে অক্সফোর্ড-এর হেরিটেজ বুকস্টোরে, ওদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পত্র ভারতী। উদ্বোধনে শঙ্খ ঘোষ নবনীতা দেব সেনের সঙ্গে যোগ দেবেন বাংলাদেশের সেলিনা হোসেনও। সমকালীন বাংলা সাহিত্য আঞ্চলিকতা ছাপিয়ে কতটা জাতীয় হয়ে উঠতে পারছে, তা উঠে আসবে উৎসবের সামগ্রিক আলোচনায়। সাহিত্যিকরা ছাড়াও বিভিন্ন ধারার শিল্পীরা যোগ দেবেন এই উৎসবে।

দশে দশ

মাত্র কয়েকটি নিদর্শনে কি একটা বড় সময়ের ইতিহাসকে ধরা যায়? ব্রিটিশ মিউজিয়মের অধিকর্তা নিল ম্যাকগ্রেগর কিন্তু একশোটি নিদর্শনে সারা পৃথিবীর ইতিহাসটাই ধরতে চেয়েছিলেন। এ বার তেমনই এক গবেষণার কথা শোনাবেন ব্রিটিশ মিউজিয়মের গবেষক রবার্টা টম্বার। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে ভারত ও রোম সাম্রাজ্যের বাণিজ্যের নানা দিকে তিনি আলো ফেলতে চেয়েছেন দশটি বাছাই করা প্রত্নবস্তু দিয়ে। ১৭ অক্টোবর সাড়ে তিনটেয় ভারতীয় সংগ্রহশালার প্রশাসনিক ভবনের কমিটি রুমে।

নতুন ভাবনা

তিন বছর আগে রঘু রাইয়ের ছাত্র জিৎ মুখোপাধ্যায় শুরু করেন ‘ভিশন অ্যান্ড বিয়ন্ড’ সংস্থাটি। এখন সদস্য সংখ্যা প্রায় ন’হাজার। উদ্দেশ্য ছিল, আমজনতার দরবারে দেশে বা দেশের বাইরের মানুষজনের তোলা ছবির প্রচার, যাতে তাঁরা আরও ভাল কাজের সুযোগ পান। এ বার এই প্রথম ওদের পঞ্চাশ জন আলোকচিত্রীর ১২৬টি ছবি নিয়ে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ‘দ্য ভিশন অব আনচার্টেড থটস’ শীর্ষক তিন দিনের এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন (২১-২৩ অক্টোবর)। উদ্বোধনে রঘু রাই, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে উপস্থিত থাকবেন যথাক্রমে সৌমিত্র দত্ত ও মণীশ খাত্রে। সঙ্গে সনক রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

আলোর ঠিকানা

চন্দননগরের আলো বিশ শতকের সেই ষাটের দশক থেকেই আমরা দেখে আসছি। কী ভাবে গড়ে উঠেছিল এই ন্যাশনাল লাইট ইন্ডাস্ট্রি? কী ভাবেই বা কিছু মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সারা দুনিয়াকে চমৎকৃত করলেন? বা কী ভাবে টেমস ফেস্টিভালে উপস্থিত মানুষজনের কাছে সমাদৃত হলেন? ছবিতে এ সবই দেখানোর চেষ্টা করেছি।’ বলছিলেন সুপ্রিয় সেন। এ বার তাঁর তৈরি এই ছবি, পিএসবিটি ও দূরদর্শন প্রযোজিত বাহান্ন মিনিটের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ১৯ অক্টোবর সন্ধে সাড়ে ৬টায় গ্যেটে ইনস্টিটিউটে ডকু-ফোরাম-এর উদ্যোগে ম্যাক্সমুলার ভবনে দেখানো হবে। ছবিটি মূলত চন্দননগরের আলোকশিল্প ও শিল্পীদের নিয়ে। এখানকার আলোকশিল্প যে একটা আর্ট ফর্ম, সে স্বীকৃতি আজও মেলেনি। কয়েক জন প্রখ্যাত আলোকশিল্পীর জীবনের গল্পও আছে ছবিতে। দমদমে বড় হওয়া চিত্রপরিচালক সুপ্রিয় সেন জার্নালিজমে মাস্টার্স করে কিছু দিন লেখালিখি-র পর বিমা কোম্পানিতে চাকরি নেন। এর পরই চলে আসেন ক্যামেরার পিছনে, ভাল লাগার জায়গায়। তাঁর পরিচালিত পনেরোটিরও বেশি ছবির মধ্যে ‘দ্য নেস্ট’, ‘ওয়ে ব্যাক হোম’, ‘হোপ ডাইজ লাস্ট ইন ওয়র’, ‘ওয়াঘা’ উল্লেখযোগ্য। দেশবিদেশে চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানিত সুপ্রিয়র ঝুলিতে এ পর্যন্ত ছত্রিশটা আন্তর্জাতিক ও তিনটে জাতীয় পুরস্কার।

প্রয়াণ

ভারতের খণ্ডিত স্বাধীনতার বছরে হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি। বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্যকে যে দ্বিভাষিকতার সামর্থ প্রদান করেছিল তা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অভিমুখে সম্প্রসারিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের এম এ তিনি। বহু বিষয়ে ডিগ্রিলাভ উদ্দেশ্য ছিল না, জ্ঞানচর্চাকে বহুমুখী করে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ভারতকোষ সম্পাদনার সময় ত্রিশের কোঠায় থাকা তরুণ প্রদ্যুম্ন তাই হয়ে উঠলেন সম্পাদনাকর্মের বিশিষ্ট সংগঠক। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, ভাষাতাত্ত্বিক, দার্শনিকের দলে সে দিন তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। সাহিত্য, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব, সিনেমা, সমাজবিদ্যা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য তাঁর নিরন্তর চর্চার বিষয় ছিল, কিন্তু লিখতেন বলতেন কম। টীকা টিপ্পনী, আখ্যান ও সমাজ: তারাশঙ্কর বই দুটির পাঠক জানেন এর প্রতিটি বাক্যে নিহিত প্রজ্ঞা ও বোধি। নদীবিশেষজ্ঞ কপিল ভট্টাচার্যের পুত্র প্রদ্যুম্ন ‘বারোমাস’ পত্রিকার সম্পাদক সমিতির সদস্য ছিলেন, সম্পাদনা করেন ‘সাহিত্যপত্র’। তাঁর সম্পাদনা-পর্বে ‘বিশ্বভারতী পত্রিকা’ বাংলা ভাষায় বিশ্বজ্ঞানকে স্পর্শ করতে পেরেছিল। পড়াশোনা তাঁকে ভার দেয়নি, ডানা দিয়েছিল। কৌতুকবোধ ও নান্দনিক জিজ্ঞাসা তাঁকে সজীব রেখেছিল চিরকাল। তেরছা নজরে: মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প, রোঁদ্যা, নটরাজ সেই সজীব মনটিকে প্রকাশ করেছিল। সেন্ট পল্‌স ও ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনার সময় অনুজ সহকর্মীরা তাঁকে দেখে শিখতেন। কত জনের কত জিজ্ঞাসার যে জবাব দিতেন সুস্মিত মিতবাক প্রদ্যুম্ন। ৮৩ বছর বয়সে চলে গেলেন, বাঙালির পড়াশোনার ইতিহাসে এ এক তারকার বিদায়। ২২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় তাঁর স্মরণসভা, শামিল, ছোটদের পাঠশালা, ৩/১০২ চিত্তরঞ্জন কলোনি, কলকাতা ৩২-এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE