Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

প্রাচীন ভারতে কত না ঘরোয়া খেলা। একদা সিদ্ধার্থ ঘোষ তার কিছুটা সুলুকসন্ধান নিয়েছিলেন। এ বার সেই পথেই নেমেছেন আমান গোপাল সুরেকা। ডন বস্কোয় পড়াশোনা, বিদেশ থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন।

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

ফিরে আসছে পুরনো খেলা

প্রাচীন ভারতে কত না ঘরোয়া খেলা। একদা সিদ্ধার্থ ঘোষ তার কিছুটা সুলুকসন্ধান নিয়েছিলেন। এ বার সেই পথেই নেমেছেন আমান গোপাল সুরেকা। ডন বস্কোয় পড়াশোনা, বিদেশ থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। বেশ কিছুকাল যাবৎ হাত দিয়েছেন সেডেন্টারি গেমের পুনরুজ্জীবনে। থিয়োরির বাইরে গিয়ে খেলাগুলোর পুরনো চেহারা আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। হঠাৎ করে এই নেশা? আমানের কথায়, ‘দেওয়ালির সময় চারকোনা ট্রে-তে চারটে ভাগে শুকনো ফল ও মিষ্টি দেওয়া হয়। সেই ডিজাইনটা আমার মাথার মধ্যে বসে ছিল। পরে যখন প্রাচীন ভারতের এই সব প্রায় লুপ্ত খেলাগুলো দেখি, তখন মনে হল, এমনও তো কিছু গিফট হতে পারে, যার নান্দনিক মূল্যটাই অন্য রকম। তখন থেকেই কাজ শুরু। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যে বুদ্ধিযোগের কথা বলেছেন, নানা রূপে সেই বুদ্ধির খেলাই সে কাল থেকে চলে আসছে।খেলা— জ্ঞানচৌপাট, পাশা, চক্রম, গঞ্জিফা, গঞ্জ, চতুরঙ্গ। প্রাচীন চতুরঙ্গ খেলা চৌষট্টি খোপের, তবে চার কোণে চার দল। চার দলের চার রং। প্রতি দলে আট ঘুঁটি। এখানে নৌকো, হাতির পিঠে রাজা— সবই রিয়ালিস্টিক। চারটি দলই চারটি দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছে এর বদল ঘটে। ঘুঁটির চেহারা হল স্মারকের মতো। চার দলের বদলে দুই দল। এল উজির। ইউরোপে পৌঁছে উজিরের জায়গায় এল রানি ও বিশপ। সেই চতুরঙ্গই আজকের দাবা।

আমানের সঙ্গে আছেন অরিন্দম মিত্র। একই সঙ্গে স্কুলে পড়া, তারপর আইআইটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। দুই বন্ধু একসঙ্গে কনসালটেন্সি করলেও, তীব্র নেশায় জড়িয়ে পড়েছেন এই খেলায়। ইতিমধ্যে বুদ্ধিযোগ ডট ইন আর খোলখেল ডট কম নামে ওঁরা অ্যাপ্লিকেশন আর ওয়েবসাইট চালু করেছেন। ওঁদের কাছে ছয় গোত্রের চল্লিশ রকম খেলা রয়েছে। এ যুগে এ সব খেলা চলবে? ‘কেন চলবে না,’ খুবই প্রত্যয়ী দেখায় ওদের।

শক্তি

শক্তি সাধনার আরাধ্যা যিনি, তিনি অশুভকে নাশ করে সামগ্রিক শুভকে বহাল করার হক-কর্ত্রী। আমাদের চার পাশে সেই অশুভ বিনাশের প্রয়োজন আজ বড় বেশি হয়ে উঠেছে (সঙ্গের ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য)। আর সেই শুভ কখনওই অগভীর অন্তর-শক্তিশূন্য নির্জীব জীবন যাপনের, কিংবা চিৎকৃত পেশি আস্ফালনের বার্তা বয়ে আনে না। বরং মননের দিশা দেয়। আসন্ন কালীপুজোয় তাই শক্তি আরাধনার পূজিতা দেবীর উৎস সন্ধানে মননশীল বিচারের দু’টি পুস্তিকা প্রকাশের আয়োজন করেছে সূত্রধর। জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তীর মা কালী আর রেজাউল করিমের শক্তির উৎস। আলোর উৎসবে ‘চেতনা-প্রদীপের সলতে পাকানোর’ প্রয়াস এই পুস্তকাদি, জানিয়েছেন প্রকাশক।

হাঙ্গেরির ছবি

সে বড় সুখের সময় ছিল বাঙালির, কলকাতায় ফিল্ম সোসাইটির শো-তে চুটিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ছবি দেখা যেত। পূর্ব ইউরোপের দেশ নামেই পরিচিত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন হাঙ্গেরি পোল্যান্ড ইত্যাদি দেশ, আজ আর সে সব নেই, দেশগুলি আছে, আর আছে তাদের সিনেমার বৈভব। নাতসি আর সমাজতান্ত্রিক শাসনের নিগড় সে দেশের মানুষকে কী ভাবে তাদের নিজস্ব জাতীয় জীবন থেকে বঞ্চিত করে রাখত, তার দলিল সেই সব ছবি। ওদের হালফিল ছবিতেও উঠে আসছে এখনকার জীবন। এমনই একগুচ্ছ হাঙ্গেরির ছবির উৎসব সিনে সেন্ট্রালের উদ্যোগে, মৌলালি যুব কেন্দ্রে ২৪-২৫ অক্টোবর। পাঁচটি ছবি দেখানো হবে।

জাপানযাত্রী

মোট পাঁচ বার জাপান গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথম জাপান যাত্রা ১৯১৬-র ২৯ মে। কবির প্রথম জাপান যাত্রার শতবর্ষ উপলক্ষে প্রবাসী ভাস্বতী ঘোষ, বিশ্বরঞ্জন ঘোষ এবং শ্যামল কর-এর উদ্যোগে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব টোকিও আয়োজিত দুর্গাপুজোয় রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনে আমন্ত্রিত ছিলেন শিল্পী প্রমিতা মল্লিক। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ইউপিসি আয়োজিত দুর্গাপুজোর সংগীতানুষ্ঠান এবং সিজিওকার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। পাশাপাশি, সম্প্রতি ঋতুপর্ণা রায়ের একক কণ্ঠে রবীন্দ্রগানের সিডি ‘ছোট বৌ/কয়েকটি ঘরোয়া কথা’ (রাগা মিউজিক) প্রকাশিত হল। ভাষ্য পাঠে বরুণ চন্দ ও প্রমিতা মল্লিক।

রিং মাস্টার

সুন্দরবনের বাঘ ‘রয়’ সার্কাসের জ্বলন্ত ফায়ার রিং-এর মধ্য দিয়ে লাফিয়ে যেতে অস্বীকার করায় সে দিন রাতে রিং মাস্টার রোহন তার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ দিকে রোহনের স্ত্রী নন্দিনী ওই সার্কাসেই ট্রাপিজের খেলা দেখাত, সে লুকিয়ে ‘রয়’কে নিজের ভাগ থেকে খেতে দেয়। এর পর নিঃসঙ্গ ‘রয়’ নন্দিনীর প্রেমে পড়ে যায়। রয় তার ফেলে আসা জীবনের কথা, সুন্দরবনের নদী-নালার কথা, বনবিবির পালার কথা এবং নিজের বুকের মধ্যে অনেক দিন ধরে জমে থাকা ভালবাসার কথা বলতে শুরু করে নন্দিনীকে এবং তার অভুক্ত রাত্রিটিকে সে গানে-গল্পে-নাচে-নাটকে ভরিয়ে দেয়। আর নন্দিনীর মনে বাঘ এবং রিং মাস্টারকে নিয়ে শুরু হয় এক বিচিত্র টানাপড়েন। এ ভাবেই এগিয়েছে ‘দক্ষিণ রুচিরঙ্গ’ প্রযোজিত, রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নতুন নাটক ‘রিং মাস্টার’। প্রথম শো ২৫ অক্টোবর, সন্ধে সাড়ে ৬টায়, জ্ঞানমঞ্চে।

পুরাকীর্তি

প্রত্যেক জেলার প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, সংস্কৃতিকে প্রদর্শনী ও সেমিনারের মাধ্যমে জেলার মানুষের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার। শুরু হচ্ছে পুরুলিয়া জেলায়, সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় চার দিনের প্রদর্শনী ও আলোচনাচক্রের মাধ্যমে (২৪-২৭ অক্টোবর)। আলোচনায় কলকাতার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে থাকছেন স্থানীয় ক্ষেত্রসমীক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি আঞ্চলিক মিউজিয়ামও হবে। ‘অধিকর্তা পিয়ালী সেনগুপ্তর উদ্যোগে প্রতি জেলায় এক-দু’মাস অন্তর এই কর্মকাণ্ড চলবে,’ জানালেন প্রত্নতত্ত্ব অধিকারের কেমিস্ট দিলীপ দত্তগুপ্ত। পরের মাসে ওদের গন্তব্য ঝাড়গ্রাম।

দশ বছর

যারা মূলত মুক্ত আকাশের নীচে ‘মাচার থিয়েটার’ করে, বর্ষার দীর্ঘ সময়কাল যাতে তাদের চর্চা জারি থাকে সেই জন্য ২০০৭-এ গড়িয়া অঞ্চলের তিন-চারটি দলকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়েছিল অশনি নাট্যমের নিয়মিত অভিনয়ের উদ্যোগ। এখন তাতে ক্রমে ক্রমে যুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ জেলার আটত্রিশটি বিভিন্ন নাট্যদল। সম্প্রতি তাদেরই ‘দশম বর্ষ উদ্‌যাপন’ হল সুজাতা সদন প্রেক্ষাগৃহে। উদ্বোধনী পর্বে অশনি নাট্যমের ‘বিচারের বেড়াজাল’ এবং থিয়েটার ফর ইউ-র ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায়’ নাটক দুটি অভিনীত হয়।

পুতুলনাটক

পুতুলের ঐতিহ্য বাংলার চিরকালীন। এ কালে জনসচেতনতা বাড়াতেও এর ভূমিকা কম নয়। এ বার এই পুতুল ও মুখোশ নিয়েই ভারত সরকারের সূচনা এবং প্রসারণ মন্ত্রালয়, সংগীত এবং নাটক বিভাগের সহযোগিতায় এন্টালি সি ডি পি ও-র অন্তর্গত বিভিন্ন আই সি ডি এস শাখাগুলিতে ‘মেয়েরা যখন মা হয়’ শীর্ষক নাটকটি পরিবেশন করছে ‘ধূমকেতু পাপেট থিয়েটার’ সংস্থা। চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। নাটকটি মূলত সমাজ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক। বিয়ের বয়স হলে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা বা মা ও শিশুকে সুস্থ রাখার ওপর নাটকটিতে জোর দেওয়া হয়েছে।

ভ্রমি বিস্ময়ে

ভ্রমণকাহিনির লেখকরা শুধুমাত্র ভ্রমণ বৃত্তান্তই লিখেই ক্ষান্ত হন না, তাঁদের কেউ কেউ আলোকচিত্রের জগতেও সমান দক্ষ, এমনকী আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তও। এ বার ‘ট্রাভেল রাইটার্স ফোরাম’-এর সদস্যদেরই তোলা সেরা ষাটটি ভ্রমণ আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়। ২৭-৩১ অক্টোবর (২৯ বাদে)। উদ্বোধন করবেন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ অতিথি মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের আবাসিক অধিকর্তা অভিজিৎ ধর এবং আলোকচিত্রী বিশ্বতোষ সেনগুপ্ত। ওই অনুষ্ঠানেই ফোরামের বার্ষিক মুখপত্র ‘ভ্রমী’ প্রকাশিত হবে। সঙ্গের ছবি ভুটানের পারো গুম্ফা।

শিক্ষক স্মরণে

১৯৩২ সালের ১৫ অগস্ট শ্রীহট্টের মাধবপুর গ্রামে জন্ম। সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক। আগরতলা থেকে বি এসসি পাশ করে, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্সে মাস্টার্স। ১৯৫৮-য় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ হোমে। পঁয়ত্রিশ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৯২-এ অবসর, ২০১৪-য় প্রয়াণ। এ বার প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ করতে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের ১৯৮৭-র প্রাক্তনীদের উদ্যোগে গঠিত হল ‘সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’। উদ্দেশ্য, প্রাক্তন আশ্রমিক মেধাবী অথচ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের হস্টেলে থাকা-খাওয়া পড়ার খরচ জুগিয়ে চলা। চোদ্দো জন ছাত্র ইতিমধ্যেই এই সুবিধা পাচ্ছে। এ ছাড়া গত মহালয়ার দিন বেলুড় মঠের উদ্যোগ ‘গদাধর অভ্যুদয় প্রকল্প’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বন্দিপুর গ্রামের প্রায় আড়াইশো শিশুর হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিল ট্রাস্ট।

তবুও

বাঙালি যতটা বাইশে শ্রাবণ মনে রাখে, ততটা স্মৃতিতে নেই অক্টোবরের বাইশ। এই হল হেমন্তের শুরু। কার্তিকের কলকাতায় বিস্মৃত তিনি। সারা গায়ে ট্রামের লোহার চাকা আর লাইন মেখে কত শত কবিতা ও গল্প উপন্যাস লিখে শুয়ে রইলেন রজনীগন্ধা খাটে। ততক্ষণে কলকাতা ভরে গিয়েছে লোল নিগ্রো কুষ্ঠরোগী হাইড্রান্ট নারী লিবিয়ার জঙ্গলে। সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে কী লিখেছিলেন? ‘বেশি ঠেকে পড়েছি... এক্ষুণি চার পাঁচশো টাকার দরকার। দয়া করে ব্যবস্থা করুন...।’ কেওড়াতলায় পুড়ে যাওয়ার সময় কারা ছিল আদিগঙ্গার দিকে। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কবিতাকে পড়া। সুচেতনা সুরঞ্জনা পড়া। ওরা কারা? সুনীল দীপক শক্তি শরৎ সমরেন্দ্ররা! কেটে গেল আর এক বাইশে অক্টোবর। কলকাতা কার্তিকের শিশিরের মতো স্মৃতিহীন। যার খুশি ইচ্ছা ভুলে যাক তবু মৃত্যুর বাষট্টি বছর পেরোলেন শ্রীজীবনানন্দ দাশ।

ত্রিলোচন

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা-র অন্তর্গত বাগনাবাড়-এর বড়িশা গ্রামে ‘মনসামঙ্গল’ পালায় শিব সেজে জ্যান্ত দুটো সাপ-গায়ে শুধু দাঁড়িয়ে থাকার অভিনয়। বিনিময়ে চারশো টাকা। জ্যান্ত সাপ নিতে কেউ রাজি নয়। সুযোগ বুঝে ঝুঁকি নিলাম শিব সাজার। সাপুড়ের কথা মতো কাজ উদ্ধার হওয়ার পর অর্থ-সহ মিলল বাহবা। পরের বছর থেকেই গাজন, বিয়েবাড়ি, ব্যান্ডপার্টি ও অন্য অনুষ্ঠানে শিবের ভূমিকায়। চল্লিশ বছর আগের সেই ভাললাগা এই তিয়াত্তর বছর বয়সেও। আজও ত্রিলোচন দাস সমান উৎসাহে শিব সেজে ঘুরে বেড়ান যত্রতত্র। দুই ভাই ও দুই বোনের সবার বড় ত্রিলোচন রুজির টানে কলকাতায় আসেন ৪৫ বছর আগে, খিদিরপুরের বাবুবাজারে যদু দত্তের দশকর্মা ভাণ্ডারে। এখন মেদিনীপুরে বছরভর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ ‘শিব’ সেজে ও ঘটকালি করেই দিন গুজরান। দত্তবাবুদের ডাকে কলকাতায় আসেন পুজোয় দশকর্মা ভাণ্ডারে কাজের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য। কাজের পর শিব সেজে মানুষকে আনন্দ দান করার পাশাপাশি হয় অর্থপ্রাপ্তিও। স্ত্রী পুষ্পরানি খুনসুটি করে বলেন, ‘‘দেখো, এই বয়সে কোনও পার্বতীর খপ্পরে পড়ো না যেন।’’ ‘‘এ বার নবমীর রাতে নিঃসন্তান এক মহিলা হঠাৎ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে চাইলেন আশীর্বাদ, যাতে ‘মা’ হতে পারেন। এতদিনে এই প্রথম চোখ দিয়ে অজান্তে বেরিয়ে এল জল। হা ঈশ্বর....’’, আর কথা বলতে পারলেন না ত্রিলোচন।

শিল্পী

আদি বাড়ি কৃষ্ণনগর ছুতোরপাড়া। নিতাই পালের ঠাকুর্দা রামকান্ত পাল কুমোরটুলিতে মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা নৃসিংহপ্রসাদ থাকতেন এখানেই, ঠাকুর্দার মৃত্যুর পর ব্যবসা সামলাতে না পেরে ফিরলেন কৃষ্ণনগর। দশ বছর বয়সেই নিতাই স্থানীয় খোড়ে (জলঙ্গি) নদী থেকে মাটি তুলে পাল পাড়ায় পৌঁছে দিতেন, ষোলো ঝুড়ি এক টাকা। বাবা-মায়ের তৈরি খেলনা-পুতুলও বিক্রি করতেন। ১৯৬৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় মেজদা গোবিন্দচন্দ্রের সঙ্গে কলকাতায় আসা। কুমোরটুলিতে সেই সময় ছাঁচ থেকে পুতুল তোলার কাজের মজুরি ছিল মাসে ১৫ টাকা, সঙ্গে রোজ ছ’পয়সা জলখাবার। সে কাজ রপ্ত করে নিলেন তাড়াতাড়ি। কাজ বাড়ল, পয়সা নয়। ’৬৯-এ সাইক্লোন হওয়ায় চটজলদি মূর্তি তৈরি থেকে চোখ আঁকা সমস্ত কাজ করার সুযোগ এল। সাত দিনে রোজগার হল ১১০০ টাকা, সেই সময়ের পক্ষে অনেক। ’৭২ থেকে টানা কুমোরটুলিতে মূর্তি তৈরির পাশাপাশি অনেক ধরনের কাজ করেছেন। আস্তে আস্তে ছাঁচের প্রতিমা ও বড় প্রতিমায় চক্ষুদানই তাঁর পেশা হয়ে ওঠে। এখন কুমোরটুলির অন্যতম খ্যাতিমান চক্ষুদানশিল্পী তিনি। গত ১৬ বছরে শুধু ৬৪ হাজার ছাঁচের প্রতিমারই চোখ এঁকেছেন, সঙ্গে আছে কয়েক ইঞ্চি থেকে পঞ্চাশ ফুটের প্রতিমাও। অলোক সেন সহ অনেক বিশিষ্ট শিল্পীর মূর্তিতে তাঁরই ছোঁয়া, কাজ করেছেন বাংলার বাইরেও। কাজের কেন্দ্র কুমোরটুলিতে, ৬৬ বছরের শিল্পী থাকেন নদিয়া দত্তপুলিয়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE