Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

নোট দ্বন্দ্বে ও ধন্দে দীর্ণ এ মহানগরী। প্রতিনিয়ত সর্বত্রই এক কথা: আর কত দিন? প্রতিটি ব্যবসা, প্রতিটি পেশাতেই তার ছাপ পড়ছে। শীতসূচনার কলকাতায় যখন বেড়ানর ভিড় বাড়ছে, তখনই ম্রিয়মাণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়ানো ঘোড়ার গাড়ির সারি।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১৯
Share: Save:

ঘোড়ার গাড়িতে যাত্রী নেই

নোট দ্বন্দ্বে ও ধন্দে দীর্ণ এ মহানগরী। প্রতিনিয়ত সর্বত্রই এক কথা: আর কত দিন? প্রতিটি ব্যবসা, প্রতিটি পেশাতেই তার ছাপ পড়ছে। শীতসূচনার কলকাতায় যখন বেড়ানর ভিড় বাড়ছে, তখনই ম্রিয়মাণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়ানো ঘোড়ার গাড়ির সারি। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সকাল দশটার পর থেকে সন্ধে রাত্রি পর্যন্ত এদের দেখা যায়। তবে শীতেই ব্যবসা জমে ভাল, এ বারে যা একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। মুখ খুললেন রাজু শেখ, ইদ্রিস, চিকনা, আলমরা: ‘মনে করুন যদি একশোটা গাড়ি থেকে থাকে তবে ষাট-সত্তরটা বসে গিয়েছে। খদ্দের নেই। রাজাবাজার থেকে ভিক্টোরিয়া এসে ঘোড়াকে দানাপানি দিতে হবে, নিজেদেরও খেতে হবে। তারও তো খরচা আছে। সেটাই তো তুলতে পারছি না। এমনকী আস্তাবলে ঘোড়াদের জন্য খড়বিচুলি দানা কিনতে বিপদে পড়ছি। জমানো টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ লাইন আর চলবে না। ভিন্‌ রাজ্যের গেস্টরা ভিক্টোরিয়া দেখতে এলেও ঘোড়ার গাড়ি কেউ চ়ড়তে চাইছে না। অন্যান্য বছর এক রাউন্ডের জন্য লোকে একশো কুড়ি-দেড়শো থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত খরচ করেছে। এ বছর সেখানে মাছি তাড়াচ্ছি।’ ঘোড়ার পূরীষ পরিষ্কারের কাজও বন্ধ। বেশ কিছু বছর ধরে নতুন প্রজন্মের ছেলেরা আর এ ব্যবসায় আসতে চায় না, কর্মচারী রেখেই কাজ করান আলতাফ, মুনিরের মতো মালিকরা। আলতাফের কথায়, ‘সব থেকে খারাপ লাগে ঘোড়া দুটোর জন্য। ওরা তো কিছু বুঝতে পারছে না। রাস্তায় ছেড়ে দিলে কোথায় যাবে?’ এ শহর হারিয়েছে অনেক বর্ণময় পেশা, সেই তালিকায় বোধহয় আরও একটি যুক্ত হতে চলেছে।

জীবনের জাগলিং

পি সি সরকার জুনিয়র তাঁকে পাঠিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের কাছে। সে সূত্রেই ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবি পেয়েছিল সেই রোমহর্ষক ড্যাগার-থ্রোয়িংয়ের দৃশ্য। কাজ করেছেন ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’, ‘ফটিকচাঁদ’-এও। জাগলারি অভয় মিত্রের রক্তে। ঠাকুরদা, বাবা প্র্যাক্টিস করতেন, এখন খেলা দেখান তাঁর দুই সন্তানও। ছোটবেলা থেকেই লাঠি, বল, টুপি নিয়ে খেলা দেখানোর শুরু, তরুণ অভয় হয়ে উঠেছিলেন পাড়ার ‘লাঠিদা’। হাতের নয়, প্রাণের লাঠি। চরম দারিদ্রের কৈশোরে কাজ করেছেন কারখানায়, রেলের ওয়ার্কশপে, করেছেন কম্পাউন্ডারি, অফিসপাড়ায় ডাব-বিক্রিও। প্রাইভেটে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ব্যাংকের চাকরি, ১৯৯৯-এ অবসর সেখান থেকেই।

এত কিছুর মধ্যেও লিখেছেন ‘আমি অভয়, ভয়ডরহীন এক উড়ন্ত তুবড়ির মতো’, সে বোধহয় জাগলারি ছাড়েননি বলেই। উত্তরপাড়া জিমন্যাসিয়ামের বার্ষিক শো-তে যে শিল্পীর জন্ম, তাঁরই উত্থান পরে দেখেছে সারা ভারত, ফ্রান্স-নিউজিল্যান্ডও। মাদার টেরিজা তাঁকে বলতেন ‘গ্রেট এন্টারটেনার অব দ্য চিলড্রেন’। আশি ছুঁই-ছুঁই বয়সে পৌঁছে লিখলেন আত্মকথা জীবনের জাগলিং (আনন্দ পাবলিশার্স)। দুটি পর্বে সাজানো বই থেকেই লুফে নেওয়া গেল এই সব তথ্য-ঘটনা, জানা হল জাগলিং-এর ইতিহাস, বিজ্ঞানও।

ষোলোয় সই

ষোলো বছর আগে কবি রাধারানি দেবীর জন্মদিনে (৩০ নভেম্বর) নবনীতা দেব সেনের হাত ধরে, তাঁরই ‘ভালবাসা’ বাড়িতে জন্ম নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টিশীল মেয়েদের সংস্থা ‘সই’। এখানে লেখালিখি নিয়ে মুক্ত সমালোচনা, লেখার পরিমার্জনাও চলে প্রতি মাসের আড্ডায়। সইয়ের বন্ধুত্ব এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। জানা গেল, সংস্থার পত্রিকা ‘সইসাবুদ’ এ বার ই-পত্রিকা এবং ‘Blog.ব্লগম’ নামক ব্লগও শুরু হতে চলেছে।

ষোলো বছর পূর্তি উপলক্ষে যাদবপুরের মানবীবিদ্যা বিভাগের সহযোগিতায় ৩০ নভেম্বর বিকেল ৩টেয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ হলে সংস্থার ওয়েবসাইট www.soicreativewomen.org উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ। সই নিয়ে আলোচনা করবেন ভারতী রায় ও ঐশিকা চক্রবর্তী। গানে মৌসুমী ভৌমিক ও মুক্তা-পলা-রূপা।

নির্যাতন-বিরোধী

সমাজ ও মেয়েদের শরীরে রাষ্ট্র যে হিংসা নামিয়ে আনছে, তার অবসানের জন্য ২০০৯ সালে জন্ম হয়েছিল ‘উইমেন এগেনস্ট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স অ্যান্ড স্টেট রিপ্রেসন’ (ডব্লিউ এস এস)। সংগঠনের মূল দাবি: যৌনহিংসা একটি অপরাধ। কোনও অজুহাতেই তা ঘটানোর যুক্তি দেওয়া চলবে না। জনগোষ্ঠীকে দমানো বা মেয়েদের প্রতিবাদকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষত সংঘর্ষপ্রবণ এলাকাগুলিতে রাষ্ট্র এবং তার সহযোগী শক্তির হাতে ধর্ষণের ঘটনায় সমস্ত অভিযোগের তদন্ত, আফস্পা, ইউএপিএ, এন আইএ-র মতো অগণতান্ত্রিক আইন বাতিল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল, কাশ্মীর ও অন্যান্য আদিবাসী অঞ্চলে সেনা-সক্রিয়তার পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও শান্তি আলোচনা এবং সালওয়া জুড়ুম-এর মতো বেসরকারি সমস্ত সশস্ত্রবাহিনীর কাজ বন্ধ করতে হবে। সংগঠনের সদস্যরা এক অধিবেশনের আয়োজন করেছে ২৮ নভেম্বর বিকেল ৪টেয় মহাবোধি সোসাইটি হলে। ‘সংঘর্ষের পটভূমিতে নারী ও রাজনীতি’ বিষয়ে বলবেন নানা প্রান্তে আন্দোলনরত সুধা ভরদ্বাজ, কবিতা কৃষ্ণান, প্রমোদিনী প্রধান, সীমা আজাদ প্রমুখ। অন্য দিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বয়ম’ একুশ বছর ধরে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ায় শামিল। এ বছরও ২৫ নভেম্বর ‘আন্তর্জাতিক নারীনির্যাতন বিরোধী দিবস’ থেকে শুরু করে ১০ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ পর্যন্ত পণপ্রথা, নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে বা যৌন হেনস্থা রুখতে তাদের নানা কর্মসূচি রয়েছে।

পুতুল-কথা

সেকালের গ্রামসমাজে পুতুল ছিল অনেকখানি জুড়ে। ক্রমে মাটির সঙ্গে তৈরি হয়েছে কাঠ, গালা, শোলা, কাপড় বা আরও কত রকমের সামগ্রীর পুতুল। এ সবের কিছুটা ইতিহাস ধরা রয়েছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ সংগ্রহশালায়। দুঃখের বিষয় এসবের অনেকটাই সময়ের চাপে হারিয়ে যেতে বসেছে। বিদেশি শস্তা পুতুলের ঠেলায় হারিয়ে যাচ্ছে ঝুলনের পুতুল, রানিপুতুল, হিঙ্গুল পুতুল বা জো-পুতুলেরা! এ বারে ‘হিস্ট্রি অব ডলস অ্যান্ড টয়েজ অব বেঙ্গল’ শীর্ষকে একটি আলোচনাসভার আয়োজন হয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটিতে। ১লা ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যাসাগর হলে সারা দিনের এই অনুষ্ঠানে থাকবেন পুতুল বিশেষজ্ঞ, কর্মী, শিল্পী এবং বিপণনে যুক্ত মানুষ। স্বাগত ভাষণ দেবেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত চক্রবর্তী, থাকবেন শিল্পী গণেশ হালুই। সোমা মুখোপাধ্যায়ের সংযোগ-ব্যবস্থাপনায় এই অনুষ্ঠানে আলোচনার শেষে দেখানো হবে নবকুমার দুয়ারী পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘বেণীপুতুল’ এবং পুতুল নাচিয়ে দেখাবেন অরবিন্দ ঘোড়ুই। নিজেদের তৈরি পুতুল নিয়ে আসবেন পুতুল শিল্পীরাও।

নাট্যপ্রাণ

পশ্চিমবঙ্গ নাট্যআকাদেমি প্রদত্ত (২০১২) সম্মাননা জ্ঞাপন পত্রে তাঁর সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের থিয়েটার আমাদের গর্ব। নাট্যপ্রাণ শ্রী বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় সেই গর্বের প্রবহমান স্রোতে একটি আলোকিত নাম।’ সত্তরের দশক থেকে গত শতকের শেষ পর্যন্ত ‘আকাশবাণী কলকাতা’য় বেতার নাট্যকার হিসেবে প্রভূত খ্যাতি পেয়েছেন বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়।

প্রিয় গল্প, সরসগল্প সংগ্রহ ইত্যাদি গল্প সংকলনের পাশাপাশি তাঁর নাট্যসংকলন নকশা, নতুন জীবন, শ্রুতি সতেরো, ষোলো কলা ও অষ্টবসু। সংসদ বাংলা নাট্য অভিধান তাঁর সর্ববৃহৎ কাজ। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। আজ তিনি পঁচাশিতে পা দিলেন। ৩ ডিসেম্বর আকাদেমি মঞ্চে সায়ক নাট্যদল তাঁর হাতে ‘দীপঙ্কর সেনগুপ্ত স্মৃতিসম্মান’ তুলে দেবে।

সম্মাননা

বছর ত্রিশেক আগে অনেকেই ভাবতেন প্রভাতকুমার দাস নামে দু’জন আছেন, এক জন লেখেন যাত্রা ও নাটক বিষয়ে, আর এক জনের বিষয় বুদ্ধদেব বসু বা জীবনানন্দ দাশ। পরে তাঁরা জানতে পারলেন প্রভাতকুমার দাস আসলে একই ব্যক্তি যিনি অক্লান্ত নিষ্ঠা গবেষণায় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির অনালোকিত দিকগুলিতে আলো ফেলছেন এবং তারই ফলে আমরা পেয়েছি কবিতা পত্রিকার সূচিগত ইতিহাস, বাংলা যাত্রাপালার গান, কলকাতা বেতার, ডাকের লেখা, অন্তরালের শিশিরকুমার ইত্যাদি বই। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় ত্রিশটি গ্রন্থ, ২০১০ থেকে সম্পাদনা করছেন ‘বহুরূপী’ পত্রিকা। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন ‘নাট্য আকাদেমি’ ও ‘যাত্রা আকাদেমি পত্রিকা’র কিছু সংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রথম প্রকাশন-সম্পাদক হিসাবে তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়েছে বহু উল্লেখযোগ্য বই।

‘অহর্নিশ’ পত্রিকা ৩০ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জীবনানন্দ সভাঘরে এই উজ্জ্বল জীবনকৃতির জন্য তাঁর হাতে তুলে দেবে সম্মাননা। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘জন্মদিনে বুদ্ধদেব বসু: নাটকের আলোয়’। বু ব-র প্রথম পার্থ থেকে পাঠ করবেন সোমা মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী ও শুভ্রজিৎ পাল। নাট্য নির্দেশক কৌশিক সেন বলবেন ‘বুদ্ধদেব বসুর নাটক: অভিনয়ের অভিজ্ঞতা’ বিষয়ে। প্রধান অতিথি জয় গোস্বামী। ছবি: শুভাশিস চক্রবর্তী

ইন্ডিয়ানা

১৯৫২। আকাল, দাঙ্গা, দেশভাগ। তার মধ্যেই নতুন সমাজ ও সংস্কৃতির ভাবনায় ভাবিত তিন বন্ধু— অরবিন্দ পোদ্দার, অনিল কুমার দেব ও নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত। এ থেকেই জন্ম ইন্ডিয়ানা-র। অরবিন্দ পোদ্দারের বঙ্কিম মানস, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর প্রথম উপন্যাস সূর্যমুখী, নরেন্দ্রনাথ মিত্র-র প্রথম উপন্যাস দূরভাষিণী ও সলিল সেনের নতুন ইহুদী দিয়ে আত্মপ্রকাশ।

এর পরে আরও অনেক বই। পরে প্রকাশনা স্থগিত হয়ে ‘উচ্চারণ’ নামে আত্মপ্রকাশ। দেশিবিদেশি বইয়ের সম্ভার। ১৯৯০ সালে ইন্ডিয়ানা-র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ছাব্বিশ বছর ধরে অমিতাভ দেবের পরিচালনায় চলার পর ফের নবকলেবর ৩ ডিসেম্বর।

শতবর্ষে

সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণনের ছাত্র। রামকৃষ্ণ মিশন, বিশেষত ইনস্টিটিউট অব কালচার, বেদান্ত মঠের সঙ্গে আজীবন যুক্ত ছিলেন। অমিয়কুমার মজুমদারের জন্ম ২৯ নভেম্বর ১৯১৭, প্রয়াত হন ১৯৯৮-এর ১১ জানুয়ারি। সফল শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রশাসক হিসেবেও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে পেয়েছেন বিবেকানন্দ ফেলোশিপ, নিবেদিতা পুরস্কার। রিডিসকভারিং স্বামী বিবেকানন্দ, শিক্ষক সমাজ ও সমাজ শিক্ষক তাঁর রচিত বই। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ২৯ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় ইনস্টিটিউট অব কালচারে তাঁরই নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতায় ‘ধ্যান-বিজ্ঞান ও দর্শনের সাম্প্রতিক মূল্যায়ন’ বিষয়ে বলবেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন উপাচার্য অমিতা চট্টোপাধ্যায়।

ফের রঙ্গমঞ্চে

ছেলেবেলায় খেলাধুলাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। স্বপ্ন ছিল বড় ফুটবলার হওয়া। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া মনীষা আদকের ‘খেলোয়াড় হওয়া’ স্বপ্নের চারাটা শুকিয়ে গেলেও, অভিনয়ের স্পৃহাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। তাই স্কুলজীবনেই নিজের লেখা নাটক বন্ধুদের দিয়ে মঞ্চায়নও করান। হাওড়ায় জন্ম। ঊষাঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়, হাওড়া গার্লস কলেজ হয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে এম এ মনীষা ধ্রুপদী ও রবীন্দ্রসংগীতে তালিমপ্রাপ্ত। শিখেছেন কত্থকও। স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি এই মুহূর্তে বাংলা থিয়েটারের উজ্জ্বল অভিনেত্রী। প্রাণিত হয়েছেন বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যােয়র কাছ থেকেও।

পেশাদারি থিয়েটার জীবন শুরু করেন ‘অন্য থিয়েটার’ প্রযোজিত বিভাস চক্রবর্তী নির্দেশিত ‘আত্মগোপন’ নাটক দিয়ে। এর পর অরুণ মুখোপাধ্যায়ের ‘চেতনা’ প্রযোজিত ‘নির্ণয়’ এবং ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’য় প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন। বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ষষ্ঠ ঋতু’ এবং অবন্তী চক্রবর্তীর ‘মেদেয়া’তেও অভিনয় করেন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘হেরো পার্টি’তে তাঁর অভিনয় স্মরণীয়। মূলত তাঁর স্বামী বিশিষ্ট অভিনেতা বাদশা মৈত্রর উৎসাহেই পাঁচ বছর পর আবার তিনি রঙ্গমঞ্চে। এ বার ‘প্রাচ্য’ নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত, অবন্তী চক্রবর্তীর নির্দেশনায় মরাঠি নাট্যকার বিজয় তেন্ডুলকরের নাটক ‘সখারাম বাইন্ডার’-এ ‘চম্পা’র চরিত্রে। প্রথম অভিনয় ৩ ডিসেম্বর সন্ধে সাড়ে ৬টায় জ্ঞানমঞ্চে।

প্রয়াণ

ঘুমের ভিতরে অশেষ ঘুমে তলিয়ে থাকার কয়েক দিনের আচ্ছন্নতা শেষ হল। আলোক সরকার (জন্ম ১৯৩১) প্রয়াত হলেন ১৮ নভেম্বরের রাত্রিবেলায়, পঁচাশি বছর বয়সে। দীর্ঘ এক কবিতাজীবনের অবসান। আত্মস্থ মর্যাদাময় এক জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন স্বভাবলাজুক গোপনচারী এই কবি, যেন তারই সঙ্গে সংগতি রেখেই প্রয়াণও ঘটল, একটু ধীর লয়ে, গোপনে, অনেককে জানবার সুযোগ না দিয়ে। প্রথম কবিতা বই উতল নির্জন (১৯৫০) আর সর্বশেষ কাব্যনাটক সমগ্র, মৃত্যুর ছ’দিন আগে প্রকাশিত। কবিতায় ‘শুদ্ধ সত্তা’ খোঁজার অভিপ্রায়ে প্রকাশ করেছেন ‘শতভিষা’, সঙ্গী দীপংকর দাশগুপ্ত তরুণ মিত্র আর নিকট সহমর্মী অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।

নানা নিরীক্ষায় পরিপূর্ণ ছিল তাঁর কবিতার পরিমণ্ডল, তবু সর্বাঙ্গীণ এক শ্রী আর ভালবাসবার আকুলতাতেই ভর ছিল শেষ দিককার লেখায় আর ফিরে ফিরে আসছিল এ রকম স্বর যে— সব চলাই ধর্মীয় নিভৃতলোক। ‘কেন যে জানি না/ কেউ ভালোবাসলেই চোখে জল আসে’— ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার ত্রয়োদশ সংকলনে একদা লিখেছিলেন তিনি। জানলেন না, তাঁর ফুলে-ঢাকা দেহের সামনে কী রকম বজ্রাহতের মতো দাঁড়িয়েছিলেন সমসাময়িক শঙ্খ ঘোষ। সেই রাত থেকেই বিষণ্ণ নীরব হয়ে রয়েছেন অমিয় দেব, ‘সাতান্ন সাল থেকে আলাপ আলোকের সঙ্গে, কিছু ভাল লাগছে না।’ রবীন্দ্র ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত এই কবি প্রকাশিতব্য শতভিষা সংকলন (অভিযান) ও আলোক সরকার সম্মানগ্রন্থ (আদম) দেখে যেতে পারলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE